বন্ধুকথা- ১

লিখেছেন লিখেছেন আহসান সাদী ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৭:২৮:২৮ সন্ধ্যা

মেঘালয় আমার খুব প্রিয় একটা জায়গা। বেশ ক'বার ঘুরতে গেছি সেখানে। পাহাড় আমাকে এমনিতেই টানে খুব।

একবার ইউনিভার্সিটির আমরা ক'জন বন্ধু-বান্ধব ঘুরতে গেলাম। আমাদের এক বন্ধুর জানার আগ্রহ ছিলো খুব প্রবল। সবকিছু নিয়েই তার আগ্রহ সীমাহীন। তার এই চাহিদা মেটানোর প্রক্রিয়া তাই শুরু হয়ে গেলো ভারত দেশটাতে প্রবেশের পরপরই। পাহাড়ের আঁকাবাঁকা রাস্তায় আমাদের গাড়ী চলছিলো। ড্রাইভার একজন পাহাড়ি লোক। তার সাথে আমাদের যোগাযোগ মাধ্যম ছিলো হিন্দি। আমার সর্ববিষয়ে আগ্রহী বন্ধুটির হিন্দি ভাষা সম্পর্কে জ্ঞান প্রতিটা কথার শেষে 'হ্যায়' যোগ করে দেয়া পর্যন্তই। এটুকু সম্বল করেই সেই বন্ধু জ্ঞান অর্জনে ঝাঁপিয়ে পড়লো। পাহাড়ে কোনো একটা গাছের পাতা ছিলো একদম পান পাতার মতো দেখতে। এই গাছের পাতা দৃষ্টি কেড়ে নেয় আমার বন্ধুটির। ড্রাইভারের কাছে বিস্তারিত জানতে প্রানপণ চেষ্টায় অনুবাদ করা তার প্রশ্নটা ছিলো, 'গাছকা পাতা খাতা হ্যায়'?

জানার আগ্রহের তীব্রতার কারণেই বোধহয় ভাষাগত সীমাবদ্ধতাটা মেনে নিতে সে ছিলো নারাজ। তার প্রশ্ন তাই চলতেই থাকে। ড্রাইভারের পাশের সিটেই বসা ছিলো। ভাব জমাতে আমার বন্ধু তাই ড্রাইভারের পারিবারিক জীবন নিয়ে জানতে চাইলো। কঠোর পরিশ্রমের অনুবাদ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে প্রশ্ন করলো, 'আপকা ম্যারেজ হ্যায়'?

রেস্টুরেন্টে খাওয়া-দাওয়া করছিলাম। আমার বন্ধুটি আরো খানিকটা তরকারি চেয়ে ওয়েটারকে ডাকবে। ইতিমধ্যে সামান্য কিছু শিখে ফেলা হিন্দি জ্ঞান ব্যাবহার করে নিখুঁত হিন্দিতে ডাকলো, 'এ ভাইসাব'। ওয়েটার এলো সাথে সাথেই। জানতে চাইলো কি সাহায্য লাগবে। আমার বন্ধুটির হিন্দি ভোকাবোলারি 'ভাইসাব' সম্বোধনের পরেই খালি হয়ে গেছে বিধায় চোখমুখ খিঁচিয়ে দুই হাতের ইশারায় কিছু একটা বলতে চাইছিলো। বলতে না পারার অক্ষমতায় তার ফর্সা মুখ একদম লাল হয়ে গেলো। উদ্ধার করলাম আমরা কেউ একজন। তার তরকারি সমস্যার সমাধান হলো।

সব বিষয়ে অতি উৎসাহী সেই বন্ধুটিকে আমরা আদর করে ডাকতাম পাগলা। আমাদের সেই পাগলা এখন পাবনায়। পাগল হলেই পাবনা যেতে হবে এমন কোনো কথা নেই এবং আমাদের বন্ধুটিও কোন মেইনস্ট্রিম পাগল না। পাগল ছিলো আমাদের কাছে তার আদূরে নাম। তবুও আজ তার ঠিকানা পাবনা। কাকতালীয় শব্দটা দ্বারা যা আসলে বোঝানো হয় আর কি! আমাদের সেই বন্ধুটিকে অধ্যাপনার জন্যে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েই যেতে হলো। হঠাৎ হঠাৎ ফোন করলে জানতে চাই তার অবস্থান। সে মিনমিন করে উত্তর দেয়, 'আমি তো পাবনায়'। তার মুখে এটা শুনতে কী যে সুইট লাগে!

বি.দ্র.- আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অদূরে একটা অত্যাধুনিক মানসিক হাসপাতাল আছে। সেখানে নাকি কোনো পাগল নিয়ে গেলে কতৃপক্ষ দেড়'শ টাকা বখশিশ দেয়। এই তথ্যটাও সেই অতি আগ্রহী বন্ধুর থেকে পাওয়া। ছাত্রজীবনে আর্থিক টানাটানিটা একটু অসহ্য হয়ে উঠলেই বন্ধুটিকে সেখানে নিয়ে যাবার একটা মোটামুটি সিরিয়াস কল্পনা আমরা করে ফেলতাম। টাকাকড়ির প্রবল টানাটানিতে বন্ধুর দেড়'শ টাকার মূল্যমান আমাদের আশ্বস্ত করে রাখতো সবসময়।

বিষয়: বিবিধ

১২০০ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

266543
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৪১
ফাতিমা মারিয়াম লিখেছেন : বেশ মজা লাগলো। আমার ধারণা ছিল আমিই শুধুমাত্র হিন্দিভাষার একজন বিশেষ অজ্ঞ। এখন দেখি...... Rolling on the Floor
২১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৪:৫৪
210781
আহসান সাদী লিখেছেন : ধন্যবাদ।
এমন আরো কত লোক আছে... আপনি মোটেই একা নন।
266552
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:০৩
সুশীল লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
২১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৪:৫৪
210782
আহসান সাদী লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ।
266610
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:৫০
আরোহী রায়হান প্রিয়ন্তি লিখেছেন : মজা পেলাম অনেক। আমার বোনের ছেলে দেশে গিয়ে কয়েকদিন হিন্দি কার্টুন দেখে বেশ কয়েকটা হিন্দি শব্দ শিখে এসেছে। যেমন, নেহি ছোরুঙ্গা, ইয়ে মেরা হ্যায়। মজাই লাগে ওর মুখে শুনতে। Big Grin Big Grin
২১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৪:৫৮
210783
আহসান সাদী লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম, আরে আপনি। এই ব্লেগে কেউ লেখা পড়েন না তেমন। মাঝে মাঝে কেউ পড়তে আসলে ভালোই লাগে। হঠাৎ করে পুরনো কাউকে পেলে খুবই ভালো লাগে। আছেন কেমন?

আপনার এ্যক্সিডেন্টের পর আর খুব একটা আপডেট পাই নি। আশা করি আল্লাহর রহমতে সবকিছু ঠিকঠাক চলছে। স্পেনেই আছেন?

দোয়া করবেন।
২১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:১০
210974
আরোহী রায়হান প্রিয়ন্তি লিখেছেন : ওয়ালাইকুম আসসালাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। জ্বি স্পেনেই আছি। হুমম.. ব্লগে পাঠক থাকলেও মন্তব্য বেশ কম। দোয়া রইলো। আপনিও দোয়া করবেন আমাদের জন্য। Happy
267217
২১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:১৯
আফরা লিখেছেন : বন্ধুকথা পড়ে অনেক মজা পেলাম ।ধন্যবাদ ।
২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ০৬:২৬
212559
আহসান সাদী লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ। বন্ধুদের কথা মাঝে মাঝে খুব মনে পড়ে যায়। ইচ্ছে হয় কিছু লেখার।
267759
২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ০৭:২৭
রেহনুমা বিনত আনিস লিখেছেন : এই ধরনের বন্ধুত্বগুলো সম্ভবত কলেজ ইউনির পর আর হয়না!
আপনার বইয়ের কথা মনে আছে। কিন্তু এর জন্য আমাকে বাংলাদেশে যেতে হবে। যাদের দিয়ে করাতাম তাদের সবার বিয়ে হয়ে গিয়েছে।
২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ০৬:২৪
212556
আহসান সাদী লিখেছেন : সম্ভবত।
আপনার যে মনে আছে এটাই অনেক। আমার নিজেরই যে মনে ছিলো না বইয়ের ব্যাপারটা! যখনই আপনি দেশে যাবেন আপনার থেকে বইটা কিন্তু চাই। আমি দেশে গেলেও সংগ্রহ করতে পারি তবে আপনার থেকে একটা কপি পেলে ভালো লাগবে। অনেক ধন্যবাদ আপু।
301552
২৪ জানুয়ারি ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৫১
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : বন্ধুকথা পড়ে অনেক মজা পেলাম।
আমার ব্লগে আমন্ত্রন থাকলো আসবেন সময় করে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File