গরুর গল্প শুনবে___না না কান্নার?
লিখেছেন লিখেছেন Musayib ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৮:১০:২৭ রাত
একটা বিখ্যাত গল্প আছে, কেউ কেউ হয়ত শুনে থাকবেন ৷ গল্পটা চারটি গরুকে নিয়ে ৷ তিনটি কালো, একটি সাদা ৷ তারা একটা শ্বাপদসংকুল এলাকায় বাস করতো ৷ এজন্য নিরাপত্তার খাতিরে তারা একসাথে থাকত এবং একে অপরের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখতো ৷ যার ফলে তারা টিকে ছিল ৷ একদিন কালো তিনজন একত্র হল এবং বলল ‘এই সাদা গরুটার জন্য আমরা ধরা পড়ে যাব ৷ আমরা কালো বলে রাতের বেলা শত্রু আমাদের দেখতে পায়না, কিন্তু তাকে দেখতে পায় ৷ চল ঐ গরুটাকে আমরা পরিত্যাগ করি ৷ তারপর আমরা তিনজন একসাথে থাকবো ৷’ যেমন কথা তেমন কাজ ৷ সেদিন থেকেই কালো গরুগুলো সাদাটাকে বয়কট করল, তিনজন একপাশে থাকত আর বেচারা সাদা গরু আরেক পাশে ৷
সেখানকার নেকড়ে, এই গরুদের মধ্যে অনৈক্য বুঝে ফেললো এবং সে সাদা গরুটার উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো ৷ যখন নেকড়ে সাদা গরুটার গোশত খুলে খুলে খাচ্ছিল, তখন কালো গরুগুলো কোন বাধা দিলনা ৷ তারা তাকিয়ে তাকিয়ে তাদের ভাইকে টুকরো টুকরো হতে দেখছিল ৷
পরের রাতে নেকড়ে কালো গরুগুলো উপর আক্রমণ করলো, কারণ তাদের শক্তি কমে গেছে ৷ এজন্য নেকড়ে একটা কালো গরুকে ছিনিয়ে নিতে সক্ষম হলো ৷
পরের রাতে নেকড়ের জন্য কাজটা আরো সহজ হয়ে গেল, কারণ গরু আছেই মাত্র দু'টো ৷ নেকড়ে খুব সহজে আরেকটা গরু খেয়ে নিল ৷
শেষ রাতে গরু বাকি রইল মাত্র একটা ৷ গরুটা ভয়ে এদিক ওদিক ছুটোছুটি করলো, কিন্তু তার কোন সাহায্যকারী নেই ৷ নেকড়ে বুঝল গরুটা দৌড়াদৌড়ি করে হাঁপিয়ে একসময় পড়ে যাবে, তাই সে মনের আনন্দে পায়চারি করতে লাগলো ৷ সময় সুযোগমত সে গরুটার উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো ৷ জীবনের শেষ মুহূর্তে এসে গরুটা একটা কথা বলেছিল, খুবই শিক্ষণীয় কথা ৷ সে বলেছিল, ‘আমিতো সেদিনই খাদ্য হয়েছি, যেদিন সাদা গরুটাকে খাওয়া হয়েছে ৷’ অর্থাৎ গরুটা বুঝতে পেরেছিল, যেদিন সে সাদা গরুটাকে সাহায্য করেনি, সেদিনই সে নিজের মৃত্যুর চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে ৷
আশা করি কাহিনীটি থেকে আপনারা মূল্যবান শিক্ষা পেয়ে গেছেন ৷ প্রথমত, এই গল্পের সাথে বর্তমান উম্মাহর অনেক মিল পাওয়া যাবে ৷ আমরা দেখতে পাচ্ছি একের পর এক মুসলিম জাতির/দেশের পতন ঘটছে ৷ আমরা কি করছি? আমরা শুধু চেয়ে চেয়ে দেখি ৷ যখন ফিলিস্তিনকে কেড়ে নেয়া হল, আমরা কিছুই করিনি ৷ এরপর একের পর এক জাতি বিপদের মুখে পড়তে লাগল - কাশ্মীর, চেচনিয়া, ফিলিপাইনের মুসলিম এবং সর্বশেষ ইরাক(এখন বাংলাদেশ) ৷ ইরাকে যখন হত্যাযজ্ঞ চলছে, তখন আমরা কিছুই করিনি ৷ এখানেই শেষ নয়, পরবর্তীতে আরো জাতিকে ধরা হবে, কাকে ধরা হবে তা আল্লাহ্ই ভাল জানেন ৷ গল্পটা থেকে বুঝা যায়, যে মুসলিম জাতিগুলো এখনও টিকে আছে সেগুলো প্রথম জাতিটার পতনের সাথে সাথেই পরাস্ত হয়েছে ৷
দ্বিতীয়ত, এ গল্প থেকে অনৈক্যের ফলাফল বুঝা যায় ৷ গরুগুলো যতদিন একসাথে ছিল, ততদিন শত্রু কিছু করতে পারেনি। কিন্তু যেই তারা একজনকে ছেড়ে দিল, তখন কি হল? তারা সকলেই হেরে গেল৷
রসূলুলৱাহ্ (সা.) বলেছেন, ‘এই উম্মত হল একটি দেহের মত ৷ যদি দেহের কোথাও ব্যথা লাগে, তাহলে গোটা দেহ জ্বরাক্রান্ত হয় ও ঘুমাতে পারেনা ৷' (বুখারী)৷ অর্থাৎ কারও হাত বা পায়ে আঘাত লাগলে, সে ব্যথার কারণে ঘুমাতে পারেনা, এবং তার দেহ ব্যথা সারাতে গিয়ে জ্বরগ্রস্থ হয়ে পড়ে ৷ পূর্ব, পশ্চিম বা উত্তর, দক্ষিণের মুসলিম জাতি ব্যথা পেলে, আপনারও এমন ব্যথা লাগা উচিত যেন আপনার নিজ পরিবার আহত হয়েছে ৷ আপনি যদি শুধু নিজের এবং আপনজনদের নিরাপত্তা নিয়েই চিন্তিত হন - তবে একটা সমস্যা আছে, তখন আপনাকে আর দেহের (উম্মাহ) অংশ বলা যায় না ৷ মুসলিমরা রাষ্ট্র, মাযহাব, দলাদলি নিয়ে বিভক্ত হতে পারে, কিন্তু তাদের বড় পরিচয় তারা মুসলিম (যদি না তারা পথভ্রষ্টদের মধ্যে কেউ হয়) ৷ অনেকে দাবী করেন ‘আমি ও আমার দল মুসলিম’, অন্যরা যেহেতু তাদের দলের অনুসরণ করেন না তাই অন্যরা মুসলিম না ৷ আপনি যতক্ষণ না কোন ভাইকে বা বোনকে কাফের প্রমাণ করতে পারবেন, ততক্ষণ সে মুসলিম [একজন মানুষের অন্তরে ঈমান আছে কি নেই তা দেখার ক্ষমতাও আমাদের নেই বা তা দেখার নির্দেশও আমাদের দেয়া হয়নি ৷ রসূল (সা) আমাদের বাহ্যিক আমল দেখে মুসলিম সনাক্ত করতে বলেছেন ৷ যেমন: নামায, যাকাত, হজ্জ ইত্যাদি]৷
আমরা মুসলিমদের মধ্যে ঐক্য চাই ৷ ঐক্য বলতে বলছিনা দল, মাযহাব সব বাদ দিয়ে সবাইকে একটা জামাতের অনুসরণ করতে হবে ৷ সেটা হয়তো এই মুহূর্তেই সম্ভব নয় ৷ ঐক্য বলতে আমরা বলছি, আপনি যে মুসলিম গোষ্ঠীর (বা group-এরই) হননা কেন, যে মাযহাবের হননা কেন - আপনি বিপদে আপনার ভাইয়ের পাশে এসে দাড়াঁবেন ৷ এটাই ঐক্য!
মুসলিমদের মধ্যে একেকটা দল একেক রকম কাজ করছে - এই বিভিন্নতার দরকার আছে ৷ মুসলিমদের আজ সব ক্ষেত্রে কাজ করতে হবে ৷ কেউ হয়তো দাওয়াহর কাজ করছে, কেউ ইল্ম অর্জন করছে, কেউ এবাদতে মশগুল আছে ৷ মানুষ বিভিন্ন রকমের, তাই কাজও বিভিন্ন রকম হবে ৷ মানুষের দক্ষতাও একেক রকম, কেউ ভাল আলেম, কেউ ভাল ইমাম আর কেউ বা ভাল শিক্ষক ৷ কেউ কেউ আছেন যারা কথা কম বলেন, কাজ বেশি করেন ৷ সব ধরনের লোকেরই দরকার আছে ৷
তাই অন্য মুসলিম ভাইদের সাথে আপনার চিন্তাধারার মিল নাও থাকতে পারে, কিন্তু তাদের বিপদে আপনি সাহায্য করবেন - একেই বলে একতা ৷
আমাদের তাই রসূল (সা) হাদীসটির কথা স্মরণ রেখে ও সারা পৃথিবীর মুসলিমদের দুর্দশার কথা চিন্তা করে কষ্ট লাগা উচিত ৷ ফিলিস্তিন, ইরাক বা কাশ্মীরে কি হচেছ সে ব্যাপারে আপনাকে সচেতন হতে হবে, যদিও তা আপনার দেশ নয় ৷ এসব মুসলিম দেশের কয়েকটির মধ্যে বিরোধ থাকতে পারে, যুদ্ধ বা রাজনৈতিক সমস্যাও থাকতে পারে ৷ কিন্তু তাই বলে আপনার মনোভাব একই থাকবে, যা সমস্যা তা সরকারের মধ্যে, সে দেশের মুসলিমরাতো আপনার ভাই ৷
যে মুসলিমদের নিয়ে ভাবেনা সে তাদের অন্তর্ভুক্ত নয় ৷
রসূল (সা.) বলেছেন, ‘একজন মানুষ যাকে ভালবাসে (কেয়ামতের দিন) তার সাথে থাকবে ৷’ আপনি যদি মুসলিমদের ভালবাসেন, তবে মুসলিমদের সাথে থাকবেন (জান্নাতে), আর যদি কাফিরদের ভালবাসেন, তবে আপনার আবাস হবে তাদেরই সাথে (জাহান্নামে) ৷
রসূল (সা.) বলেছেন, কেয়ামতের দিন আল্লাহ বলবেন ‘তোমরা যার উপাসনা করতে তার পিছু পিছু যাও৷’ তাই যে ক্রুশের উপাসনা করত, সে ক্রুশের কাছে যাবে, যে প্রতিমা পূজা করত, সে প্রতিমার কাছে যাবে ৷ এরপর আল্লাহ এসব মিথ্যা উপাস্যদের জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন এবং তাদের অনুসারীরাও তাদের পিছু পিছু যাবে ৷
গল্পটা থেকে তৃতীয়ত আমরা বিশ্বাসঘাতকতার পরিণাম জানতে পারি, জানতে পারি একজন মুসলিমকে পরিত্যাগ করার কুফল ৷ রসূল (সা) বলেছেন, 'যে তার মুসলিম ভাইকে অত্যাচার করেনা, বিশ্বাসঘাতকতা করেনা এবং পরিত্যাগ করেনা সেই (প্রকৃত) মুসলিম ৷' (বুখারী ও মুসলিম) ৷
বিষয়: বিবিধ
১২৮১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন