আপনার প্রিয় এ দেশে আপনার প্রিয় সন্তানরা কতটুকু নিরাপদভাবে বেড়ে উঠছে?
লিখেছেন লিখেছেন অক্টোপাশ ১৩ মার্চ, ২০১৩, ০৫:৫১:৪২ বিকাল
প্রতিটি বাবা মার ইচ্ছা থাকে তার সন্তান বেড়ে উঠুক নিরাপদে। পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ স্থানে তার সন্তানদের বড় করতে চায় প্রতিটি বাবা মা।
শিশু সন্তানকে টিকা খাওয়াবেন তার শারিরিক নিরাপত্তার জন্য। তাতেও আজ সঙ্খাহীন থাকা যাচ্ছে না। নানা গুজব অথবা হয়ত সত্যিই সঠিক টিকাটা সে পাচ্ছে না। বাবা মার মনে নানা আতংক কাজ করছে। তার প্রাণ প্রিয় সন্তানটার কোন বিপদ হল না তো?
বাচ্চাকে স্কুলে পাঠাবেন তাতেও সমস্যা। মায়ের হাত থেকে বাচ্চা পড়ে যাচ্ছে গাড়ির নিচে। স্কুলটা কতটুকু নিরাপদ? সন্তানকে মানুষের মত মানুষ করার জন্যে যেখানে একসময় শিক্ষকদের হাতে নিরাপদে ছেড়ে দিয়ে বাবা মা শান্তি পেত, সে শান্তি বা স্বস্থি আজ কতটুকু বিদ্যমান। প্রতিটি সন্তানের হাত ধরে ধরে আজ বাবা মা স্কুলে নিতে হচ্ছে। সন্তানকে একটি মুহুর্তের জন্য হাতছাড়া করা যাচ্ছে না। কিন্তু কেন? আপনার এই প্রিয় দেশটা কি এতই অনিরাপদ হয়ে উঠেছে?
স্কুলের শিক্ষকের হাতে আপনার মেয়ে সন্তান আজ অনিরাপদ কেন? কেন শিক্ষক নামধারি কিছু পশু শিক্ষকতার মহান পেশাটার সাথে জড়িত হয়েছে?
বাচ্চার নিরাপত্তার খরবাখরব তাৎক্ষণিকভাবে জানার জন্যে বাচ্চাদের হাতে মোবাইল দেবেন তাও বিপদমূক্ত নন আপনি। মোবাইলের মধ্যে নানা ধরনের ক্ষতিকর উপদান আজ চারপাশে বিদ্যমান। আপনার বাচ্চার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুটাই তার জন্যে বিপদের কারণ হচ্ছে কি না? আপনার মনে চিন্তা সবসময় থাকে এসব বিপদ থেকে আপনার বাচ্চাকে কিভাবে দূরে রাখবেন?
সন্তান বড় হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েও নিরাপদে থাকবে না। রাজনীতি করলেও নিরাপদ না আবার না করলেও নিরাপদ না। কখন দুই গ্রুপের সংঘাতে ক্রসফায়ারে পড়ে যাচ্ছে এই চিন্তা আপনার সবসময় থাকবে। কিন্তু কেন? কেন একটি স্বাধীন দেশে আপনার সন্তানরা এত অনিরাপদ থাকবে?
এখানে প্রকাশে শ্লোগান হয়, ‘জবাই কর, ফাঁসি দাও’। আর কিছু লোক প্রকাশে শিবির ট্যাগ করা ছেলেকে দেখলে জবাই করে দিচ্ছে যার হাতে রয়েছে শুধু স্কুল বা কলেজ ব্যাগ। আর প্রশাসন এড়িয়ে যাচ্ছে একটি শিবির মারা পড়েছে বলে। জীবনের মূল্য এখানে খুবই কম। আপনার সন্তান মারা পড়ার জন্য শুধু থাকে একটি বিশেষণ লাগাতে হবে। রাজাকার, শিবির ইত্যাদি টাইপের।
আইন শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী আজ হামলে পড়ছে নিরীহ জনতার উপর। শুধু প্রমোশন পাওয়ার লোভে অথবা ভিন্ন মতের হলেই লোকজন ধরে এনে তাদের উপর গুলি করে দিচ্ছে অবলীলায়। তাদের হাত একটুও কাঁপছে না। তাদের বিবেক আজ অন্ধ।
কেউ করছে ‘৭১ মৃত্যুঞ্জয়ী স্কোয়াড’, আবার কেউবা করছে ‘৩১৩ শাহাদাত স্কোয়াড’। এসবের শিকার আপনার কোন নিরীহ সন্তান হচ্ছে কিনা এ চিন্তায় আপনি সবসময় অস্থির।
দেশের প্রধানমন্ত্রী বলছেন, পাড়ায়, মহল্লায় সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটি কর। জঙ্গীদের লিস্ট করে পাঠাও। কারা এসব জঙ্গী? দেশে এত জঙ্গী কোথা থেকে আসল? কাদের বিরুদ্ধে এ লড়াই হবে? আবার কোন মায়ের সন্তান হবে বলীর পাঁটা। আবার পাল্টা কমিটি হবে পাবলিক সেফটি ফর পিস কমিটি। আবার লিস্ট হবে। আবার হবে রক্তক্ষয়ী সংঘাত।
এখানে আপনি কোন বিচার পাওয়ার সম্ভাবনাও কম। নিজ দলের লোক ছাড়া এখানে সঠিক বিচার পাওয়া খুবই ভাগ্যের ব্যাপার। বিচারকরা এখানে স্কাইপি দিয়ে বিচার কার্য চালায়।
উল্টোভাবেই বলি। আপনার সন্তানটা অন্যের জন্য কতটুকু নিরাপদ? তার হাত থেকে বাঁচার জন্যে অন্য কোন মায়ের সন্তান আজ পালিয়ে বেড়াচ্ছে না তো?
দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে আপনার সন্তান অপরের সন্তানকে কুপিয়ে মারার দৃশ্য সহ্য করতে না পেরে আপনাকে প্রাণ হারাতে হবে না তো?
আপনি বাবা মা হিসাবে আজ খুবই উৎকন্ঠিত। আপনার হিসাব করার সময় খুব দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে।
সুন্দর, নিরাপদ একটি দেশ, সমাজ গঠনের দায়ভার কার উপর বর্তায়? স্বাধীনতার এত বছর পরও কি আমরা একটি ব্যার্থ রাষ্ট্রের নাগরিক?
আসুন, আমাদের সন্তানদের জন্য সুন্দর ও নিরাপদ একটা দেশ গঠনে আমাদের করণীয়গুলো নিয়ে আমরা আরও একটু ভাবি।
বিষয়: বিবিধ
১১০৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন