আবদুল্লাহ্ ইবন উম্মু মাকতুমের উত্তরসূরী

লিখেছেন লিখেছেন আত্মসমর্পিত ২৮ মে, ২০১৩, ০২:০৭:৫২ দুপুর

কুরাইশ নেতাদের দাওয়াহ্ দিচ্ছিলেন রাসূলুল্লহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। দাওয়াহ্'র খুবই সংবেদনশীল মূহুর্তে এক অন্ধ ব্যক্তি এলেন; রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট কিছু জিজ্ঞেস করতে আর রাসূলুল্লাহ্ ঈষৎ ভ্রু কুঞ্চালেন। আর সাথে সাথে নাযিল হলো সুরা আবাসার প্রথম দশ আয়াত:

”তিনি ভ্রূকুঞ্চিত করলেন এবং মুখ ফিরিয়ে নিলেন। কারণ, তাঁর কাছে এক অন্ধ আগমন করল। আপনি কি জানেন, সে হয়তো পরিশুদ্ধ হত, অথবা উপদেশ গ্রহণ করতো এবং উপদেশ তার উপকার হত। পরন্তু যে বেপরোয়া, আপনি তার চিন্তায় মশগুল। সে শুদ্ধ না হলে আপনার কোন দোষ নেই। যে আপনার কাছে দৌড়ে আসলো এমতাবস্থায় যে, সে ভয় করে, আপনি তাকে অবজ্ঞা করলেন।“ [সুরা আবাসা: ১-১০]

আর এই সাহাবীর নাম ছিলো আবদুল্লাহ্ ইবন উম্মু মাকতূম রাযিআল্লহু আনহু। যিনি পরবর্তীতে যে কোন প্রশ্ন করলে রাসূলুল্লাহ্ অধিক মনযোগসহকারে শুনতেন। অত্যন্ত উচুদরের সাহাবী ছিলেন। প্রথমদিকে ইসলাম গ্রহণকারীদের একজন। মুয়াযযিন ছিলেন আবার রাসূলুল্লাহ্’র অনুপস্থিতিতে মদিনায় দায়িত্বশীল ছিলেন।

আজ তার উত্তরসূরীদের একজনের সাথেই পরিচয় করিয়ে দিতে চাই। তার নাম 'আবু হাফসা' আবদুল মালিক ক্লেয়ার। জন্ম ৮ই জুন ১৯৭৫, কানাডার টরেন্টো, অন্টারিওতে। তিনি জন্মান্ধ।

যদিও ছোটবেলায় অন্ধদের বিশেষ স্কুলে পড়াশুনা করেছেন দশ বছর বয়স পর্যন্ত এরপর স্বাভাবিক স্কুলেই চলে আসেন। আর মাত্র নয় বছর বয়সে অপেশাদার মুষ্ঠিযুদ্ধে [wrestling] যোগ দেন। মুষ্ঠিযুদ্ধ ছিলো তার ধ্যান-জ্ঞান আর পেশাদার মুষ্ঠিযোদ্ধারা তাকে আকর্ষিত করতো। আর তা এতোই বেশী যে, তিনিই প্রথম পেশাদার অন্ধ মুষ্ঠিযোদ্ধা হওয়ার প্রচেষ্টায় ছিলেন।

আর ১৬ বছর বয়সে তিনি আলেক্স হ্যালির লিখা ‘Roots’ বইটি পড়েন; যাতে সংক্ষেপে ইসলামের আলোচনা করা হয়েছে। আর এই ধর্মের লোকজনের এক ঈশ্বরের শরীকবিহীন উপাসণা তাকে নাড়া দেয়। যদিও তিনি আইরিশ ক্যাথলিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন আর ঈসা আলাইহিস সালামকে যেখানে ঈশ্বরের পুত্র [নাউযুবিল্লাহ্] বলে সাব্যস্ত করে। কিন্তু ইসলামে এই ধরনের কোন ধারনা নেই। আর ‘Roots’ বইটি পড়ে তিনি আরো একজন অসাধারণ ব্যক্তিত্বের সংস্পর্শে আসেন; তিনি হলেন ম্যালকম এক্স। তার দ্যুতি আর কথাবার্তার ধরন তার জীবনে নিয়ে আসে নতুন উদ্দীপণা। খুবই মনেপ্রাণে তখন মুসলিম হতে চাইছিলেন। আর যতবেশী সম্ভব এই জীবনব্যবস্থা সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জন করতে লাগলেন।

আর ১৯৯৬ সালে মুষ্ঠিযুদ্ধের ২৯ ম্যাচ অপরাজিত থাকা এক অসাধারণ মৌসুমে এক মুসলিমাহ্’র সাথে তার দেখা হয়। আর খুবই সংক্ষিপ্ত আলোচনায় তার লক্ষ্য অর্জিত হয়; তিনি মুসলিম হন।

তাকে লোকেরা বলতো, তুমি অন্ধ তুমি এসব করতে পারবে না। তখন সে তার মাকে বললে, তার মা বলেন: "You are not blind; you just can't see." [তুমি অন্ধ নও; তুমি তো কেবল দেখতে পাও না।]

পরবর্তীতে ইসলাম গ্রহণের পর কুরআনে যখন তিনি পড়লেন: "তারা বধির, মূক ও অন্ধ। সুতরাং তারা ফিরে আসবে না।" [সুরা বাকারাহ্:১৮] তাকে বেশ তাড়িত করলো এই উপলব্ধি।

"তারা কি এই উদ্দেশ্যে দেশ ভ্রমণ করেনি, যাতে তারা সমঝদার হৃদয় ও শ্রবণ শক্তি সম্পন্ন কর্ণের অধিকারী হতে পারে? বস্তুতঃ চক্ষু তো অন্ধ হয় না, কিন্তু বক্ষ স্থিত অন্তরই অন্ধ হয়। " [সুরা হাজ্জ:৪৬]

যে ব্যক্তি অন্ধ হয়েও ধৈর্য্যধারণ করে সে জান্নাতে যাবে।

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি: ‘‘আল্লাহ তা’লা বলেন, ‘আমার বান্দাকে তার দু’টি প্রিয় বস্তু (অর্থাৎ চোখ) কেড়ে নিয়ে পরীক্ষা করি। অতঃপর সে ধৈর্য্যধারণ করে। আমি এ দু'টোর পরিবর্তে তাকে জান্নাত দান করি’’। [বুখারী]

আর, ১৯৯৮ সাল থেকে তিনি লোকসন্মূখে অসাধারণ আর অবিস্মরণীয় জীবনব্যবস্থা নিয়ে কথা বলতে শুরু করেন। আর এরমধ্যেই, ২০০২ সালে তিনি মুষ্ঠিযুদ্ধের ট্রেনিং স্কুলে পেশাদার হিসেবে সুযোগ পান। আর এতে তার আগ্রহ কমে যাওয়ায় এই পেশা পুরোপুরিই ছেড়ে দেন। আর তিনি দেশে দেশে ঘুরে বেড়ান আর ইসলামের উপর বক্তব্য রাখেন আর পৃথিবীর সবচেয়ে সম্মানিত পেশায় যুক্ত হয়ে নিজেকে ধন্য মনে করেন।

তিনি ১৯৯৭ সালে একটি আরবী ব্রেইল কুরআন উপহার পান আর তখন থেকেই এটা পড়ে আসছেন। ব্যক্তিগতগত জীবনে বিবাহিত সুখী আর মার্জিত এই লোককে আল্লাহ্ তা’আলা ইসলামের উপর মৃত্যু দান করুন। আর আমাদেরকে তার সুন্দর উদাহরণ থেকে পাথেয় আহরণের তাওফীক দিন। আমীন।



নিচের ভিডিওটি দেখতে পারেন:

https://www.youtube.com/watch?v=RLfDEFBFhi0

তথ্য সংগ্রহ:

১. https://www.facebook.com/AbuHafsahAbdulMalikClare?ref=stream

২. https://www.youtube.com/watch?v=RLfDEFBFhi0

বিষয়: বিবিধ

১৩০৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File