পথের প্রান্তে জান্নাত
লিখেছেন লিখেছেন ইহসান আব্দুল্লাহ ১৮ অক্টোবর, ২০১৩, ০৪:১৮:২৩ বিকাল
সত্য পথ একটাই আর এ সত্য পথই জান্নাতে যাবার একমাত্র মাধ্যম। এ পথের একমাত্র শ্লোগান হচ্ছে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্”। এই পথের পথিকদের একমাত্র সংবিধান হচ্ছে আল-কোরআন, আর এদের কাজ হচ্ছে বিভ্রান্ত পথচ্যুত মানুষদের এই সত্য পথে ডাকা, সৎ কাজে আদেশ দেয়া এবং যেকোন মুল্যে অসৎ কাজকে বাধা প্রদান করা। কিন্তু সত্য কথা হচ্ছে জান্নাতের এই পথে সর্বদা বাধা দেয়ার জন্য স্বার্থান্বেসী রাষ্ট্র ক্ষমতা, বস্তুবাদী সামাজিক প্রভাব প্রতিপত্যি ও বিপথগামী পথের ঝাণ্ডাবাহীরা সদা প্রস্তুত। আর এই জন্যই এই সহজ সরল পথটি এতটা কণ্টকময় যার বীরোচিত মোকাবেলাই দিতে পারে জান্নাতের সুঘ্রাণ।
হযরত মিকাইয়াহ আলাইহিস সালাম যখন এই সত্য পথের ঘোষণা নিয়ে আসেন তখন ইসরাঈলী শাসক আখিআব কারারুদ্ধ তাকে কারারুদ্ধ করে এবং বিপথগামীদের পরামর্শে আল্লাহ্র এই নবীকে নারকীয় নির্যাতন চালায়।
হযরত ইয়াহইয়া (JOHN THE BAPTIST) আলাইহিস সালাম যখন ইহুদি শাসক হিরোডিয়াসের দরবারে প্রকাশ্যে অনুষ্ঠিত ব্যভিচার ও নৈতিকতা বিরোধী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান তখন প্রথমে তাঁকে কারারুদ্ধ করা হয় । তারপর বাদশাহ নিজের প্রেমিকার নির্দেশানুসারে জাতির এই সবচেয়ে সৎ ও ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তিটির শিরচ্ছেদ করে। কর্তিত মস্তক থালায় নিয়ে বাদশাহ তার প্রেমিকাকে উপহার দেয়।
আশুরিয়াদের হাতে যখন সামারিয়াদের ইসরাঈলী রাষ্ট্রের পতন হয় এবং জেরুসালেমের ইহুদি রাষ্ট্র মহাধ্বংসের সম্মুখীন হয় তখন 'ইয়ারমিয়াহ' নবী নিজের জাতির পতনে আর্তনাদ করে ওঠেন । তিনি পথে-ঘাটে , অলিতে-গলিতে নিজের জাতিকে সম্বোধন করে বলতে থাকেন , "সতর্ক হও, নিজেদেরকে সংশোধন করো , অন্যথায় তোমাদের পরিণাম সামারিয়া জাতির চাইতেও ভয়াবহ হবে ।" কিন্তু জাতির পক্ষ থেকে এই সাবধান বাণীর বিরূপ জওয়াব আসে । চারদিক থেকে তাঁর ওপর প্রবল বৃষ্টিধারার মতো অভিশাপ ও গালি-গালাজ বর্ষিত হতে থাকে । তাঁকে মারধর করা হয় । কারারুদ্ধ করা হয় । ক্ষুধা ও পিপাসায় শুকিয়ে মেরে ফেলার জন্য রশি দিয়ে বেঁধে তাকে কর্দমাক্ত কূয়ার মধ্যে ঝুলিয়ে রাখা হয় । তাঁর বিরুদ্ধে জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করার এবং বিদেশী শত্রুর সাথে আতাত করার অভিযোগ আনা হয় ।
'আমুস' নামক আর এজন নবী সামারিয়ার ইসরাঈলী রাষ্ট্রের ভ্রষ্টতা ও ব্যভিচারের সমালোচনা করেন এবং এই অসৎকাজের পরিণাম সম্পর্কে তাদেরকে সতর্ক করে দেন তখন তাঁকে চরমপত্র দিয়ে দেয়া হয়, এদেশ থেকে বের হয়ে যাও এবং বাইরে গিয়ে নিজের নবুওয়াত প্রচার করো ।
আবার যখন ইহুদিয়া রাষ্ট্রে প্রকাশ্যে মূর্তি পূজা ও ব্যভিচার চলতে থাকে এবং হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সাল্লাম এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হন তখন ইহুদি রাজা ইউআস-এর নির্দেশে তাকে মূল হাইকেলে সুলাইমানীতে 'মাকদিস'( পবিত্র স্থান) ও 'যবেহ ক্ষেত্র'-এর মাঝখানে প্রস্তরাঘাতে হত্যা করা হয় ।
অতপর হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের বিরুদ্ধে বনী ইসরাঈলের আলেম সমাজ ও জাতীয় নেতৃবৃন্দের ক্রোধ উদ্দীপিত হয় । কারণ তিনি তাদের পাপ কাজ ও লোক দেখানো সৎকাজের সমালোচনা করতেন। তাদেরকে ঈমান ও সৎকাজের দিকে আহবান জানাতেন। এসব অপরাধে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা তৈরি করা হয় । রোমান আদালত তাঁকে প্রাণদন্ড দানের সিদ্ধান্ত করে। রোমান শাসক পীলাতীস যখন ইহুদিদের বললো, আজ ঈদের দিন, আমি তোমাদের স্বার্থে ঈসা ও বারাব্বা(Barabbas) ডাকাতের মধ্য থেকে একজনকে মুক্তি দিতে চাই । আমি কাকে মুক্তি দেবো৷ ইহুদিরা সমস্বরে বললো, আপনি বারাব্বকে মুক্তি দিন এবং ঈসাকে ফাঁসি দিন।
এটা স্পষ্ট যে আল্লাহ্র দেয়া হক পথ একটাই আর এই পথের বিরুদ্ধে বাতিল দাড়িয়ে যাবেই। ফিরাউন, নমরুদ, আবুজেহেল, উতবা, সায়বা, আবু লাহাব বাতিল পথের এই সিপাহশালাররা আগেও ছিল এখনও আছে। তবে অন্য নামে। আমাদের কাছে স্পষ্ট এই বাংলাদেশে কারা এই সত্য ইসলামের পথে আর কারা এই সত্য পথের শত্রু। সুতারাং সত্য বলার অপরাধে আজ যারা এখন এই শয়তান পন্থীদের রোষানলে আমরা যদি সেই সব মজলুমদের পক্ষে নিজের কণ্ঠটাকে গর্জে না তুলে, নিজের মেধা-শ্রম, জান-মাল দিয়ে লড়াই না করে মুনাফিকির আশ্রয় নিই তাহলে কার্যত পথের প্রান্তের জান্নাতটা আমাদের জন্য অধরাই রয়ে যাবে।
“আল্লাহ সেই সব লোকদের ভালবাসেন যারা তাঁর পথে এমনভাবে কাতারবন্দী হয়ে লড়াই করে যেন তারা সিসা গলিয়ে ঢালাই করা এক মজবুত দেয়াল৷ সূরা সফঃ০৪”
বিষয়: রাজনীতি
২০৩৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন