সচেতন তরুন-তরুনীদের শিক্ষনিয় একটা আড্ডা ।
লিখেছেন লিখেছেন জেদ্দাবাসী ২৯ মার্চ, ২০১৪, ০৯:৩৭:৩২ রাত
( আজিমপুর কলোনী মাঠে বন্ধু বান্ধবদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে নাহদা। বিভিন্ন প্রসংগে কথা উঠতে উঠতে একসময়.....)
রিফাত: কিরে, জামান, তোর আম্রিকায় যাওন কদ্দূর?
জামান: এই তো প্রসেসিং চলতাছে...
রিফাত: শালার জাতি একখান! হারা দুনিয়া দাপাইয়া বেড়াইতাছে...
(অন্য পাশ থেকে রায়হান বলল)
রায়হান: ইউনিক জাতি একটা...
নাহদা: ইউনিক তো বটেই... সাড়ে তিন কোটির বেশি লোক দারিদ্র্যসীমার নীচে বাস করে... পৃথিবীর ইতিহাসে কোন সুপার পাওয়ারের এমন করুণ দশা ছিল কিনা, আমার জানা নেই।
(তার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে অন্য পাশ থেকে জামিল বলে উঠল...)
জামিল: এইত, এইত শুরু হয়ে গেল, তোর স্বভাবই হল খুঁত ধরা, দুই একটা ডিফেক্ট থাকতেই পারে, তাই বলে আমিরিকা যে সুপার পাওয়ার, এটা তো অস্বীকার করবার জো নেই।
নাহদা: অস্বীকার আমিও করছিনা, কিন্তু কোন সুপারপাওয়ারই পৃথিবীর জন্য এতটা হুমকি হয়ে উঠেনি।
রায়হান: সব সুপারপাওয়ারই এরকম.....
নাহদা: ডিপেন্ডস.... তুমি কিসের ভিত্তিতে নিজেকে সুপার পাওয়ার দাবী কর..... কিংবা কিসের ভিত্তিতে একটা জাতিকে সুপার পাওয়ার বলা হয়।
জামান: মেইনলি, মিলিটারি, ইকোনোমি আর ডিপ্লোম্যাটিক পাওয়ার দিয়েই সুপার পাওয়ার নির্ধারিত হয়, এবং আমিরিকা এই তিন ক্ষেত্রেই ইউনিক।
নাহদা: তুই যা বলছিস, এটা পশ্চিমাদের সেট করা criteria. তারা সামরিক আর অর্থনৈতিক শক্তিকে প্রাধান্য দিয়েছে সবচেয়ে বেশি। যেরকম AJP Taylor বলছে যে, The Test of A Great Power is The Test of Strength of War. তারা বিভিন্ন রাষ্ট্রের উপর দখলদারিত্ব বজায় রাখার উপনিবেশবাদী মানসিকতা পরিত্যাগ করতে পারেনি। যেমন Kim Richard Nossal এর মতে, একটি রাষ্ট্রকে সুপারপাওয়ার হতে হলে উপমহাদেশ সম আকৃতির ভূমি 'দখল' করতে হবে, এবং সেই সাথে ওয়েল ডেভেলপড নিউক্লিয়ার ক্যাপাসিটিও থাকতে হবে।
রিফাত: কিন্তু এইগুলান ছাড়া তো আর কুনো criteria ও নাই। আর, আম্রিকার এডি সবডিই আছে।
নাহদা: এগেইন, ডিপেন্ডস.....দৃষ্টিভংগীর উপর নির্ভর করে।খেয়াল করে দেখ, তারা সামরিক শক্তি আর অর্থনৈতিক শক্তির উপর জোর দিয়েছে, কিন্তু তারা নৈতিকতাকে বাদ দিয়েছে, কিংবা তাদের কনসেপ্টগুলা অর্থাৎ বাকি বিশ্বকে তারা যা গিলাইতে চায়, যেমন, ফ্রীডম, ডেমোক্রেসি, সেক্যুলারিজম এসবের যে ইন্টেলেকচুয়াল গ্রাউন্ড, তা তারা এস্টাবলিশ করতে ব্যার্থ হয়েছে। ফলে তারা অন্য জাতির প্রতি তাদের আচরণে নৈতিকতার ধার ধারেনি, তাদের ফ্যালাসিপূর্ণ মতবাদ অন্য জাতিকে গিলাতে পারলেও মুসলিমদের কাছে তার ইন্টেলেকচুয়াল গ্রাউন্ড মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে, যার কারণে অন্য জাতিসমূহকে ফ্যান্টাসির মোড়কে গিলাতে পারলেও মুসলিমদের ক্ষেত্রে তাকে হয় প্রতারণার আশ্রয় নিতে হয়েছে, নতুবা শক্তি খাটাতে হয়েছে। তাদের ভন্ডামি উন্মোচনের ক্ষমতা একমাত্র মুসলিমদেরই আছে।
জামিল: বলতে চাচ্ছিস, তাদের বুদ্ধি কম? হাহ! মুসলিমরা এমনিতেই একটু রিয়েকশনারি, নতুন কিছু মেনে নিতে পারেনা, একটু গোঁড়া টাইপের। ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার, এই কথায় খারাপ কি আছে? এটাই তো হওয়া উচিত। রাষ্ট্র ধর্ম দিয়া চালালে নির্দিষ্ট একটা সম্প্রদায়ের পক্ষে অবস্থান নেয়া হয়, সাম্প্রদায়িকতার জন্ম হয়। আর গণতন্ত্র, ফ্রীডম এসবেও তো খারাপ কিছু দেখিনা।
নাহদা: একটা গল্প বলি তোদেরকে, শোন। একটা বোর্ডিং স্কুলের এক অনুষ্ঠানে, এক টেবিলে অনেকগুলো আপেল ছিল। তো হাউজ মাষ্টার করল কি, সে, একটা কাগজে বড় করে লিখল,
"Don't take more than one, GOD is watching you".
তো পোলাপাইন GOD এর ভয়ে একটা একটা করে আপেল নিতে লাগল। কিছুদূর পর পোলাপাইন সামনে একটা চকোলেট ভর্তি টেবিল দেখতে পেল। সেখানে এক পোলা কাগজে বড় করে লিখে রাখছে,
"যত পার নাও, গড এখন আপেলের টেবিল পাহারা দিচ্ছে"
(শুনে সবাই হাসতে লাগল)
রিফাত: হ, পুলাপাইনের কান্ড।
নাহদা: ধর্মনিরপেক্ষতা মানে তো রাষ্ট্র সবার, রাষ্ট্রে কোন ধর্মীয় অনুশাসন থাকা যাবেনা..... আমার প্রশ্ন হচ্ছে, আল্লাহ কি এতই অথর্ব হয়ে পড়েছেন যে, তিনি শুধু মসজিদ, মন্দির আর গীর্জায় খবরদারি করবেন, কিন্তু মানুষের বাস্তবিক সমস্যার সমাধানে, অর্থনীতি, রাজনীতি নিয়ে কোন দিকনির্দেশনা দিতে পারবেননা? এটা অনেকটা বৃদ্ধাশ্রমের মত, আল্লাহকে আশ্রমে ঢুকিয়ে তালা লাগিয়ে দেয়া হয়, এরপর পাঁচওয়াক্ত নামাযে আমাদের যদি দয়া হয়, তাহলে তাঁকে একটু স্মরণ করে আসি, তারপর আবার তালা লাগিয়ে দেই, আর নিজের মনকে স্বান্তনা দেই এই বলে যে, মসজিদের বাইরের সমাজ অনেক নোংরা, আল্লাহকে এখানে আনার দরকার কি? উনি পবিত্র জায়গা মসজিদেই থাকুক। দরকার হলে মসজিদে ঝাড়বাতি দুইটা বেশি লাগাইয়া দেই, এ.সি. আরও দুইটা লাগাইয়া দেই। উনার ঘর সুন্দর করে দেই। উনি খুশি থাকুক।
(সবার চেহারার দিকে তাকিয়ে নাহদা বুঝতে পারল, বাড়িটা জায়গামতই লেগেছে)
আল্লাহ কি শুধু আপেলই পাহারা দিতে পারেন, চকোলেট পারেননা? Secularism এ জায়গায় ব্যার্থ, সে স্রষ্টাকে অস্বীকারও করেনা, আবার জাগতিক বিষয়ে তাকে মানতেও চায়না। আরে বাপ!! আল্লাহ যদি থাকে তাহলে তাকে পুরাপুরি মান, আর না থাকলে পুরাপুরি বাদ দে, মাঝখানে ঝুইল্লা রইছস ক্যা? তাকে মসজিদে রাখবি, কিন্তু বাজারে রাখতে চাইবিনা, তাকে মন্দিরে রাখবি কিন্তু রাজনীতিতে রাখতে চাইবিনা, তাকে গীর্জায় রাখবি, অথচ পররাষ্ট্রনীতিতে রাখতে চাইবিনা, এটা কি হইল? Secularism এই জায়গায় ইন্টেলেকচুয়াল্লি ফেইল মারছে।এছাড়া Secularism, ধর্মনিরপেক্ষতা শুনতে নিরপেক্ষ নিরপেক্ষ মনে হলেও, এটা কিন্তু একটা খ্রীষ্টান মতবাদ।
জামান: কিরকম?
নাহদা: ইহুদীরা রোম সম্রাটকে Tax না দেয়ার জন্য ঈসা আ. কে এসে বললেন, " মূসার শরীয়ত অনুসারে রোম সম্রাটকে কি Tax দেয়া উচিৎ? আমরা কি তাকে Tax দিব?" বাইবেলের বর্ণনা অনুসারে, ঈসা আ. তখন বলেন, "Render unto Caesar what are Caesar's and to God the things that are God's" অর্থাৎ 'যা কিছু সম্রাটের তা সম্রাটকে দাও, আর যা আল্লাহর তা আল্লাহকে দাও' বাইবেলের এ বক্তব্যই ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তি, এটা একটি কুফরি মতবাদ, আল্লাহর ক্ষমতাকে সীমাবদ্ধ করার মাধ্যমে পুরো অমুসলিম সমাজে স্রষ্টা সম্পর্কে একটা মিথ্যা ধারণার জন্ম হয়েছে, তাদের রাজনৈতিক ব্যাবস্থাগুলোও এই মিথ্যার উপর ভিত্তি গড়ে উঠেছে। জীবন থেকে আল্লাহকে বাদ দেয়ার কারণে মানুষের তৈরি সংবিধান, গণতন্ত্র, প্রজাতন্ত্র এইসব হাবিজাবির উৎপত্তি হয়েছে। আল্লাহর সাথে এই ধরনের ফাইজলামি কাফিররা করলে করুক, কিন্তু আমরা মুসলমানরা কেন এইসব আবর্জনায় বিশ্বাস করতে যাব? তাইলে তো খ্রীষ্টান হওয়া উচিৎ। সেক্যুলাররা তো দাবী করে, তারা কোন ধর্মকে প্রাধান্য দেয়না, এগুলা এমন বেকুবের বেকুব, তারা যে খ্রীষ্টান আকীদা গ্রহণ করে বসে আছে, এটা তারা জানেওনা, বুঝেওনা। এই পশ্চিমারা আল্লাহর বিধান থেকে ফ্রী হতে গিয়ে কিছু মানুষের স্লেইভে পরিণত হয়েছে.......বলা যায়, Freedom Is Not Free.....
সুত্র- মুক্তির পথিক 'এর ফেসবুক
বিষয়: বিবিধ
১৮৭২ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন