জাতিভাই
লিখেছেন লিখেছেন বইঘর ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৯:০৭:২৪ রাত
নিজুম রাত। নীলাভ আসমানের তারকারাজি ডাগর ডাগর আঁখি মেলে সুন্দর এই বসুন্দরার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। কার্পাস তুলোর মতো সাদা মেঘখণ্ড মুক্ত-বিহঙ্গের মতো আকাশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে উড়ে বেড়াচ্ছে। বাতাস আনন্দে ডানা ঝাপটিয়ে নিঃশব্দে ঘুরে ঘুরে সবার দেহমনে অনাবলি শান্তির শীতল পরশ বুলিয়ে দিচ্ছে। শান্ত রজনীর মনমাতানো এই নির্জন পরিবেশে সবাই ঘুমিয়ে। কোথাও কেউ জেগে নেই। কুরআন-হাদীসের জ্ঞানের মধু আহরণের নেশায় কেবল দু'টি চোখ জাগ্রত। জ্ঞানের সাগরে তিনি অবিরাম সাঁতার কাটছেন। সেখানে হাবুডুবু খাচ্ছেন। একবার ডুবছেন আবার ভাসছেণ। জ্ঞান-প্রাসাদের সিংহ দরজাগুলো খুলে খুলে দেখছেন আর মণি-মুক্তাগুলো হৃদয়ের সিন্দুকে খুব যত্নের সাথে ভরে ভরে রাখছেন। অন্য কোনো দিকে খেয়াল নেই জ্ঞান-সাধকের। জ্ঞানের সাগরে আকণ্ঠ ডুবে আছেন তিনি। তিনি যেনো পৃথিবী নামক এই গ্রহ ছেড়ে অন্য গ্রহে চলে গেছেন।
হঠাৎ খচখচ শব্দে তাঁর পাঠের ঘোর কাটলো। ভেঙ্গে খান খান হয়ে গেলো ঘরের নীরব পরিবেশ। বইয়ের পাতা থেকে চোখ তুলে তিনি ঘরের চারিদিকে একবার দৃষ্টি বুলালেন। দেখলেন, ঘরের এক কোণে একটি ইঁদুর। মুখে একটি আশরাফী-স্বর্ণ মুদ্রা। ইঁদুরটিকে বন্দি রেখে তিনি আবার পাঠে মন দিলেন। হারিয়ে গেলেন জ্ঞানের মহাসমুদ্রে। আসলে যারা মহাজ্ঞানী হয়েছেন, অনেক বড় হয়েছেন, তাঁরা এভাবেই রাতের পর রাত জেগে নিরলস সাধনা করেছেন।
কিন্তু কি অবাক কাণ্ড! একটু পর আরেকটি ইঁদুর এলো। সেটির মুখেও একটি আশরাফী। এসে বন্দি ইঁদুরটির চারপাশে ঘুর ঘুর করতে লাগলো। কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরির পর এ ইঁদুরটি মুখের আশরাফীটি রেখে চলে গেলো। অল্প সময় পর আবার এলো। মুখে করে আরেকটি আশরাফী নিয়ে এলো। এটিও রেখে গেলো। ইঁদুরটি এভাবে একটি একটি করে আশরাফী আনতেই থাকলো। আনতে আনতে সতেরটি আশরাফী এনে বান্দি ইঁদুরটির নিকটে রাখলো। সর্বশেষ একটি আশরাফীসহ একটি থলে নিয়ে এলো। এবার আর পূর্বের মতো ফিরে গেলো না। বরং তার বন্দি সাথীর চারেদিকে ঘুরতে লাগলো। সে একথা বোঝাতে চাইলো যে, আমার কাছে আর কিছুই নেই। এগুলোর বিনিময়েই আপনি আমার সাথীকে ছেড়ে দিন। জ্ঞানসাধক চুপে চুপে সব দেখছিলেন। এক ইঁদুরের প্রতি অপর ইঁদুরের এরুপ সহমর্মিতাপূর্ণ আচরণ দেখে তিনি খুব মুগ্ধ হলেন এবং বন্দি ইঁদুরটিকে ছেড়ে দিলেন।
বন্ধুরা! দেখলে তো, নির্বাক ক্ষুদে প্রাণী ইঁদুরটি তার জাতিভাই বন্দি ইঁদুরটির প্রতি কীরুপ দরদ আর ভালোবাসা দেখালো? সে তার সঙ্গীর মুক্তির জন্য কত রকম চেষ্টা করলো?
আজকে সারা পৃথিবী জুরে মুসলমানরা নির্যাতিত। ইরাক, আফগানিস্তান, ফিলিস্তিন আর কাশ্মীর, সম্প্রতি সময়ে বাংলাদেশের পিচঢালা কালো রাজপথ তাজা গোলাপের মতো নিষ্পাপ মানুষের তাজাখুনে লালে লাল! বিভিন্ন পেপার-পত্রিকায় আমরা দৈনিক সে সব করুণকাহিনী পড়ি ও দেখি।প্রতিদিন শহীদ হচ্ছে আমার কোনো না কোনো ভাই। কিন্তু কেন? উত্তর একটাই তারা ইসলামের কথা বলে। তারা সত্যের কথা বলে। তারা কালিমার পতাকা উড়াতে চায়। এ জন্যই তারা আজ নির্যাতিত নিপিরিত তাই না? হ্যাঁ তখন কি তাদের জন্যে আমাদের মনে ব্যথা লাগে? আমরা কি জান দিয়ে কিংবা মাল দিয়ে তাদের মুক্তির চিন্তা-ভাবনা করি? কখনো কি ভাবি তাদের দুঃখ-কষ্টের কথা? বন্ধু! কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে একটু ভাবো তো!
ছবিগুলো দেখলে কি মনে হয় বলুন তো?
আমরা আজ কোথায় দাড়িয়ে আছি.....?
এটা বিদেশ নয়
বিষয়: বিবিধ
১৩৬০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন