দশটি কারণ : কেন মুসলমানদের আরবী শিখা উচিত?
লিখেছেন লিখেছেন অক্টোপাশ ২১ মার্চ, ২০১৫, ১১:১৬:২৮ সকাল
দশটি কারণ : কেন মুসলমানদের আরবী শিখা উচিত?
১. সর্বশক্তিমান এবং সর্বজ্ঞানী মহান আল্লাহ পৃথিবীর বর্তমান, অতীতের অনেক ভাষা থেকে আরবীকে বাছাই করেছেন সমগ্র মানবতার সাথে যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে। শুধু এ কারণটাই মুসলমানদের আরবী ভাষা জানার জন্য যথেষ্ট হতে পারে। নিশ্চয়ই আল্লাহ যদি চাইতেন আরবী ভাষা ছাড়া অন্য কোন ভাষায়, এমনকি সকল ভাষায় কুরআন নাযিল করতে পারতেন। কিন্তু তিনি নিজেই কুরাআনে বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই, আমরা কুরআনকে আরবী ভাষায় নাযিল করেছি যাতে তোমরা বুঝতে পার।‘ এই আয়াতটা আরবী ভাষার অনন্য বৈশিষ্ট্যের ইংঙ্গিতবাহী যাতে অন্যান্য সকল ভাষায় চেয়ে আরবী ভাষার শ্রেষ্টত্ব এবং আ্ল্লার কথাগুলোর সঠিক অর্থ অনুধাবনের যোগ্যতা সম্পন্ন এ ভাষা যা অন্য কোন ভাষার বৈশিষ্ট্যের মধ্যে নেই। বস্তুত: আল্লাহ তায়ালাই আরবী ভাষাকে এ অনন্য বৈশিষ্ট্যের এবং অন্যান্য ভাষা থেকে শ্রেষ্টত্বের মর্যাদায় আসিন করেছেন।
২. আপনি যদি আল্লাহকে সমস্ত কিছুর সৃষ্টিকর্তা মনে করেন এবং আল্লাহর মনোনীত সর্বশ্রেষ্ট সৃষ্টি নবী হযরত মুহাম্মদ (স হয় তাহলে প্রত্যেক মুসলমানের কি উচিত নয় আল্লাহ এবং তার নবীর এ ভাষাকে শিক্ষার জন্য , আল্লাহ এবং তার রাসুল কি বলেছেন তা বোঝার জন্য নিজের সমগ্র প্রচেষ্টাকে নিয়োজিত করা? কিভাবে একজন মুসলমান এই ভাষা শিখার জন্য সময় খুজঁবে না যেখানে বিশ্বের অনেক ভাষা শিখা এবং অর্থ উপার্জনের জন্য তার যথেষ্ট সময় থাকে?
৩. বিরাট সংখ্যক পণ্ডিত বিশ্বাস করে কুরআনের রচনাশৈলি, বাগ্মিতা অন্য যে কোন সাহিত্যের তুলনায় অনেক উচু মানের। আরবী ভাষার জ্ঞান না থাকলে স্রষ্টা কতৃক সরাসরি প্রেরিত এই অতুলনীয় সাহিত্য রচনাকৌশলটা থেকে সবসময় নিজেকে বঞ্চিত রাখা হবে।
৪. কুরআন হাদিসের বাইরে আরবী ভাষায় রয়েছে সুবিশাল এবং সমৃদ্ধ ইসলামী সাহিত্যে উত্তরাধিকার। আরবী ভাষায় বিভিন্ন পড়ালেখার রয়েছে বিপুল পরিমান বৃত্তির ব্যবস্থা যা ইসলাম শিক্ষার প্রচার এবং প্রসারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত উন্নতির জন্য বরাদ্ধ করা আছে। এ ভাষায় দক্ষ হয়ে না উঠলে এসব থেকে মুসলিম উম্মাহ, মুসলিম ইনিস্টিটিউটগুলো কোন উপকার পাবে না এবং সমৃদ্ধ হবে না। যা পরোক্ষভাবে মুসলিমদের বিপক্ষেই যাবে।
৫. উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ইসলামী বিজ্ঞান আরবী ভাষাগত বিজ্ঞান থেকে আহরণ করা যাতে বেশকিছু ভাষাগত ইস্যুর আলোচনা আছে। এসব বুঝার জন্য আরবী ভাষা বিজ্ঞানের উপর ব্যপক দখল থাকা দরকার। এসব বিজ্ঞানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল আল-তাফসীর (কোরানের ব্যাখ্যা), 'উলুম আল-কুরআন (কোরান বিজ্ঞান),' ইলমে আল-হাদীছ, আল-ফিকহ (ইসলামী বিধান), আল-আকিদাহ (ইসলামী ধর্মশাস্ত্র)। ইসলামের দু’টি প্রধান উৎস কুরআন ও হাদীছ আরবী ভাষায় হওয়ার এসবের অর্ন্তনীহিত অর্থ অনুধাবন, সঠিক বার্তা বুঝতে পারা তখনই সম্ভব হবে যখন আরবী ভাষার চর্চা অনেক উন্নত পর্যায়ে থাকবে। ইসলামী বিজ্ঞান চায় এসবের বিস্তারিত বিশ্লেষণ এবং নিবিড় পর্যবেক্ষণ। তাহলেই শুধু কুরআন হাদিছের সঠিক বাস্তবায়ন সম্ভব।
৬. হযরত উমর (রা বলেছেন:
‘সুন্নাহ শিখুন এবং আরবী শিখুন। কুরআনকে আরবীতে শিখুন কারণ এটা আরবী ভাষায় রচিত।‘
তিনি আরো বলেছেন:
‘আরবী শিখুন কারণ এটা আপনার ধর্মের একটা অংশ কিভাবে মৃতের সম্পদ বন্টন করতে হবে( আল ফারাইদ) তা বুঝতে আরবীকে জানুন কারণ এটা আপনার ধর্মের অংশ।‘
ইমাম শাফেঈ কুরআনকে বুঝার জন্য বিশ বছর ধরে আরবী শিখেছিলেন (কারণ এটা হচ্ছে বিশুদ্ধ উৎস)।
কিছু কিছু পণ্ডিত আরবী ভাষাকে মুসলমানদের জন্য বাধ্যতামূলক ভাষা হিসাবে রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন। কারণ হিসাবে উল্লেখ করেছেন কুরআন, হাদিসের অধ্যয়ন প্রত্যেক মুসলমানদের জন্য বাধ্যতামূলক। যেহেতু কুরআন হাদিস আরবী ভাষার জ্ঞান ছাড়া শিক্ষাকরা সম্ভব নয় সুতরাং আরবী ভাষাও বাধ্যতামূলক করা হউক।
৭. আরবী ভাষার জ্ঞান একজন মুসলিমকে তার ইবাদতকে আবেগময় এবং অর্থবহ করে দেয়। সালাত, কুরআন তেলওয়াত, খুতবা শ্রবনে, দুয়া করার সময় অর্থ বুঝাটা একজন মুসলমানের মধ্যে প্রবল আবেগ সৃষ্টি করতে পারে যা না বুঝে করলে অনেকটা আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত হতে পারে। সংক্ষেপে, আরবী জ্ঞান আল্লাহ এবং বান্দার মধ্যে একজন মধ্যস্থতাকারিকে অপ্রয়োজনীয় করে তুলে। অন্য কথায়, আরবী আমাদেরকে কুরআন এবং নবীজীর নির্দেশনাকে সরাসরি শুনতে এবং পালনকরতে সক্ষম করে।
৮. অনুবাদের একটা সমস্যাযুক্ত প্রকৃতি আছে যার কারণেই মুসলিমদের আরবী জানা উচিত। আমাদের অধিকাংশ ঐতিহ্য এখন অনারব মুসলিম জনগণের নিকট অনধিগম্য। দীর্ঘদিন পর্যন্ত তারা সেখানে পৌঁছতে পারবে না। অনুবাদের একটা নিজস্ব ঘাটতি থেকে যায় যা পুরো বিষয়টার স্বাদ নেয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। এটার পরিসীমা নিম্নমান, অগ্রহনযোগ্য, ভুল অনুবাদও হতে পারে।
৯. সংস্কৃতির প্রবাহ হচ্ছে ভাষা। একটি ভাষা তার বক্তাদের উপর অমোচনীয় প্রভাব বিস্তার করে। আরবী ভাষার মধ্যে ইসলামী সংস্কৃতিটা একটা পজিটিভ ভিত্তির উপর বিদ্যমান। নি:সন্দেহে কুরআন সুন্নার একটা স্থায়ী চিহ্ন আরবী ভাষার মধ্যে নীহিত। তাছাড়া দীর্ঘ চৌদ্দশত বছর ধরে আরবী প্রায় অবিকৃতই আছে।
১০. যদি কিছু সংখ্যক অমুসলিম মুসলমানদের জন্য ঘৃণা ছড়ানোর জন্য এবং ইসলামকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নেয়ার জন্য মুসলমানদের উপর আধিপত্য বজায় রাখার জন্য আরবী নিয়ে গবেষণা করতে পারে তাহলে একজন মুসলিম ইসলামকে সমুন্নত রাখার জন্য, তার বিশ্বাসকে (ঈমান) মজবুত করার জন্য , মুসলিম উম্মাহকে এন্টি ইসলামিস্টদের ষড়যন্ত্র, ইসলামফোবিয়া থেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য কেন আরবী অধ্যয়ন করবে না?
আমেনুল্লাহ আবদেরইফ এর লেখা অবলম্বনে
বিষয়: বিবিধ
২৫৯৫ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
পুরুস্কারটা লেখক সাহেবের কাছ থেকে নিয়ে নেবেন।
আপনার মূল্যবান লিখাটির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
কাছে নয়, একেবারে পাশ ঘেষে আছি। যাবেন কোথায়!
যথার্থই বলেছেন। আপনার কথাগুলো সবার উপলব্দিতে আসুক এই কামনা।
দারুণ একটি বিষয়ের উপস্থাপনা ধন্যবাদ। শুভব্লগিং....
মন্তব্য করতে লগইন করুন