মেঝোপাখ্যান
লিখেছেন লিখেছেন আহসান সাদী ০৫ মে, ২০১৫, ০২:৪১:৪২ রাত
অনলাইন পাত্রিকাগুলো আমার বেশ পছন্দের। পৃথিবীর অদ্ভুত সব বিষয়গুলোতে তাদের রয়েছে সীমাহীন আগ্রহ! তাদের সবগুলো কথা অবশ্য চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করাটা বিচক্ষণ ব্যাপার না। অনলাইন পত্রিকাগুলো মূলত মূল বিষয়টা মুখে তুলে দেয়ার কাজ করে, বাকীটা আপনাকে নিজ দায়িত্বে ইন্টারনেট ঘেঁটে জেনে নিতে হবে। হরেকরকম বিষয় মুখে তুলে দেয়ার অসামান্য যোগ্যতাটার জন্যে অনলাইন পত্রিকাগুলোর প্রতি আমি বিশেষ কৃতজ্ঞ। আমাদের বাসায় এখন কোনো পত্রিকা রাখা হয় না। একটা সময় স্থানীয় এবং জাতীয় মিলে মোট পাঁচটি পত্রিকা আসতো বাসায়। আমাদের বাসায় পত্রিকা পাঠ চলতো তাই সারাদিন। মাঝে মাঝে মানবজমিন পত্রিকাও পড়ার সৌভাগ্য হতো। বিভিন্ন জাতীয়/আন্তর্জাতিক আলোচিত বিষয়ে বাকী সব পত্রিকাগুলোর শিরানামগুলোতে যখন ঝড় চলছে, মানবজমিনের শিরোনাম তখন 'কে এই জাহানারা ' টাইপের কিছু একটা। এমন ব্যতিক্রমের প্রয়োজন আছে সম্ভবত। অনলাইন পত্রিকাগুলো মানুষের এই ব্যাতিক্রম কিছুর (হোক সেটা তুচ্ছ) চাহিদাটা সম্ভবত সাফল্যের সাথে ধরে ফেলতে পেরেছে।
সেদিন ফেইসবুকে দেখলাম, কেউ একজন একটা অনলাইন পত্রিকার নিউজ শেয়ার করেছে। সংবাদটার শিরোনাম ''যে ৫ টি কারণে পরিবারের মেজো সন্তানেরা সবার চাইতে আলাদা ''।
হোয়াট এ টপিক!! নতুন ট্যাব খুলে সংবাদটা পড়লাম এবং আনন্দের সাথে চিন্তার কিছু খোরাক পেলাম। এই মহান গবেষণাটা কে বা কারা করেছেন সেটা অবশ্য রিপোর্টটাতে উল্লেখ করা হয়নি তবে পরিবারের মেঝো হওয়ার কারণে ব্যাপারটা আমার কাছে এমনিতেই ইন্টারেস্টিং ছিলো এবং মেঝোদের নিয়ে যেসব ভালো ভালো কথা এখানে বলা হয়েছে সেগুলো কেনো যেনো আমার খুব বিশ্বাস করে ফেলতে ইচ্ছে হচ্ছিলো। লেখাটাতে পরিবারের মেঝোদের সম্পর্কে বলা হয়েছে,
১) মেজো ছেলেমেয়েরা সম্পর্কের মূল্য অনেক বেশি ভালো বুঝে থাকে।
২) আত্মনির্ভরশীল মানুষ হয়ে গড়ে উঠেন বাবা-মায়ের মেজো সন্তান।
৩) সবার সাথে সহজে মিশতে পারার ভালো গুনটি থাকে মেজো সন্তানদের মধ্যেই।
৪) ছোটো-বড় সকলকেই সঠিক মূল্যায়নে পরিচালনা করতে পারেন মেজোরাই।
৫) মেজো সন্তানেরা অনেক বেশি সৃজনশীল হয়ে থাকেন।
তো, এই চমৎকার কথাগুলো বিশ্বাস করতে আমার কেনো ইচ্ছে হবে না! আমি নিজেও যে পরিবারের মেঝো সন্তান!
এই নিউজটা পড়ার পর নিজ উদ্যোগে প্রায় মিনিট দশেক আমার বন্ধুদের নিয়ে একটা গবেষনা চালালাম। গবেষণা করতে গিয়ে আবিষ্কার করলাম আমার বন্ধুদের মধ্যে সবাই হয় তাদের পরিবারের বড় ছেলে অথবা সেঝো কিংবা ছোট। কয়েকটা মেঝো পেলাম তবে তারা দুই সন্তানের মাঝে দ্বিতীয়, মূলধারার মেঝো না। এই মেঝোদেরকে বাদ দিয়ে আমি মোটামুটি বিপদেই পড়লাম। আপন বন্ধু থেকে শুরু করে সৎ কিংবা দূরসম্পর্কের বন্ধু পর্যন্ত গবেষণা করেও পর্যাপ্ত পরিমাণ মেঝো আর পাওয়া গেলো না।
যাদেরকে পেলাম তাদের মধ্যে একজন থাকে ইংল্যান্ডের ডার্বিতে, দ্বিতীয়জন অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে, তৃতীয়জন আমেরিকান এবং চতুর্থজন আমার (প্রায়) মিতা। তার নামটা সে লেখে ঈ-কার দিয়ে আর আমি লিখি ই-কার দিয়ে, পার্থক্য বলতে স্রেফ এটুকুই। এই চাররত্নের সবাই আমার স্কুলবন্ধু। পত্রিকায় উল্লেখ করা পাঁচটা বিষয়ের দুই-একটা অবশ্যই তাদের সাথে মিলে যায়। চতুর্থ বন্ধুটির মধ্যে সৃজনশীলতার ব্যাপারটা অবশ্য তুলনামুলকভাবে একটু বেশী পরিমাণে বিদ্যমান। এই বন্ধুটি যখন কথা বলে তখন চুপ থাকাটাই উত্তম। তার কথাবার্তা খুব সৃজনশীল। এটা কেবল শোনার ব্যাপার না, এতে দেখারও অনেক আছে। তার শব্দচয়নগুলো যেনো মহান কোনো ক্লাসিক শিল্পকর্ম এবং তার চিন্তার ধরণটা বড় ইউনিক। পৃথিবীর যেকোনো বিষয়ে তার সরলরৈখিক দৃষ্টিভঙ্গি সবাইকে প্রায়ই বাকরুদ্ধ করে ফেলে। তার কথায় সেই বঙ্কিমযুগে ফেলে আসা বাংলা (অথবা সংস্কৃত) শব্দগুলো ফিরে ফিরে আসে এবং তার হাসিটা শিশুদের মতো নিষ্পাপ। আমি দেখেছি সে আপন মনে কথা বলছে এবং সামনে বসে যারা তার কথা শুনছে তারা গড়াগড়ি খেয়ে হাসছে। মুখ থেকে বর হওয়া কথাগুলোর জন্যেই কেবল নয়, বিষয়বস্তুর সাথে মানানসই বডি ল্যাঙগুয়েজ, কন্ঠের উত্থান-পতন এবং চোখেমুখে কথা বলতে পারার ফুটে ওঠা আনন্দ এই সবকিছু মিলিয়ে তার সঙ্গটা বড় অমূল্য আমাদের কাছে। আমার এই বন্ধুটির এমন সৃজনশীল কথা, চিন্তা এবং বর্ণনার ইউনিক স্টাইল যখন আবিষ্কার করি তখন ঘোষণা করেছিলাম তাকে ছাড়া আমি কোনোদিন আর কোনো ট্যুরে যাবো না!
মেলবোর্ন, ডার্বি এবং আমেরিকাবাসী বন্ধুর মধ্যে এক, দুই এবং তিন নম্বর গুণটা প্রবলভাবে বিদ্যমান। আমি আমার বন্ধুদের মাঝে খুব বেশী মেঝো খুঁজে পাই নি তবে ওই পাঁচটি গুণ আলাদাভাবে দেখেছি অনেক। নিশ্চয় দুর্দান্ত কিছু মেঝোরা আমাদের আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন। কারো পরিচিত কোনো অসামান্য মেঝো থাকলে একটু জানানোর অনুরোধ থাকলো। আমি নিজে পরিবারের মেঝো সন্তান। মন থেকে চাই পত্রিকায় প্রকাশিত এই গবেষনাটা যেনো সত্য হয়। যেই পাঁচটি গুণের কথা এখানে তারা উল্লেখ করেছে, আমার মধ্যে এবং আজকের পৃথিবীতে সেগুলো বেশ দূর্লভ। প্রার্থনা করি এই পাঁচটি গুণ ছড়িয়ে পড়ুক মেঝো থেকে বড়, সেঝো, ছোটো, শিশু, বৃদ্ধ, মামা, চাচা, শিক্ষক, ছাত্র, বড়লোক, মহাজন, মহল্লার মুদির দোকানদার, আইসক্রীমওয়ালা, সচিব, আমলা সবার মাঝে। অস্থির এই সময়টায় এটুকুনই খারাপ কী!
বি.দ্র.
১. পত্রিকায় মেজো লেখা হয়েছে 'জ' দিয়ে, আমি লেখেছি মেঝো। আমার মনে হয় 'ঝ' দিয়ে লেখাটাই সঠিক।
২. উৎসাহী কেউ পুরো সংবাদ পাঠ করে আরো বেশী সময় নষ্ট করতে চাইলে প্রথম কমেন্টে দেয়া লিংক ফলো করতে পারেন।
বিষয়: বিবিধ
১৪৩০ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
" মাইজ্জা খায় ভাইজ্জা"
এটা কি ওই গবেশনায় নাই ভাইয়া?
আমি এটারও প্রুফ পেয়েছি।
তবে আমার মেঝোটার ভিতর ১ ও ৩ এর কিছুটা ঘাটতি আছে। আরেকটু বড় হলে হয়তো বুঝা যাবে।
আমিও পড়েছিলাম ঐ আর্টিকাল টি! আমার দেখা মেজদের সাথে তেমন মিল চোখে পড়ে নি!
মেজ - ছোট বা বড় বলে কথা নেই আমরা প্রত্যকেই নির্দিষ্ট জীনের দ্বার নিয়ন্ত্রিত, চারপাশের পরিবেশ থেকে গ্রহন করা শিক্ষা অনেকাংশে প্রভাব ফেলে আমাদের ব্যক্তিচরিত্রের উপর!
সুন্দর সুকোমল বৃত্তির উপর আপনার চরিত্র বিকশিত হোক শুভকামনা রইলো!
গবেষণা আমার ভালো লাগে। বেশীরভাগ গবেষণায় কোনো ফলাফল আসে না এবং ক্ষেত্রবিশেষে ভুল ফলাফল আসে। এ স্বত্বেও গবেষণার প্রয়োজন আছে। মানুষকে এভাবেই তৈরী করা হয়েছে।
আমি শেষপর্যন্ত গবেষণার পক্ষে। সৃষ্টির সেরা জীব যদি গবেষণা না করে তবে করবেটা কে!
আপনাকে ধন্যবাদ।
সময় হলে আফরোজা হাসানের লিখা পড়ার অনুরোধ রইলো!
Click this link
আপনাকে ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন