বুদ্ধিসন্ত্রাস

লিখেছেন লিখেছেন আহসান সাদী ২২ এপ্রিল, ২০১৩, ১১:৪৩:০৩ রাত

যখন কোনো পদার্থবিদ মহাকাশ বিষয়ে বা কোনো জটিল গানিতিক বিষয় আমাদের কাছে ব্যখ্যা করেন তখন আমরা সাধারণ মানুষরা গভীর আগ্রহের সাথে তা বোঝার চেষ্টা করি। বেশীরভাগ সময়ই আমরা বুঝতে পারি না। এই না পারাটাই বরং স্বাভাবিক। আমরা তাই সেইসব পদার্থবিদের কথাকেই সমর্থন দেই আর চেষ্টা করি যতটা শিখে নেয়া যায় ততটা শেখার। উদাহরণ হিসেবে স্টিফেন হকিংয়ের লেখা বই 'ব্রিফ হিস্ট্রি অফ টাইম' এর কথা বলা যায়। বইটার বাংলা অনুবাদ 'কালের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস' বাংলাদেশের বই পড়ুয়া প্রায় প্রতিটা ঘরেই পাওয়া যায়। আমার বাসায়ও একটা আছে! বইটার কীই বা আর বুঝি!!

একই কথা সত্য কোনো রসায়নবিদের ক্ষেত্রে। ইন্টারমিডিয়েট লেভেলে মেন্ডেলিফের পর্যায় সারনী পড়তাম আর মুগ্ধ হতাম কিন্তু খুব বেশী যে বুঝতাম এমন না। 'Concise World Atlas' নামে বইটা আমার খুব প্রিয়। ৯৯৯ টাকা দিয়ে কিনেছিলাম। বইটাতে পৃথিবীর ছবি দেখে বড় ভালো লাগে। ভূগোল বিষয়ে যারা গবেষক বা যারা দক্ষ তারাই বইটা তৈরী করেছেন। আমি কেবল বইটার একজন মুগ্ধ পাঠক। এর বেশী কিছু না। এখন আমি যদি মেন্ডেলিফের পর্যায় সারণীটা অল্প কিছু পড়ে সব মৌলকে হাইড্রোজেন-হিলিয়াম্-নিয়ন এর মতো একেক ধরণের গ্যাস মনে করে বসি তাহলে সেটা হবে আহাম্মকের মতো একটা কাজ। যেই বিষয়ে আমার জ্ঞান কম সেই বিষয়ে কথা বলাটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। কেউ এমন করলে তাকে বাচাল, আর্বাচীন বা উন্মাদ বলে মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক। আমরা তাই স্বাভাবিকভাবেই এমনটি করি না।

এক্ষেত্রে একমাত্র ব্যতিক্রম হলো ইসলাম। পৃথবীজুড়েই মানুষ ইসলাম নিয়ে কথা বলে বেড়ায় ইসলাম না জেনেই। মদীনা সনদ বিষয়টা কী ছিলো এটা না জেনে যখন আমাদের প্রধানমন্ত্রী মদীনা সনদের সাথে অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে গুলিয়ে ফেলেন তখন তা কেবল না জেনে কিছু বলে ফেলার অবস্থায় থাকে না। এখানে আমরা ধর্মী্য অনুভূতি থেকে ফায়দা নেয়ার বিষয়টাও চলে আসে। আমাদের দেশের বেশীরভাগ মানুষ মুসলিম। এই বিশাল মুসলিম জনগোষ্ঠীর জ্ঞানের ভান্ডারটা বিরাট রকমের ফাঁকা। বাংলার মুসলিম ভালো মতো ইসলামটাও জানে না। না জানার এই দুর্বলতার সুযোগে মদীনা সনদের সাথে অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে যদি মিশিয়ে বোঝানো যায় তবে একটা সম্ভাবনা থেকে যায় যে মানুষ সত্যের ফ্লেভারে মিথ্যেটাকেই গিলতে থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর মদীনা সনদ বিষয়টা তাই কেবল না জেনে হুট করে বলে ফেলার মতো তুলনামূলক নিরীহ কোনো কথা নয়। এটা স্রেফ ধর্মব্যবসা। মানুষ যদি ইসলাম জানতে শুরু করে দেয় তবে আর এমন কথার জালে আমাদেরকে আটকে ফেলা যাবে না। আমরা মুসলিম, কিন্তু ইসলাম না জেনে বসে আছি বলেই আমাদেরকে একেক সময় একেক ভোল দেখিয়ে বিভ্রান্ত করা হয়। নিজেদেরকেই প্রশ্ন করা উচিত, আর কত খেলার পুতুল হয়ে থাকবো আমরা।

কেবল মদীনা সনদ নয়, আমাদের বুদ্ধিজীবিরা কোরআন থেকে উদ্ধৃতি দেন- 'ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করো না', যে ব্যক্তি কোনো মানুষকে হত্যা করলো সে যেনো গোটা মানব জাতিকে হত্যা করলো' ইত্যাদি। সেই সাথে জাল হাদীস 'দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ'। বাংলার সাধারণ মুসলিমরা এসব পাতি বুদ্ধিজীবিদের কথার ছলে পড়ে ভেবে বসেন আসলেই হয়তো ইসলামটা এরা যেমন বলছে তেমনই। বোকা মানুষরা তাই রাজপথ কাঁপানো ছাত্রনেতাকে নিজেদের নেতা বানিয়ে ফেলে। বুক উঁচিয়ে বলে বেড়ায় আমাদের অমুক ভাই গণতন্ত্রের সূর্যসৈনিক! কিছুদিন পর অমুক ভাইয়ের বিদায় হয়, আসেন তমুক ভাই। তমুক ভাই এসে অমুক ভাইয়ের অনুসারীদের মানবাধিকার রদ করে দেন। টেন্ডারবাজি, তদবির, আর বিরোধীদলের মুন্ডুপাত চলতেই থাকে। কিছুদিন পর আবার পালা বদল হয়। আবারো অমুক ভাইয়ের আগমন। আবার বিরোধীদলের মানবাধিকার রদ, টেন্ডারবাজি, তদবির, হাঙ্গামা, প্রতিশোধ। এই চলমান প্রক্রিয়ার ব্যাকগ্রাউন্ডে বুদ্ধিজীবিরা মানুষের মাঝে ঘৃণার চর্চা, দেশের মানুষকে বিভক্ত করে রাখার মন্ত্রণা আর সর্বোপরি ইসলাম থেকে মুসলিমদের দূরে সরিয়ে রাখার বেপরোয়া চেষ্টায় লিপ্ত থাকেন। এই বুদ্ধিজীবিরা আবার খেলেন বিদেশী শক্তির খেলনা হিসেবে। বোকা মানুষ এদের অর্থহীন কথা আর ফাঁকা বুলিকে সত্য ভেবে বসে।

সময় হয়েছে এবার সত্য জানার। এভাবে খেলনা হিসেবে আর কতদিন?

বিষয়: রাজনীতি

১৯০৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File