বাতিঘর
লিখেছেন লিখেছেন আত্মসমর্পিত ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৯:১৪:১৯ সকাল
আপনি যদি সমুদ্র তীরবর্তী কোন শহরে ভ্রমন করে থাকেন, তবে দেখবেন ঐ শহরের যে স্থানে জাহাজঘাটা [ডকইয়ার্ড] রয়েছে সেখানটায় থাকে বাতিঘর [lighthouse]। আর, আপনি যদি বাতিঘরের মর্মার্থ যথার্থভাবে বুঝতে সমর্থ হন তবে আপনি চাইবেন আল্লাহ্ তায়ালা আমাদের সকলকে যেন বাতিঘরের মত বানান। সর্বোপরি, বাতিঘর তৈরির একটি উদ্দেশ্য রয়েছে। আর যখন তা তৈরি করা হয় তখন এর একমাত্র উদ্দেশ্য থাকে, জাহাজসমুহকে বন্দরে ফিরিয়ে আনা। নির্মাণকারীরা ভাবে, এই বাতিঘর হবে পথ প্রদর্শনের জন্য, তাই তারা উঁচু একটা স্তম্ভ নির্মাণ করে আর তার একেবারে চূড়ায় বসিয়ে দেয় একটি বাতি; যা প্রতি ১০ মিনিট, ৫ মিনিট কিংবা ২ মিনিট অন্তর অন্তর নির্ধারণ করে দেয়া সময়সাপেক্ষে আলোর ক্ষণিক ছটা দিতে থাকে। এটা জ্বলে আর নিভে, আপনি কিছুক্ষন অপেক্ষা করলেন আর পরমুহূর্তেই তা জ্বলে উঠবে আবার তা মিইয়ে যাবে। আপনি যদি সেখানটায় ভোর ৪ টায় যান যখন সমুদ্রে কোন জাহাজের গতিবিধি নেই, তখন ও দেখবেন এটি তেমনিভাবেই জ্বলছে আর নিভছে। আপনি যদি শীতকালে যান যখন সমুদ্র পর্যন্ত বরফআচ্ছাদিত থাকে তখন ও দেখবেন বাতিঘরটি তার কাজ করে যাচ্ছে অর্থাৎ অবিরত সে জাহাজসমুহকে তার দিকে ডাকছে; জাহাজসমুহ সাড়া দিচ্ছে কি দিচ্ছে না তার দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে।
অনুরূপভাবে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহয় ও আমরা দেখতে পাই, যখন তিনি দাওয়াহ দিচ্ছিলেন, তিনি তার বার্তা পৌঁছে দেয়ার কাজ অবিরতভাবেই করে যাচ্ছিলেন; কখনো লোকজন শুনছিল, কখনো শুনছিল না, কখনো তার সামনে সহস্রাধিক লোক ছিল, কখনো একজন ছিল আবার কখনো কেউ ছিল না। আর এটাই ছিল রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ। আপনি যখন বাতিঘরের দিকে লক্ষ্য করবেন, এটা তখন ও জ্বলতে থাকে যখন এর আশেপাশে কেউ নেই; এটা তাকে প্রভাবিত করে না। আপনি যদি একে খুজেন তবে আপনি একে খুঁজে পাবেন কিন্তু এটি আলোকচ্ছটায় আপনাকে ঝলসে দিচ্ছে না; রাসুলের সুন্নাহ ও এমন। তিনি যখন দাওয়াহ দিতেন তা অত্যন্ত নম্রভাবে দিতেন; তাতে অনধিকার চর্চার লেশমাত্র থাকতো না। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাই বলতেন যা বলা অনস্বীকার্য ছিল, সাহাবীরা তাই নিয়ে ভাবতেন যা তাদের ভাবনার বিষয় ছিল আর লোকজন তাদের সিদ্ধান্ত নিতে উদগ্রীব হত। আর, কেউ যদি আমাদের কথা শুনতে ইচ্ছাপোষণ না করে তবু ও আমাদের আলো ছড়িয়ে যেতে হবে। নুহ আলাইহিস সালামের মত করে। কতদিন লোক তাকে পরিত্যাগ করেছিল? প্রায়, ১০০০ বছর, কিন্তু তিনি নিরন্তর দায়িত্ব পালন করে গিয়েছেন; আর এটা আমাদের উপর ও বর্তায়। এটাই আমাদের দায়িত্ব। এটাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম করেছেন, আমাদের পূর্বসুরিরা করেছেন আর আমাদের তা করে যেতে হবে; এই সময়ে। কেন? কেননা আমরা জানি না, কখন যে একটি জাহাজ আসবে আর আমরা তা শনাক্ত করতে ও সমর্থ হব না। অনেক লোকই বাতিঘর দ্বারা উপকৃত হয়, কিন্তু তারা এটা কখনো লোকজনকে বলে বেড়ায় না ‘ঐ বাতিঘর আমাকে পথ দেখিয়েছে’; তারা বাতিঘরের সাহায্য নেয় কিন্তু তারা তাকে বাহবা দেয় না। বাতিঘর নিবৃতে তার কাজ করে যায়।
বিষয়: বিবিধ
১৩৯১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন