তুরস্কের বিক্ষোভ এবং আমাদের বাংলাদেশ

লিখেছেন লিখেছেন আহসান সাদী ০৬ জুন, ২০১৩, ১০:১১:৩৯ সকাল

তুরস্কে একটি বাগানের গাছ কেটে ভবন নির্মাণের সরকারী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে জনগণ রাস্তায় নেমে এসেছে। গত কয়দিন ধরে এই প্রতিবাদ চলছে। প্রতিবাদ ঠেকাতে পুলিশও টিয়ারগ্যাস, জলকামান ও স্মোক গ্রেনেড নিয়ে হামলে পড়েছিলো। প্রচুর লোক আহত এবং গ্রেফতার হলেন। সরকার থেকে ক্ষমাও প্রার্থনা করা হলো। গাছ কাটার ইস্যু যে মূল কারণ এমনটা অবশ্যই নয়। এর পেছনে রয়েছে আরও অনেক অনেক কারণ। এরদোগান সরকারকে স্বৈরাচারী হিসেবে অভিহিত করে সরকার পতনের আন্দোলন চলছে। নেপথ্যে আরো অনেক কাহিনী রয়েছে, খুব পরিষ্কারভাবেই আমরা এটা বুঝতে পারি। আমাদের দেশে এমন ঘটনা পানিভাত। হরহামেশা এসব আমাদের দেখতে হয় (ইদানীং তো আরও বেশী, প্রায় প্রতিদিনই দেখতে হয়) । ঘটনা তাই আমাদের জন্যে নতুন না। এই ঘটনার ক্ষেত্রটা কেবল আমাদের অপরিচিত, এই যা। পত্রিকায় পড়লাম, 'তুরস্কের ইস্তাম্বুলের তাকসিম স্কয়ার থেকে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে তা তুরস্কের রাজনৈতিক ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের সূচনা করতে পারে'।

আমার খালাতো ভাই কভেন্ট্রি ইউনিভার্সিটি লন্ডনের ছাত্র। গতকাল গল্প করছিলো তার এক টার্কিশ বন্ধুর ব্যপারে। তার বন্ধুটি খুব সিরিয়াস টাইপ ছাত্র। টার্কিশ ছেলেটি লন্ডনের একটি স্টুডেন্ট একোমডেশনে থাকে যার সাপ্তাহিক ভাড়া দুইশত বিশ পাউন্ড (এক পাউন্ড বাংলাদেশের মোটামুটি একশ বিশ টাকার সমান)। বোঝাই যায় ছেলেটি খুব সিরিয়াস ছাত্র। যাইহোক, সেদিন নাকি এই ছেলেটি ইউনিভার্সিটিতে আসেনি। আমার খালাতো ভাই পরদিন তাই কারণ জানতে চাইলো। ছেলেটি উত্তরে বললো যে তুরস্কের চলমান অরাজক পরিস্থিতি নিয়ে সে খুবই উত্তেজিত। গতদিন সে নাকি আঠারো ঘন্টা অনলাইনে বসে আন্দোলনে অংশ নিয়েছে। এজন্যে সে ক্লাসে যেতে পারেনি। ছেলেটিকে দেখে সেদিন প্রকৃতই উদ্বিগ্ন মনে হচ্ছিলো। তার দেশে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস, স্মোক গ্রেনেড, লাঠিপেটা করে বিপুল সংখ্যক বিক্ষোভকারীকে আহত করেছে। অন্যদিকে মিডিয়াতে নাকি সাগর, নদী, প্রকৃতি ইত্যাদি বিষয়ে অনুষ্ঠান প্রচার করা হচ্ছে। ঘটনা খুব বেশী ভয়াবহ আকার নিয়ে ফেলেছে। এটা সে মেনে নিতে পারছে না। আমার কাজিনের সাথে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলাপ করছিলো। এক পর্যায়ে আমার খালাতো ভাই যা বললো তা মোটামুটি এমন, ' ধুর মিয়া, আমার দেশে, এই কিছুদিন আগে এক রাতে শত শত মানুষ মেরে ফেলা হয়। সেই রাতেই আবার লাশগুলো গায়েব করে ফেলা হয়। পাবলিক সব জেনেও কীভাবে জানি আবার কিছুই জানে না। মিডিয়া বলে কিচ্ছু হয়নি'। এই শুনে হতভম্ব সেই টার্কিশ ছেলে বললো, ' ওহ ম্যান, ইটস এগেইন্সট দ্যা হিউম্যান রাইটস'। আমার কাজিন হা হা করে হেসে উঠলো, বললো, 'হিউম্যান রাইটস! আ্য...হ'।

টার্কিশ ছেলেটি নাকি তখন চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো।

বিষয়: রাজনীতি

১৩৬১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File