ভয়কে জয় করতে হবে ঃ জ্বালাতে হবে আশার প্রদীপ
লিখেছেন লিখেছেন বইঘর ১৯ জুলাই, ২০১৩, ১২:২৩:০৯ রাত
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন-
হে নবী! আপনি বলুন, হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছে, তোমরা আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি অপরা ক্ষমাশীল, অসীম দয়ালু। [যুমার : ৫৩]
বক্ষমান আয়াতটির একটি প্রেক্ষাপট আছে। প্রেক্ষাপটটি বর্ণনা করেছেন ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম রহ.। একবার সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন : একবার আমি হযরত রাসূলে কারীম সা. কে জিজ্ঞাসা করলাম : সবচেয়ে বড় গুনাহ কোনটি? রাসূলে কারীম সা. বললেন, কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ মনে করাটাই সবচে বড় গোনাহ। কারণ, তিনিই তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, তারপর?
তিনি বললেন প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া।
এরই প্রেক্ষিতে আল্লাহ আল্লাহ তাআলা উপরোক্ত আয়াতটি অবতীর্ণ করেন। বর্ণনাকারীগণ এই আয়াতের সাথে সূরা ফুরকানের কয়েকটি আয়াতের সাথেও একটা বন্ধন আছে বলে উল্লেখ করেছেন। সূরা ফুরকানে বলা হয়েছে-
এবং তারা আল্লাহর সাথে কোন মাবুদকে ডাকে না। আল্লাহ যাকে হত্যা করতে নিষেধ করেছেন, যথার্থ কারণ ব্যতিরেকে তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। যে এই গুলো করে, সে শাস্তি ভোগ করবে। কিয়ামতের দিন তার শাস্তি দ্বিগুণ করা হবে এবং সেখানে স্থায়ীভাবে থাকবে হীন অবস্থায়। তবে তারা নয়, যারা তাওবা করে ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে। আল্লাহ তাদের পাপগুলো পুণ্যে রূপান্তিরিত করে দেবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। যে ব্যক্তি তাওবা করে ও সৎকর্ম করে, সে সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর অভিমুখী হয়। [ফুরকান : ৬৮-৭১]
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম রহ. বিখ্যাত সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন : একবার কতিপয় মুশরিক অনেকগুলো মানুষ হত্যা করলো এবং অতিমাত্রায় ব্যভিচার করলো। তখন তারা হযরত সা. এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে বললো : তুমি যা বলো এবং যে দাওয়াত দাও, তাতো খুবই উত্তম। কিন্তু আমরা যে পাপ করেছি, তার কি কোন প্রায়শ্চিত্ত আছে? থাকলে সেটা কি? তাদের এই প্রশ্নের জবাবেই সূরা যুমার এর প্রথমোক্ত আয়াতটি অবর্তীর্ণ হয়।
সুতরাং বক্ষমান আয়াতটির স্পষ্ট আহ্বান হচ্ছে- আল্লাহর রহমত, দয়া ও অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হওয়া যাবে না। তাই কোন মুমিন বান্দা পাপ করে ফেললে তাকে প্রাণ খুলে তাওবা করতে হবে, অপরাধ শিকড় শুদ্ধ বর্জন করতে হবে, বুক বাঁধতে হবে আল্লাহর অসীম রহমতের আশায়। তার সীমাহীন ক্ষমার প্রত্যাশায়।
আঘাত, নির্যাতন, আক্রমণ, রক্তক্ষরণ তো উম্মাহর চেতনাকে স্তব্ধ করতে পারে না। উম্মাহর চিন্তা ও আদর্শকে ভেঙ্গে দিতে পারে না। হতবল করতে পারে না মুহুর্তের জন্যে। বরং আঘাত আহ্বান করে প্রতিঘাতের প্রতি। আক্রমণ-নির্যাতন ঘুরে দাঁড়াতে শেখায়। শেখায় আল্লাহর প্রতি প্রত্যাবর্তন। এই তো সত্যিকার পয়গাম।
আজ উম্মাহর প্রধান কর্তব্য হলো ঘুরে দাঁড়াবার পথ আবিষ্কার করা এবং নিজেদের অতীত ঐতিহ্য ও মর্যাদার আসনকে ফিরিয়ে আনতে সক্রিয় হওয়া। উম্মাহর স্বপ্নকে বাঁচাতে হবে। বরং আরও আকশসম স্বপ্ন সৃষ্টি করতে হবে। আমাদেরকে ভুলে গেলে চলবে না। আমাদের প্রিয়তম নবী সা. এ মর্মে সুসংবাদ দিয়েছেন আমার উম্মতের একটি দল সদা সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। তারা তাদের শত্রুদেরকে ভীত-সন্ত্রস্ত করে রাখবে। কোন বিরোধিতাকারী তাদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারবে না। এ পথে প্রাপ্ত কোন আঘাতও তাদেরকে দুর্বল করতে পারবে না। এবং তারা কিয়ামত অবধি এই অবস্থার উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। সাহাবায়ে কেরাম আরয করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! তারা কোথায় থাকবে? নবীজি ইরশাদ করলেন : বাইতুল মুকাদ্দাস ও তার আশ-পাশে।
আল্লাহর রাসূল সা. সত্যই বলেছেন।
বর্তমান সময়ে আলেমদের উচিত বীর দীপ্ত বলয়ে ধৈর্যের সাথে সামনে এগিয়ে যাওয়া। আর যে জালেমরা আজ আলেম উলামাদের কে নির্যাতন নিপিরণ করে বেড়াচ্ছে, যাদেরকে আজ ফাঁসির মঞ্চের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে, সত্য তওবা করে, সঠিক পথে ফিরে আসা, কারণ এখনো তাদের তওবার দরজা খুলা আছে। সে দিন বেশি দেরি নয় যখন তাদের তওবার দরজা বন্ধ হয়ে যাবে। তখন আফসোস করা ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না।
বিষয়: বিবিধ
১৩০১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন