সত্য কথা বললে এবার আমাকে পৃথিবীছাড়া হতে হবে-রানার দখলবাজির শিকার রবীন্দ্রনাথ সরকার, তাঁর জায়গায়ই গড়ে তোলা হয় রানা প্লাজা

লিখেছেন লিখেছেন অক্টোপাশ ২৮ এপ্রিল, ২০১৩, ০৪:৪৮:১১ বিকাল



'ওরা যখন আমার জায়গা দখল করে তখন প্রতিবাদ করেছিলাম। আর সেটা করতে গিয়ে আমাকে সাভারছাড়া হতে হয়েছিল। সাত মাস সাভারে আসতে পারিনি। ঢাকায় হোটেলে বা আত্মীয়স্বজনের বাসায় বাসায় থাকতে হয়েছে। লোক ধরাধরি করে সাভারে ফিরতে হয়েছে। এসব নিয়ে এখন আর কোনো কথা বলতে চাই না। সত্য কথা বললে এবার ওরা আমাকে পৃথিবীছাড়া করে ছাড়বে।'

কথাগুলো বলছিলেন রবীন্দ্রনাথ সরকার। তাঁর জায়গা দখল করেই বহুতল 'রানা প্লাজা' গড়ে তোলেন সাভার পৌর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাভার পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা। রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপের পাশেই (খসরুবাগান, ৩৯বি মজিদপুর) রবীন্দ্রনাথের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এস এস সরকার ব্রাদার্স। গতকাল শনিবার দুপুরে সেখানে তাঁর সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। কথা বলার সময় তাঁর চোখেমুখে ছিল আতঙ্কের ছাপ। কোনো কথাই তিনি বলতে চাচ্ছিলেন না। দখল ও সোহেল রানার প্রসঙ্গ তুললেই তিনি এড়িয়ে যাচ্ছিলেন।

এক পর্যায়ে রবীন্দ্রনাথ বলতে থাকেন, 'সাংবাদিক দাদা, আপনিও হিন্দু মানুষ। আমিও হিন্দু মানুষ। আপনি আমার আর কোনো ক্ষতি করবেন না। আপনি তো জানেন, এই দেশে হিন্দুদের কিভাবে বেঁচে থাকতে হয়। রানা প্লাজা ধসে আমার বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ওপর এসে পড়ে। আমার চারজন স্টাফ ও তিনজন কাজের লোক মারা গেছে। দুর্ঘটনার পর আমার বাড়ির মালামাল লুট হয়ে গেছে। নিজের বাড়িতেই এখন আমি ঢুকতে পারছি না। উদ্ধারকারীরা আমার বাড়ি সিল করে রেখেছে। আমার পরিবারের লোকজন বিভিন্ন জায়গায় আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে থাকছে।'

এখনো বাংলাদেশটা মগের মুল্লুক হয়ে যায়নি। সোহেল রানাই তো আজ পলাতক। তাকেই তো পুলিশ খুঁজছে- এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে রবীন্দ্রনাথ বলেন, 'ও এখন পলাতক থাকলেও দেখা যাবে, কিছু দিন পরই বেরিয়ে এসেছে। তখন আপনারা থাকবেন না। আপনাদের সমস্যাও হবে না। সমস্যা হবে আমার।'

এভাবে কথা বলতে বলতে এক পর্যায়ে তিনি বলেন, '১৯৮৯ সালে বাসস্টান্ডসংলগ্ন ছোট বলিমেহের মৌজার ১৫, ১৬, ১৭ ও ২৩ নম্বর দাগের ১২৬ শতাংশ জমি কিনি। জমির মালিক ছিলেন গণফোরাম নেতা মোস্তফা মহসীন মন্টু, তাঁর ভাই ও ভাইয়ের স্ত্রী। এসব দাগের কিছু অংশের জমি কিনে সোহেল রানার বাবা আবদুল খালেক। আমার জমি মাপজোক করে সীমানাপ্রাচীর দিয়ে ঘিরে দেই। ২০০১ সালের দিকে আবদুল খালেকের ছেলে সোহেল রানা আমার সীমানা প্রাচীর ভেঙে ২৭ শতাংশ জমি দখল করে নেয়। ওই ঘটনায় একটা মামলা করি। ওর বাবা তখন বিএনপি করতেন। এর পরই আমাকে সাভারছাড়া হতে হয়। ছয়-সাত মাস বিভিন্ন জায়গায় কাটাতে হয়েছে। সাভারে আসতে পারিনি। ঢাকায় হোটেলে হোটেলে কাটাতে হয়েছে। আত্মীয়স্বজনের বাসায় থাকতে হয়েছে। ওই সময়ে ব্যবসার চরম ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয় বিভিন্ন ব্যক্তিকে ধরে সাভারে ফিরি। কিন্তু দখল হওয়া জায়গাটা ছেড়ে দিতে বাধ্য হই। আমার ঘটনা সাভারে এমন কোনো লোক নেই যে জানে না। যে কাউকে জিজ্ঞাসা করলেই পেয়ে যাবেন। আমার কাছে শুনতে হবে না।'

রবীন্দ্রনাথ সরকার বলেন, 'পরে ওই জায়গায় ভবন নির্মাণ শুরু হয়; দেখলাম ভবনের নির্মাণকাজ খুবই খারাপ। এ ব্যাপারে সাভার পৌরসভা ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কাছে অভিযোগ করেছিলাম। রাজউকের লোক এসে দুদিন কাজ বন্ধ রেখেছিল। পরে দেখি, আবার কাজ শুরু হয়ে গেছে। ওর (রানা) সামনে বড় বড় নেতারাও পাত্তা পায় না। রাজউক তো দূরের কথা।'

রবীন্দ্রনাথ বলেন, 'আমার বাড়ির ওপর রানা প্লাজা ধসে পড়ায় আমার বাড়িও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দ্রুত বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ি। পাশেই আমার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। সেটাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গুদামের মালামালও নষ্ট হয়ে গেছে। আমার বসতবাড়িতেও ফাটল ধরেছে। ওটাতে আর বসবাস করা যাবে না। দুর্ঘটনার পর বাড়িতে গিয়ে দেখি, সব মালামাল লুট হয়ে গেছে।

অমিতোষ পাল, সাভার থেকে

click here

বিষয়: বিবিধ

১৪৩৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File