ফাঁসির মঞ্চে যমটুপি ও শহীদ আবদুল কাদের মোল্লা
লিখেছেন লিখেছেন বইঘর ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৩:৫৮:০৬ দুপুর
ফাঁসির কার্যকরের আগে শহীদ আ : কাদের মোল্লার ৩ ঘন্টা সময় কেটেছে নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে। ফাঁসির মঞ্চে নেওয়ার আগে যমটুপি পরতে আপত্তি ছিল তার। এর আগে নিজেই কয়েক দফা তওবা পড়েছেন তিনি। মায়ের কবরের পাশে কবর দেয়ার শেষ ইচ্ছার কথাও জানিয়েছিলেন শহীদ আ : কাদের মোল্লা। সে ইচ্ছা পূরণও হয়েছে। শহীদ আ : কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের আগে সন্ধ্যা থেকেই শুরু হয় নানা আনুষ্ঠানিকতা। সন্ধা সোয়া ৬টার দিকে শহীদ আ : কাদের মোল্লার স্ত্রীসহ পরিবারের ১০ সদস্যের একটি দল তার সাথে শেষ দেখা করেন। সন্ধা ৭টায় সাক্ষাৎপর্ব শেষ হয়।
এ সাক্ষাতে শহীদ আ : কাদের মোল্লা পরিবারের কাছে ক্ষমা চেয়েনেন। ইসলামের উপর অটল থেকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান। নিজের সহায়-সম্পত্তি সম্পর্কেও কিছু বলে যান।নিজের কবরের জায়গাটাও তিনিই ঠিক করে যান। সাক্ষাৎকারীরা চলে গেলে কাদের মোল্লাকে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকার বিষয়ে আগাম নোটিস দেয়া হয়। এর আধঘন্টা পরেই রাত ৮টার দিকে কারা কর্তৃপক্ষ শহীদ আ : কাদের মোল্লাকে শেষবারের মতো পাকপবিত্র হতে ও গোসল করা, নামাজ আদায়সহ নানা আনুষঙ্গিক কর্মকাণ্ড সম্পাদনের বিষয়ে পরামর্শ দেন। শহীদ আ : কাদের মোল্লা কারা কর্তৃপক্ষকে জানান, তার গোসল করা আছে। নতুন করে গোসলের প্রয়োজন নেই। নামাজ আদায় করা হয়েছে। নিজের ব্যক্তগত ইচ্ছা বা অনিচ্ছার বিষয়েও জানতে চাইলে তিনি বলেন তার কবরটি যেন তার মায়ের কবরের পায়ের দিকে দেয়া হয়।
কারা কর্মকর্তারা চলে যান। শহীদ আ : কাদের মোল্লা আবার নফল নামায পড়তে থাকেন। তসবিহ পাঠ করতে থাকেন। নফল নামাজের ফাঁকে ইশার নামাজও আদায় করেন নেন। রাত ৯টার দেক নতুন করে আবার পাকপবিত্র হওয়ার বিষয়ে কারা কর্মকর্তারা পরামর্শ দেন। তিনি পাকপবিত্র আছেন বলে দাবি করেন কারা কর্তৃপক্ষের কাছে। কিছুক্ষণ পড়েই তাকে তওবা পড়ানোর জন্য ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের মসজিদের ইমাম মনির হোসেন কাদের মোল্লার কাছে যান। কাদের মোল্লা নিজে তওবা পড়তে জানেন এবং তওবা কয়েক দফায় পড়েছেন বলে ইমাম কে জানান।
সর্বশেষ রাতক সাড়ে ৯টার দিকে জল্লাদ শাহজাহানের নেতৃত্বে ৫সদস্যের একটি দল ফাঁসি কার্যকর করার বিষয়টি কাদের মোল্লাকে চূড়ান্তভাবে জানিয়ে দেয়। এর আগে শহীদ আ : কাদের মোল্লা মহান প্রভুর দরবারে জীবনের শেষ হিসাবটুকু করে নিয়েছেন একান্ত ভাবে। এবার কাদের মোল্লা কিছুটা চমকে ওঠেন। নিজেকে প্রস্তুত করতে শহীদ আ : কাদের মোল্লাকে ১৫ মিনিট সময় দেয়া হয়।
ঠিক রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে শাহজাহানের নেতৃত্বে ৬ জল্লাদের একটি দল কালো যমটুপি হাতে নিয়ে শহীদ আ : কাদেরর মোল্লার সেলে হাজির হয়। এবার শহীদ ভাই অস্থির হয়ে উঠেন। তাকে দ্রুত প্রস্তুত হতে বলা হলে, কিছু সময়ের মধ্যেই
নিজেকে সামলে নয়ে। নিজের জীবনের শেষ ইচ্ছার কথা আবারও জানতে চাওয়া হলে তিনি আগের মতোই নিজের কবর তার মায়ের কবরের পায়ের দিকে দেয়ার ইচ্ছাটুকুই জানান। কোনো কিছু ক্ষেতে বা আরও কোনো ইচ্ছা আছে কিনা জানতে চইলে তিনি কোনো আগ্রহ প্রকাশ করেন নি।
জল্লাদরা সেল থেকে বের হয়ে আসতে বলে। এমন কথায় তিনি কিছুটা ত্রস্ত হয়ে ওঠেন। চোখে মুখে কিছুটা ভয়ের ছাপ দেখাগেল। তিনি সেল থেকে বের হতে ইতস্তত করছিলেন। দেরি দেখে শাহজাহান মোল্লার নেতৃত্বে জল্লাদরা শহীদ ভাইকে কালো যমটুপি পরিয়ে দেয়। যমটুপি পরার পর শহীদ আ : কাদের মোল্লা যমটুপি ছাড়াই স্বেচ্ছায় ফাঁসির মঞ্চে যেতে প্রস্তুত বলে জল্লাদদের জানান। জল্লাদদের যমটুপি খুলে দিতে বলেন। জল্লাদরা সবিনয় জানায়, এটি আইন। এর ব্যতক্রম হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এরপর জল্লাদরা শহীদ ভাইয়ের দুই হাত পিছনে বেঁধে ফেলে। তারপর দুই হাত দুদিকে ও সামনে এবং পিছনে জল্লাদরা ধরে আস্তে আস্তে শহীদ আ : কাদের মোল্লাকে নিয়ে ফাঁসির মঞ্চের দিকে রওনা হয়। আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ৯টা ৫৫ মিনিটে তাকে ফাঁসির মঞ্চের কাঠের পাটাতনের ওপর দাঁড় করায়। ৫ মিনিট ধরে অন্যান্য প্রক্রিয়া চলে।
ফাঁসির মঞ্চে ৬ জল্লাদ ছাড়াও ঢাকা জেলা প্রশাসক, ম্যাজিস্ট্রেট, ঢাকা সিভিল সার্জন, কারা মহাপরিদর্শক, উপকারা মহাপরিদর্শক, পুলিশের তিনি উপকমিশনার, রেব ১০ এর উর্ধতন কর্মকর্তা, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার মসজিদের ইমাম, কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপারসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। একজন কর্মকর্তা লাল রুমাল নিয়ে দাড়িয়ে থাকেন। ঠিক ১০টায় গলায় রশি পরিয়ে দিলে ১০টা ১ মিনিটে কারা কর্মকর্তা তার হাত থেকে লাল রুমাল ছেড়ে দেন। সঙ্গে সঙ্গে জল্লাদ রশির লিভার টান দিলে মঞ্চের পাটাতন সরে যায় এবং তিনি ঝুলতে থকেন। এভাবে ২০ মিনিট ঝুলিয়ে রেখে মৃতু্্ নিচ্শিত করা হয়। কারা বিধি মোতাবেক লাম খাটিয়ায় নিয়ে হাত পায়ের রগ গুলো কেটে ফেলার নির্দেশ থাকলেও তাকে শুধু গারের রগগুলো কাটা হয়। পরে আরও কিছু আনুসাঙ্গিক কাজ শেষে দোয়া কালাম পড়তে পড়তে লাশ অ্যম্বুলেন্সে করে তার গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রাত ১২টার দিকে রওনা হয়।
এবং সেখানে তার পরিবারের কাছে লাশ হস্তন্তরের পর তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী পুলিশের উর্ধবতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতে করা নজর দারীর মাধ্যমে মায়ের কবরের পায়ের দিকেই তাকে কবর দেয়া হয়।
এসময় স্থানীয় নেতৃবৃন্দি ছাড়াও এলাকার প্রচুর সংখ্যক লোক এ জানাযায় অংশ নেন। এবং এলাকায় শোকের মাতম বয়ে চলে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন দীনের এ মহান নেতাকে শহীদ হিসাবে কবুল করুক এবং জান্নাতুল ফেরদাউস নসীব করুন।আগামীদিনে তার দেয়া পথেই যেন আমরা হাটতে পারে সেটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার। আমীন! আমীন! ছুম্মা আমীন!!
বিষয়: বিবিধ
৪১৫৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন