শেখালে না সখি মোরে, ভালোবাসা কি?
লিখেছেন লিখেছেন মাহবুব রহমান ২৮ মে, ২০১৩, ১১:২৪:১৭ সকাল
ভালোবাসার জন্য ব্যাকুল থাকেনা এমন হৃদয় খুজে পাওয়া দুষ্কর। ভালোবাসা বিনা মানুষের জীবন কখনোই সুন্দর হতে পারেনা। জন্মের পর প্রথম মায়ের ভালোবাসা পাই। পরিবার, আত্মীয় স্বজন, সমাজ ও প্রকৃতির ভালোবাসা নিয়েই আমরা বেড়ে উঠি। তবে ভালোবাসা বলতেই প্রথম যে ভালোবাসা বোঝায় তাহলো স্বামী - স্ত্রী, প্রেমিক-প্রেমিকার ভালোবাসা। বিবাহিত নারী পুরুষকে যদি প্রশ্ন করা হয় সংসার জীবনে কেমন আছেন? তাহলে কমবেশী সকলেই বলবে সংসার! ওহ! সেতো এক জেলখানা, মৃত্যু ছাড়া যেখান থেকে কখনোই মুক্তি মেলেনা।
বিয়ে হচ্ছে জীবনের এমন একটি অধ্যায় যা কিনা মানুষকে ঠেলে দেয় এক বাস্তব সংগ্রামী জীবনের দিকে। ভালোবাসার মানুষটিকে বিয়ে করে দাম্পত্য জীবন যদি সুখের না হয় তবে দম্পতির মুখে এমন কথা একেবারেই বেমানান নয়। কিন্তু একটু সচেতোনতা, সহমর্মীতা আর ভালবাসার ফলে এই সংসার জীবনটাই সুখ ও শান্তির ঠিকানা হতে পারে।
বিয়ের আগে মানুষ স্বপ্ন দেখে, বিয়ের পর প্রবেশ করে সেই স্বপ্নের জগতে। আর বাস্তবতার ডাকে যখন ঘুম ভাঙ্গে তখনই সে প্রবেশ করে সংসার জগতে। আর বাস্তবতার এই কঠিন জগতে যদি প্রকৃত প্রেমের অভাব থাকে তখন সংসার জীবন হয়ে উঠে বিষাদময়।
প্রেম কথাটি আসলে কি?
ভালোলাগা ? ভালোবাসা ? আবেগ ? পাগলামী ? না অন্যকিছু!?
কবি সাহিত্যিকেরা প্রেম বিষয়টিকে বিভিন্ন ভাবে বর্ণনা করেছেন সেখানে আবেগ বিষয়টাই মুখ্য। কিন্তু প্রকৃত প্রেমকে কি আবেগের মাপকাঠিতে মাপা সম্ভব? অবশ্যই আবেগ ছাড়া প্রেমের জন্ম হতে পারেনা সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই। তাহলে বলা যায় আবেগই হচ্ছে প্রেমের জন্মদাতা ! আর আবেগ সৃষ্টিতে সহায়ক হিসাবে কাজ করে ভালোলাগা। আর ভালোলাগা ও আবেগের সমন্বয়ে জন্ম নেয় ভালোবাসা, এই ভালোবাসা যখনই পরস্পর বিনিময় যোগ্য হয় বা উভয়ের সম্মতি মেলে তখন তাকে প্রেম নামে সংজ্ঞায়িত করা সম্ভব।
তাহলে প্রেমের মাপকাঠি কি?
একজনের ভালো গুন দেখে কতটা মুগ্ধ হলাম তা কখনোই ভালোবাসার মাপকাঠি হতে পারেনা। কারো ভালো গুন কে সবাই পছন্দ করে সন্দেহ নেই তাহলে অন্যসব সাধারণ মানুষের সাথে প্রেমিক প্রেমিকার ভালোলাগার পার্থক্যটা কোথায়? প্রকৃত পক্ষে একজন আমার চরিত্রের দোষ টাকে কতটুকু মেনে নিলো কিংবা আমি অন্যের চরিত্রের দোষ গুলোকে কতটুকু মেনে নিলাম সেটাই হল প্রকৃত ভালোবাসার মাপকাঠি। বর্তমান তরুন প্রজন্ম কখনোই এই মাপকাঠিতে ভালোবাসাকে মেপে দেখেনা, তারা আবেগকেই পশ্রই দেই। তাই তারা হয় প্রতারিত, সেটা হতে পারে দাম্পত্য জীবনের পূর্বে বা পরে।
যে কোন মানুষ খুব ঘনিষ্ঠ ভাবে মিশে তার মা এবং জীবন সঙ্গীর সাথে। যদিও দু ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠতার ব্যাপারটা ভিন্ন রকম তবুও প্রত্যেকের চরিত্রের সমস্ত দোষ ত্রুটি ধরা পরে মায়ের চোখে এবং স্বামী হলে স্ত্রীর কাছে এবং স্ত্রী হলে স্বামীর কাছে। মায়ের যে ভালোবাসা তা প্রকৃত ও চিরন্তন। কারণ মা তার সন্তানের চরিত্রের সব দোষ কেই মেনে নেন। কিন্তু স্বামী স্ত্রী যদি তাদের প্রেম জীবন এ (বিয়ের পূর্বে) শুধুমাত্র ভালোলাগা এবং আবেগকেই ভালোবাসার মাপকাঠি হিসাবে বিবেচনা করে থাকে তবে তারা আর পরস্পরের দোষ গুলোকে সহজে মেনে নিতে পারেনা তখন দাম্পত্য জীবন হয়ে উঠে বিষাদময়। আর ভালোবাসার ঘটে অপমৃত্যু।
আবেগ মানুষকে স্বপ্ন দেখায় আর বাস্তবতা সে স্বপ্নকে কষাঘাতে জর্জরিত করে। আবেগ আর বাস্তবতার লড়াইয়ে আবেগ কখনোই জয়ী হতে পারেনা। আবেগের বশবর্তী হয়ে কেও তার ভলোবাসার মানুষটির জন্য জীবনও দিতে পারে কিন্তু শুধু আবেগ দাম্পত্য জীবনে সুখের ঠিকানায় পৌছে দিতে পারেনা। আর ভালোবাসা পাওয়াও সম্ভব নয়।
অভাব যখন হানা দেয় ভালোবাসা তখন জানালা দিয়ে পালিয়ে যায় শুধুমাত্র আবেগের মাপকাঠিতে মাপা ভালোবাসার ক্ষেত্রেই এ বাক্য প্রযোজ্য। তাই শুধু আবেগ কিংবা ভালোলাগা নয় পারস্পরিক ত্যাগ এবং সঙ্গীটির দোষ মেনে নেয়ার ক্ষমতা এই মাপকাঠিতেই কেউ বিচার করতে পারে সে তার সঙ্গীকে কতোটা ভালোবাসে কিংবা তার সঙ্গী তাকে কতোটা ভালোবাসে। ভালোবাসার এ মাপকাঠিতে মেপে ভালোবাসতে পারলেই পাওয়া যাবে সুখ ও আনন্দ, যাওয়া যাবে ভালোবাসার সেই স্বপ্নের জগতে।
বিষয়: সাহিত্য
২৯২৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন