শিরোনামহীন গল্প

লিখেছেন লিখেছেন সাফারাবি ২০ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৭:৩২:১৩ সন্ধ্যা

নুমা আনত মুখে দু' হাত বেডে রেখে পা ঝুলিয়ে বসে আছে। রাগে-ক্ষোভে যেন ফেটে পড়ছে। কতক্ষণ এক নাগাড়ে কথা বলে থেমে ছিল। আবার শুরু করল, "দেখ, আমার সাফ

কথা। আমি মানুষটাকে ঠকাতে পারব না। এখন তোদের যার যা ইচ্ছা বলতে পারিস।"

-কিন্তু আঙ্কেল-আন্টি মেনে নেবে না এটা তুই ভালো করেই জানিস।

-কে মেনে নেবে আর কে নেবে না এটা দেখার দায়িত্ব আমার না।

-তুই না বাড়ির বড়। তোরই তো দায়িত্ব বেশি। আমি দায়িত্ব পালন করব না একথা বললেই কি তাই হবে?

-কেন, হবে না কেন? আমি যখন তাদের কাছে একটু সঙ্গ চেয়েছিলাম তখন আমাকে সঙ্গ দেয়া মা-বাবা হিসেবে তাদের দায়িত্ব ছিল না? তখন তাদের দায়িত্ব কোথায় গেছিল? এখন আমাকে যে এত ওয়াজ-নসিহত করিস পারলে তাদের একটু ওয়াজ-নসিহত করে আয়, যা।

-মানে?

-শোন লুবা, আমি হোস্টেল থেকে সপ্তাহে একটা দিন বাসায় আসতাম তাও আবার সন্ধ্যায়। শুক্রবার থেকে আবার শনিবার সকালে গিয়ে ক্লাস ধরতাম। সারা সপ্তাহ তো হোস্টেলেই পড়ে থাকি। আমাকে এত ব্যস্ত থাকতে হয় যে তোকে বলে বোঝানো সম্ভব না। খালি আমার না বুজছিস, মেডিকেলের সবাইকেই সারাক্ষণ দৌড়ানির ওপর থাকা লাগে। বৃহস্পতিবার এসে আমি কাউকে বাসায় পাই না। সবাই সবার মত ব্যস্ত। আম্মা থাকে তার সমাজসেবা নিয়ে, আব্বা ব্যাংকে আর ওরা দুই ভাই নিজের নিজের মত। সন্ধ্যার পর তুই যে কাউকে বাসায় পাবি সে আশাও বৃথা। সবাই অনেক দেরী করে ফেরে। তারপর আবার নিজেদের কাজে ব্যস্ত। আমি যে একটা মানুষ বাসায় আসছি, আমাকে যে টাইম দেয়া লাগবে কারো কোনো ধান্দাই নাই। আহারে, সবার যে কী ব্যস্ততা তোকে বলে বোঝানো যাবে না। দ্যাখ, আমি একটা মানুষ আসলাম সারা সপ্তাহ পর, আমার যে ভালো লাগা, খারাপ লাগার কথা কারো সাথে শেয়ার করবো তার কোনোই উপায় নাই। কারো টাইমই নাই আমার কথা শোনার। দুনিয়ার মানুষের সেবা করে বেড়ায়, নসিহত করে আর মেয়ের

যে সেবা লাগবে তাই করতে পারে না। হুঁহ, স-মাজসেবা। শোন, এই ছেলে ৩ বছর আমার পেছনে ঘুরেছে, বুজছিস, ৩ বছর। আমি তাকে পাত্তাই দেইনি। কিন্তু আমিও তো মানুষ। আমারও তো ভালো লাগা, মন্দ লাগা অন্যের সাথে শেয়ার করা দরকার এই মানুষটা পাইনি। আর ঐ ছেলেটা আমার অনে-ক খোঁজ-খবর নিত। এক সময় চিন্তা করে দেখলাম, ছেলেটা তো খারাপ না, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে। আর আমাকে যদি ভালো নাই বাসবে তাহলে ৩ বছর ধরে কি আর এমনিই ঘোরে? ৩ বছর আমার পেছনে ঘোরার পরে আমি হ্যাঁ বলেছি। এখন তুই বল, দোষ কি আমার নাকি আমার বাপ-মায়ের?

-তোরও দোষ, আঙ্কেল-আন্টিরও দোষ।

-তারপর শোন, তাদের বাধে কই, মেয়ে ডাক্তার, জামাই ডাক্তার না হলে মানুষের সামনে মুখ দেখাবে ক্যামনে। প্রেস্টিজে লাগসে, বুজছিস ঐটাই সমস্যা। তুই বল, ডাক্তার মেয়েদের কি খালি ডাক্তার ছেলেদের সাথেই বিয়ে হয়, অন্য কারো সাথে হয় না?

-না হবে না কেন, হয়ই তো।

-তাহলে? ঐ ছেলে ডাক্তার না তাতে কী,ছেলে কি আর খারাপ নাকি? বেক্সিমকোর ফার্মাসিস্ট, ৪০ হাজার পায়, কয়েক বছর পর আরো বাড়বে। দেখতেও তো খারাপ না। তাহলে সমস্যা কোথায়? সমস্যা ঐ একখানটাই, মেয়ে ডাক্তার, জামাইও ডাক্তার হওয়া চাই।

-তাদের এই চাওয়া দোষের কিছু না। সব মা-বাবাই এমনটা চিন্তা করে।

-এখানেই তো সমস্যা। শুধু ডাক্তাররাই মানুষ, অন্যরা মানুষ না? ডাক্তার না তো কী হয়েছে, মানুষ ভালো কিনা সেইটা হলো আসল কথা।

-হ্যাঁ, তোর কথা ঠিক আছে। কিন্তু.....

-শোন, ঐ ছেলে আব্বার সাথে মাঝে মাঝে কথা বলতো বুজছিস, খোঁজ-খবর নিত। তখন তার ক-ত্ত প্রশংসা, এমন ছেলে আ-র হয় না। আর যেই না ছেলের বোন প্রস্তাব দিল, এ্যাফেয়ারের কথা বলল অমনি ঐ ছেলে দুনিয়ার খারাপ ছেলে হয়ে গেল। আরে, ঐ ছেলের কী নাই, তারা যা চাই তার সবই তো আছে। অর্থ, ফ্যামিলি স্ট্যাটাস সবই আছে। খালি কী, আমি ডাক্তার আর সে ডাক্তার না। এটা কোনো সমস্যা হলো? তোর আঙ্কেল-আন্টির এত গর্ব-অহংকারের জন্যেই আমি এই কাজ করেছি। নিজেদের যে কী ভাবে বুঝে পাই না। মনে হয় যেন দেশের প্রেসিডেন্ট। দু' পয়সার মালিক তার এত ভাব।

-তারা ভুল করবে জন্যে তুইও ভুল করবি। এটা তুই ঠিক করিসনি। সমাজে যদিও এটা সাধারণ কিন্তু আমাদের ফ্যামিলি ক্যামন তা তুই ভালো করেই জানিস। আর কথা

শেয়ার করার মানুষ পাসনি, আমার সাথে শেয়ার করতি।

-তোর সাথে শেয়ার করবো? তুইও তো আমার মতই ব্যস্ত, দেখেছি না, তোরই তো নাওয়া-খাওয়ার ঠিক নাই, আর আমাকে দিবি টাইম।

-শোন যত ব্যস্তই থাকি না কেন তোর জন্য নিশ্চয় একটু সময় বের করতে পারতাম, তাই না?

-অত পারতাম বলে কাজ নাই। ব্যস্ততার সময় কার কী হলো তা নিয়ে কারোই কোনো হুঁশ থাকেনা, এমন কি আমারও না। সারা বছর কল দেয়ারই টাইম পাসনা, আর আমাকে দিবি টাইম? আর এখন আমাকে বুঝিয়ে কোনো লাভ নাই। আমার সাফ কথা। আমি যাকে কথা দিয়েছি তাকে ঠকাতে পারবো না। এখন তোরা আমাকে নিয়া যা ইচ্ছা হয় ভাব, যা মনে

চায় বল। আমি এক কান দিয়ে শুনে আরেক কান দিয়ে বের করে দিব বুজছিস। গেলাম, টাইম পেলে বেড়ায় যাস।

নুমা ওর ব্যাগটা নিয়ে হনহন করে বেরিয়ে গেল।

বিষয়: বিবিধ

১১৯৭ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

165093
২১ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ১২:৪৮
ভিশু লিখেছেন : Rose Rose Rose
২৬ জানুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৫:৫৪
121893
সাফারাবি লিখেছেন : Happy Happy Happy
165103
২১ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ০১:২৯
আলোর আভা লিখেছেন : বাবা মায়ের জন্যই বেশীর ভাগ ছেলে মেয়ে নষ্ট হয়।ধন্যবাদ ।
২৬ জানুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৫:৫৬
121894
সাফারাবি লিখেছেন : কষ্ট করে পড়ে মন্তব্য করার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File