পিলখানা থেকে সাভার - একটি লাশের নগরী Philkhana to Savar- A City of the Death Bodies
লিখেছেন লিখেছেন অক্টোপাশ ৩০ এপ্রিল, ২০১৩, ১২:০৩:১০ দুপুর
মানুষ জন্মগ্রহণ করে মৃত্যু বরণ করার জন্য। কিন্তু কিছু কিছু মৃত্যু কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। কিছু মৃত্যু আমাদের মনকে বিষণভাবে আলোড়িত করে। এ মৃত্যু কারো কাম্য নয়। একটু সতর্ক হলে, একটু সাবধানতা অবলম্বন করলে হয়ত এ মৃত্যু এড়ানো যায়। যারা এসব অপমৃত্যুর জন্য দায়ী তাদের আমরা কখনো ক্ষমার চোখে দেখিনা। তাদের বিচারের জন্য আমরা সোচ্চার হই। এসব মৃত্যু একটি জীবন্ত নগরীকে পরিণত করে লাশের নগরী।
পিলখানা হত্যাকান্ড:
বর্তমান সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের অল্প কিছুদিনের মধ্যেই দেশের ইতিহাসের সবচয়ে বড় ট্রাজেডিটা ঘটে গেল। সেনাবাহিনীর চৌকশ সব সেনাদের একত্র করে দরবার হলে ঘটল স্মরণকালের বড় হত্যাকান্ডটা। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় যত সেনা নিহত হয়নি তার চেয়ে বেশি সেনাবাহিনীর সেরা লোকগুলো নির্মম হত্যাকান্ডে শিকার হল। পুরো দেশ যখন এই ঘটনায় ক্ষুদ্ধ, বাকরুদ্ধ আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হত্যাকারীদের সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা দিয়ে দেশবাসিকে বিস্মিত করেছেন। সঠিক সময় সেনাবাহিনী হস্থক্ষেপ করলে হয়ত বিডিআর ম্যাসাকারের এ ঘটনা, যা দুদিন ধরে ঠান্ডা মাথায় চলছিল, তা হয়ত এত ব্যাপক আকার ধারণ করতো না বলে অভিজ্ঞ মহল এখনও মনে করে। সেই স্বজন হারানো সেনাপরিবারগুলো কখনো এত হত্যাকান্ডের সঠিক বিচার পাবে কি না তা কারো জানা নেই।
নিমতলি ট্রাজেডি:
বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে তার লাশ হয়েছে। শত শত জ্যান্ত মানুষ আগুনে পুরে কয়লা হয়েছে। আগুনের লেলিহান শিখায় বড় কণের দুটি পরিবারের এই মিলনমেলা পরিণত হয়েছে লাশের স্তুপে। চারদিকে মানুষের মাংসের পোড়া গন্ধ মানুষ ভুলতে পারেনি অনেকদিন। পুরানো ঢাকার এ মর্মান্তিক ঘটনা এখনো সবার হৃদয়কে নাড়া দেয়। এখনো অনেকে তাদের পোড়া শরীরের সেই ক্ষত চিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছে।
তাজরিন হত্যাকান্ড:
পোষাক শিল্পে যেসব কর্মী অবদান রেখে যাচ্ছে তাদের পুড়ে কয়লা হতে দেখেছে এদেশের মানুষ। তাজরিনের অগ্নিকান্ডে সেদিন রাতে শত শত গার্মেন্টসকর্মী অগ্নিদগ্ধ হয়। রাতের অন্ধকারকে বেদ করে আকাশে আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়ে। পোড়া মানুষের চিৎকার আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠে রাতের আকাশ। কার অবহেলায় কেন এত হত্যাকান্ড তার বিচার এদেশের মাটিতে কখনও হয়না। তদন্ত কমিটি হয়। টকশো হয়। সবাই বড় বড় কথা বলে। এক দল আরেকদলের উপর দোষ দেয়। কিন্তু যারা এর নির্মম শিকার হয় তারা থাকে অবহেলিত সবসময়। কখনও তারা সুবিচার পায় না।
সাধারণ নাগরিকের উপর নির্বিচার গুলি করে গণহত্যা:
বিরুধি দলের উপর দলন নিপীড়নের সব রেকর্ড এবং সবধরণের মানবাধিকারের সীমা লঙ্গন করে সাধারণ মানুষের উপর নির্বিচার গুলিবর্ষণের ঘটনা এদেশের লোক আর কখন দেখেনি। স্কাইপ কেলেঙ্কারিতে জড়িত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে দেশ বিদেশে অত্যন্ত জনপ্রিয় আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন মাওলানা দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদন্ডের রায় ঘোষণা করলে দেশের আপামর জনতা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। এই বিক্ষোভ দমনে ২৮ থেকে ফেব্রুয়ারী থেকে ৫ মার্চ ২০১৩ সারাদেশে ২ শতাধিক লোক পুলিশের গুলিতে নিহত হয়। এই নিহতের মধ্যে নারী ও শিশুও বাদ পড়েনি। দেশের ইতিহাসে এটা একটা ভয়াবহ হত্যাকান্ড হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে।
সাভার হত্যাকান্ড:
তারজিনের ধকধকে ঘা না শুকাতেই স্মরণ কালের সবচেয়ে বড় হত্যাকান্ড এটি। চারশতাধিক পোশাষ কর্মী যারা অমানবিক পরিশ্রম করে নিজেদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে এসে দেশকে সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যাচ্ছে তারা রানা ভবন ধসে নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হলো। আহত হল প্রায় তিন হাজার পোষাক শ্রমিক। তাদের মধ্যে অনেকই হয়েছে পঙ্গু। অনেকের হাত কাটা পড়েছে আর অনেকে এক পা , দু পা। আর কোনদিন তারা কাজে হয়ত আর ফিরতে পারবেও না। ছয়দিন ধরে চলা উদ্ধার কর্মে এখন পর্যন্ত ৪ শতাধিক লোকের মৃতদেহ উদ্ধার করলেও ধংসস্তুপের মধ্যে আরও কত লাশ আছে তা এখনও কারো জানা নেই।
আসল কথা হলো খুব সহজেই আমরা অনেককিছু ভুলে যাই। কোন একটা ঘটনা ঘটলে আমরা প্রতিশ্রুতির বন্যা বইতে দেখি। ক্যামরার সামনে অনেকে অনেক কথা বলে, অনেক ছবি তোলা হয়, অনেক টকশো আর তদন্ত কমিটি হয়। এসব করা দরকার, এসব করা উচিত। এ কেন ইত্যাদি করল আর ও কেন ইত্যাদি করল না এসব শুনতে শুনতে আমাদের কান চোখ ত্যক্ত হয়ে যায়। কিন্তু ঘটনার কিছুদিন পরই এসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হলো কিনা তা দেখার আর কেউ থাকেনা। ঘটনার পুনরাবৃত্তি আমরা কিছুতেই রোধ করতে পারি না। আর এই ঘটনার পূনরাবৃত্তি না ঘটাতেই পারাটাই আমাদের সফলতা ব্যর্থতার মাপকাটি।
Click this link
বিষয়: বিবিধ
৩০২১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন