কিছু সাংবাদিক এখন রাজনীতিক কর্মীর ভূমিকায় কাজ করছে।
লিখেছেন লিখেছেন অক্টোপাশ ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৯:১৬:৫৫ রাত
সাংবাদিকরা একটি জাতির কাছে আয়না স্বরূপ। তাদের মাধ্যমে সকালে পুরো জাতি জানতে পারে সারাদেশে কোথায় কি হয়ে গেল গত একটি দিনে। সকালে চোখ খুলে পত্রিকার পাতা উল্টোলেই যাদের অবদানের কথা মনে আসে তারা হচ্ছে সাংবাদিক। নানা প্রতিকূল পরিস্তিতির মধ্যে তাদেরকে সংবাদ সংগ্রহ করতে হয়। তাদের উপর তাই অনেক দায়িত্ব বর্তায়। তাদের একটি কলমের খোঁচায় পুরো জাতির মধ্যে জাগরণ সৃষ্টি হয়।
সাংবাদিককে অনেক দায়িত্ব নিয়ে লিখতে হয়। একই কথা টিভি সাংবাদিকের ক্ষেত্রেও।
কিন্তু ইদানিং দেখা যায় কিছু কিছু সাংবাদিক তাদের পেশাগত মূল দায়িত্বের বাইরেও গিয়ে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। তারা সংবাদকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে একটি বিশেষ দিকে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা করছেন। এটাকে কিছুতেই সাংবাদিকতা বলা যায় না। এটা একটা হলুদ সাংবাদিকতা বা সাংবাদিকতার নাম রাজনীতি। ফলে সাংবাদিকের উপর যে শ্রদ্ধাবোধ থাকে তা লোপ পায়। সাংবাদিকের উপর হামলা করতে আর দ্বিধাবোধ করে না।
আগে মানুষ সরকারি টিভিকে একপেশে সংবাদ পরিবেশনের জন্য এভয়েড করতো। বিটিভিকে অনেকে মিয়া বিবির বাক্স বলেও কটাক্ষ করত। কিন্তু ইদানিং বেসরকারি টিভি গুলোর মধ্যেও এ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। কাকে ডিঙিয়ে কে তোষামোদিতে এগিয়ে যাবে এটাই এখন একমাত্র কাজ কিছু প্রাইভেট টিভি চ্যানেলের। প্রয়োজনে সরকারের পা চাটতেও এসব সাংবাদিক একটু দ্বিধা করবে না।
টকশোর নামেও চলচে উচু মাত্রার তোষামোদি। ভিন্ন মতের উপর দমন যেন এখন কিছু প্রাইভেট টিভির অন্যতম কাজ।
সম্প্রতি নাস্তিক কর্তৃক ইসলামের নবী রাসূলকে অবমাননা এবং এর পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ পত্রের রিপোর্টগুলোর দিকে দৃষ্টি দিলে একটি কথা পরিস্কার হয়ে যায়। আর তা হলো সবাই সমান কাভারেজ পাবে না। জামাতের অফিসে যখন বিনা উস্কানিতে ছাত্রলীগ, যুবলীগ হামলা করছে তখন তা হয়ে যাচ্ছে বিক্ষুদ্ধ জনতার হামলা। আর বিক্ষুদ্ধ মুসল্লিরা যখন গনজাগরণ মঞ্চে হামলা করছে তখন সমমনা ১২ দলের হামলাও বলা হচ্ছে না, বলা হচ্ছে জামাত শিবিরের হামলা।
রাজিব হত্যার পরও আমরা দেখলাম কিছু কিছু অতি উৎসাহি সাংবাদিক জামাত শিবিরকে জড়িয়ে সাথে সাথে নিজউ করে ফেলে। কোন তদন্ত হলো না , কেউ দেখল না কে হত্যাকারী অথচ এসব সাংবাদিক তাদের হলুদ সাংবাদিকতা ন করে পারল না। অনুরুপভাবে বিশ্বজিৎ হত্যাকান্ডে, যা পুরো ভিডিওতে দেখা গেল হত্যাকারী কে বা কারা। এটা নিয়ে ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহের কম চেষ্টা করা হয়নি। কিছু কিছু সংবাদপত্র গনপিঠুনিতে একজন মারা যাওয়ার খবরও প্রচার করেছিল।
সাংবাদিকের কাজ ঘটনাকে তুলে ধরা। রাজনীতি করা তাদের কাজ নয়। কোন রাজনীতিক নেতা সংবাদকে ঘুরিয়ে তার দলের পক্ষে নিয়ে বললে যতটা মানায় সাংবাদিকরা বললে সেটা মানায় না। তাই সাংবাদিকের উপর জনগনের আস্থা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এসব হলুদ সাংবাদিকতার কারণে। তাই প্রশ্ন জাগে এরা কি সাংবাদিক নাকি রাজনীতিক কর্মী?
সাংবাদিকরা রাজনীতিক কর্মী হয়ে গেলে তারা আর সঠিক সংবাদটা অবশ্যই পরিবেশন করতে পারবে না। সঠিক প্রশ্নটা করার সৎ সাহসটা আর তাদের থাকবে না। ঘটনাকে সবসময় নিজের দলীয় পরিচয়ের আঙিকে দেখবে এটাই স্বাভাবিক।
সৎ, সাহসী, নির্বিক, দেশপ্রেমিক সাংবাদিকের কথা মনে হলেই জনাব মাহমুদুর রহমানের ছবিটা ভেসে আসে। তার মত সাংবাদিকের আজ বড় প্রয়োজন। তেল মারা আর তোষামোদি করা, জামাতকে নিয়ে খিস্তি খেউড় করা অনেক সহজ। সরকারের ভুল ত্রুটি নিয়ে প্রশ্ন করার সাহস ইদানিং খুব কম সাংবাদিকের মধ্যেই উপস্থিত আছে।
আজ দিগন্ত, সংগ্রাম, আমারদেশের উপর হামলা হলে যেসব সাংবাদিক খুশি হচ্ছেন তাদের উপরও যে হামলা হবে না তা কে বলতে পারবে।
তাই সাংবাদিকদের নিরপেক্ষতা খুবই জরুরি। না হলে মানুষ সরকারি টিভিকে যেভাবে একপাশে রেখে দেয় এসব চ্যানেলকেও তারা পরিহার করে বিদেশি চ্যানেল নিয়ে বসে থাকবে।
বিষয়: বিবিধ
১১৩৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন