কবি বলেছেন...
লিখেছেন লিখেছেন আহসান সাদী ২৬ মার্চ, ২০১৪, ০৮:১৯:৪৭ রাত
আজ কিছু বড় বড় কবিদের বলা কিছু কথার উপর একটা সামান্য রিসার্চ করা যাক।
প্রথমেই আমাদের শতকোটি টাকার জাতীয় সংগীত প্রসঙ্গে সুকান্তের সম্ভাব্য মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ। কবি বেঁচে থাকলে হয়তো উনাকে পূর্ণিমার চাঁদের দিকে শুধু শুধু তাকিয়ে থাকতে হতো না। উনার জীবনে ইন্টরেস্টিং ঘটনার অভাব ছিলো নিশ্চয়। এজন্যেই রাতের বেলা চাঁদের দিকে তাকিয়ে জীবনে বৈচিত্র আনতে চাইতেন। আজকালকার দিনে হলে সুকান্তের জীবন এতো নিরস হতো না নিশ্চিত। প্রতিদিন সংবাদপত্রে বাংলাদেশের নিত্যনতুন ইন্টারেস্টিং মুভগুলো দেখলেই কবির শুকনো জীবনে প্রচুর কমেডি সমাগম হতো। যাইহোক, বাংলার নিদারুন দারিদ্র কবির চিত্তকে বিচলিত রাখতো সবসময়। বাংলার দারিদ্র সমস্যার সমাধানে উনি পূর্ণিমার চাঁদকে পর্যন্ত খেয়ে ফেলার একটা চিন্তা-ভাবনা করেছিলেন। সেই রূপসী বাংলায় আজ শতকোটি টাকা খরচ করে গান গাওয়া হলো। দেনা শোধ করতে না পেরে বাংলার কৃষক আত্মহত্যা করতে বাধ্য হলেও এই বাংলায় শতকোটি টাকায় গান গাওয়া লাগবেই। এই কমেডির জ্বালায় উনার কবিতার কথাগুলো এমন হতেই পারতো-
'ক্ষুধার জ্বালায় দেশটি পদ্যময়,
শতকোটির জাতীয় সংগীত যেনো ঝলসানো রুটি'।
কমেডির শেষ নেই যেনো। আমরা আজ এতো সংকটের মাঝেও আল্পনা আঁকি, বিশাল পতাকা বানাই। এইসব দিয়ে আমাদের দেশপ্রেম পরিমাপ এবং প্রমাণ করি। দেশপ্রেম বিষয়টাকে আমরা একটা ধর্মের পর্যায়ে তুলে এনেছি। দেশপ্রেম চেতনায় চেতে উঠার জন্যে কিছু পাতি বুদ্ধিজীবিরা মগজ ধোলাই করে চলেন। তরুণ প্রজন্ম ধোলাই করা মগজ নিয়ে চেতে উঠে। চালিয়ে যায় হাস্যকর সব কান্ডকীর্তি। আমাদের জাতীয় সমস্যাগুলো রয়েই যায়। সমাধান হয় না কোনো ভাবেই। বরং বেড়েই চলে। দেশপ্রেমের চেতনায় চেতে উঠে করা উদ্ভট সব কীর্তির আড়ালে তিস্তার বুক চিরে তৈরী রাস্তা দিয়ে ভারতের ট্রাক চলাচলের ছবিটা যেনো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, দেশপ্রেমের ব্যপারে আমাদের উল্টোদৌড়ের হাস্যকর দৃশ্যগুলো।
বাংলায় একটা শব্দ আছে, কিংকর্তব্যবিমূঢ়। এর মানে হলো, 'কী করিতে হইবে বুঝিতে না পারা'। ভ্রান্ত চেতনায় চেতে উঠা এই জাতি যেনো আজ 'কী করিতে হইবে' কিছুতেই বুঝতে পারছে না। বাংলাদেশের এমন কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থা দেখে দ্বিজেন্দ্রলাল রায় তার একটা কবিতার লাইন হয়তো উৎসর্গ করে দিতেন। আমাদের বর্তমানকে ফুটিয়ে তুলতে খুব লাগসই হতো এই লাইনটা,
'এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি'।
কী যেনো একটা প্রবাদ আছে, 'কাকের গায়ে ময়ুরের পেখম লাগালেও কাক তো কাকই' অথবা এই ধরনের কিছু একটা। রূপসী বাংলায় আজ সবাই যেনো নিজের পরিচয় নিয়ে লজ্জিত। নেচে-কেঁদে হলেও আমাদের কালচারকে গা থেকে ঝেড়ে ফেলা লাগবে। ইনস্টল করতে হবে নতুন কিছু। ব্যাস শুরু হয়ে গেলো স্ট্রিট ড্যান্স। এই নব্য বেহায়াপনার অফিসিয়াল নাম হলো ফ্লাশ মব। মেয়েরা তো দূরের ব্যাপার, যেসব ছেলে বাসায় ছোটবেলায় নাচ-টাচ করতো তাদেরকে নিয়ে বন্ধুরা ঠাট্টা করতো খুব নির্দয়ভাবে। হিজড়া বলতেও ছাড়তো না। আজ এই বাংলার ছেলে-মেয়েরা রাস্তায় জড়ো হয়ে নাচানাচি করছে, ইউটিউবে পুরো বিশ্বকে দেখাচ্ছে আনন্দের সাথে। বেশীদিন আগের কথা না, আমার ছোটবেলায় প্রায়ই পাশের বাড়ীতে যেতাম টিভি দেখতে। শুক্রবারে আমাদের খেলাধুলার আগ পর্যন্ত মাঝে মাঝে সিনেমা দেখতে যেতাম সেখানে। সিনেমায় যখনই কোনো আপত্তিকর দৃশ্য বা গান চলে আসতো তখনই সাদা-কালো টিভির স্ক্রিনটা কালো করে দেয়া হতো। এই চর্চাটা সব ঘরেই ছিলো মোটামুটি। মন্দের মধ্যে এইটুকুন ভালো অন্তত আমাদের সমাজে ছিলো। আজ বৈঠককখানায় সগৌরবে চলে B4U। ফ্লাশ মব তারই অফিসিয়াল ফলাফল। এই ঘটনায় যারা ভাবছেন দেশ রসাতলে গেছে, তাদের সাথে আমি একমত নই। আমার মতে এটা তো কেবল শুরু। ঐ যে ঐশীর ঘটনা, নিজের মা-বাবাকে মেরে ফেলেছিলো যেই আধুনিক মেয়েটি আর এইসব ফ্লাশমব, এগুলো কেবল শুরু। আমরা যে এখনও অনেক পিছিয়ে, বাংলাদেশ তো কেবল অনুসরণ করছে। যেতে হবে বহুদূর। আরো অধঃপতন বাকী রয়ে গেছে। আমাদের পাতি বুদ্ধিজীবিদের মতে দেশ এগিয়ে চলছে। এটা চলমান প্রক্রিয়া, চলছেই কেবল। বুদ্ধিজীবিরা তাদের বুদ্ধির সবটুকু দিয়ে এই প্রক্রিয়া সচল রাখছেন।
রবীন্দ্রনাথের পর্যবেক্ষন তীব্র ছিলো। সম্ভবত ভবিষ্যত সম্পর্কে তিনি বেশ ভালো একটা ধারণা লাভ করেছিলেন। এমনি এমনি তো আর বলেননি,
'সাত কোটি বাঙালীর হে মুগ্ধ জননী
রেখেছো বাঙালী করে,
মানুষ করো নি'।
বিষয়: বিবিধ
১১৯৩ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন