লাওহে মাহফুজের বিস্ময়
লিখেছেন লিখেছেন আত্মসমর্পিত ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৩, ১২:৪৫:১৭ দুপুর
بسم الله الرحمن الرحيم
কুরআন সম্পর্কে আল্লাহ্ সুবহানুহ তা’আলা বলেছেন:
هَٰذَا بَلَاغٌ لِّلنَّاسِ
“এটা মানুষের একটি সংবাদনামা”। [সুরা ইবরাহীম:৫২]
আরবীতে, بَلَاغٌ শব্দের অর্থ যা মানুষের নিকট পৌছায়, যোগাযোগ, অন্য কিছুতে সঞ্চারিত করা, অবহিত করা ইত্যাদি। আর কুরআন তো মানুষের নিকট পৌছুনোর জন্য, মানুষের জন্য বার্তা।
একটা উদাহরণ দেই, যাতে আপনারা বুঝতে সমর্থ হন কুরআনের সাহিত্যের বিচারেও কত টা অলৌকিক। আপনাদের অনেকেই হয়তো শেক্সপিয়ার, প্লেটো ইত্যাদি সাহিত্য পড়ে থাকবেন। এর সবকিছুই আমি মন্দ বলছি না। এর মধ্যে কিছু ভালো থাকার অবকাশ আছে। আর এই সাহিত্যগুলোকেই মানবসৃষ্ট চূড়ান্ত সাহিত্য হিসেবে ধরা হয়। আমরা কুরআনকে চূড়ান্ত সাহিত্য বলে জানি’ অন্য যে কোন ভাষার সাহিত্যের চেয়ে। কিন্তু, এটা মনোগত বিষয়। কেউ যদি সাহিত্যের ছাত্র হয়ে থাকে তবে সে এও জেনে থাকবে, সাহিত্য বস্তুনিষ্ট-নিরপেক্ষ নয় বরং তা মনোগত। তাই, একজনের কাছে যা সুন্দর, অপরের কাছে তা কুৎসিত, একজন যা পছন্দ করে অন্যজন তা অপছন্দ করে, একজন যে চিত্র পছন্দ করে অপরজন তাই অপছন্দ করে। অর্থাৎ সাহিত্যের পুরো বিষয়টাই আপেক্ষিক।
কিন্তু, আমরা শুরুতে যে আয়াত দিয়ে শুরু করেছিলাম, আল্লাহ্ কুরআনকে কি বলেছেন? ‘বালাগ’- যার অর্থ বার্তা! আর বার্তার উদ্দেশ্যে হচ্ছে শ্রোতাকে প্রভাবান্বিত করা। সুতরাং, আমরা সাহিত্যকে কি দিয়ে বিচার করব? কি তার পরিমাপক? তা হবে- এর প্রভাব কতটুকু? বিশ্বকে তা কতটা প্রভাবান্বিত করতে সমর্থ হয়েছে? এটা কি পরিবর্তন নিয়ে এসেছে? লোকজনকে তা কিভাবে বদলে দিয়েছে? তাদের আচার-আচরণে তা কতটুকু প্রভাব ফেলেছে? কিংবা এটা কিভাবে লোকজনকে আদেশ করে? – এর সবকিছুই বিচার্য। আর এভাবেই কোন সাহিত্য কিংবা বক্তব্যের বাস্তবভিত্তিক বিচার করা যায়। আপনি হয়তো বলবেন, এটা অসাধারন, আমি বলব এটা রহস্যগল্প। অথবা, আপনি হয়তো বলবেন অমুক লিখা আমার জীবন বদলে দিয়েছে। আর, আপনি যদি এইসব ইতিহাস নিয়ে গভীরভাবে পড়াশুনা করেন তবে আপনি বুঝতে সমর্থ হবেন, ইতিহাসে এমন কোন নজির খুঁজে পাওয়া যাবে না কেবল একটি কিতাবের/ বইয়ের উপর ভিত্তি করে পুরো একটি জাতির পরিবর্তনের; যেভাবে মুসলিমরা হয়েছে কুরআন দ্বারা। মানব সভ্যতার ইতিহাসে এমন কোন নজির দ্বিতীয়টি নেই। আর কত বছরে সেই পরিবর্তন সাধিত হয়েছিলো? মাত্র ২৩ বছরে! এই বিষয়টাতে এমন কি ওরিয়েন্টালিস্টরাও একমত। তাদের ভাষ্যমতে, “কুরআনকে ঐশী বলে দাবী করা হয়েছে। আর, সে তা ৪০ বছর বয়সে দাবী করেছিল আর তা শেষ হয়েছিলো কত বছর বয়সে? ৬৩! অর্থাৎ ২৩ বছর।“
এই ২৩ বছরে একজন মাত্র ব্যক্তি; যার নিয়ে আসা বাণী, এই ব্যক্তি, এই বক্তব্য, এই বক্তা আর বলার ধরন কি প্রভাব ফেলেছিল? লোকজন যেভাবে খাওয়া-দাওয়া করতো – তা পরিবর্তন হয়েছে, কিভাবে ঘুমাতো- তা পরিবর্তন হয়েছে, কিভাবে তাদের পরিবারের সাথে ব্যবহার করতো – তা পরিবর্তন হয়েছে, লোকজন কিভাবে তাদের দৈনন্দিন কার্যক্রম সাজাতো- তা পরিবর্তন হয়েছে, লোকজন কিভাবে কথা বলতো- তা পরিবর্তন হয়েছে, লোকজন কিভাবে ব্যবসা-বানিজ্য করতো- তা পরিবর্তন হয়েছে, এমন কি লোকজন কিভাবে ইস্তিঞ্জায় [প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দেয়া] যাবে তাও পরিবর্তন হয়েছে, পরিবর্তন হয়েছে তারা কিভাবে পোশাক-পরিচ্ছদ পরবে তাও; প্রশ্নটা কি কি পরিবর্তন হয়েছে তা না। বরং প্রশ্নটা হবে কি পরিবর্তন হয় নি? সবকিছুই পরিবর্তিত হয়েছে; সবকিছুরই পরিবর্তন হয়েছে। যখনই আমরা কোন সমাজে পরিবর্তন কিংবা বিপ্লবের কথা শুনি। আমরা শুনি হয় রাজনৈতিক পরিবর্তন/বিপ্লব, কিংবা অর্থনৈতিক পরিবর্তন, কিংবা সামরিক পরিবর্তন কিন্তু তা কোন ব্যক্তির দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলে না। কিংবা তা লোকজনের তার পরিবারের সাথে ব্যবহারের উপর কোন প্রভাব ফেলে না; যদি ও সরকার বা ব্যবস্থার পরিবর্তন ও হয়। সবকিছুই আগের মত থাকে।
কিন্তু, কুরআন যে পরিবর্তন নিয়ে এসেছে তার সমকক্ষতা মানব ইতিহাসে নাই। এই পরিবর্তন কেবল সামাজিক ছিল না কিংবা ক্ষুদ্র স্বার্থে ছিল না; বরং তা লোকজনের চিন্তা-চেতনাই পাল্টে দিয়েছে। কুরআন পরিবর্তন নিয়ে এসেছে ব্যক্তিস্বার্থ থেকে শুরু করে সামষ্টিক স্বার্থ; আর এর মধ্যবর্তী সবকিছুরই। আর, এসবই কুরআনকে অতুলনীয়, অপ্রতিদ্বন্ধীতায় অধিষ্টিত করে।
بَلْ هُوَ قُرْآنٌ مَّجِيدٌ
فِي لَوْحٍ مَّحْفُوظٍ
"বরং এটা মহান কোরআন, লওহে মাহফুযে লিপিবদ্ধ।" [সুরা বুরুজঃ২১-২২]
বিষয়: বিবিধ
১৯২০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন