মুসলিম নারীর স্বাধীনতা
লিখেছেন লিখেছেন বইঘর ১১ এপ্রিল, ২০১৩, ১২:০৫:৩৪ রাত
কিছু ঘটনা আমাকে প্রত্যয় যোগায় এ কথা বলতে যে, আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমগ্র বিশ্বের প্রথম নারীবাদীদের অন্যতম। তিনি শিশুকন্যা হত্যা নিষিদ্ধ করে দেন এবং ইসলাম ধর্মে সর্বপ্রথম তিনিই এ কাজকে মহাপাপের কাজ বলে ঘোষণা করেন।
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময়ে এটা ছিল অতীব সাহসের কাজ। ইসলামপূর্ব যুগে কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর এবং অবাঞ্ছিত বলে গণ্য করা হতো।
পিতৃতান্ত্রিক সমাজে কন্যা সন্তানকে তার জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই মাটিতে পুঁতে ফেলা হতো। এ দুর্যোগময়কালে হযতর মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষণা দিলেন-
যে ব্যক্তি দুটি কন্যা সন্তানের পিতা হবে এবং এই কন্যাদের লালন পালন করে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করে তুলবে, বেহেশতে তার জন্য একটি সংরতি স্থান থাকবে।
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবন সঙ্গিনী হযরত খাদিজা রা. ইসলামের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ইসলাম ধর্মের সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ মানব ও সর্বশ্রেষ্ঠ ইসলাম প্রচারক মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্বন্ধে অনেক কিছু আমরা জানতে পারি সেইসব নারীর কাছ থেকে যাঁরা তাঁর সংস্পর্শে এসেছেন। যেমন- তাঁর স্ত্রী এবং কন্যাগণ।
এঁদের কাছ থেকে পাওয়া গেছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পারিবারিক জীবন সংক্রান্ত বহু সংখ্যক হাদীস এবং তাঁর জীবনের বহু ঘটনাবলির বিবরণ।
এর দ্বারা কি প্রমাণিত হয় না যে, একজন মুসলমানের পক্ষে নারীবাদী হওয়া কত সহজ?
ইসলাম সূচনালগ্ন থেকেই নারীর মর্যাদা বৃদ্ধির ব্যাপারে সচেষ্ট। আর তা বর্তমান পশ্চিমা চিন্তাধারা জন্মের বহু আগে থেকেই।
বর্তমান সময়ে যারা নারী বাদী আন্দোল করে; নারীদেরকে রাস্তায় নামাতে চায়; তারা আসলে কী চায়? নারীবাদীদের সাথে তাল মিলিয়ে সবাই যদি অন্ধ হয়ে যায় তবে দেশ ও জাতিকে অভিশাপ থেকে কে রক্ষা করবে?
গত সাত তারিখে দেশের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এক বক্তৃতায় বলেন-
‘যখন সংবিধান এবং সরকার নারীর পূর্ণ অধিকার দিয়ে নারীদের সর্বক্ষেত্রে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছে, ঠিক তখন হেফাজতে ইসলাম নামক সংগঠনটি নারীদেরকে আবার ঘরের কোনে বন্দি করে রাখতে চায়। বার অন্ধকারের যুগেফিরিয়ে দিতে চায়। এটা নারীর অধিকার লংঘন এবং সংবিধান বর্হিভুত কাজ।’
ঠিক তার কিছুক্ষণ পরই শাহবাগ চত্বর থেকে একই কথা বের হয়ে আসে ডা. ইমরান এইচ সরকারের মুখ থেকে।
ইতিহাস সাক্ষী, নারীদের যে সম্মান ইসলাম দিয়েছে; পৃথিবীর আর কোনো ধর্ম, রাষ্ট্র, সংবিধান- যাই হোক না কেন কোনোকিছুই তার শত ভাগের এক ভাগও দিতে পারেনি আর কোনোদিন পারবেও না।
কারণ তারা চায় নারীদের রাস্তায় বের করে দিয়ে তাদেরকে ভোগ করতে। একজনকে দশজনে, কুকুরের মতো, শুকরের মতো। আর ইসলাম চায় নারীরা ঘরে থাকুক, সম্মানে থাকুক। মা জাতির অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে থাকুক।
নারীবাদী আন্দোলকারীদের চাওয়াটা এমন-
মেয়েদের ছবি সর্বত্র ছড়িয়ে দিয়ে তাদের প্রত্যেকটি অঙ্গকে উলঙ্গ করে প্রদর্শন করে বাণিজ্যিক ফায়দা লুটে নেয়া।যা আমাদের নারীরা বুঝেনা। ফলে নারীরা সেখানে অর্থ উপার্জনের সহজ মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
আর এই নারীকে বলা হচ্ছে, তোমাদের হাজার বছর ধরে ঘরের কোণে বন্দি করে রাখা হয়েছে। আমরা তোমাদের হিউম্যান রাইটস প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছি যাতে তোমরা উন্নতি করতে পার। তোমরা দেশ শাসন করবে, মন্ত্রী হবে, প্রেসিডেন্ট হবে।
পক্ষান্তরে আমরা যদি আমেরিকার দিকে তাকাই তাহলে দেখবো, যা তারা আমাদেরকে গেলাচ্ছে তা নিজেরা গিলছে না। আমেরিকার ইতিহাসে এ পর্যন্ত কতজন নারী প্রেসিডেন্ট হয়েছেন? ক’জন নারী এ পর্যন্ত মন্ত্রী হয়েছেন? আজ পর্যন্ত আমেরিকাতে কোন নারী প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি। দু’চার জন মন্ত্রী হলেও তা আবার হয়েছেন অন্য কৌশলে।
আর এই দু’চার জনের কারণে লক্ষ লক্ষ নারীকে কুপথে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। আমেরিকা সম্পর্কে ভেবে দেখুন, সারা পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট যে কাজগুলো আছে সেগুলোই করানো হয় সেখানকার নারীদের দিয়ে।
রাস্তা পরিষ্কার করার কাজ থেকে শুরু করে হোটেলের সেবিকা, বিমানের খাবার পরিবেশনসহ এমন সব নিকৃষ্ট কাজগুলোই নারীদের দায়িত্বে ন্যস্ত।
যে নারীর কাজ ছিল সুন্দরভাবে ঘর-সংসার নিয়ন্ত্রণ করা, সন্তান-সন্তুতি লালনপালন করে আদর্শ মানুষরূপে গড়ে তোলা, সান্নিধ্য ও ভালবাসা দিয়ে আনন্দের দ্বার খুলে দেয়া, সর্বোপরি পরিবার পরিজনদের নিয়ে সুখের নীড় রচনা করাÑ- সেই নারীই আজ কথিত বন্দিত্ব মুক্ত হয়ে গায়ের ওড়না ফেলে, শর্ট প্যান্ট শার্ট পরে বাজারে, হোটেলে, এমনকি বিমানেও অসংখ্য পুরুষের খাবার পরিবেশনসহ তাদের সেবায় নিয়োজিত হচ্ছে।
তাহলে কি চরম অবজ্ঞা, অসম্মান ও লজ্জাজনক হীন পরিণতিকেই আমরা নারী-স্বাধীনতা বলবো?
বিষয়: বিবিধ
১৩৪৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন