জাফর ইকবালঃ বাংলা সাহিত্যের পদ্ম কণ্টক
লিখেছেন লিখেছেন ইহসান আব্দুল্লাহ ২৩ মার্চ, ২০১৩, ০৫:৩৮:২৩ বিকাল
এইতো গত সপ্তাহে এক ছোট ভাইয়ের সাথে দেখা, তার হাতে একটা বই। আমি বইটা হাতে নিতে না নিতেই সাগ্রহে বলে উঠল, “ভাই জাফর ইকবাল স্যারের বই, আপনি পড়ে বেশ মজা পাবেন”
একটুও অপেক্ষা না করে বললাম “ধুর বাচ্চা কাচ্চাদের বই” আসলে বইয়ের নামটাও বাচাদের মতো।
এবারের বইমেলাতে প্রকাশিত। শুনেছি বইটা পর পর কয়েক বার ছাপাতে হয়েছে। তাই একটু ভেবে, নিয়ে নিলাম, নতুন কিছু শেখার জন্য। সত্যি বলছি তার সমালোচনা করার জন্য নয়। বেশ ভালো লিখেছেন। এবং বেশ ভালো লেগেছে। কিন্ত.........যখন ৬০তম পৃষ্ঠা পড়লাম, উনি লিখেছেন
“মিঠুন বলল, “স্যার আন্তঃস্কুল বিজ্ঞান মেলা হচ্ছে, আমরা সেই মেলাই যোগ দিতে চাই”।
হেড স্যার মিঠুনের কথা শুনে খুবুই অবাক হলেন, কয়েক বার চেষ্টা করে বললেন, “কিসের জন্য? হেই খানে গিয়া মারপিট করবি?
মিঠুন বলল, “না স্যার। আমরা সায়েন্স প্রোজেক্ট নিয়ে যাব”।
“প্রোজেক্ট পাবি কই বাজারে কিনতে পাওয়া যায়?”
“না স্যার। আমরা প্রোজেক্ট তৈরি করব”
“তোরা প্রোজেক্ট তৈরি করবি? আমারে সেই কথা বিশ্বাস করতে কইতাছস?”
“এই স্কুলে কারা পড়ে তুই জানস? এই স্কুলে পড়ে শহরের যত চোর ডাকাইত গুন্ডা বদমাইশের পোলাপান। এই পোলাপান বড় হয়ে কি হইব জানিস? তারাও বড় হয়ে হইব চোর ডাকাইত গুন্ডা বদমাইশ। তাই আমার লগে মস্করা করার দরকার নাই। বিজ্ঞান মেলাই যাওনের কথা বলার দরকার নাই"
"চুরি ডাকাতি গুন্ডা বদমায়েশি করনের মেলা থাকলে খবর নিস কয়েক হালি টিম পাঠামু"
জানতাম আজ কাল স্কুলে অশ্লীলতা শেখানো হয়। কিন্তু জাফর ইকবাল সাহেব আরও কি শিখাতে চাচ্ছেন। এইতো কদিন আগে ওনার ভক্তদের প্রেম করাতে উৎসাহ দিলেন। নাস্তিকদের সমর্থনে রাস্তায় নামলেন। নিজের মেয়েকে ছেড়ে দিলেন প্রকৃতির কোলে। দিন! সেটা আপনার একান্ত ব্যাক্তিগত ব্যাপার। আমি সেটা নিয়ে কথা বলতে আসব না। কিন্তু আমি আপনাকে অনুরোধ করছি আমার বোনকে ঘর থেকে টেনে বের করবেন না, আমার ছোট ভাইকে এমন কিছু শেখাবেন না যাতে ও বেয়াড়া হয়ে যায়। ও যে আপনার খুবুই ভক্ত। আপনি হয়তোবা হেসে খেলে অনেক কিছু লিখতে পারেন, মজা করতে পারেন। কিন্তু আপনার সাহিত্য আপনার দর্পণ, এই বাঙলার সমাজ জীবনের দর্পণ। দিন দিন এই বঙ্গদেশে অপরাধ বাড়ছে, ভদ্র পরিবারের ছেলেরা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বাবা মা সন্তানদের বই পড়তে দিচ্ছে। তারা তো আর জানে না এই বইয়ের মধ্যেই আছে অশ্লীলতার ভুত। আর বাবা-মা ও তো আছে নিশ্চিন্তে, দেশের এত বড় বড় বুদ্ধিজীবী থাকতে তারা কেন চিন্তা করতে যাবে।
কিন্তু তারা তো জানে না বাঙ্গালী আজ বই পড়ে পরিমল হচ্ছে, আর সেই সব পরিমলের কাছে নিজের সন্তানকে পাঠিয়ে গড়িয়ে তুলছে নুতুন প্রজন্মের পরিমল। এই সব ছেলে মেয়ে ধর্ম সম্পর্কে কোন জ্ঞান রাখে না। আদর্শ বলতে এরা বোঝে এই লেখক, সেই কবি। এই নায়ক কিংবা ওই নায়িকা নতুবা অমুক গায়ক, অমুক গায়িকা। যারা প্রথম বার বিয়ে করে অনুশীলনের জন্য, আর পরেরটা হচ্ছে আসল। দুদিন পর এই আসলটা ছেড়ে আরেকটা। যারা জাতীয় মিথ্যাবাদী, কিংবা চরম ধর্ম বিদ্বেষী। যারা নিজের সন্তানদের শাসনের মাঝে রাখতে পারে না বলে ছেড়ে দেয় আভিজাত্যের ফুটপাতে। এক সময় নিজের সন্তানের কাছেই হয় লাঞ্ছিত কিংবা খুন নতুবা ত্যাজ্য বাবা।
আমি নিজে সাহিত্যিক নই,কারন সাহিত্যকে আমি সম্মান করি। সেই সম্মান রক্ষার মতো লেখা আমি লিখতে পারব না জানি। আমি বিশ্বাস করি, সাহিত্য সমাজের কথা বলে, গন মানুষের কথা বলে, বঞ্ছিতদের কথা বলে। কিন্তু আজকের এই টাকা বানানোর সাহিত্যের মাঝে এসবের লেশ মাত্র নাই। রোমিও জুলিয়েট পড়ে আমি যেমন বুঝতে পারি সেই সময়ের ইংরেজ সমাজের বাস্তব চিত্র। তেমনি জহির রায়হানের নাটক পরেও আমি পারি সত্যকে আচ করতে। কিংবা মধ্যযুগের কবিতা গুলো পড়ে ধরা পড়ে বাঙ্গালীদের উৎপত্তি। আর কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা, তখন ছিল সময়ের দাবি। কিন্তু আজকের সাহিত্য? ক্ষমতাশীল শয়তানদের পূজারি। এরা সমাজের মানুষের কথা বলে না, বরং এই খেটে খাওয়া অসহায় মানুষগুলোকে নিয়ে ঠাট্টা করে। আজকের সাহিত্যের পেছনে শুধুই টাকা, তা যদি আসে বঞ্ছিত মানুষের রক্ত চুষে। তাতেও আজ এই সাহিত্যের কিছু আসে যায় না। আজ সাহিত্য তার লক্ষ্য অর্জনে ব্যার্থ, করছে দুষ্টের গোলামী।
বিষয়: বিবিধ
১৭৬৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন