মাছরাঙ্গার জিপিএ ফাইভ অপ্রিয় কিছু কথা

লিখেছেন লিখেছেন সালমা ৩১ মে, ২০১৬, ১১:৩৯:৪৮ রাত

গত কয়েকদিন ধরে মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের একটি প্রতিবেদনে জিপিএ ফাইভ নিয়ে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে, সেটা দেখে মনটা দুঃখ ভারাক্রান্ত হয়ে গেল। ছাত্র-ছাত্রীদের ত্রুটি বের করতে গিয়ে টেলিভিশন সাংবাদিক যে কাজটি করল সেটা দেখে আমি একজন মা হিসেবে আমি খুবই মর্মাহত। একজন সচেতন অভিভাবক হিসেবে আমার কথা গুলো পয়েন্ট আকারে উপস্থাপন করলাম।

১. টিভি সাংবাদিক ছাত্র-ছাত্রীদের ছবি গুলো ঝাপসা না করে সরাসরি উপস্থাপন করেছেন, এটার নাম সাংবাদিকতা নয়। পাশ্চাত্য বিশ্বে এতক্ষণে এই সাংবাদিককে তো জেলে থাকার কথা! যদিও তিনি সত্য উৎঘাটনে চেষ্টা করেছেন কিন্তু নেতিবাচক সাক্ষাৎকার কিভাবে প্রচার করতে হয় নিশ্চয়ই তাকে সে ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ছাত্রদের পরিষ্কার ছবি দেখিয়ে তাদেরকে অপমান করার অধিকার তো সাংবাদিকের নেই। এটা বড় অন্যায়, এসব বাচ্চাদের পিতা-মাতা এটা দেখলে তার অবস্থাটা কেমন হতে পারে, অনুভূতি ওয়ালা অভিভাবকেরা একটু চিন্তা করুন.....

২. সাংবাদিক সাহেব এসব ছাত্রদের কয়টি প্রশ্ন করেছিলেন সে ব্যাপারে বুঝার কোন উপায় ছিলনা। তারা কি সকল প্রশ্নেরই উত্তর দিতে পারে নাই? সকল শিক্ষার্থীই কি এ ধরনের কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে নাই? নাকি ছাত্ররা যে সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে নাই, সে গুলো মাত্র তুলে এনেছেন। এসব ছাত্ররা কি মফস্বলের ছিল নাকি শহরের নামী-দামী স্কুলের! এ সব প্রশ্ন চিন্তাশীল মানুষের জন্য রইল।

৩. মানুষ এই প্রতিবেদন টিকে উপভোগ করেছে সে হিসেবে ধরে নিলাম সাংবাদিকের উদ্দেশ্য ভাল ছিল। কিন্তু সাংবাদিক হিসেবে তিনিও যে এসব ছাত্রদের মত আরেক আনাড়ি সাংবাদিক সেটা তিনি লুকাতে পারে নি।

যাক,

৪. আসলে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার মূলেই তো বরবাদ হয়েছে। শিক্ষার্থীদের দোষ কোথায়? ডিজিটাল সরকার ছাত্র-ছাত্রীদের জৈবিক কল্যাণের জন্য যেভাবে ফেসবুক সহজ লভ্য করে দিয়েছে, তাতে সন্তানদের বইয়ে মন দেবার সুযোগ কখন পাবে? বর্তমানে যে সময়টাতে শিক্ষার্থীরা ফেসবুক দেখে আগেকার সময়ে এই সময়টাতেই তো তারা বাহ্যিক সাহিত্য পড়ত।

৫. ক্লাসের শিক্ষকেরা কোচিং বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েছে। তারা প্রাইভেট পড়তে উৎসাহ যোগায় কিন্তু শ্রেণীকক্ষের কর্মসূচী নিয়ে থাকে উদাসীন তাহলে ছাত্ররা কোত্থেকে শিখার সুযোগ পাবে। আমার প্রতিবেশীর ব্রিলিয়ান্ট ছেলেটি রসায়ন ও ফিজিক্সে ফেল করল। রুল নম্বর বরাবর পিছনে থাকে। পরীক্ষার আগে ছাত্রটি আমাকে হেঁসে বলল, 'চাচীমা ইনশায়াল্লাহ আমি এস এস সিতে অনেক ভাল করব। কেননা এস,এস,সি পরীক্ষার খাতা আমার স্কুলের স্যারেরা কাটবে না'। ছাত্রটি খুবই ভাল করেছে, সেও জিপিএ পাঁচ পেয়েছে। আমি তার পরিচিত বলে জানতাম সে ভাল ছাত্র কিন্তু তাকে বারবার ক্লাসের রুল নম্বরে পিছনে ফেলে জুলুম করল। তার জন্য কে দায়ী। সে তো দাবী করে আবার পরীক্ষা হলে আবারো তার রেজাল্ট তাই হবে।

৬. গৃহ শিক্ষক রাখার মাঝেও কোন উপকার নাই। আরেক প্রতিবেশী দুঃখ করে জানাল, শিক্ষক সময় মেপে টাকা নেয়। আর ছাত্রকে পড়াতে বাসায় আসার পর তার ফোনের উপদ্রব শুরু হয়ে যায়। এক ঘণ্টার টিউশনির মাঝে ২০ মিনিট ফোনে কথা বলে বাকি ১০ মিনিট পরবর্তী যে টিউশনিতে যাবে সেখানে কথা বলে। আরেক জনের ঘরে ফ্রি ওয়াই ফাই আছে। মাষ্টার মহাশয়, ছেলে পড়াতে এসে ফেস বুক নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলে গৃহ কর্তা বাধ্য হয়েই ওয়াই ফাই বন্ধ করেছে। যদিও এটা কোন সঠিক পদ্ধতি নয়, তদুপরি শিক্ষকেরা ও যে শিক্ষাদানের মাঝে অন্য বিষয় নিয়ে ঝুঁকে পড়ার আকর্ষণ আছে সেটা তো অহরহ ঘটছে।

৭. শিক্ষার সিলেবাসে চারিত্রিক অধঃপতন নেমেছে। ধর্মীয় নৈতিক শিক্ষাকে গুরুত্বহীন পর্যায়ে নামিয়ে আনা হয়েছে। ভাল ও ভদ্র মানুষেরা বর্তমান সমাজে এখন তামাসার পাত্রে পরিণত হয়েছে। যার কারণে শিষ্টাচার অনুশীলন করার সুযোগ সমাজে নাই। যার কারণে অপ্রাপ্ত বয়সে কিংবা ছাত্রাবস্থায় ফেসবুক-ইউটিউব দেখার মাঝে যে একটু সীমাবদ্ধতা থাকা দরকারে সেটা সমাজ ও রাষ্ট্রের উপরের মানুষ পর্যন্ত অনুধাবন করতে পারছেন না। মূলত রাষ্ট্রের কিছু সুবিধা বাদী মানুষ নিজেদের বৈষয়িক স্বার্থ উদ্ধার করতে জাতিকে পঙ্গু বানিয়ে দিচ্ছে।

৮. নৈতিক শিক্ষা হালকা হবার কারণে সেখানে স্থান খালি হচ্ছে এই সুযোগে এসব স্থান দখল করছে ভারতীয় দের আমদানি করা শিক্ষা ও সিলেবাস। আমরা পুরো জীবনে শিখলাম ব্রিটিশেরা শোষিত ছিল। সীরাজদৌলার পতনের পর বাঙলার ভাগ্যাকাশে কালো মেঘ নেমে আসে। কিন্তু ক্লাস টেনের সিলেবাসে প্রমথ চৌধুরীর বই পড়া প্রবন্ধে পড়ানো হচ্ছে, 'একটি বিশিষ্ট অভিজাত সভ্যতার উত্তরাধিকারী হয়েও ইংরেজি সভ্যতার সংস্পর্শে এসে আমরা ডেমোক্রেসির গুণগুলো আয়ত্ত করিনি....' তাহলে কি দাঁড়াল? আমাদের অসভ্যতাকে ইংরেজ শাসনের দ্বারা দৌড়ানো হয়েছে। ১৯০ বছর ধরে আমাদের সভ্য হতেই লেগেছে! প্রমথ চৌধুরীরা ব্রিটিশের বেতন ভুক্ত কর্মচারী ছিল, তাই তিনি লিখতেই পারেন। কিন্তু একদা আমাদের জাতি যে ঘটনাকে বুকে ধরে দাড়াতে শিখেছিল এখন সে ঘটনাকে ঘৃণা করতে শিখানোর দায়িত্ব নিয়েছে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা।

৯. উপরের দুটি কথা এ কারণেই লিখলাম। যারা দেশের ও দশের সন্তানদের মানুষ করার দায়িত্ব পেয়েছেন। তারা তাদের মূল দায়িত্ব পালন করার পরিবর্তে জাতিকে পঙ্গু করার দায়িত্ব নিয়েছে। জাতি তাদের কাছে একটি আশা করলেও তারা অন্য কাজে ব্যস্ত। যার কারণে মানুষের সন্তান উচ্ছন্নে গেলেও সেটা নিয়ে তাদের কোন হা-হুতোষের ভাব নাই। আমাদের অঞ্চলের জাতিয়, সামাজিক এবং সুস্থ সাংস্কৃতিকে বুকে ধরে না এগিয়ে অন্যদের ধার করা চিন্তার সাগরে সাতার কাটলে সামনের দিন গুলোতে আরো মারাত্মক পরিণতি অপেক্ষা করছে এবং সে দিনটি বেশী দূরে নয়।

ছাত্রদের এই সমস্যার জন্য যতটা না ছাত্ররা দায়ী তার চেয়ে বেশী দায়ী আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা, সমাজ ব্যবস্থা আর কৈফিয়ত থেকে পুরোপুরি মুক্ত একটি শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক প্রশাসন।

বিষয়: বিবিধ

১৪০৩ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

370569
০১ জুন ২০১৬ রাত ০১:২৮
আমীর আজম লিখেছেন : সহমত।।ধন্যবাদ।
০১ জুন ২০১৬ রাত ০৯:৫৪
307545
সালমা লিখেছেন : আপনাকে ও ধন্যবাদ
370573
০১ জুন ২০১৬ সকাল ০৬:৫৬
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : টিভি প্রতিবেদনটি অবশ্যই সঠিক হয়নি। কিন্তু আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রকৃত চিত্র এমনই তাতে সন্দেহ নাই। শিক্ষার প্রকৃত অর্থ এখন ডিগ্রি লাভ হযেগেছে।
০১ জুন ২০১৬ রাত ১০:০০
307548
সালমা লিখেছেন : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ,জি ছাত্রদের এই সমস্যার জন্য যতটা না ছাত্ররা দায়ী তার চেয়ে বেশী দায়ী আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা, সমাজ ব্যবস্থা আর কৈফিয়ত থেকে পুরোপুরি মুক্ত একটি শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক প্রশাসন।া া ছাত্রদের এই সমস্যার জন্য যতটা না ছাত্ররা দায়ী তার চেয়ে বেশী দায়ী আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা, সমাজ ব্যবস্থা আর কৈফিয়ত থেকে পুরোপুরি মুক্ত একটি শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক প্রশাসন।
০১ জুন ২০১৬ রাত ১০:০৩
307549
সালমা লিখেছেন : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ,জি ছাত্রদের এই সমস্যার জন্য যতটা না ছাত্ররা দায়ী তার চেয়ে বেশী দায়ী আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা, সমাজ ব্যবস্থা আর কৈফিয়ত থেকে পুরোপুরি মুক্ত একটি শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক প্রশাসন।
370576
০১ জুন ২০১৬ সকাল ০৭:৩২
শেখের পোলা লিখেছেন : ঘণ্টা বাঁধার লোকের বড়ই অভাব। তাই বিড়ালের উৎপাত সইতেই হবে৷ ডিজিটাল পদ্ধতীতে হয়ত নৈতিকতার ঠাঁই নেই। এটি এখন মুক্ত বানিজ্যের হাটখোলা। যে যেমন পারছে বানিজ্য করে চলেছে।
০১ জুন ২০১৬ রাত ১০:১৫
307551
সালমা লিখেছেন : এই মুক্ত বানিজ্যের ফলে একটি প্রজন্ম ধংশ প্রায় , আর কতো দেখতে হবে! সেই অপেক্ষায় , আপনাকে ধন্যবাদ
370582
০১ জুন ২০১৬ সকাল ০৮:৩৪
হতভাগা লিখেছেন : বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের টপ লেভেলে ভারতীয় কর্মকর্তা আগেই আনা হয়েছে । এখন সরকারী কর্ম কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ পদে ভারতীয় সরকারী কর্মকর্তা আনবার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে ।

শিক্ষা ব্যবসথাকে বেহাল করার উদ্দেশ্য এটাই
০১ জুন ২০১৬ রাত ১০:২২
307552
সালমা লিখেছেন : খুব খারাফ লাগে যখন দেখছি একটি প্রজন্ম ধংশ হয়ে যাচ্ছে, এই ভারতীয় আগ্রাশন থেকে কেমন করে মুক্তি পাবে এই জাতি? আপনাকে ধন্যবাদ
370626
০১ জুন ২০১৬ বিকাল ০৫:৩৪
আবু সাইফ লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..

অ-নে-ক-দি-ন পর কলম(কীবোর্ড) ধরলেন!
ভালো আছেন তো সবাই!!

Praying Praying Praying Praying Praying
০১ জুন ২০১৬ রাত ১০:২৮
307555
সালমা লিখেছেন : ওলাইকুমসালাম, আলহামদুলিল্লাহ আপনাদরে দোয়ায় ও আল্লাহর রহমতে পরবিারের সবাই কে নিয়ে ভাল আছি, আপনারা সবাই কমেন আছেন? জি অনেক দনি পর ধরলাম কবিোর্ড, ছেলের পড়া লেখা নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে , সময় বরেকরতে পারি না , দোয়া করবেন
370634
০১ জুন ২০১৬ বিকাল ০৫:৫৬
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : মন্তব্যটি পোস্ট রিলেটেড নয়।
রমজান নিয়ে ব্লগীয় আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। অংশ নিতে পারেন আপনিও। বিস্তারিত জানতে-
Click this link
০১ জুন ২০১৬ রাত ১০:২৯
307556
সালমা লিখেছেন : ইনসায়াল্লাহ , ধন্যবাদ
370666
০১ জুন ২০১৬ রাত ০৮:০১
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু সুপ্রিয়া আপুম্নি।

লিখাটি খুবিই গুরুত্ববহ। আশাকরি সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিবর্গের বোধোদয় হবে।

গাজী ভাইয়ের আহ্বানে আন্তরিকভাবে অংশগ্রহণের জন্য একান্তভাবে অনুরোধ রইলো।
370679
০১ জুন ২০১৬ রাত ১০:৩১
সালমা লিখেছেন : ওলাইকুমসালাম,আপনার মত আমরাও আশাকরি সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিবর্গের বোধোদয় হবে। ইনসায়াল্লাহ , ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File