ধর্ষণের সংস্কৃতি ও শকুনেরা

লিখেছেন লিখেছেন আত্মসমর্পিত ২৩ এপ্রিল, ২০১৩, ০৭:০০:০০ সন্ধ্যা

পত্রিকায় প্রতিদিন ধর্ষণের সংবাদ আসছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের The Gujarat Samachar পত্রিকা এভাবে লিখেছে: '2012 : THE YEAR OF RAPES'। যেহেতু মিডিয়ায় একটি সংবাদ প্রচারণা পেয়েছে তাই ধর্ষণের পরিসংখ্যান, সমীক্ষা, করণীয়, প্রতিবাদ-সমাবেশ ইত্যাদি নিয়ে পুরো মিডিয়া জগতে এর হিড়িক পড়েছে। এটাই মিডিয়াপাড়ার স্বভাবজাত চরিত্র; আর এতেই মানুষের আবেগ উঠানামা করে। অথচ পূর্ববর্তী বছরগুলোতে ধর্ষণের হার মোটেই কম ছিলো না অথচ মিডিয়া কাভারেজের অভাবে তা আমাদের নজর কাড়ে নি। এই চিত্র পাশ্ববর্তী দেশ ভারতের। আর এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আমাদের দেশে ও ঘটে গেলো চলন্ত বাসে এক নারীকে ধর্ষণের ঘটনা। অবাধ আকাশ সংস্কৃতি আর সেই সুবাদে বেশ্যায়ণের বিশ্বায়ণে আমাদের শোয়ার ঘর পর্যন্ত পৌছে গেছে নগ্নতা; এর মূল্য চুকাতে হবে প্রজন্ম প্রজন্মান্তরে নারীদেরকেই; ধর্ষিতা মারা যাক কিংবা লোকলজ্জার ভয়ে চুপ থাক; তার প্রতিবাদ-প্রতিরোধ ও স্তিমিত হয়ে আসে। গতকালের যে খবর মিডিয়ায় চাউর ছিলো আজ তার আর কাটতি নাই। মিডিয়ায় সংবাদ চ্যানেলকেও যে টি.আর.পি’র [T.R.P] হিসেব কষতে হয়; আর যারা প্রতিবাদ করবে তাদের সেই অন্তর্নিহিত শক্তি আর মনোবল নেই কারণ তাদের অধিকাংশই নগ্নতার সমাজের ধ্বজ্জাধারী; উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে শাহরূখ খানদের কথা। যারা পর্দায় নগ্নতা আর অশ্লীলতার প্রসার ঘটায় আবার ধর্ষিতার জন্য সমবেদনা জানায়; দ্বিমুখীতা আর কপটতা এর চেয়ে সুস্পষ্ট হয় না। কিংবা আমাদের দেশের ‘প্রথম আলো’; যারা বিবাহ্’বহির্ভূত সম্পর্ককে উৎসাহ দেয় কিংবা পতিতাদের অধিকার নিয়ে কথা বলে কিন্তু তাদের পত্রিকায় আর সেই সকল মানবাধিকার কর্মীদের মুখে হিজাবপরিহিতা কিছু মুসলিমাহ্’কে গ্রেপ্তার প্রসঙ্গ নিয়ে এতটুকু উচ্চবাচ্য নেই।

এই ধরনের ধর্ষণের ঘটনা ঘটতেই থাকবে; হয়তো তার এক-কিয়দংশ ও মিডিয়া কাভারেজ পাবে না। আমাদের দেখতে হবে এই ধর্ষণ সংস্কৃতির শকুন কারা কিংবা কোন সেই সংস্কৃতি যা ধর্ষণের শকুন তৈরী করছে?

অনুরূপভাবে, The Gujarat Samachar ২৮.১২.২০১২ইং তে প্রতিবেদন তৈরী করেছে, যাতে এভাবে বলেছে যে: “এমন কি মৃত্যুদন্ড ও ধর্ষণ বন্ধে সহায়ক হবে না…”, যে কারণটি তারা উল্লেখ করেছে তা সত্যিই চিন্তার: “৯০% এর ও অধিক ধর্ষণ সংঘটিত হয়েছে ভিমটিমের পরিচিত লোক দ্বারা!!!”

এইটা আকাশে ঘুড়ি উড়ার মতো কোন ভাসমান মন্তব্য নয় বরং অনেকগুলো এন.জি.ও [NGO] আয়োজিত সম্মেলনে উচ্চারিত মন্তব্য। খুবই সতর্কতার সাথে উক্তিটি আবার পড়ুন। এটা দ্বারা বুঝা যায়, বেশ কিছুদিন ভিকটিম তার [সুযোগসন্ধানী দুর্বৃত্তের] আশেপাশে ছিলো। সে তার পোশাক-পরিচ্ছদ, গড়ন, গতিবিধি পর্যবেক্ষণ আর তাকে নিয়ে কুপরিকল্পনার যথেষ্ট অবকাশ পেয়েছিলো। সে তার উপস্থিতিতে কৌতুক করেছে, তার মনযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করেছে। আর যখন তাকে একাকীত্বে পেয়ে বসে তখন কুপ্রস্তাবনায় রাজি না হলে জোর প্রয়োগ করে বসে। আর এমন কিছু দৃশ্য আমরা পর্যালোচনা করে দেখতে পারি:

-মেয়েটি সাহসী হলে সে পাল্টা আক্রমণ করবে আর আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নিকট অভিযোগ করবে,

-আর যদি মেয়েটির ওই ধর্ষক পুরুষের সাথে প্রেমের সম্পর্ক থাকে তবে সে তা লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ার ভয়ে তার বন্ধু কিংবা পিতা-মাতার নিকটও প্রকাশ করবে না । এই ধর্ষণকে বলা হয় ‘ডেইট রেইপ’ [Date Rapes]; মেয়ে তার ছেলেবন্ধুর দ্বারা আক্রান্ত হওয়া।

- মেয়ের কোন প্রেমের সম্পর্ক নেই কিন্তু তার আবেদনময়ীতার কারণে ও আক্রান্ত হতে পারে দুর্বৃত্ত দ্বারা।অনেক মেয়েই তা ধীরে ধীরে বুঝতে সমর্থ হয়। ১৯৯৩ সালে University of Mary Land এ Female students of Arts এর ছাত্রীরা ক্যাম্পাসের সকল ছাত্রের নাম Potential Rapists এর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছিলো; কেননা ওই সেমিস্টারে ছাত্রদের দ্বারা date rapes এর মাধ্যমে যৌন হয়রানি বেড়ে গিয়েছিলো। আর ওই স্কুলের ছাত্রসংখ্যা ছিলো ৩২০০০!!!

[ http://community.seattletimes.nwsource.com/archive/?date=19930508&slug=1700105 ]

-আর কোন মেয়ে যদি তার পরিচিতজন দ্বারা আক্রান্ত হয় তবে সে লোকলজ্জার ভয়ে তা আর বলতে সাহস পায় না।

-আর যদি দুর্বৃত্তকে আটক করা হয়, এই পরিসংখ্যান দেখলে বুঝা যায়, খুব অল্প সংখ্যকই শাস্তি পায় আর এর ফলে অনেকে এই ধরণের নির্যাতনের পরও অভিযোগ করতে ভয় পায় কিংবা পিছিয়ে আসে।


কিছু কিছু সংস্কৃতি, গানে-উপন্যাসের মাধ্যমে এবং আরো নানাভাবে মেয়েদের এই জঘণ্য আচরণে উৎসুক করে তোলা হচ্ছে। আর এই গলাকাটা মিডিয়ার প্রতিযোগিতায় বিনোদন অনেক বেশী আগ্রাসণে ভরপুর হয়েছে। শুধু খেলাধুলার মাঠে নয়; শোয়ার ঘরের দৃশ্যে ও। যা গোপনে চার দেয়ালের মধ্যে যথাযথভাবে দরজা লাগিয়ে পর্দা নামিয়ে করার বিষয় তাই ক্যামেরা ক্রুর সামনে নির্লজ্জভাবে ধারন করা হচ্ছে, ক্ষুধার্ত দর্শকদের জন্য। যে সাধারণ ম্যাগাজিনগুলোতে ঘরোয়া বিষয় নিয়ে শত শত প্রবন্ধ ছাপা হতো তারা ও অর্ধনগ্ন ছবির পোস্টার সেঁটে দিচ্ছে কাটতির জন্য। আর এই আগ্রাসী বিনোদনের ফলই চুকাতে হচ্ছে। অথচ সবাই বলে যৌন নিপীড়ণ কমানোর কথা আর নারীবাদীরা তো কেবল এই বিষয়েই কাজ করেন অথচ সাফল্যের কোন লক্ষন নেই; যা অপরাধ পরিক্রমা দেখলেই সুস্পষ্ট হয়। আর এখন অনেকে শোর তুলছে ধর্ষককে মৃত্যদন্ড প্রদানের।

মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা কি সত্যিই ধর্ষন রোধ করতে পারে?

-এর উত্তর নির্ভেজাল "হ্যা" কিংবা নির্ভেজাল "না" হবে না। আপনাদের বোঝার জন্য একটু সহজ করে দিই। যখন ডাক্তার আপনাকে কোন ঔষধ প্রেসক্রাইব করে, সে সকল জীবাণু মারার জন্য যা আপনাকে সর্দিতে আক্রান্ত করেছে; সাথে সাথে তিনি আপনাকে ঠান্ডা পানীয় পান থেকে ও নিষেধ করে। সুতরাং, এখানে দুটো ব্যাপার বোঝা যাচ্ছে; প্রতিষেধক [ঔষধ] আর প্রতিরোধ [ঠান্ডা পানীয় পান থেকে বিরত থাকা]। এই দুটো ব্যাপারই ধর্ষনের সাথে সম্পৃক্ত। লোকজন আজ যার জোর দাবী জানাচ্ছে; তার প্রস্তাবণা ইসলাম দিয়েছে ১৪০০ বছর আগে।

”মহিলাদের শালীন পোশাক পরিধান আর ধর্ষককে মৃত্যুদন্ড প্রদান। যাতে রয়েছে প্রতিষেধক আর প্রতিরোধ উভয়ের প্রয়োগ।“


[কৃতজ্ঞতা: ইংরেজী প্রবন্ধ অবলম্বনে]

বিষয়: বিবিধ

১৩২৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File