আমাদের নববর্ষ উদযাপন ও ইসলাম

লিখেছেন লিখেছেন বইঘর ১৫ এপ্রিল, ২০১৩, ০১:৫৬:৩০ রাত





ভরসা শুধু আল্লাহর উপর

মুসলমান যে কোনো কাজ আল্লাহর উপর ভরসা করে শুরু করবে। সুলক্ষণ-কুলক্ষণ মুসলমান এগুলো দেখতে যাবে না। মুসলমানের কাজ হল, যখন যে কাজ করার প্রয়োজন বোধ করবে তখন সে বিষয়ে ইসলামের বিধান কী তা জেনে সে অনুপাতে কাজ করা। যদি এ কাজ করার অনুমতি থাকে, তাহলে করো আর যদি না থাকে, তাহলে এর থেকে বিরত থাকো।

মুসলমানের জন্য চন্দ্র, সূর্য, শালিক, হুতুম পেঁচা- এ ধরণের কোনো কিছুর উপর ভরসা করার কোনো অবকাশ নেই। মানুষ সব কাজ আল্লাহর হুকুমের উপর ভরসা করে করবে। আল্লাহর হুকুম থাকলে করবে আর না থাকলে করবে না। যে কাজে আল্লাহর হুকুম নেই, সারা দুনিয়া উল্টে গেলেও কোনো মুসলমান সে কাজ করতে পারে না।

পয়লা বৈশাখের নামে যা হচ্ছে



পয়লা বৈশাখকে কেন্দ্র করে মুসলমানদের মধ্যে প্রতি বছর যেভাবে উন্মাদনা বাড়ছে এগুলো দেখলে বুঝা যায়না যে, মুসলমান ইসলামকে জানে এবং মানে- এমন কথা বলার কোনো উপায়ই থাকে না। একথা বিশ্বাস করার কোনো সুযোগ থাকে না যে, এরা মুসলমান। কারণ এ দিনে নারী পুরুষের যে অবাধ মেলামেশা, নৃত্য, বেহায়াপনা, উলঙ্গপনা, যৌন আবেদনময়ী অভিব্যক্তি- যা মানুষকে ধর্ষণসহ নানা ধরণের খারাবীর দিকে নিয়ে যায় তা ইসলাম সরাসরি হারাম বলে ঘোষণা করেছেন।

পয়লা বৈশাখে যা কিছু হয় এর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অর্ধেক খ্রিস্টানদের থেকে আর অর্ধেক হিন্দুদের থেকে আমদানিকরা।



ইসলাম দিবস পালন করাকে আদৌ কোনো গুরুত্ব দেয় না। যদি দিত, তাহলে নবী করিম সা. যেদিন নবুওয়্যাত লাভ করেছেন সেই দিনটা হতো একটা মর্যাদাময় দিন। সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী নবুয়্যাত লাভ করেছেন। যাঁর কথার উপর ভিত্তি করে দুনিয়ার সমস্ত মানবজাতির ফায়সালা হবে, বিচার হবে। যে নবুওয়্যাতের কারণে মাকামে মাহমুদ লাভ হবে। শুধু হাজার বছরের কোনো বাঙ্গালি জাতির নয়, গোটা বিশ্বের মানবেতিহাসের এবং গোটা সৃষ্টিজগতের সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদা আল্লাহ তাঁর নবীকে দান করেছেন।

আল্লাহর নবী নবুয়্যাত লাভ করার পর ২৩ বছর দুনিয়াতে বেঁচে ছিলেন, এর মধ্যে একদিনও তিনি ‘নবুওয়্যাত প্রাপ্তি দিবস’ পালন করেননি। আল্লাহর নবীর জীবনে এ রকম আরো বহু দিবস ছিল। জন্মদিবস তো দূরের কথা আল্লাহর নবী যেদিন হিজরত করেছেন, সেই দিবসও কোনো দিন পালন করেননি। অভূতপূর্ব সাফল্যময় বদরযুদ্ধ দিবসকেও কোনো দিন স্মরণ করেননি।

এমনিভাবে সবচেয়ে বড় বিজয়, মক্কার বিজয় দিবসও কোনো দিন তিনি পালন করেননি।

আল্লাহর নবী ইন্তেকালের পর তাঁর মৃত্যুদিবসও কোনো সাহাবায়ে কেরাম পালন করেননি। এমনকি পরবর্তী ৫০০ বছর পর্যন্ত কোথাও এ দিবস পালন করা হয়নি। ইসলাম এসমস্ত আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে, এই সমস্ত ব্যানার আর পোষ্টারের মধ্যে সীমিত নয়। ইসলাম হল বাস্তবমুখি জীবনধর্ম। ইসলাম মানুষকে তার জীবনের প্রাক্টিক্যাল গাইডলাইন দেয় যে, তুমি কীভাবে জীবনযাপন করবে, কীভাবে তুমি পরিচালিত হবে।

মানুষের জন্য অনেক সুন্দর-সুন্দর বিধিবিধান আছে। তোমার জীবনে তুমি হিজরতের আদর্শ অনুসরণ করো, তোমার জীবনে তুমি নবুয়্যাতের আদর্শ পালন করো। তোমার ভেতরে তুমি বদরের আদর্শ লালন করো। তোমার ভেতরে তুমি উহুদের আদর্শ বাস্তবায়ন করো। তোমার ভেতরে তুমি আল্লাহর নবী প্রদর্শিত আদর্শ এবং তাঁর শিক্ষাকে বাস্তবায়ন করো। ইসলাম মানুষকে একথাটিই বলে।

এজন্যই মুসলমানদের মধ্যে থার্টিফাস্ট নাইট নেই। কারণ, এগুলো এসেছে সম্পূর্ণ পাশ্চাত্যের কালচার থেকে, ইহুদি-খ্রিস্টানদের সভ্যতা থেকে। মুসলমানদে আছে নিজস্ব সকীয় সভ্যতা।



মুসলমানদের করণীয়

পয়লা বৈশাখ এবং পয়লা বৈশাখের নামে যা কিছু হচ্ছে এর পুরোটাই হিন্দু ও খ্রিস্টীয় রীতিনীতি। আমরা যেসব মুসলমান আমাদের ইসলাম নিয়ে গর্ভ করি এবং মনে করি যে, মুসলমান হয়ে সৌভাগ্যশীল হয়েছি, আমাদের অন্তত এসব উদযাপন করা থেকে বিরত থাকা কর্তব্য।

আমরা যদি এসব উদযাপন করি, তাহলে এর অর্থ হল, আমার কাছে ইসলামের চেয়ে খ্রিস্টধর্ম ভালো লাগছে। এই দিবস উদযাপন করার মানেই হল আমার কাছে ইসলামের চেয়ে হিন্দুধর্ম ভালো লাগছে।

যে ব্যক্তি ইসলামকে কটাক্ষ করে বা ইসলামকে প্রত্যাখান করে অন্য ধর্মের প্রতি নিজের আকর্ষণ প্রকাশ করবে, সে কেমন মুসলমান?

খ্রিস্টানরা হযরত ঈসা (আ.)-এর জন্মদিবসকে খুব ঘটা করে পালন করে এটা তাদের রীতি। এটা তাদের কালচার। এটা তাদের সভ্যতা। আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে এ সম্পর্কে ইরশাদ করেন যে, তোমরা অন্য কোনো জাতির ধর্মীয় রীতিনীতি অনুসরণ করো না।

ইসলাম অন্য ধর্মাবলম্বীদের সাথে বাড়াবাড়ি করতে বলেনি। হিন্দুদের পয়লা বৈশাখ উদযাপন করতে বাধা দিও না। তারা করছে করুক। অনুরূপভাবে খ্রিস্টানরা থার্টিফাস্ট নাইট উদযাপন করছে করুক। তুমি সেখানে তাদের বাধা দিতে যেও না। কারণ, তারা যে ধর্ম গ্রহণ করেছে, সেই ধর্মে এসব আছে। কাজেই তারা এগুলো করুক।

কিন্তু তুমি তো মুসলমান। তুমি ইসলামের পরিচয় দাও, ইসলামের নাম ধারণ কর। তুমি কেন ইসলাম মানবে না? এটা তো কোনো যুক্তির কথা হতে পারে না।

‘এসো হে বৈশাখ - এসো এসো’....



এই যে বলা হয় ‘এসো হে বৈশাখ- এসো এসো’। এ পয়লা বৈশাখে কী আছে? এটা আল্লাহর একটা জামানা, একটা সময়। আল্লাহ মানুষের জীবনে জামানাকে প্রবাহিত করেন। دَهَرْ মানে জামানা, সময়। একে সৃষ্টি করেছেন আল্লাহ। কল্যাণ বয়ে আনার কোনো ক্ষমতা এর নেই।

কল্যাণ যদি চাইতে হয়, তাহলে সময়ের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর কাছে চাইতে হবে। প্রতিনিয়তই আল্লাহর নিকট কল্যাণ চাইতে হবে। পয়লা বৈশাখের এই দিনটির মধ্যে কী বিশেষত্ব রয়েছে?

প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহর কাছে কল্যাণ চাওয়ার ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, তোমরা আমার কাছে যত বেশি চাইবে আমি ততোবেশি দিবো। যদি না চাও তবে আমি দিবনা।

সময় যিনি সৃষ্টি করেছেন, সে সময়ের মধ্যে কল্যাণ-অকল্যাণও তিনিই নির্ধারণ করেন। আল্লাহ মানুষের কারণে মানুষের কর্মকাণ্ডের উপর অসন্তুষ্ট হয়ে অথবা কখনো মানুষকে পরীক্ষায় লিপ্ত করার নিমিত্তে আবার কখনো শাস্তি দেয়ার জন্য সময়ের মধ্যে, মানুষের মধ্যে, পরিবেশের মধ্যে নিজের পক্ষ থেকে অনেক পরিবর্তন ঘটান।

এগুলো হিন্দু রীতিনীতি



যদি কোনো দান-অনুদান, কোনো কল্যাণ-প্রতিদান চাইতে হয় এবং অকল্যাণ থেকে পানাহ চাইতে হয় তাহলে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার নিকটই চাইতে হবে। অতএব, যারা বলে থাকে ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো’ এগুলোও হিন্দু ধর্মের ঐ মূল চেতনা থেকে আমদানিকরা।

যারা নিজের কল্যাণ চায় সময়ের কাছে, যারা নিজের কল্যাণ চায় মাসের কাছে, যারা লক্ষণ গ্রহণ করে যে বৈশাখের প্রথম দিন থেকেই ভালো কাটলে সারা বছর ভালো কাটবে আর মন্দ কাটলে সারা বছর মন্দ যাবে- এভাবে বৈশাখের সামনে নিজেকে পেশ করা হয়। এগুলোর সবই হিন্দু ধর্মীয় বিশ্বাস হতে উদ্ভূত, মুসলমানের ঈমানে সাথে সাংঘর্ষিক।



খ্রিস্টানরা থার্টিফাস্ট নাইট উদ্যাপন করে। হিন্দুরা পয়লা বৈশাখ পালন করে। অথচ আমরা সকলেই জানি, এই বাংলা সনের প্রচলন এবং এর গণনা ভারতবর্ষের মুসলমান শাসকবর্গের দ্বারাই শুরু হয়েছে।

বিশেষ করে বাদশা আকবরের সময় থেকে এর প্রচলন উল্লেখযোগ্যভাবে আরম্ভ হয়েছে। যদিও তার ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে অনেক সন্দেহ আছে। তিনি তার কিছু মুসলমান লোকদের দ্বারাই কৃষি কাজের উপকারার্থে এর প্রচলন শুরু করেন।

যেহেতু এ উপমহাদেশ কৃষি কাজের উপর নির্ভরশীল, তাই এই কৃষিকাজের বিভিন্ন হিসাব-নিকাশের সুবিধার্থে তিনি এর প্রচলন শুরু করেন । কিন্তু এই হিসাব বুঝানোর প্রচলন শুরু হয়েছে হিন্দু ধর্মের প্রচলন অনুযায়ী আর এই উপমহাদেশে হিন্দুধর্মের ব্যাপক প্রচলন এখনও আছে, আগেও ছিল।

সুতরাং তাদের ধর্মীয় কিছু রীতি অনুযায়ী এই দিবসটার উদযাপন শুরু হয়েছে। আর আমাদের মুসলমানদের মধ্যে বিগত ১৫/২০ বছর যাবত আস্তে-আস্তে এই দিবস উদযাপন করার মাত্রা বাড়ছে। আজ থেকে দুই-আড়াইশ বছর আগে এ নিয়ে কোন মাতামাতি ছিলো বলে আমরা কোথাও পাইনি।

বিজাতীয় অনুকরণের ব্যাপারে আল্লাহর নবীর সতর্কবাণী

বিজাতীয়দের অনুসরণ সম্পর্কে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ

যে ব্যক্তি যে ধর্মের রীতিনীতির সাথে নিজের সামঞ্জস্যতা রক্ষা করবে, মিল রাখবে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন হয়তোবা এই অভিশাপে তাকে কিয়ামতের দিন ঐ ধর্মাবলম্বীদের অন্তর্ভুক্ত করে হাশরের মাঠে উঠাবেন।

কাজেই যদি আল্লাহর সামনে নিজেকে মুসলমান হিসেবে উপস্থিত করতে চাই, কেয়ামতের ময়দানে আমি একজন মুসলমান হিসাবে উঠতে চাই, তাহলে ইসলামের বিধিবিধান জেনে জীবনের সকল ক্ষেত্রেই সেই বিধিবিধান প্রয়োগ করার চেষ্টা করি।

আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন কেয়ামত পর্যন্ত ইসলামকে একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা হিসেবে দিয়েছেন।

এখানে মানবজীবনের জন্য প্রয়োজনীয় সব কিছুই দেয়া আছে। কোনো সিস্টেম তো দূরের কথা, কোনো রীতিনীতি তো দূরের কথা, কোনো অনুষ্ঠান তো দূরের কথা একটি শব্দ পর্যন্ত অন্য কোনো ধর্ম বা অন্য কোনো কারও কাছ থেকে ধার করার, আমদানি করার প্রয়োজন নেই।


আল্লাহ পাক এসব কিছু পরিপূর্ণ করে দিয়েই কুরআনে কারীমে আয়াত নাযিল করেছেন-

الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ

وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِى وَرَضِيتُ لَكُمْ الإِسْلامَ دِينًا

‘আজ আমি তোমাদের দ্বীনকে তোমাদের জন্য পরিপূর্ণ করে দিলাম।

আর কেয়ামত পর্যন্ত ইসলামে যা কিছু দরকার সব কিছু আমি ইসলামের মধ্যে অন্তুর্ভূক্ত করে দিয়েছি।’ (সূরা মায়েদাহ-৩)

সুতরাং আমাদের এ থেকে শিক্ষা নেয়া উচিত যে এতো নেয়ামত পাওয়ার পরেও আজকে আমরা যারা মুসলমান, মুসলমান হয়েও আমরা অন্য ধর্মের রীতিনীতির দিকে আকৃষ্ট হচ্ছি।

এর দ্বারা আমরা আল্লাহর ইসলামকে অপমান করছি। আমি ইসলামকে অপমান করার কোনো অধিকার রাখি না। মুসলমান নাম ধারণ করে অন্য ধর্মের রীতিনীতিকে উদযাপন করার অর্থই হল রীতিমতো ইসলামকে অপমান করা। ইসলামকে অপমান করার অধিকার আমার নেই।

কাজেই এই একটা অনুভূতি আল্লাহ পাক আমাদের দান করুন। এই অনুভূতিটা যদি আমাদের মধ্যে জাগ্রত হয়, তাহলে আশা করা যায়, মুসলমানদের মধ্যে পাশ্চাত্যের প্রচলিত ধর্মীয় রীতিনীতির অনুসরণ করার যে মহামারি দেখা দিয়েছে, তা থেকে আল্লাহ পাক গোটা উম্মতকে এবং সারা বিশ্বের মুসলিম জাতিকে হেফাজত করবেন। আমীন।

বিষয়: বিবিধ

১৪৮৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File