আর কতদূর?

লিখেছেন লিখেছেন আহসান সাদী ০৪ মার্চ, ২০১৩, ০৮:৩৬:৪৯ সকাল

বাংলাদেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ/ প্রায়-গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান থেকে ইদানীং যেসব ধৃষ্ঠতামূলক কথা বা কর্মকান্ড পরিচালনা করা হচ্ছে, আমার মনে হয় সেসব অবস্থানে খোদ ইবলিশকে বসালে সেও এর চাইতে খারাপ কিছু বলতে বা করতে পারতো না। একটা জাতি তার যোগ্যতা অনুযায়ী শাসক পায়। মানুষ যেমন, তার শাসকও তেমন হবে, এটাই স্বভাবিক। হুট করে একদল জঘন্য লোক এসে আমাদের দেশটাকে ইচ্ছেমতো ধ্বংশ করে ফেলতে পারছে অথবা এমন লোকজনের তান্ডবগুলো কেবল বিচ্ছিন কিছু ঘটনা, বিষয়গুলো এমন সরল নয়। একটু পেছন ফিরে তাকালে বিষয়গুলো আমাদের কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে।

আমাদের ইসলামপ্রিয় অভিভাবকরা সন্তানদেরকে ছোটবেলায় ইসলাম শিক্ষা দেয়ার চাইতে ইংরেজি মিডিয়ামে ভালো রেজাল্ট করানোর চেষ্টায় ব্যকুল থাকতেন। ধর্মপ্রাণ অভিভাবক তার সন্তানকে সুদের কারিগর হতে পারার জন্যে হাত তুলে দোয়া করতেন। মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়ন করা নিয়ে চিন্তা না করে সেটা নিয়ে উপহাস করতেন। উপযুক্ত বয়সে সন্তানকে বিয়ে না দিয়ে ব্যভিচারের রাস্তায় নামিয়ে দিতেন। সাহাবীদের জীবন না জানিয়ে হাতে তুলে দিতেন 'একশ মনীষীর জীবন কাহিনী'।

সন্তানের বিয়েতে গায়ে হলুদ করতেন। জন্মদিনে 'উইশ' করা শেখাতেন। হিন্দি সিরিয়াল বসার ঘর মাতিয়ে রাখতো। ড্রয়িংরুমের শোকেসে তাফসির বইয়ের মলাট থাকতো বিনা ব্যবহারে একদম চকচকে, শোকেসের পাশেই অনিয়ন্ত্রিতভাবে ব্যবহারের অনুমতিপ্রাপ্ত একটা টেলিভিশন। ক্ষেত্রবিশেষে সোফার পাশের কর্ণার টেবিলে একটা হারমোনিয়াম অথবা গিটার। একজন আধুনিক মুসলিম হবার চেষ্টাতেই এমন আয়োজন অভিভাবকদের।

পরিচর্যার এমন দ্বিমুখী পদ্ধতির ফলাফল আজ এমন হয়েছে যে, তরুণ প্রজন্ম মানেই 'Guns N' Roses', চে গুয়েভারার ছবিওয়ালা টি-শার্ট, আড্ডাতে চ্যাম্পিয়নস লীগ- হলিউড- রেসিংকার, ইসলাম নিয়ে কথা বললে 'মডারেট মুসলিম', মাঝে মাঝে 'শুক্রবারের নামায' আদায় করতে (স্বামর্থসাপেক্ষে গাড়ি নিয়ে) বের হওয়া, ঈদ শপিং- ঈদ ফ্যশন নিয়ে ব্যস্ততা, গার্লফ্রেন্ড- ব্রেকআপ- রিলেশন নিয়ে টেনশন! এই প্রজন্মের কাছে তবে কী আশা করা যায়।

সম্মানিত অভিভাবক, দেশের নাজুক পরিস্থিতিতে আপনি এখন প্রচন্ড বিরক্ত। হওয়াটাই তো স্বাভাবিক। আপনারা নিজেরা একদিন একলাফে জাতে উঠতে চেয়েছিলেন আর তাই হাঁটা শুরু করেছিলেন একটা ভ্রান্ত রাস্তায়। নিজের ভেতরের ধর্মবোধটা একপাশে ধরে রেখে নিজের মধ্যে রয়ে যাওয়া গেঁয়ো গন্ধটা দূর করার আশায় প্রিয় সন্তানকে অদ্ভুত এক প্রক্রিয়ায় (বাঙালী+পশ্চিমা+আধুনিক+মুসলিম) গড়ে তোলার চেষ্টা শুরু করলেন। এমন এক বেপরোয়া চেষ্টার ফসল হলো এই তরুন প্রজন্ম। অতঃপর এমন একটা প্রজন্মের আবেগকে ফেসবুক/ব্লগ/মিডিয়ায় দেশপ্রেম, 'যুদ্ধাপরাধীর বিচার চাই' জাতীয় লেখায় একলাফে আকাশে তুলে দেয়া হয়। এরপর ইসলামকে ইচ্ছামতোন অপমান করলেও সেই আবেগী প্রজন্মের কানে তা 'Freedom of Speech' এর দোহাইতে নির্দোষ মনে হতে থাকে। আপনি একজন ইসলামপ্রিয় অভিভাবক। চুলে পাক ধরে গেছে, শেষের শুরুটা অনেক আগেই হয়ে গেছে। এখন আল্লাহর ভয়টা মনে জেঁকে বসেছে খুব। ভাবছেন হজ্জ্ব করতে যাবেন, এসে বাড়ীতে বসে ধর্মকর্ম করে বাকী জীবনটা কাটিয়ে দেবেন। দেশের যা অবস্থা, বাড়ীতে বসে থাকাই উত্তম। আপনাকে বলছি, হিসেব এত সহজ না। আজ আল্লাহ, রাসূল (সাঃ) এবং তাঁর পরিবার নিয়ে খারাপ কথা বলার সুষ্ঠু পরিবেশ দেশে বিরাজ করছে। আপনিও ছিলেন এই পরিবেশ তৈরীর একজন কারিগর। জাতে উঠার মাতাল চেষ্টায় আপনি বা আপনার জেনারেশন ছিলো বেপরোয়া। আজ তাই আপনার জেনারেশনের একজন লোক পর্দা নিয়ে রসিকতা করে, আব্রাহাম লিঙ্কনের পথে হেঁটে শান্তির খোঁজ করার আহবান জানায়, অসাম্প্রদায়িক হবার উৎসাহ দেয়, ইসলামী আইনকে বর্বর আখ্যা দেয়। আপনার পরের প্রজন্ম আবু জেহেল- আবু লাহাবের মতো (হয়তো তার চাইতেও বেশী) ইসলামকে নিয়ে ঠাট্টা করে, আল্লাহকে নিয়ে উপহাস করে, রাসূল (সাঃ) কে নিয়ে অশ্লীল কথা বলে। আপনার গড়ে তোলা প্রিয় সন্তানের প্রজন্ম সমবেত হয়ে দৃপ্ত কন্ঠে ইসলামের বিরোধিতা করে, জাহেলিয়াতের সময়ের মতো ভাস্কর্য তৈরি করতে চায়, ইসলামবিদ্বেষীকে নায়কের আসনে বসায়। বিভিন্ন জেনারেশনের কর্মকান্ডের এই ধারাবাহিকতাটা কি আপনার চোখে পড়ে। একধাপ একধাপ করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠার মতো মনে হচ্ছে না!

সম্মানিত অভিভাবক, আপনি একজন আধুনিক মুসলিম হতে চেয়েছিলেন। ইসলাম আপনি পছন্দ করতেন। সেইসাথে যুগের তালে একটু গা'টাও ভাসাতে ভালোবাসতেন। থাবা-বাবা গোত্রীয় ব্লগারদের একটা অংশ আপনার তাই ভালো লাগেনি কিন্তু অন্য দিকটা বেশ ভালোই লাগতো। আপনার সন্তানের প্রজন্ম আপনার থেকে একধাপ বেড়ে সেই ঘৃণ্য লোকটাকে শহীদ বলে ঘোষণা দেয়। এটা আপনি মেনে নিতে পারেন না কারণ আপনার যথেষ্ট ধর্মীয় অনুভূতি আছে। বোধের এই ক্রমবিকাশের পেছনে আপনার কি কোনোই অবদান নেই। কথায় আছে, 'One who stands for everything, can fall for nothing'। চটুল কিছু বুলি শুনেই ডান-বাম চিন্তা না করে লাফ দিয়ে ঝাপিয়ে পড়তে প্রস্তুত এমন একটা জেনারেশন তৈরীর কারিগর হিসেবে আপনি কি আপনার দায় এড়াতে পারবেন? যখন আল্লাহ জানতে চাইবেন, কী জবাব দেবেন? জবাব রেডি তো?

মূল কথা হলো, আজ হঠাৎ করে আমাদের দেশটা খারাপ হয়ে যায়নি। দীর্ঘদিন যাবৎ ভূলপথে হাঁটলে যেমন কঠিন মাশুল দিতে হয়, আজ সম্ভবত আমরা তা'ই দিচ্ছি। 'আমাদের রাস্তাটা ভুল ছিলো' এই বোধ কি এখনও আসবে না আমাদের! মানবতার জয়গান গাইতে গাইতে রাস্তঘাটে মানুষকে কচুকাটা করা হলেও আমাদের বিবেক আশ্বস্ত হয় 'সে তো আমার দলের লোক না' এমনটা ভেবে। এই আমাদেরও তবু কান্না আসে। তবে সেটা 'জাব তাক হ্যায় জান' ছবিতে শাহরুখ খানের কষ্ট দেখে!!!

আর কতদূর?

(আরো অনেক গুছিয়ে লেখার প্রয়োজন ছিলো। অনেক বিষয় খুব বেশি পরিষ্কার করতে পারিনি। ভেঙ্গে বলতে গেলে লেখাটা বিশাল হয়ে যাবে। ত্রুটি মার্জনীয়।)

বিষয়: বিবিধ

১০৮৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File