পাগল সংসর্গ এবং একটি শিক্ষাসফর
লিখেছেন লিখেছেন আহসান সাদী ১৮ মে, ২০১৫, ০৭:৫৩:৪৯ সন্ধ্যা
আমার এক পরিচিত পাগল আছেন (ছিলেন)। উনাকে আমি প্রথম দেখি বাসে আমার সহযাত্রী হিসেবে। ঘটনাটা লন্ডন সিটিতে। তখন 'সামার' চলছে। গরম ছিলো খুব। পাগল লোকটা বাসে উঠে আবোল-তাবোল কথাবার্তা বলছিলো এবং সীটে না বসে বাসের ভেতর ঘোরাঘুরি করছিলো। উনি যে একজন পাগল সেটা সহজে বোঝা যায়নি। আমার বন্ধু ধারণা করেছিলেন, গরমে হয়তো সাময়িকভাবে লোকটা পাগল হয়ে গেছে। পাগল সাহেবের পাগলমী তীব্রতর হতে থাকলো। একপর্যায়ে তিনি তার শার্ট খুলে ফেললেন। বেপরোয়াভাবে বাসে ঝাপাঝাপিও শুরু করলেন। উনার ক্রমবর্ধমান তান্ডব দেখে আমাদের ভুলটা ভেঙে গেলো। বুঝতে পারলাম যে তিনি পার্ট টাইম না, একজন ফুলটাইম পাগল। আমরা বিব্রত এবং মৃদু আতংকিত অবস্থায় পরের স্টপেই নেমে পড়লাম (ঘটনাটা আমাদের দেশে হলে অবশ্য পাগল সাহেবকেই বাস থেকে নিশ্চিতভাবে নামতে হতো। ঘটনাটা বিলেতের। বিলেতে আবার পাগলদের বেশ কদর)।
প্রথম পরিচয়ের ঠিক পরেরদিন জুমআ'র সালাতের পর বাসে উঠলাম। বাসের দুই তলায় উঠা মাত্রই আমার পূর্বপরিচিত পাগল মশাইয়ের সাথে দেখা। পাগল সাহেবও বোধহয় আমাকে চিনতে পারলেন। আন্তরিক অনুরোধ করলেন উনার আশপাশে বসার জন্যে। উনি নাকি ইরাক-সিরিয়া-আইসিস-ক্রাইসিস ইত্যাদি নিয়ে আমার সাথে আলাপ করবেন। আমি উনার তীব্র অনুরোধ নির্দয়ভাবে উপেক্ষা করলাম। পেছেনর দিকে গিয়ে বসলাম। এদিন আবার পাগল সাহেব বেশ আলাপী মেজাজে ছিলেন। উনার পাশের সীটে বসা একজন ইউরোপিয়ানের সাথে তাই উনি আলাপ শুরু করলেন। আমি এবং আমার বন্ধু আড়ি পেতে শুনতে চেষ্টা করলাম। বুঝলাম, পাগল সাহেব বিদ্ধান লোক। তিনি মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতির বেশ ভালোই খবর রাখেন। ইউরোপিয়ান লোকটি কিছুই বুঝতে পারছিলো না। একপর্যায়ে পাগল সাহেবকে জানালো যে সে নিউজ দেখে না কিংবা এতোসব খবর রাখে না। এই শুনে পাগল সাহেব বেশ মজা পেলেন। বললেন, 'নিউজ দেখো না মানে! নিউজ তো সবচাইতে বড় এন্টারটেইনমেন্ট মেইট। নিউজ না শুনলে তোমারে এন্টারটেইন করবে কে'!
পাগল সাহেবের রসবোধ প্রবল। উনার কথাটায় অবশ্য ওজন আছে বেশ। এই বাণীর সাথে দ্বিমত পোষণ করার কোনো কারণ আমি অন্তত খুঁজে পাই নি। আমাদের দেশীয় এবং বিশ্বরাজনীতির রসিক রাজনীতিবিদদের রসালো কীর্তির নিয়মিত নিউজগুলো পড়ে তীব্র 'বিনোদন' পাই এবং প্রাসঙ্গিকভাবে লন্ডনের বাসে আমার সেই পরিচিত পাগল সাহেবের ওজনদার কথাটা মনে পড়ে যায়।
মাঝে মাঝে অনলাইনে পত্রিকা পড়ি। পড়তে হয়। মানুষ হিসেবে সবারই বিনোদনের প্রয়োজন আছে।
বিষয়: বিবিধ
১৪৪৭ বার পঠিত, ২৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমি খোশ মেজাজে পাগল পেলে কিছু খাওয়াতে চেষ্টা করি ।
আমার পরিচিত এই পাগলের অবশ্য খাদ্য সমস্যা থাকার কথা না। ওই যে বললাম, 'ওদেশে পাগলদের বেশ কদর'।
আপনাকে ধন্যবাদ বাহার ভাই।
০ পাগল সাহেব কোন ভাষায় কথা বলেছিলেন যে ইউরোপিয়ান লোকটি বুঝতে পারছিল না , অথচ আপনারা বুঝতে পারছিলেন ?
আপনাকে ধন্যবাদ।
আপনার মন্তব্যের জবাবটা তাহলে বাহার ভাই ইতিমধ্যে দিয়ে দিয়েছেন।
সারা বিশ্বেই দেখি একি অবস্থা!
আমাদের চারপাশে অনেক আনন্দ উপকরণ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। উপভোগটাই বাকী কেবল! কি বলেন?
আমাদের দেশের পাগল সম্পর্কে একটা কথা প্রচলিত আছে।
পাগলে কি না বলে,
ছাগলে কি না খায়?
বিলেতে কি ওটা প্রচলিত আছে বা পাগল সম্পর্কিত অন্যকোন প্রবাদ?
-Weihui Zhou এই ভদ্রমহিলা একজন চায়নিজ এবং কথাটা খারাপ বলেন নাই।
ধন্যবাদ সাদী ভাইয়া ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন