মাকে নিয়ে কোন প্রতিযোগিতা নয়
লিখেছেন লিখেছেন ইহসান আব্দুল্লাহ ১০ মার্চ, ২০১৩, ১২:০৫:১৭ দুপুর
মাকে নিয়ে আমি বেশ কষ্টে আছি
আমি যদি বলি আমি আমার মাকে ভালবাসিনা, হয়ত অনেকে নাক সিটকাবেন। কিন্তু সত্যি বলছি, আমার মা আমাকে যেমন ভালবাসে তার তুলনায় আমার ভালবাসা এতোটাই নগন্য যে এটাকে ভালবাসা বলে না।
যে মা এখনও হরতালের আগের দিন ফোন করে বলে বাইরে যাস না বাবা। হাসি পায় বলি বাইরেতো যেতে হবেই। কাজের প্রয়োজনে। “আচ্ছা সাবধানে থাকিস, আর এসব কাজ বাদ দে বাবা অন্য কিছু কর”। আবারও হাসি পায়। মাঝে মাঝে ফোন দিয়ে বলে, “বাবা এখন তো কাজের চাপ কম বাড়ি আয়। গাছে বেল পেকেছে, বড়ই বড় হয়েছে, কিংবা গরু বাচ্চা দিয়েছে, বেশ দুধ দিচ্ছে”। কখনও কখনও এমনও বলে “পুকুরে বেশ মাছ হয়েছে এবার। তুই না ছাতিন মাছের ভর্তা খাইতে বেশ পছন্দ করতি”। কখনও হয়তবা বলে তুই “যে আনারস গাছটা লাগিয়েছিলি তাতে আনারস ধরছে, আয় দেখবি”। আর কয়েক দিন পর বলে “আনারসটা পেকেছে খাবি আয়”। এবারও যখন না সূচক উত্তর, উপায় না দেখে বলতে বাধ্য হয় “ফ্রিজে রাখছি তারাতারি আসবি কিন্তু”। আজব লাগে মায়ের ভালবাসা।
মাঝে মাঝে বিরক্তও লাগে, কিন্তু আমার মনে পড়ে না যে, মা আমার কোন আবদারটা রাখে নাই আর কবেই বা আমার উপর বিরক্তির ভাব দেখিয়েছিল। সেই সময়ের দশ পয়সার আইসক্রিম থেকে শুরু করে হাল আমলের বাইক, ল্যাপটপ। হয়তোবা দুই একবার বলেছে এসবের কি দরকার, আর এতেই দুচোখের বাধ আটকানো দায় ছিল। অনেক সময় মায়ের ওপর রাগও করতাম, আর এর পুরোপুরি দোষ চাপাতাম আমার কিপ্টা নানা-নানির উপর। এই দুটো মানুষ এতোটাই খুঁতখুঁতে ছিল যে আমি দশ পয়সার আইসক্রিম খাইলেও নাকি ওনাদের সর্দি লাগতো। অবশ্য এখন ওনারা নাই, থাকলে এই সময়ের টাকা উড়ানো দেখে নিশ্চিত হার্টফেল করতেন।
সত্যি আমরা সবাই আমাদের মাকে ভালোবাসি, কিন্তু কতটা? কিভাবে? আপনি যখন কোন অন্যায় আবদার করতেন তখন আপনার মা কি করতেন? আজ আপনার মায়ের ন্যায় আবদার গুলি রাখতে পারছেন কি?
আমি জানি না আপনার মা বর্তমান আছেন কি না? আমার মা আছেন। এবং মাকে নিয়ে আমি বেশ কষ্টে আছি। কারন আমার মা কষ্টে আছে। আমাকে নিয়ে। অস্বস্তিতে আছে শুধু আমার জন্য। আর এর জন্য আমিও স্বস্তিতে নেই। যে মানুষ গুলো ৭১এ হয়তোবা দুএকটা গুলির শব্দ শুনেছিলো, ভয়ে আতকে উঠে মায়ের কোলে চেপে বসেছিল। আজ সেই মানুষ গুলো টিভির পর্দা উঠালে শোনে গগনবিদারী গুলির শব্দ। এখনও ভয়ে আতকে ওঠে, কিন্তু নিজের জন্য নয় সন্তানের জন্য। কাছে জড়িয়ে রাখতে চাইলেও পায় না। বাস্তবতায় এটা সম্ভব না। আপনি আমি এটা কে অসম্ভব বানিয়েছি। মাকে দূরে ঠেলে দিয়েছি কিংবা নিজেই দূরে চলে এসেছি।
“মা!!!!! আমি তোমার কুলাঙ্গার ছেলে, আমায় ক্ষমা কর। তুমি আমাকে অনেক দিয়েছ কিন্তু আমি তোমাকে কিছু দিতে পারি নি। মা !!!!! যে তুমি আমাকে কথা বলতে শিখিয়েছ সেই তোমার সাথে কথা বলতেই আমার বিরক্তও লাগে। আমি মনে করতে পারি না তুমি আমার জন্য কত কি করেছ। কিন্তু আমি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি আমি তোমার জন্য কিছু করি নাই। যে তুমি আমাকে নিয়ে সারাটা দিন রাত চিন্তা কর সেই তোমার জন্য দিনে দুইতা মিনিট সময়ও আমার হয়না।
মা আর লিখতে পারছি না। কান্না পাচ্ছে। তবে ভালো থেকো ,আমায় অভিশাপ কর না। আমি তোমায় ভালোবাসি, কিন্তু সেই ভালোবাসা তোমাই দিতে পারি নাই। এটা আমার অপারগতা। আর আমার এই অক্ষমতা কে তুমি মাফ করো। তবে শুনে রেখো পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে আমি তোমাকেই বেশি ভালোবাসি”
বিষয়: Contest_mother
১৬৮৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন