বিহারি হলেও তারা সবাই বিহারের নন

লিখেছেন লিখেছেন ছাত্র ১৯ আগস্ট, ২০১৩, ১০:৫১:৫৫ রাত

উইকিপিডিয়া অনুসারে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসরত উর্দুভাষীরা হলো আটকেপড়া পাকিস্তানি (স্ট্র্যান্ডেড পাকিস্তানিজ)। এদের অবাঙালিও বলা হয়ে থাকে। অন্যদিকে এ দেশীয় গবেষকদের মতে, ‘স্ট্র্যান্ডেড পাকিস্তানিজ’ বলতে এমন এক মুসলিম জনগোষ্ঠীকে বোঝায় যারা ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের আগে ভারতের বিহারে থাকত। ভারত ভাগের পরে তারা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে অভিবাসী হয়ে আসে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তারা পাকিস্তানের আনুগত্য স্বীকার করলে দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেই শরণার্থীর জীবন পায়।

দেশের ১৩টি জেলায় ৬৬টি ক্যাম্পে এদের বসবাস। দেশ স্বাধীনের পরে এদের বাংলাদেশে রাখার ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকার কোনো দায় বোধ করেনি। অন্যদিকে পাকিস্তানও তাদের আর ফিরিয়ে নিতে চায়নি। আন্তর্জাতিক শরণার্থী আইন মোতাবেক বাংলাদেশ সরকার এদের রেশন দিতে বাধ্য হয়। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো পাকিস্তানকে চাপ দিয়েও ‘তাদের’ ফিরিয়ে নেয়ার কাজটি করাতে পারেনি।

বাংলাদেশে বর্তমানে আটকেপড়া পাকিস্তানিদের প্রকৃত সংখ্যা কত তা জানা যায় না। তবে ধারণা পাওয়া যায়। অবাঙালি ত্রাণ কমিটির চেয়ারম্যান সরফরাজ আলম বলেন, ‘বর্তমানে এই সংখ্যা ৫ লাখের বেশি হবে।

১৯৯২ সালে ছিল আড়াই লাখের মতো।’ তিনি জানান, ১৯৭১ সালে এ দেশে ‘বিহারির’ সংখ্যা ছিল প্রায় ১ কোটির মতো। বর্তমানে মিরপুরের ২২টি ক্যাম্পে ৭০-৭২ হাজার বিহারি রয়েছে বলে তিনি জানান।

বিহারিরা এ দেশে এসেছে ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পরে। ১৯৪০ থেকে ১৯৪৭ পর্যন্ত ভারতের বিহার রাজ্যসহ অনেক রাজ্যে হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে একাধিক দাঙ্গা হয়। ওইসব দাঙ্গায় ভারতে বসবাসরত মুসলমানরা নিজেদের নিরাপদ মনে না করায় দেশভাগের পরপরই তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসে। ওদের ধারণা ছিল, পূর্ব পাকিস্তান মুসলমানদের রক্ষা করবে।

‘আ-কমিউনিটি ইন ট্রানজিশন : দ্য বিহারিস ইন বাংলাদেশ’ গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে ’৪৭-এর দেশভাগের পরে ৭২ লাখ মুসলিম পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তানে চলে যায়। এর মধ্যে ১৩ লাখ যায় পূর্ব পাকিস্তানে (বাংলাদেশে)। ১৩ লাখের মধ্যে ১০ লাখ মুসলিম আসে বিহার থেকে। বাকি ৩ লাখ আসে উত্তর প্রদেশ, কলকাতাসহ অন্যান্য জায়গা থেকে। তবে (সুনির্দিষ্টভাবে) ৬০ হাজার মুসলিম পূর্ব পাকিস্তান তথা পূর্ব বাংলায় আসে ভারতের আসাম, কোচবিহার ও উড়িষ্যা থেকে। ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের সময় অনেক মুসলিম পূর্ব পাকিস্তানে আসে। নথিপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, ব্রিটিশ শাসনামলের শেষ দশকগুলোতে ব্রিটিশ প্রশাসনের অধীনে কাজ করার জন্য অনেক উর্দুভাষী পূর্ব বাংলায় আসে। এদের একটা বড় অংশ আসে বিহার থেকে। এদের অধিকাংশই রেল, পুলিশ, বিচার ব্যবস্থা ও অন্যান্য বেসামরিক পদে যোগ দিয়েছিল। সৈয়দপুরের রেলওয়ে ওয়ার্কশপে কাজ করার জন্য ব্রিটিশরা বিহার থেকে ৭ হাজার কর্মী আনে বলে জানা গেছে। এভাবেও বিহারিরা বাংলাদেশে চলে আসে। মুসলিমরা বিশেষ করে যারা সম্ভ্রান্ত পরিবারের তারা উর্দুতে কথা বলতেন। ওই চর্চাটা তাদের মধ্যে এখনো পর্যন্ত বিদ্যমান। ভারতে হিন্দি ভাষার প্রাধান্য থাকলেও মুসলিম হওয়ার কারণে তারা উর্দুতে কথা বলতেন।

অবাঙালি এই বিহারিরা বাঙালির সামাজিক ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি গ্রহণ করতে পারেননি। ফলে নিজেরা নিজেদের বাইরে আসারও চেষ্টা করেননি। ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে ’৭১ পূর্ববর্তী সময়ে তারা শাসকশ্রেণীর কাছ থেকে সামাজিক ও অর্থনৈতিক সুযোগ সুবিধা ভোগ করতেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে বিহারিদের নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। কারণ তারা তখনো আদর্শগত কারণে পাকিস্তানের নাগরিক। স্বাধীনতার পরে কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংগঠনের মধ্যস্থতায় বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কয়েকটি চুক্তি হয়। জানা যায়, চুক্তির সময় বিহারিরা পাকিস্তানের পক্ষে মত দেয়। আর তখনই এদের আটকেপড়া পাকিস্তানি নাম দেয়া হয়। বাংলাদেশও এদের ‘আটকেপড়া পাকিস্তানি’ হিসেবে দাফতরিক কাজে কর্মে উল্লেখ করে থাকে। ওই সময় পাকিস্তানি নাগরিকত্ব দাবিদার অনেককে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেয়া হয়। সর্বশেষ ১৯৯৩ সালে বিহারিদের কয়েকটি পরিবারকে পাকিস্তানে ফেরত পাঠানো হয়।

২০০৮ সালে হাইকোর্টে এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় ৫ লাখ আটকেপড়া পাকিস্তানিকে বাংলাদেশের নাগরিক ঘোষণা করা হয়। পরে সরকারি এক নোটের মাধ্যমে যারা বাংলাদেশি নাগরিক হতে ইচ্ছুক তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। এর আগে ১৯৫১ সালে পশ্চিম পাকিস্তান একটি আদমশুমারি করে। ওই শুমারিতে পূর্ব বাংলায় আটকেপড়া পাকিস্তানিদের ‘মুহাজির’ হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়। - Click this link

বিষয়: বিবিধ

১১০১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File