হরলিক্স

লিখেছেন লিখেছেন আহসান সাদী ২৫ জুলাই, ২০১৫, ১২:৪৭:৩০ রাত

ছোটবেলায় অনুবাদ বই পড়তাম খুব। মার্ক টোয়াইন ছিলেন আমার বেশ পছন্দের। 'অ্যা কানেক্টিকাট ইয়াঙ্কি ইন কিং আর্থারস কোর্ট' বইটা অনেকবার পড়া হয়েছিলো। হাস্যরসাত্নক বইটার মূল বিষয়বস্তু ছিলো এরকম- উনিশ শতকের এক আধুনিক যুবক হ্যাঙ্ক মর্গান দুর্ঘটনাবশত ষষ্ঠ শতকের ব্রিটিশ কিং আর্থারের সময়কালে পৌঁছে যায়। তার সাথে দেখা হয় স্বয়ং কিং আর্থারের। সে সময়টায় টিকে থাকার জন্যেই হোক আর পরিবর্তনের দৃঢ় ইচ্ছার কারণেই হোক, হ্যাঙ্ক মর্গান তার আধুনিক প্রযুক্তিজ্ঞান ব্যাবহার করে চেষ্টা করতে থাকে সমাজকে আরো উন্নত করার। আর্থারের সময়টাতে মানুষ অনেক পশ্চাদপদ জীবনযাপন করতো এবং তাদেরকে নানান ভয়-ভীতির মাধ্যমে আতংকিত করে রাখা হতো। কাহিনীর ভিলেন ছিলো যাদুকর মার্লিন। সমাজের মানুষ এমনকি খোদ কিং আর্থারও মার্লিনকে ভয় পেতো খুব। মার্লিনের মূল শক্তিটা ছিলো কিছু সাধারণ ম্যাজিক ট্রিক্স এবং তার সাথে মানানসই পাওয়ার অফ স্পিচ। এরকম একটা অবস্থায় হ্যাঙ্ক মর্গানের সাথে যাদুকর মার্লিনের ঝামেলা বেঁধে যায়। হ্যাঙ্ক মর্গান বুঝতে পারে মার্লিনের ধোঁকাবাজিটা সবার সামনে নিয়ে আসতে পারলে মানুষের মন থেকে এই অযথা ভীতি এবং মানসিক নির্ভরশীলতা দূর করা সম্ভব। কাহিনী এই সূতো ধরে এগিয়ে যেতে থাকে তবে আমি আর এগোচ্ছি না।

অজ্ঞ জাতি যখন আলোকিত হয়ে উঠে সমাজ তখন এগিয়ে যাওয়ার কাজটা শুরু করতে পারে। আলোকিত হবার আগে এই যাত্রা কখনোই শুরু হবার নয়।

সেদিন আমার পরিচিত একজন বলছিলো তার শরীর খারাপ। খুব দুর্বল লাগছে। আমি পরামর্শ দিলাম রেস্ট নেবার এবং এ ব্যাপারে সে ছিলো একমত। কথা প্রসঙ্গে জানালো ইতোমধ্যে সে একটা বিরাট হরলিক্স জার কিনে ফেলেছে। তার শরীরের শক্তি ফিরে না এসে আর নাকি উপায় নেই। আমি জানতে চাইলাম হরলিক্সকে ঔষধ গোছের কিছু বা সাপ্লিমেন্ট ভাবার কোনো কারণ আছে কি না। সে জানালো অসুস্থতায় হরলিক্স সেবন খুব উপকারী এবং এটা সমাজের মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত নিয়ম। কালচারের কাছাকাছি।

বাসায় একদিন হরলিক্স পান করছিলাম। প্রায় সমবয়সী এক

আত্মীয় প্রশ্ন করলো, 'কি খাও'?

বললাম, 'হরলিক্স খাই'।

অবাক হয়ে বললো, 'একি! তুমি অসুস্থ নাকি? হরলিক্স তো রোগীদের খাবার'।

এটা তো তবে কালচারই!

টলার, স্ট্রংগার, শার্পার হবার শর্টকাট হিসেবে হরলিক্স, কমপ্ল্যান ইত্যাদিকে আমাদের সমাজে বেশ সমীহ করা হয়। ভোক্তা যেখানে বাই ডিফল্ট মানসিকভাবে এমন দূর্বল তবে তাকে মার্কেটিংয়ের চতুর মার্লিনরা অবলীলায় ঠকাবে এটা বেশ স্বাভাবিক। হরলিক্স অথবা কমপ্ল্যান খুব সুস্বাদু গুঁড়ো দুধ যাতে মজাদার ফ্লেভার ইত্যাদি মেশানো হয়। কাহিনী এখানেই শেষ। এটাকে তারা যেভাবে আমাদের কাছে উপস্থাপন করতে চাইছে সেটা ধোঁকাবাজি। আমাদেরকে রোগ সারিয়ে নেবার সহজলভ্য পথ্য এবং বাচ্চাকে টলার, স্ট্রংগার, শার্পার বানানোর লোভ অন্ধ বানিয়ে ফেলেছে এবং এই মানসিক সীমাবদ্ধতাগুলোর ফায়দাটা অনৈতিকভাবে মার্লিনরা লুটে নিচ্ছে। আমাদের দেশে অবাধে তারা তাদের পণ্যের পাবলিসিটি করে প্রতারণার উপর ভিত্তি করে।

বৃটিশ পত্রিকা দ্যা টেলিগ্রাফে একটা আর্টিকেল ছাপা হয়েছিলো। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, An advertisement on British television, that Horlicks makes children "taller, stronger, sharper," were rejected in a ruling by the UK Advertising Standards Authority.

ভারতে টলার-স্ট্রংগার ক্যম্পেইন যখন তুমুল সমালোচনার মুখে পড়ে সেই সময়টাতে এই রিপোর্টটা প্রকাশ করা হয়। একজন নামকরা বিজ্ঞাপন নির্মাতার একটা মন্তব্য তারা উল্লেখ করেছে যেখানে তিনি বলেন, "In a country like India, where a vast population lives on meagre salaries, such advertisements shift their focus from basic needs to more luxurious products. The Advertising Standards Council of India should take notice of these misleading advertisements and completely ban them."

এক্ষেত্রে আমরা খুব নির্বিকার। এটা নিশ্চয়ই আমাদের সহনশীলতার জন্যে না!

বিষয়: বিবিধ

১৭৫৭ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

331463
২৫ জুলাই ২০১৫ রাত ০১:২৩
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : যখন পড়ছি মনে হচ্ছে, হরলিক্স-ই খাচ্ছি। ধন্যবাদ অনেক দিন পর আপনার লেখা পেলাম,,আশাকরি নিয়মিত হবেন..
২৭ জুলাই ২০১৫ রাত ০৮:২৯
274294
আহসান সাদী লিখেছেন : হরলিক্স খান সমস্যা নেই তবে কি, টলার, স্ট্রংগার, শার্পার হবার আশায় কিংবা রোগ সারাবার পথ্য হিসেবে না খেলেই হয়!

ধন্যবাদ।
331465
২৫ জুলাই ২০১৫ রাত ০১:৩৩
শেখের পোলা লিখেছেন : শুধু সনশীলতার জন্য নয় নির্বুদ্ধিতার জন্যও বটে৷ গরীব দেশেই এ গুলো চলে বেশী৷ বন্ধ হওয়াই উচিৎ৷ধন্যবাদ৷
২৭ জুলাই ২০১৫ রাত ০৮:৩০
274295
আহসান সাদী লিখেছেন : এটা ঠিক। এসব প্রোডাক্টের দামটাও খুব চড়া। মরার উপর খাড়ার ঘা টাইপ ব্যাপার।
331467
২৫ জুলাই ২০১৫ রাত ০১:৫৫
বার্তা কেন্দ্র লিখেছেন : ভালো লাগলো ...ভাইয়া, অনেক ধন্যবাদ।
২৭ জুলাই ২০১৫ রাত ০৮:৫০
274298
আহসান সাদী লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ।
331475
২৫ জুলাই ২০১৫ সকাল ১০:৩২
হতভাগা লিখেছেন : বিদেশী প্রোডাক্টের ব্যাপারে আমাদের চিন্তা ভাবনা আলাদা । একই কথা প্রযোজ্য ফেয়ার এন্ড লাভলি এর ক্ষেত্রে ।
২৮ জুলাই ২০১৫ রাত ০২:৪৩
274339
আহসান সাদী লিখেছেন : ফেয়ার এন্ড লাভলীও একই কাজ করে।
331480
২৫ জুলাই ২০১৫ সকাল ১১:৩৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : এই হরলিক্স না আনায় আমাকে আমার বউ আর শশুড়বাড়ির কাছে এই জন্য অভিযুক্ত হতে হযেছে যে আমি নাকি আমার মেয়ের যত্ন নিচ্ছি না!!!!
হরলিক্স এর এই মিথ্যা বিজ্ঞাপন যতটুক জানি ভারতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। প্যাকেট গুঁড়াদুধ এবং খাঁটি দুধ এর চেয়ে অনেক বেশি চলে হরলিক্স,কমপ্লান,বুস্ট এর মত অপ্রয়োজনিয় খাবারগুলি। আবার আমাদের মধ্যে প্রচলিত কিছু ধারনাও এর জন্য দায়ি। শুধু দুধ অনেক শিশুই খেতে চায়না। তাদের কে দুধে চকলেট বা অন্য কোন ফ্লেভার দিলে খায়। কিন্তু চিিনি ছাড়া দুধ খাওয়াতে আমাদের অভিভাবকরা মারধোর করবেন আর একটু চিনি দিয়ে দুধ না দিয়ে মহানন্দে হরলিক্স খাওয়াবেন! এই কোম্পানিগুলি সবসময়ই তাদের প্রোডাক্ট এর সাথে কিছু কিছু ফ্রি দেয়।
২৯ জুলাই ২০১৫ সকাল ০৬:৪৭
274641
আহসান সাদী লিখেছেন : এটাকে স্রেফ একটা ফ্লেভার্ড মিল্ক হিসেবে দেখতে পারলে তো ভালোই হতো। মানুষ এখানে সীমাবদ্ধ থাকতে চায়নি। কোম্পানীগুলো এই সুযোগটা লুফে নিলো। আর ফ্রি দেয়ার ব্যাপারটা চমৎকার বলেছেন।

আপনার মন্তব্যটা লেখার মূল বিষয়বস্তুকে সমৃদ্ধ করেছে। ধন্যবাদ।
331496
২৫ জুলাই ২০১৫ দুপুর ০৩:০৮
চাটিগাঁ থেকে বাহার লিখেছেন : হরলিক্সের বিষয়টি অনেকটা্ সত্য । এখনও মানুষ রুগি দেখতে গেলে একটি হরলিক্স হাতে রাখে ।
২৯ জুলাই ২০১৫ সকাল ০৬:৫২
274642
আহসান সাদী লিখেছেন : এই হরলিক্স আবার আন্তরিকতার একটা স্ট্যান্ডার্ড। রোগী দেখতে হরলিক্স নিতে গেলে যেই খরচটা হয়,তাতে আন্তরিকতাটাও যেনো ছিটকে বেরোয়।

আমার খুব প্রিয় এই ড্রিংকসটির এমন বিশেষায়িত ব্যাবহার হরলিক্সের প্রতি বেশ অভিমানী করে তোলে।

ধন্যবাদ বাহার ভাই।
332123
২৮ জুলাই ২০১৫ রাত ০৩:৫২
বৃত্তের বাইরে লিখেছেন : যে বয়সে হরলিক্সের বৈয়ামে হাত ঢুকিয়ে খেয়েছি তখন পুষ্টিগুণ না বুঝে এমনি এমনি খেয়েছি। বিজ্ঞাপন চমকের ব্যাপার তো রয়েছেই-ছোট, বড় সবার ক্ষেত্রেই এক । রোগীকে পথ্য হিসেবে হরলিক্স দেয়াটা এটাই প্রমান করে । কিন্তু উপায় না থাকলে কি করবেন! ফ্রেশ মিল্ক নিলে রোগী ফরমালিনের ভয়ে আরো আধ মরা হয়ে যাবে, ফল ও তো এখন কেউ খেতে চায়না। তাই উপায় না দেখে মন্দের ভালো মনে করে খায়
২৯ জুলাই ২০১৫ সকাল ০৭:০৭
274643
আহসান সাদী লিখেছেন : খাবার হিসেবে হরলিক্স সুস্বাদু, এতে কোনো সন্দেহ নাই। বলছিলাম প্রতারণার ব্যাপারটা। এবং বলছিলাম অবচেতনে মনের গহীনে আমাদের প্রতারিত হবার দু্র্দান্ত ইচ্ছেটার কথা আর এই দূর্বলতার সুযোগে কারো কিছুটা কামিয়ে নেবার কথা।

আপনাকে ধন্যবাদ।
340751
০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ১১:১৩
ঘুম ভাঙাতে চাই লিখেছেন : যেখানে এদেশের বোকা মেয়েদেরকে ফেয়ার এন্ড লাভলি ফর্সা বানাচ্ছে সেখানে হরলিক্স বাচ্চাদের টলার, স্ট্রংগার, শার্পার বানাতেই পারে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File