“অনেক মানুষ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, কিন্তু সাথে সাথে শিরকও করে।” (সূরা ইউসুফঃ১০৬)
লিখেছেন লিখেছেন ইহসান আব্দুল্লাহ ০৬ আগস্ট, ২০১৩, ০৩:৪২:০২ দুপুর
মানুষ যেভাবে মানুষের রব বনে গেছে
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
“তারা আল্লাহর পরিবর্তে তাদের আলেম ও দরবেশদেরকে (পীর ও নেতৃস্থানীয় ধর্মীয় ব্যক্তিবর্গকে) রব্ব হিসেবে গ্রহণ করেছে।” (সূরা তওবা ৯:৩১)
“(হে নবী!) বলো, হে আহলে কিতাবরা! এসো এমন একটি কথার ওপর আমরা একমত হই, যে ব্যাপারে তোমাদের ও আমাদের মাঝে কোন বিরোধ নেই। তা হলো- আমরা আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কারো বন্দেগী ও দাসত্ব করবো না। তার সাথে কাউকে শরীক করবো না। আর আমরা আল্লাহর পরিবর্তে অন্য কাউকে রব্ব হিসেবে গ্রহণ করবো না।” (সূরা আলে-ইমরান ৩:৬৪)
“আর (হে নবী!) লোকদেরকে স্মরণ করিয়ে দাও সেই সময়ের কথা, যখন তোমার রব্ব বনী আদমের পৃষ্ঠদেশ থেকে তাদের সন্তানদের বের করলেন এবং তাদেরকেই তাদের নিজেদের ব্যাপারে সাক্ষী রেখে জিজ্ঞেস করলেন, আমি কি তোমাদের একমাত্র রব্ব নই? তারা সবাই বললো- হ্যাঁ, আমরা সাক্ষ্য দিলাম (যে আপনিই আমাদের একমাত্র রব্ব)। এই সাক্ষ্য আমি (আল্লাহ্) এ জন্যই নিলাম, হয়তো কিয়ামতের দিন তোমরা বলে বসবে যে, আমরা আসলে বিষয়টি সম্পর্কে জানতামই না। অথবা তোমরা হয়তো বলে বসবে যে, আমরা তো দেখেছি আমাদের বাপ-দাদারা পূর্বে থেকেই এই শিরকি কর্মকান্ড করে আসছে (সুতরাং আমরা তো অপরাধী না, কারণ) আমরা তো তাদের পরবর্তী বংশধর মাত্র! তারপরও কি তুমি পূর্ববর্তী ভ্রান্ত ও বাতিলপন্থীদের কৃতকর্মের দরুন আমাদেরকে শাস্তি দিবে?” (সূরা আরাফ ৭:১৭২-১৭৩)
উক্ত আয়াতত্রয় হতে সুস্পষ্ট যে মানুষ শিরকের মাধ্যমে আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কাওকে রব হিসেবে গ্রহণ করতে পারে। এ ব্যাপারে কোরআনে উল্লেখিত ফেরাউনের উদাহরণটা দিলেই যথেষ্ট। এইটা সত্য যে কোরআন সব যুগের জন্যই। সুতারাং এ যুগেও যে ফেরাউন আছে এটা চিন্তাই নিয়ে আসতে হবে। ফেরাউন সম্পর্কে আল্লাহ্ বলেন,
“দেশবাসীকে জমায়েত করে সে ভাষণ দিলো, অতঃপর সে বললো, আমিই তোমাদের সবচেয়ে বড় রব্ব।” (সূরা নাযিয়াত ৭৯: ২৩-২৪)
এখন কথা হলো, ফেরাউন নিজেকে রব্ব বলতে কী বুঝিয়েছে? সে কি দাবী করেছিলো যে, সে আসমান যমীন সৃষ্টি করেছে? সে মানুষের জন্ম-মৃত্যুর মালিক? সে বিশ্বজাহানের পালনকর্তা? সে মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছে কিংবা পাহাড়-পর্বত যমীনের বুকে গেড়ে যমীনকে সে স্থিতিশীল করে রেখেছে? না, এমন দাবী সে কখনো করেনি। সে যদি এমন দাবী করতো তাহলে তার সংগী-সাথীরাই তাকে পাগল বলে উড়িয়ে দিতো। কারণ ফেরাউনের আগমনের পুর্বেই এসব আল্লাহতায়ালা সৃষ্টি করেছেন। বরং সে নিজেও বিভিন্ন পূঁজা-পার্বনে অংশ নিতো, তারও অনেক ধরনের ইলাহ্, মা’বুদ বা উপাস্য ছিলো। কুরআন থেকেই এর প্রমাণ দেখে নিন-
“ফেরাউনের জাতির নেতারা (ফেরাউনকে) বললো, আপনি কি মূসা ও তার দলবলকে রাজ্যে বিপর্যয় সৃষ্টির সুযোগ দিবেন আর তারা আপনাকে ও আপনার ইলাহ্ দের এভাবে বর্জন করে চলবে?” (সূরা আরাফ ৭: ১২৭)
দেখুন আয়াত সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করছে যে, ফেরাউনেরও অনেক ইলাহ্ বা উপাস্য ছিলো। তাহলে তার রব্ব দাবী বলতে আসলে কী বুঝায়? রব্ব বলে সে কী দাবী করেছিলো? ফেরাউন সহ পৃথিবীর কোন তাগুতী শক্তিই আসমান-যমীন, গ্রহ-নক্ষত্র, মানব জাতিসহ সৃষ্টি জগতের কোনো সৃষ্টির স্রষ্টা বলে নিজেকে উপস্থাপন করেনি, কোনদিন দাবী তোলেনি।
“ফেরাউন তার জাতির উদ্দেশ্যে (এক) ভাষণ দিলো। সে বললো, মিশরের সার্বভৌমত্ব কি আমার নয়? তোমরা কি দেখছো না যে, এই নদীগুলো আমার (রাজত্বের) অধীনেই বয়ে চলছে।” (সূরা যুখরুফ ৪৩:৫১)
“এসব বলে সে তার জাতিকে ভীতসন্ত্রস্ত করে তুললো, এক পর্যায়ে তারা তার আনুগত্য মেনেও নিলো। এটি প্রমাণ করে যে, নিঃসন্দেহে তারা নিজেরাও ছিলো এক পাপীষ্ঠ জাতি।” (সূরা যুখরুফ ৪৩:৫৪)
কুরআনের আয়াতগুলো এবং বাস্তব প্রেক্ষাপট যদি আমরা চিন্তা করি তাহলে নিশ্চয়ই বুঝতে পারি যে, আল্লাহ্ রাব্বুল আ’লামীনের পরিবর্তে কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা দলের সার্বভৌমত্ব মেনে নেয়া মানেই হলো তাকে বা তাদেরকে রব্ব স্বীকার করে নেয়া। কারণ অন্য কারো সার্বভৌমত্ব মেনে নেয়া মানেই হলো আল্লাহর সার্বভৌমত্ব অস্বীকার করে আইন-কানুন রচনা করার অধিকারসহ নিরংকুশ শাসন কর্তৃত্ব তাদের হাতে তুলে দেয়া।
আমরা অবশ্যই "ইসলামী সমাজ" চাই
বিষয়: বিবিধ
১৭৩২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন