আমরা কি প্রস্তুত?
লিখেছেন লিখেছেন আত্মসমর্পিত ০৫ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৮:১৮:০৩ রাত
২৬ শে জানুয়ারী ২০০১, রিখটার স্কেলে ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্প। গুজরাট ভূমিকম্পের মধ্যে পৃথিবী দেখলো এক ভয়াবহ বিপর্যয়। মূহুর্তেই মারা গেলো ২০০০০ লোক, আহত হলো ১৬৭০০০ লোক আর ধ্বংস হলো প্রায় ৪০০০০০ ঘরবাড়ি!
২৬ শে ডিসেম্বর ২০০৪, পৃথিবীকে আবারো হতবাক করে দিলো আরেকটি ভূমিকম্প; এবারের মাত্রা ৯.১। এবারের ভূমিকম্প এতই প্রবল ছিলো যে তা পৃথিবীকে তার অক্ষ থেকে ১ সে.মি সরিয়ে দিলো। আর তা ছিলো ইন্দোনেশিয়ান সুনামি [Tsunami]; মূহুর্তেই মারা গেলো ১৪ টি দেশজুড়ে ২৩০০০০ লোক!
৮ ই অক্টোবর ২০০৫, পৃথিবী আবারো শন্কিত হলো আরেকটি ভূ-কম্পন দ্বারা; আর এবার আক্রান্ত হলো কাশ্মীর। এবারের ভূ-কম্পনের মাত্রা ৭.৬। মূহুর্তেই শান্তিপূর্ণ এলাকাটি পরিণত হলো মৃতদেহের স্তুপে; ৭৫০০০ র ও বেশী লোক মারা পড়লো। এই বিপর্যয়ে শহর আর গ্রামগুলোর চিহ্ন মুছে গেলো মূহুর্তেই!
১১ই মার্চ ২০১১, বছর দুয়েক আগের কথা। এবার জাপান ভূমিকম্প; যা এসেছিলো সুনামিরূপে। আর পৃথিবী হতবাক হলো আরেকবার! এবারের সৃষ্ট ভূ-কম্পনের ফলে পানির ঢেউ উঠেছিলো ৩৮.৯ মিটার পর্যন্ত; ধ্বংস হয়েছিলো ১২৫০০০ ঘরবাড়ি। এবারের ভূ-কম্পনের মাত্রা ৯.১। এবারে মৃতের সংখ্যা ১৫০৯৩।
উপরের এই উপাত্তগুলো আমরা সবাই আমরা কম বেশী জানি; আমার উদ্দেশ্য, আমার লক্ষ্য কেবল তত্ত্ব আর উপাত্ত উপস্থাপন নয়, সংখ্যা আর পরিসংখ্যান বর্ণনা নয় বরং এর উদ্দেশ্য আমাদের প্রত্যেকেরই বুঝার জন্য, প্রত্যেকেরই উপলব্ধির জন্য, প্রত্যেকেরই অনুধাবনের জন্য; এ সকল বিপর্যয়ের মধ্যে সাদৃশ্য, এ সকল বিপর্যয়ের মধ্যে সামন্জস্য, এ সকল বিপর্যয়ের শিক্ষা।
এ সকল বিপর্যয়ে সাদৃশ্য কি?
এ সকল বিপর্যয়ের বৈশিষ্ঠ্য কি?
এ থেকে আমরা কি শিক্ষা পাই;
এ সকল হৃদয়বিদারক, অশ্রুসজল, ব্যাথাতুর বিপর্যয় থেকে?
আমরা এই প্রশ্নের উত্তর আরেকটি প্রশ্ন দিয়ে খোঁজার চেষ্টা করি।
বিপর্যয়ে নিহত এই সকল লোকেরা কি ভেবেছিলো তাদের সময় শেষ?
তারা কি জানতো এটাই তাদের জীবনের শেষ দিন?
তারা যখন কর্মোদ্দীপনায় মেতেছিলো, তারা কি জানতো তাদের জন্য পরমূহুর্তে কি অপেক্ষা করছে?
এর সহজ-সরল উত্তর: না !
কেননা মৃত্যু এমন এক পঞ্চভূত [Phenomenon]; যা অপ্রত্যাশিত আর অননুমেয়। যে কোন মূহুর্তই হতে পারে আপনার-আমার শেষমূহুর্ত। হতে পারে একজন ঘুমোচ্ছে [sleeping], খাচ্ছে [eating], হাটছে [walking], বলছে [talking], পড়ছে [studying],
ব্যায়ামরত [exercising], পরছে [dressing], কিনছে [shopping], খেলছে [playing], relaxing, chillaxing, bopping or enjoying his life; সে হয়তো জানে না তার সময় শেষ।
একটা উদাহরণ দেই: হাঙ্গরীর ফুটবল খেলোয়াড় Miklos Feher যে পর্তুগীজ ক্লাব বেনফিকার লীগ ম্যাচে নেমেছিলো বদলি হিসেবে আর খেলার একমাত্র গোলে সহায়তা করেছিলো। ইনজুরি টাইমের অতিরিক্ত সময়ে রেফারি হলুদ কার্ড দেখালে, বাকা হাসি দিয়ে পিছন ফিরছিলো। আর হঠাৎ ছন্দপতন আর মাঠেই হার্ট আট্যাকে মারা গেলো। সতীর্থ আর বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়রা নিজেদের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলো না! মাত্র চব্বিশ বছর বয়সেই মৃত্যুকে আলিঙ্গন করলো সে।
আর মৃত্যুকে কিছুই রোধ করতে পারে না; কোন শক্তি কিংবা ক্ষমতা। কোন শারিরীক, চিকিৎসাশাস্ত্রীয়, অর্থনৈতিক, রাসায়নিক, প্রাযুক্তিক কিংবা জৈবিক শক্তি। এক মূহুর্তের জন্যও নয়।
কেননা, আল্লাহ্ তা’আলা নিজেই বলেছেন:
“وَمَا كَانَ لِنَفْسٍ أَنْ تَمُوتَ إِلاَّ بِإِذْنِ الله كِتَابًا مُّؤَجَّلاً”
“আর আল্লাহর হুকুম ছাড়া কেউ মরতে পারে না-সেজন্য একটা সময় নির্ধারিত রয়েছে।“ [সুরা আলে-ইমরান:১৪৫]
আর, এটাই প্রতিষ্ঠিত সত্য যে মৃত্যু যে কোন সময়ে, যে কোন স্থানে, যে কোন ভাবে আসতে পারে; যে কোন রূপে, যে কোন উপায়ে!
কিন্তু প্রশ্ন হলো: “আমরা কি মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত?”
আমরা কি এমন জীবন-যাপন করছি যাতে পরকালের পাথেয় সংগ্রহ করছি নাকি আমরা দুনিয়ার ধোঁকায় পতিত হয়েছি?
আমরা কি এই দুনিয়ায় মত্ত নাকি পরকালের জন্য?
আপনাদেরকে এমন একজনের উদাহরণ দেই, যে দুনিয়ার জন্য বেচেছিলো। আর যাদের জানা নেই তাদের জ্ঞাতার্থেই জানাচ্ছি, সে আলেক্সন্ডার দি গ্রেট। যাকে পৃথিবীর সর্বকালের ইতিহাসে একজন অন্যতম সফল কমান্ডার হিসেবে স্মরণ করা হয়। মানব ইতিহাসের বৃহত্তম এক সাম্রাজ্যের অধিকারী; আর তা মাত্র ত্রিশ বছর বয়সেই। অথচ এই আলেক্সজান্ডারই মৃত্যুশয্যায় শায়িত অবস্থায় অদ্ভুত এক ইচ্ছা পোষণ করেছিলো।
আর তা হলো:
”Bury my body and don't build any monument. Keep my hands out so the people know the one who won the world had nothing in hand when he died.”
এই হচ্ছে তার অবস্থা; যার দুনিয়ায় সবই ছিলো। আর আমরা?
আপনার থাকতে পারে বিলাসবহুল বাড়ী, দামী পোশাক, লাভজনক ব্যবসা, আকর্ষণীয় স্ত্রী, দামী গাড়ী, সামাজিক উচ্চ অবস্থান, সবচেয়ে ভাল বেতনের চাকরি, সম্মানজনক ডিগ্রী, ঈর্ষান্বিত হওয়ার মত গ্রেড, impressive of CVs, the most affable of associates, the most ecstatic of happiness and the most safe of security…
কিন্ত যখন মৃত্যুর সময় উপনীত হবে এ সবকিছুই পিছনে পড়ে থাকবে। কেবল আমাদের ভাল আ’মালসমুহই সাথে যাবে।
Narrated Anas bin Malik:
Allah's Apostle said, "When carried to his grave, a dead person is followed by three, two of which return (after his burial) and one remains with him: his relative, his property, and his deeds follow him; relatives and his property go back while his deeds remain with him." [521,Vol:6,Book:76]
সাহাবীরা এই বিষয়টি সবচেয়ে ভালভাবে উপলব্ধি করেছিলেন; আর তাই তাদের জীবন ছিলো আখিরাহ্-কেন্দ্রিক।
কিন্তু আমরা কি তা উপলব্ধি করছি; মৃত্যুর এই বাস্তবতা।
আমরা কি প্রস্তুত?
বিষয়: বিবিধ
১৩৫৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন