একচোখা 'শার্লক হোমস'
লিখেছেন লিখেছেন আহসান সাদী ০৭ মে, ২০১৩, ০৭:২৬:২১ সকাল
আমাদের দেশের মুসলিম নামধারীরা দ্বীনদার আলেমদের থেকেও মুন্নি সাহাদের কথাকে বেশী বিশ্বাস করেন। দ্বীনদার হুজুরদের মারা হলো, তারা তা বিশ্বাস করেননি কারণ মুন্নি সাহারা এই মর্মে কোনো বাণী দেয়নি।
বহু বছর আগে বাংলা সিনেমার নায়ক সালমান শাহ মারা যাবার পর দীর্ঘদিন পর্যন্ত দেখেছি বাংলার মানুষদের শার্লক হোমস হয়ে উঠার চেষ্টাগুলো। সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছেন নাকি তাকে খুন করা হয়েছে এই মর্মে বিভিন্ন ম্যগাজিন-পত্রিকায় পাঠকরা যেই ডেডিকেশন দিয়ে তদন্ত করেছিলেন তার তুলনা মেলা দায়। তখন ইউটিউব ফেসবুক ছিলো না। তবু মানুষ যার যার জায়গা থেকে সত্যটা অনুসন্ধান করতে থাকে। খুব সহজে এই জাতিকে কোনো কিছু বিশ্বাস করানো যায় না। এই জাতি ৫'ই মে'র নৃশংসতা ঢেকে ফেলার ব্যর্থ চেষ্টা নিসৃত কথাগুলো কী সুবোধ বালকের মতো বিশ্বাস করে ফেললো! নিজেদের এত এত বুদ্ধি কত সহজেই না বিক্রি করে দিলো তারা।
এই হুজুরদের কাছে মম্মি-ড্যাডিরা বাচ্চাদের আরবী শিখতে পাঠান। বাইপাস সার্জারীর আগে এই হুজুরদের কাছে দোয়া করার অনুরোধ করেন। কড়া ইস্ত্রি পরে শুক্রবারে এইসব হুজুরের পেছনে সালাত আদায় করতে যান। মাম্মি-ড্যাডি সমাজের সন্তানরা নিজেদের বাপ-মার জানাযাও পড়াতে পারে না। মারা যাবার পর তাই জানাযাটাও এই হুজুরদেরকেই পড়াতে হয়। আজ আপনারা সবাই এই হুজুরদের হত্যাকান্ডে উল্লাস করছেন (তা সেটা না জেনে, হুজুগের বশেই হোক) সেই সাথে তাদেরকে চোর-লুটেরা বলছেন। এইসব হুজুরদের থেকেও আপনাদের কুরআন-প্রেম নাকি বেড়ে গেছে! নিজের সাথেও কি আপনি ভন্ডামি করতে পারবেন?
আপনাদের সন্তানকে এইসব হুজুরের কাছে আরবী শেখার জন্যে পাঠাতেন। কেবল আরবী। যদি ইসলামটা শেখাতেন তবে আপনার সন্তান আজ এই নৃশংসতায় উল্লাস করতো না। আপনি, একজন মম-ড্যাড, ইসলাম শেখাতে চাইবেনই বা কীভাবে? আপনি কতটা জানেন ইসলাম নিয়ে। সন্তানকে দেশের গোঁফওয়ালা আর মাথামোটা কিছু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক আর মিডিয়া কাঁপানো পাতি বুদ্ধিজীবিদের আদর্শে বড় করতে চেয়েছেন। নিজে অমন পাতি বুদ্ধিজীবি হতে না পেরে সন্তানকে তাদের আদর্শে বড় করতে চেয়েছেন। আপনারা ভুলে যান, খুব বেশী দিন আর বেঁচে থাকবেন না। সিনিয়র সিটিজেন হয়ে গেছেন। আপনার বাবা-মাও চলে গেছেন। এই তো আর মাত্র কয়টা দিন আছে আপনার। চলে যাবার প্রস্তুতি আছে কী আপনার? মাজারে টাকা দিয়ে বেহেস্ত পাওয়া যাবে না। কোনো শর্টকাট নেই। জীবনে ইসলাম ইনস্টল না করে পার পাওয়া যাবে না। একটু পেছন ফিরে ভুলগুলো ভুল হিসেবে আইডেনটিফাই করতে কি পারছেন? জানার চেষ্টা করুন, জীবন কী? পরকাল কী? একদম প্রথম থেকে চিন্তা করুন। মৃত্যুকে ভুলে থাকবেন না। আর আপনার সন্তান! আহ্, আপনার সন্তানকে মৃত্যুর কথা মনে করার শিক্ষাই তো দেননি। আপনার জানাযা পড়া শেষ হলে পারবে কী আপনার সন্তান আপনার জন্যে সাদকা হতে? দ্বীনদার মানুষকে হত্যা করা হলেও আপনার সুসন্তান কেয়ার করে না। তারা সেসব লোককে চোর বলে। মুন্নি সাহারা তাদের কাছে আইডল।
বাংলাদেশের চেতনাধারীদের একহাত নেয়ার জন্যে আমি লিখছি না। অনুভূতিতে আঘাত দিতেও নয়। একবারের জন্যে হলেও মৃত্যুর কথা মনে করিয়ে দেবার জন্যে লিখছি। জান্নাত আর জাহান্নাম বলে দুটো বিষয় আছে, এটা মনে করিয়ে দেবার জন্যে লিখছি। কাদেরকে অনুসরণ করছি এটা কী একবার হলেও চিন্তা করেছি কখনো। যাদের অনুসরণ করছি তাদের মাধ্যমে এই জীবনটা হয়তো খুব ডেকোরেটেড হয়ে উঠবে। পরের জীবনে এইসব ব্যাক্তির আদর্শের অনুসরণ কি কাজে আসবে? চিন্তা করুন। মৃত্যু-পরকাল এসব বিষয়ে একেবারই যদি বিশ্বাস করতে না পরেন তবে আপনি ভাবতে পারেন আলেমরা, হুজুররা, যারা কুরআন শিখতে শিখতে জীবন পার করে দেয়, তারা কুরআন জ্বালিয়ে ফেলেছে। আপনি বিশ্বাস করতে পারেন, লাইট বন্ধ করে, মিডিয়াকে সরিয়ে দিয়ে, লাইভ সম্প্রচার বন্ধ করে হুজুরদেরকে পিঠে হাত বুলিয়ে বাড়ী পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। ফেসবুকে যেসব মৃত হুজুরের ছবি দেখছেন তা কেবল ফটোশপের কাজ।
বিষয়: বিবিধ
১৪৮১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন