কেন ১৬ই ডিসেম্বর স্বাধীনতা দিবস হল না (দুর্লভ ছবি)
লিখেছেন লিখেছেন এলিট ২৬ মার্চ, ২০১৩, ০৬:৫৬:৩১ সকাল
স্বাধীনতা শব্দটির অর্থ ব্যাপক। তবে একটি দেশের স্বাধীনতার জন্য সর্বপ্রথম যেটা জরুরী সেটা হল অন্য কোন দেশের শাশন থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া। সম্পুর্ন ভারতবর্ষ ইংরেজ শাশন থেকে আলাদা হয় ১৯৪৭ সালে । ইংরেজরা ভারতবর্ষকে পাকিস্তান এবং ভারত এই দুই ভাগে ভাগ করে যথাক্রমে ১৪ ও ১৫ আগস্টে স্বাধীন করে দেয়। ওই দিন তাদের জন্য স্বাধীনতা দিবস কারন তারা ওই দিনে ইংরেজ শাশনের আওতা মুক্ত হয়। আমেরিকা ৪ঠা জুলাই যুদ্ধে জয় করে ইংরেজ শাশনের আওতামুক্ত হয়। তাই ওই দিন তাদের স্বাধীনতা দিবস। কিন্তু
আমাদের জন্য স্বাধীনতা দিবস হয়েছে যুদ্ধ শুরু হওয়ার দিনটি, যদিও আমরা পাকিস্তান শাশনের আওতামুক্ত হই ১৬ই ডিসেম্বর। আসুন দেখে নেই কেন আমাদের জন্য এই ব্যাতিক্রম।
অনেক বুদ্ধিজীবি এই প্রশ্নের উত্তরে বলেনঃ " ২৬ এ মার্চ আমরা স্বাধীনতার ঘোষনা দেই এবং এর পরে মুজিবনগর সরকার গঠিত করা হয়। আমরা একটি স্বাধীন রাস্ট্র হিসাবে তখন থেকেই আত্মপ্রকাশ করি। ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের মাধ্যমে আমাদের স্বাধীনতার স্বীকৃতি লাভ করি। কিন্তু আমরা স্বাধীন মুলত ২৬ এ মার্চ থেকে। "
আমরা আসলে অনেক বেশী আবেগ তাড়িত। তাই সহজেই এসব কথা বিশ্বাস করি। শুধু তাই নয়, এই বিশ্বাস এত শক্ত যে এর বাইরে কিছু বললে তাকে গালি দিতে শুরু করি। জেনে রাখুন, স্বাধীনতা যুদ্ধ করা প্রতিটি দেশ, এভাবে স্বাধীনতার ঘোষনা দিয়েছে, এভাবে অস্থায়ী সরকার গঠন করেছে। অবশেষে যুদ্ধ জয়ের দিবসকে স্বাধীনতা দিবস হিসাবে পালন করেছে। আমদের ব্যাতিক্রম কেন? এর কারন বলতে গেলে অনেক কিছু বলতে হয় যা আমরা শুনতে পছন্দ করি না। আপনি মুক্তমনা হলে, এই লেখা পড়ে দেখুন। আমার কথা মিলিয়ে নিন।
যুদ্ধ এমনিতেই বাধে না। এর পেছনে অনেক শক্ত কারন থাকে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ কেন বেধেছিল এই প্রশ্নের উত্তর আমাদের কাছে স্পস্ট নয়। একটাই উত্তর আমাদের কাছে আছে "পাকিস্তান আমাদেরকে অত্যাচার করত"। অনেককেই আমি প্রশ্ন করেছি "পাকিস্তান আমাদের কি অত্যাচার করত যা আমাদের দেশের নেতারা করেনা?" অবশেষে উত্তর পেয়েছি "আসলে পরের অধীনে থাকতে কেউ পছন্দ করে না"। কথাটি
সত্য। লক্ষ্য করুন এখানেও কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের কারন স্পস্ট নয়। ভারতের কেন্দ্রিয় শাশন দিল্লি সরকারের। তামিল নাড়ু, পশ্চিম বঙ্গ, এদের ভাষা, সংস্কৃতি, খাবার, পোষাক, এমনকি ধর্মও দিল্লি থেকে খানিকটা আলাদা। এদের কাছে তো পরের অধীনে শাশিত মনে হয় না। কিন্তু আমাদের কাছে কেন পরের অধীনে মনে হয়েছিল?
মুক্তিযুদ্ধের কারনঃ
১৯৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংসদের বেশীর ভাগ আসনে জয়ী হয়। এর ফলে পাকিস্তানের দুই অংশের শাশন ক্ষমতা পাকিস্তানীদের বদলে বাঙ্গালীদের হাতে চলে আসার উপক্রম হয়েছিল। এটা বন্ধ করতে পাকিস্তানীরা গনহত্যা শুরু করে যা পরে মুক্তিযুদ্ধে রূপ নেয়।
বিস্তারিতঃ
১৯৪৭ এ পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই পাকিস্তানের এই দুই অংশের পরিচালনার দায়ীত্বে ছিল পশ্চিম পাকিস্তান (করাচী)। আমরা একে ছিলাম দূরে, আর ছিলাম অবহেলিত। এ নিয়ে ১৯৭১ এর আগ পর্যন্ত ছোট বড় অনেক আন্দোলন হয়। পাকিস্তানের দুটি অংশ না থেকে যদি কয়েকটি অংশ থাকত, তবে হয়ত আমরা এই অবহেলা অন্যান্য অংশের মতন মেনে নিতাম। কিন্তু যখন দেখি একমাত্র আমরাই সুবিধা বঞ্চিত তখন এর প্রতিকার আমাদের প্রয়োজন হল। আমরা দেখলাম এর একমাত্র প্রতিকার আমাদের হাতে শাশন ক্ষমতা থাকা। এটাই ছিল বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমাদের আন্দোলন। এই আন্দোলন ছিল স্বায়ত্বশাশিত পুর্ব পাকিস্তান গড়ার আন্দোলন। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রয়োজনিয়তা তখনো আসেনি। এই স্বায়ত্বশাশনের লক্ষ্যেই ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশ চাইলে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কোন দরকার ছিল না।
সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংসদে বেশির ভাগ আসনে জয়ী হয়। এই সংসদে তখন বেশী বাঙ্গালী থাকবে। পরিস্থিতি তখন উলটে যাবে। আগে পাকিস্তানীরা বাঙ্গালীদের অবহেলা করত, এখন বাঙ্গালীদের হাতেই থাকবে ক্ষমতা। এটা পাকিস্তানীরা মেনে নেবে কেন? তাই তারা বিভিন্ন তাল বাহানা করে ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি। এদিকে আন্দোলন আরো জোরালো হতে লাগলো। ৭ ই মার্চের ভাষনে বঙ্গবন্ধুর কয়েকটি দাবীর মধ্যে একটি ছিল "নতুন নির্বাচিত জন প্রতিনিধির (তিনি নিজে) কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর"। পাকিস্তান যদি এটা মেনে নিত তাহলে, স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ, রক্তপাত এগুলো কিছুই হত না। আমরা হয়ত এখনো পুর্ব পাকিস্তান থাকতাম।
কিন্তু পাকিস্তান ক্ষমতা হারাতে চায়নি। তাই তারা ৭ থেকে ২৫ মার্চের মধ্যে বাঙ্গালী সেনা সরিয়ে পাকিস্তানে নিয়ে গেছে। ২৫ মার্চ রাত থেকে শুরু হয়েছে গনহত্যা। তাদের উদ্দেশ্য ছিল আমাদেরকে এমন ভয় পাইয়ে দেওয়া যে আমরা আর কখনো আন্দোলনের নাম যেন মুখেও না আনি। যুদ্ধে, হত্যা ও ধর্ষন প্রত্যেক দেশেই হয়ে থাকে। আমাদের বেলায় তা অনেক বেশী হয়েছিল কারন ওদের সেনাদের উপরে এমন করার নির্দেশ ছিল। ওদের এই হত্যার প্রতিবাদেই মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়।
মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ঃ
নয় মাস যুদ্ধ করে আমরা খুব একটা সুবিধা করতে পারি নি। আমরা বিজয়ের মুখ দেখা শুরু করি ৩ ডিসেম্বর ভারত যোগ দেওয়ার পরে। এর মাত্র ১৩ দিনের মাথায় পাকিস্তান আত্মসমর্পন করে। ভারত সরাসরি যুদ্ধ করেছে। পাকিস্তানের আত্মসমর্পন ভারতের কাছে হয়েছে কারন এই যুদ্ধ মুলত ভারত করেছে। আত্মসমর্পনের দলিলেও ভারতের বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পনের কথা লেখা আছে। এমনকি আত্মসমর্পনের সময় আসেপাশে ভারতীয় লোকই ছিল (ছবি দেখুন)। মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত সেনাবাহিনী, বাংলাদেশের বর্ডারের চারিদিকে পাকিস্তানের চেয়েও বেশী সেনা মোতায়ন করেছে। (ম্যাপ দেখুন) সে সময় পাকিস্তানের সেনা ঘাটি ছিল ১৩ টি। তাদের প্রতিহত করার জন্য ভারতীয় সেনা ঘাটি ছিল ১১ টি। আর তাদের সহায়তায় মুক্তিবাহিনীর ঘাটি ছিল মাত্র ৩ টি। ভারতের ঘাটিগুলো পাকিস্তানের চেয়ে বড় ছিল। সহজ কথায় ভারত এই যুদ্ধ করেছে আমাদেরকে পাশে রেখে। আপনি ভারতীয়দের লেখা তাদের দেশের কোন ইতিহাস পড়লে বিষয়টি জানে পারবেন। এই বিজয় ছিল ভারতের। তাই আত্মসমর্পন ভারতের কাছে হয়েছে। এখনো ভারতীয়রা এই বিজয়কে পাকিস্তানের উপর তাদের জয় বলে আখ্যায়িত করে। ১৬ই ডিসেম্বর ভারতীয়দের বিজয় হয়েছে বলে একে বিজয় দিবস বলে। এই নামটাও ভারতের দেওয়া "Victory Day".
১৬ ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস। এর ফলে আমাদের কাছে ২৬ এ মার্চ ছাড়া স্বাধীনতা দিবস বানানোর মতন আর কোন দিন নেই।
বিষয়: বিবিধ
২৬৩৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন