শিল্পী সংসর্গ

লিখেছেন লিখেছেন আহসান সাদী ৩০ অক্টোবর, ২০১৩, ০৯:৩৮:০৮ রাত

কিছু মানুষ আছে যাদের লেখা পড়লে চোখ বড় বড় হয়ে যায়। তাদের বর্ণনা হয় অসাধারণ আর ভাষাটা হয় পরিশীলিত। আমার খুব ভালো লাগে এমন বর্ণনাশিল্পীদের লেখাগুলো। আরো কিছু লোক আছে যারা লেখায় নয়, কথা বলায় পারদর্শী। দৈনন্দিন ঘটনাবলীকে এত্ত চমৎকার বর্ণনা আর উপস্থাপনায় সাজাতে পারেন, মনে হয় তাদের কথা শুনতে থাকি সারাদিন। এমন মানুষের মুখে একটা সাধারণ কথাই আলাদা একটা সৌন্দর্য প্রকাশ করতে থাকে। বাক্য তৈরী, শব্দচয়ন, নিখুঁত উচ্চারণ, প্রকাশভঙ্গি (বডিল্যাংগুয়েজ) এবং মানানসই টাইমিং-হিউমার, সোজা কথা একটা কমপ্লিট প্যাকেজ। আমার এম.বি.এ. কোর্সে আমি এমন দুই দুইজন কথাবলা শিল্পীর সাথে পরিচিত হতে পেরেছি। এই দুজনের কথা বলার ধরণ দুই ধরণের। একজন একদম আবৃত্তিকারদের মতো, একদম নিখুঁত উচ্চারণ আর কবিতার মতো করে চমৎকার শব্দ চয়ন করে কথা বলেন এবং অন্যজন ক্ল্যাসিক্যাল গদ্যের মতো করে কথা বলেন। দুজনের ক্ষেত্রে যেটা 'কমন' থাকে তা হলো 'হিউমার'। প্রথমজনের নাম সায়মন আর ক্ল্যাসিক্যাল ভাইটির নাম আরিফ। আজকে ক্লাসিক্যাল দিকটায় একটু জোর দিচ্ছি কারন আরিফ ভাইয়ের শৈল্পিক কথামালা থেকে দুয়েকটা আমি উল্লেখ করবো একটু পরেই। উনি মাঝে মাঝে ফেসবুকে কিছু মন্তব্য করেন এবং সেকারণে আমি কিছুটা শেয়ার করার সুযোগ পাচ্ছি। সায়মন ভাইয়ের কথাগুলো আবার এভাবে লিখে প্রকাশ করার সুযোগ নেই। উনার কথার সৌন্দর্য অনুভব করতে হলে সরাসরি শোনার বিকল্প নেই। আগেই বলেছি উনার কথা বলার মূল সৌন্দর্য নিখুঁত উচ্চারণ আর মানানসই শব্দচয়ন। উচ্চারণের বিষয়টা তো আর লিখে প্রাকাশ করা যাবে না। অতএব আরিফ ভাইয়ের দুয়েকটা ক্লাসিক্যাল বাণী শেয়ার করাই উত্তম। উনার বাড়ী বাগেরহাট জেলায়। উল্লেখ্য, আব্দুল্লাহ আবূ সায়ীদের বাড়ীও বাগেরহাটে। আরিফ ভাইকে আমি প্রায়ই বলি বাগেরহাটের সবাই কি তবে আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদের মতো করে কথা বলে নাকি!

ফেসবুক থেকে নেয়া আরিফ ভাইয়ের কয়েকটা মন্তব্য তুলে দিলাম (যদিও উনার বাস্তবে বলা কথাগুলোর সিকিভাগ তীব্রতাও এখানে প্রকাশ হবেনা, তবুও),

১. ছোটবেলায় নৌকায় উঠলে ভয়ে মসজিদে টাকা মান্নত করতাম।এখন আর নৌকায় চড়িনা, প্রয়োজন হয়না।অদুর ভবিষ্যতে নৌকার বিলুপ্তি ঘটবে ইন শা আল্লাহ ।আমারদেশ হবে সেতুমাত্রিক দেশ, সারা দেশ জুড়ে থাকবে পদ্মাসেতু।



২. একদা আমি গোসসা করিয়া বলিয়াছিলাম যে, আমি এক চুলও লড়িব না। কিন্তু আমাকে চুল ধরিয়া লাড়াইয়া দেওয়া হইছিল।



৩. কিছুদিন আগে এক বন্ধু ছারপোকার ভয়াবহতা বর্ণনা করতেছিল আর আমি অবিশ্বাস নিয়ে শুন্তেছিলাম।যাইহোক আমার অবিশ্বাস দূর হয়ে গেল একটু ইন্টারনেটে ঘাটাঘাটি করার পর।

----এদের জন্মই মানুষের রক্ত চোষার জন্যে।এদের হাত থেকে রেহাই পাওয়া খুবই দূরূহ একটা ব্যাপার।সবচাইতে দূর্ভাগ্যজনক বিষয় হল এদের সমূলে নিধন করা প্রায় অসম্ভব, সব মেরে ফেললেও যদি এক্টা ডিমও কোথাও রয়ে যায়, তাতেই কিছুদিন পরে আপনি জাহান্নামি শাস্তির ধারনা লাভ করবেন।

----আমাদের দেশে মনুষ্য সদ্রিশ কিছু জানোয়ার আছে স্বভাবে তারা পুরোটাই ছারপোকার মত।



(আমার সাথে Bed Bugs এর ব্যপারে আলাপ হচ্ছিলো। এই Bed Bugs প্রাণীটারে আমরা বাংলায় ছারপোকা বলে ফেলি। এটা কিন্তু ছারপোকা নয়। কাজকর্মে অবশ্য ছারপোকাই মনে হয়। যাইহোক আমার ভুল হতে পারে। বিস্তারিত: উইকিপিডিয়া দ্রষ্টব্য)

৪. কালো টাকা সাদা করার ব্যাপারে সরকার খুব সহানুভূতিশীল ....... তারা কি পারেনা কালো বিলাই টাকে সাদা করতে.... At least সাদা রোমানা পেইন্ট ঢাইলা দিক ওর গায়ে

... আর বেশী কিছু পাইনি।

আগেই বলেছি, আরিফ ভাইয়ের প্রতিদিনকার কথাবার্তার কাছে উল্লেখিত বাণীগুলো কিছুই না। লন্ডনে কোথাও বসে সিঙ্গাড়া আর চা খাওয়া, এটা খুব সহজ বিষয় না। সৌভাগ্যক্রমে এমন একটা জায়গার সন্ধান আমরা জানি, ক্লাসের বাইরে প্রায়ই এই দুজনের সাথে সেখানে বসা হয়। গত রামাদানে একদিন রাত দুইটা পর্যন্ত সেখানে আড্ডা চালিয়েছিলাম আমরা। কতশত কথা!, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে বেড়াতে গেলাম, সেখানেও সারাদিন কত যে কথা হলো। আর লন্ডনের এখানে সেখানে তো নিয়মিতই ঘোরা হয়, কথাবার্তা হয়। আরিফ ভাইয়ের হিউমার আর কথা বলার সহজিয়া ঢং এবং সায়মন ভাইয়ের নিখুঁত উপস্থাপন (বাংলা এবং ইংরেজী দুই ভাষাতেই) আমাকে সমৃদ্ধ করে চলে প্রতিনিয়ত, পাশাপাশি মনের খোরাকও মেটে। আমি তাদেরকে চাপ দিতে থাকি ব্লগে, নিদেনপক্ষে ফেসবুকে মাঝে মাঝে টুকটাক লেখার জন্যে।

আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।

ছোটবেলা থেকেই আমি চিন্তা করতাম, কীভাবে একজন মানুষ সুন্দর করে কথা বলতে পারে! আমার মনে হয় একজন মানুষের চিন্তাভাবনা যত সুন্দর, তার কথাবার্তাও ততো সুন্দর। এটা সত্য নাও হতে পারে, এটা আমার ধারণা কেবল।

বিষয়: বিবিধ

১৭৭০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File