যে কারনে জামাত আজও মুনাফিক বিএনপির সাথে
লিখেছেন লিখেছেন ইহসান আব্দুল্লাহ ১৮ আগস্ট, ২০১৩, ০১:২৬:৫৭ দুপুর
বাংলাদেশ জামাত-ই-ইসলামীকে একটি প্রজ্ঞা সম্পন্ন ইসলামী রাজনৈতিক দল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যাদের গঠনতন্ত্র, কর্মসূচি ও কর্মপদ্ধতিসহ যাবতীয় দিক নির্দেশনার ভিত্তি হচ্ছে আল-কোরআন ও রাসুল (সাঃ) এর রেখে যাওয়া ২৩ বছরের জীবনী। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশে বিশেষ কিছু ইস্যু নিয়ে এই সর্বোৎকৃষ্ট শৃঙ্খলাবদ্ধ ইসলামী সংগঠনটি আজও বিতর্কিত ও সমালোচিত। মুনাফিক বিএনপির(??) সাথে জোটবদ্ধ হওয়া এর মধ্যে একটি। অনেক ঈমানদার মুসলমান ভাইবোনও এই বিতর্কে পরাজিত হয়ে সমালোচনা শুরু করে দেন। কিন্তু মদীনার মুনাফিকদের সাথে রাসুল (সাঃ) এর সম্পর্ক এর আলোকে বাংলাদেশে মুনাফিক বিএনপির(??) সাথে জামাতের সম্পর্ক তুলনা করলে এসব সমালোচনার অসারতা প্রমাণিত হয়।
পবিত্র মদীনা নগরীতে রসূলুল্লাহ (সাঃ)এর আগমনের পূর্বে আওস ও খাযরাজ গোত্র দুটি পারস্পরিক গৃহযুদ্ধে ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে এক ব্যক্তির নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব মেনে নিতে প্রায় ঐকমত্যে পৌঁছেছিল । তারা যথারীতি তাকে বাদশাহ বানিয়ে তার অভিষেক অনুষ্ঠানের প্রস্তুতিও শুরু করেছিল । এমন কি তার জন্য রাজ মুকুটও তৈরী করা হয়েছিল । আর এই ব্যক্তিটি ছিল খাযরাজ গোত্রের নেতা আবদুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সালূল । খাযরাজ গোত্রে তার মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব ছিল সর্বসম্মত এবং আওস ও খাযরাজ ইতিপূর্বে আর কখনো একযাগে এক ব্যক্তির নেতৃত্ব মেনে নেয়নি । (ইবনে হিশাম, ২য় খণ্ড , পৃষ্ঠা ২৩৪) ।
এই পরিস্থিতিতে ইসলামের বাণী মদীনায় পৌছে এবং এই দুটি গোত্রের প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ ইসলাম গ্রহণ করতে শুরু করে । নবী (সা) যখন মদীনায় পৌছলেন তখন আনসারদের ঘরে ঘরে ইসলাম এতটা প্রসার লাভ করেছিল যে, আবদুল্লাহ ইবনে উবাই নিরূপায় হয়ে পড়েছিল । নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব রক্ষার জন্য তার নিজের জন্য ইসলাম গ্রহণ করা ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না । তাই সে তার বহু সংখ্যক সহযোগী ও সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে ইসলাম গ্রহণ করে । এদের মধ্যে উভয় গোত্রের প্রবীণ ও নেতৃত্ব পর্যায়ের লোকেরাও ছিল। তাদের সবার অন্তর জ্বলে পুড়ে ছাড়খার হয়ে যাচ্ছিল। বিশেষ করে আবদুল্লাহ ইবনে উবায়ের অন্তরজ্বালা ও দুঃখ ছিল অত্যন্ত তীব্র। কারণ সে মনে করতো, রসূলুল্লাহ (সাঃ) তার রাজত্ব ও বাদশাহী ছিনিয়ে নিয়েছেন।
কিন্তু প্রতি জুমআর দিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন খুতবা দেয়ার জন্য মিম্বরে উঠে বসতেন তখন আবদুল্লাহ ইবনে উবাই উঠে বলতো, “ভাইসব, আল্লাহর রসূল আপনাদের মধ্যে বিদ্যমান । তাঁর কারণে আল্লাহ তা’আলা আপনাদেরকে সম্মান ও মর্যাদা দান করেছেন । তাই আপনারা সবাই তাঁকে সাহায্য, সহযোগিতা করুন । এবং তিনি যা বলেন গভীর মনযোগ সহকারে শুনুন এবং তার আনুগত্য করুন । “(ইবনে হিশাম, তৃতীয় খন্ড , পৃষ্ঠা, ১১১) ।
একদিন নবী (সা) কোন এক পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন । এই সময় পথে আবদুল্লাহ ইবনে উবাই তাঁর সাথে অভদ্র আচরণ করে । তিনি হযরত সা’দ ইবনে উবাদাকে বিষয়টি জানালে সা’দ বললেন, “হে আল্লাহর রসূল, আপনি এ ব্যক্তির প্রতি একটু নম্রতা দেখান । আপনার আগমনের পূর্বে আমরা তার জন্য রাজমুকুট তৈরী করেছিলাম । এখন সে মনে করে, আপনি তার নিকট থেকে রাজত্ব ছিনিয়ে নিয়েছেন । “ (ইবনে হিশাম, তৃতীয় খন্ড , পৃষ্ঠা ২৩৭, ২৩৮) ।
বদর যুদ্ধের পর বনী কাইনুকা গোত্রের ইহুদীরা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ ও অকারণে বিদ্রোহ করলে রসূলুল্লাহ (সা) তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন । তখন এই ব্যক্তি তাদের সমর্থনে কোমর বেঁধে কাজ শুরু করে । সে নবীর (সা) বর্ম ধরে বলতে লাগলো, এই গোত্রটির সাতশত বীরপুরুষ যোদ্ধা শত্রুর মোকাবেলায় সবসময় আমাকে সাহায্য করেছে, আজ একদিনেই আপনি তাদের হত্যা করতে যাচ্ছেন? আল্লাহর শপথ, আপনি যতক্ষণ আমার এই মিত্রদের ক্ষমা না করবেন আমি ততক্ষণ আপনাকে ছাড়বো না । (ইবনে হিশাম, তৃতীয় খন্ড , পৃষ্ঠা ৫১-৫২) ।
উহুদ যুদ্ধের সময় এই ব্যক্তি খোলাখুলি বিশ্বাসঘাতকতা করেছে । যুদ্ধের ঠিক পূর্ব মুহুর্তে সে তার তিনশত সঙ্গী -সাথীকে নিয়ে যুদ্ধের ময়দানে থেকে ফিরে এসেছে । কুরাইশরা তিন হাজার লোকের একটি বাহিনী নিয়ে মদীনার ওপরে চড়াও হয়েছিল আর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাত্র এক হাজার লোক নিয়ে তাদের মোকাবিলা ও প্রতিরোধের জন্য বেরিয়েছিলেন । এক হাজার লোকের মধ্যে থেকেও এই মুনাফিক তিনশত লোককে আলাদা করে যুদ্ধের ময়দান থেকে সরিয়ে নিয়ে গেল এবং নবী (সা) কে শুধু সাতশত লোকের একটি বাহিনী নিয়ে তিন হাজার শত্রুর মোকাবিলা করতে হলো ।
এ ঘটনার পর মদীনার সব মুসলমান নিশ্চিতভাবে বুঝতে পারলো যে, এ লোকটি কট্রর মুনাফিক । তার যেসব সংগীসাথী এই মুনাফিকীতে তার সাথে শরীক ছিল তাদেরকেও তারা চিনে নিল । এ কারণে উহুদ যুদ্ধের পর প্রথম জুম’আর দিনে নবীর (সা) খোতবা দেয়ার পূর্বে এ ব্যক্তি যখন বক্তৃতা করতে দাঁড়ালো তখন লোকজন তার জামা টেনে ধরে বললঃ “তুমি বসো, তুমি একথা বলার উপযুক্ত নও । “ মদীনাতে এই প্রথমবারের মত প্রকাশ্যে এ ব্যক্তিকে অপমানিত করা হলো । এতে সে ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ ও রাগান্বিত হলো এবং মানুষের ঘাড় ও মাথার উপর দিয়ে ডিঙিয়ে ডিঙিয়ে মসজিদ থেকে বেরিয়ে গেল । মসজিদের দরজার কাছে কিছু সংখ্যক আনসার তাকে বললেন, “তুমি একি আচরণ করছো? ফিরে চলো এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আবেদন করো । “ এতে সে ক্রোধে ফেটে পড়লো এবং বললো! “তাকে (রাসুল সাঃ) দিয়ে আমি কোন প্রকার ক্ষমা প্রার্থনা করাতে চাই না” । (ইবনে হিশাম, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১১১) ।
ইহুদীদের বিরুদ্ধে বনু নাযীর যুদ্ধে এই ব্যক্তি ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা আরো খোলাখুলিভাবে ইসলামের শত্রুদের সহযোগিতা করে । এই মুনাফিকরা গোপনে গোপনে ইহুদীদের কাছে খবর পাঠাচ্ছিল যে, তোমরা রুখে দাঁড়াও । আমরা তোমাদের সাথে আছি । তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হলে আমরা তোমাদের সাহায্য করবো এবং তোমাদেরকে বহিষ্কার করা হলে আমরাও তোমাদের সাথে বেরিয়ে যাব ।
কিন্তু এতকিছুর পরও রসূলুল্লাহ (সাঃ) তার কার্যকলাপ ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখে এড়িয়ে যাচ্ছিলেন । আওস ও খাযরাজ গোত্রদ্বয়ের বহু সংখ্যক নেতা তার সহায্যকারী ছিল । কম করে হলেও মদীনার গোটা জনবসতির এক তৃতীয়াংশ ছিল তার সাঙ্গপাঙ্গ । এই পরিস্থিতিতে বাইরের শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করার সাথে সাথে আভ্যন্তরীণ শত্রুর সাথেও যুদ্ধের ঝুঁকি নেয়া কোন অবস্থায়ই সমীচীন ছিল না ।
সুত্রঃ সূরা হাশর, সূরা মুনাফিকুন, ও সীরাতে ইবনে হিসাম
বিষয়: রাজনীতি
১৮৩৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন