অপেক্ষা

লিখেছেন লিখেছেন আহসান সাদী ২৬ এপ্রিল, ২০১৫, ০৩:২৩:০৬ রাত

একদিন এক বয়স্ক ভদ্রমহিলা আমার কাজের জায়গায় এসেছিলেন। নর্থ লন্ডনের ওই এলাকায় সাউথ এশিয়ান লোকজন খুব একটা দেখা যেতো না। মহিলা ছিলেন একজন পাকিস্তানী। যাইহোক, উনাকে সালাম দিলাম। কুশল জানতে চাইলাম। তিনি স্মিত হেসে বুঝিয়ে দিলেন ভালো আছেন। কী জানি জানতে চাইলেন উর্দু কিংবা হিন্দিতে (আমার কাছে এই দুইটা ভাষার পার্থক্য করা কঠিন। শুধু মেলোডির পার্থক্যটা ধরতে পারি। উর্দুটা বেশ সুরেলা, হিন্দি তুলনায় খানিক কর্কশ)। আমি উনার কথার জবাবে হিন্দি অথবা উর্দুতে কিছু বললাম। ভদ্রমহিলার চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। নিজ ভাষায় কথা বলতে পারবেন এই আনন্দে ভেসে ভেসে তিনি জানতে চাইলেন এটা সেটা।

আমাদের দেশে হলে আমি অবলীলায় উনাকে খালা কিংবা চাচী বলে সম্বোধন করতাম কিন্তু উর্দু/হিন্দী ভাষায় এমন পরিস্থিতিতে কী সম্বোধন করা হয় সেটা নিয়ে মনে মনে গবেষণা করছিলাম। কোনো সিদ্ধান্তে আসতে না পারায় সাময়িক সমাধান হিসেবে 'আন্টি' শব্দটি দিয়ে কাজ চালিয়ে গেলাম। জানালাম আমি এক বাংলাদেশী। তিনি জানালেন তাঁদের আদি নিবাস পাকিস্তান। পাকিস্তানের করাচী এবং তার ছেলের বউ বাংলাদেশী, বাংলাদেশের সিলেটে তাঁদের বাড়ী। আন্টিদের পুরো পরিবার আসছে শীতে বাংলাদেশে বেড়াতে যাবেন। আমার সাথে কথা বলে তিনি বেজায় খুশী। আমার প্রায় সকল বিস্তারিত জেনে নিলেন। কতদিন যাবৎ ওদেশে আছি, ভাইবোন কতজন, থাকি কোথায় এবং আমার ভাই-ভাতিজার কুশল ইত্যাদি বিষয়ে অতি অল্প সময়ে আমাকে অনেক বিস্তারিত বলতে হলো। তিনিও তার পরিবার সম্পর্কে বললেন। উনার ছেলেমেয়েরা কে কী করে, কয়জনের বিয়ে হয়েছে এমন অনেক টুকটাক কথা বললেন এবং এটাও জানালেন যে উনার ছোট মেয়ের বিয়ে দিতে চান, তার জন্যে পাত্র খুঁজছেন। আমার সম্পর্কে অনেক বিস্তারিত জানতে চাওয়ার একটা পর্যায়ে প্রশ্ন করে বসলেন, 'শাদী কারলিয়া ব্যাটা'? আমি লাজুক মুখে বললাম, 'আভিতাক তো নেহি আন্টিজি'। তিনি তখন জেনে নিলেন আমি কখন এবং কোন কোন দিন কাজে যাই। তিনি শিগগিরই আমার সাথে আবার দেখা করতে চান।

আমার সাথে উনার কথোপকথন এবং উনার চেহারার উচ্ছাসটুকু অনুবাদ করে আমি যা বোঝার বুঝে নিলাম। আমার সমবয়সী চাচাতো ভাই নাজমুল এবং আমি ছিলাম সহকর্মী। ভদ্রমহিলা চলে যাবার পর আমি সরাসরি তাঁর কাছে গেলাম এবং ঘটনাটা খুলে বললাম। এই ঘটনাটা দুজনের মধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করলো।

সেদিনের পর থেকে আমরা দুজন প্রায়ই ভদ্রমহিলার অপেক্ষায় থাকতাম। কবে তিনি আবার আসবেন, কাকে সাথে নিয়ে আসবেন, আদৌ আসবেন কি না এমন নানান বিষয় আমাদের ব্যাস্ত রাখতো বেশ! নাজমুল প্রায়ই একে-ওকে দেখিয়ে বলতো 'উনিই কি সেই আন্টি নাকি'? আমি চট করে তাকাতাম। নাহ, এরা সবাই ছিলো অন্যকেউ। আমাদের অপেক্ষা চলছিলো কিছুদিন। নাজমুল এবং আমার সেই কর্মক্ষেত্র থেকে বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যাবার সময় ঘনিয়ে এলো।

তিনি আর আসেন নি।

বিষয়: বিবিধ

১১৬৫ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

316895
২৬ এপ্রিল ২০১৫ সকাল ০৫:৫৪
সাদাচোখে লিখেছেন : চমৎকার ছোট গল্প! মাশাআল্লাহ্‌।
২৭ এপ্রিল ২০১৫ রাত ০২:০৪
258193
আহসান সাদী লিখেছেন : জনাব, এটা কোনো গল্প নয়। জীবন থেকে নেয়া। একদম অর্গানিক ঘটনা।
316906
২৬ এপ্রিল ২০১৫ সকাল ০৯:৫০
সুমন আখন্দ লিখেছেন : ভালো লাগলো
২৬ এপ্রিল ২০১৫ দুপুর ১২:৪৩
258084
আহসান সাদী লিখেছেন : ভাই, এমন কষ্টের কাহিনীটা আপনার ভালো লাগলো! বড় পাষাণ তো আপনি! Happy
316928
২৬ এপ্রিল ২০১৫ দুপুর ১২:৩৯
আফরা লিখেছেন : আপনার জন্য বড়ই আফসুস লাগছে ।ধন্যবাদ Good Luck Good Luck Good Luck
২৭ এপ্রিল ২০১৫ রাত ০২:০৩
258192
আহসান সাদী লিখেছেন : ধন্যবাদটা কোন জায়গায় ফিট হবে? আমি কৃতিত্বের সাথে কষ্ট পেয়েছি এজন্যে, নাকি আমি শেষপর্যন্ত রবার্ট ব্রুসের মতো অধ্যবসায় চালিয়ে অপেক্ষা করে গেছি সেজন্যে?
২৭ এপ্রিল ২০১৫ দুপুর ১২:৪৮
258274
আফরা লিখেছেন : ধইন্যা পাতা তো তিনটা দিয়েছি ভাইয়া, ২টা দিয়েছি আপনি যে ২টা বলেছেন সেজন্য আরেকটা দিয়েছি আপনার কষ্ট + অধ্যবসায় এর গল্প আমাদের সাথে শেয়ারের জন্য ।

এবার বুঝেছেন ভাইয়া ।
316934
২৬ এপ্রিল ২০১৫ দুপুর ০১:২৬
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : চমৎকার ছোট গল্প! মাশাআল্লাহ্‌ ভালো লাগলো আপনার লেখা। সাথে আপনার উপস্থিতিও।
২৭ এপ্রিল ২০১৫ রাত ০২:০০
258190
আহসান সাদী লিখেছেন : গল্প নয়। এটা জীবন থেকে নেয়া। একদম অর্গানিক ঘটনা। (একটা মন খারাপের ইমো বাছাই করে নিন)
316954
২৬ এপ্রিল ২০১৫ দুপুর ০৩:১৬
চাটিগাঁ থেকে বাহার লিখেছেন : বড়শি ফেলে বার বছর অপেক্ষা করতে হয় । Give Up Give Up
২৭ এপ্রিল ২০১৫ রাত ০১:৫৭
258188
আহসান সাদী লিখেছেন : বলেন কী! এখন তো বড়শী ফেলার সময়টাও নাই। টু লেইট।

ভাইজান, আপনি কত বছর বয়সে বড়শী ফেলছিলেন? শৈশবেই?
317054
২৭ এপ্রিল ২০১৫ রাত ০২:৩২
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : আসসালামুআলাইকুম!
বেশ মজা পেলাম পড়ে!

কিছু দিন আগে একটা গ্যাদারিং এ বাংলাদেশি প্লাস পাকিস্থানী কিছু পরিবারের সাথে সময় কাটিয়েছিলাম! বলা বাহুল্য বেশিরভাগ পাকিস্থানীরা সাহিত্যরস, আনন্দফুর্তিতে টইটুম্বর হয়! কিছু আনম্যারেড মেয়েরা ছিলো! এক কথায় ডানাকাট পরী! যে কেউ দেখলেই পছন্দ করবে! কিন্তু এদের ইসলামের বেসিক শূন্যের কোঠায়! ভাবছিলাম যে কেউ পছন্দ করে ওদের বিয়ে করতে একটুও ভাববে না কিন্তু এই মেয়েটা(যে কোন দেশের,যে কেউ হতে পারে) যে কিছুই জানেনা ইসলামী জীবনব্যবস্থা সম্পর্কে কিভাবে সে নিজের, স্বামীর, সন্তানের,পরিবারের সবার এবং সবচাইতে গুরুত্বপূর্ন আল্লাহর হক আদায় করবে?

সুতরাং কাকে, কেনো বিয়ে করতে যাচ্ছেন বুঝে বিয়ে করবেন! অপেক্ষা করুন ভালো কথা তবে সঠিক মানুষটির জন্য অপেক্ষা করুন!

শুকরিয়া সুন্দর লিখনীর জন্য! Good Luck
৩০ এপ্রিল ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:২৫
258767
আহসান সাদী লিখেছেন : হুম, তা তো অবশ্যই। না বুঝে কি কেউ বিয়ে করে নাকি! যাইহোক, আমি কিন্তু অপেক্ষা করে আছি এমন না। যতটুকু লিখেছি ঠিক ততটুকেতেই গল্পটা শেষ। দ্য এন্ড। বিষয়টা সেসময় আমাকে ভাবিয়েছিলো খুব। বাংলাদেশী ছাড়া কাউকে বিয়ে করা বিষয়ে কখনো তার আগে ওভাবে চিন্তা করি নি। ঐ সময় একটা উছিলায় খানিকটা চিন্তা করেছিলাম এবং অনুভব করলাম যে আমি রেসিস্ট না। প্রধান পরিচয় হবে ধর্ম, সম্মান হবে তাকওয়ার সাথে সমানুপাতিক। আমার মনে হয় এটাই একমাত্র বিবেচ্য হওয়া উচিত। কারো রাজনৈতিক জাতীয়তা নয়। ভারতীয়, পাকিস্তানি যা ই হোক, ধার্মিক কি না সেটা হলো প্রথম প্রশ্ন।

চমৎকার মন্তব্যের জন্যে শুকরিয়া।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File