অল্প অল্প করে নিতে হয়
লিখেছেন লিখেছেন এলিট ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ০৫:১০:২৫ বিকাল
কয়েক দশক আগে হুমায়ুন আহমেদ নাটকের এক চরিত্র ছিল "ইমদাদ খুনকার (খন্দকার)"। অতি চালাক এই বয়স্ক লোকটি নিজের নাতনীকে নিয়ে গ্রাম থেকে শহরে এক আত্মীয়র বাসায় এসে উঠেছিলেন। তার প্রতিটি কথাবার্তা ও কার্যকলাপে ছিল চালাকী। কপর্দকশুন্য এই লোকটি একবার পার্কে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। পার্কের বেঞ্চে বসা একটি লোককে জিজ্ঞেস করলেন "আপনার কাছে লাইটার হবে? সিগারেট ধরাবো"। লোকটি লাইটার দিলেন। ইমদাদ খুনকার লাইটারটি হাতে নিয়ে বললেন, "এইবার সিগারেটটা দেন"। লোকটি সিগারেট দিতে দিতে জিজ্ঞেস বললেন, "একবারে চাইলেই পারতেন"। খুনকার সাহেব বললেন, "অল্প অল্প করে নিতে হয়"। বিষয়টিকে আমরা কমেডি হিসাবে নিলেও, এটা আসলে খুবই শিক্ষনীয়। আগে সিগারেট চাইলে লোকটি হয়ত "না" বলতে পারতেন। কিন্তু একজনের হাতে লাইটার দিয়ে দেবার পরে, "সিগারেট নেই" এই কথা বলা যায়না। এটা একবারে মানুষের সাইকোলজির গ্রামারের মধ্যও পরে।
আমার কাছে আওয়ামী লীগ দলটি প্রিয় হবার প্রধান কারন হল, তাদের সকল কার্যকলাপ, রাজনীতি , গুটিবাজী ইত্যাদি সকল প্রকারের গ্রামারের মধ্যেই পড়ে। বোকার মতন আবেগী বা এলোপাথাড়ি কোন পদক্ষেপ তারা নেয় না। সবই তারা করবে। তারা অন্যায় করবে, মারবে, কাঁদবে, নালিশ করবে, অন্যায় বিচার করবে, আবার গলাবাজীও করবে। সবই সম্ভব হয় তাদের গ্রামার মেলানো রাজনৈতিক চালের জন্য। আওয়ামী লীগ দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার শুরু করল। এমন একজন নেতা সপরিবারে নিহত হয়েছেন। সেই অন্যায়ের বিচার এত বছরেও হয়নি। সেই বিচারটা করতে চাওয়ার ইচ্ছে বা চেস্টা মোটেও অযৌক্তিক নয়। বিচার অবশ্যই হতে হবে। এর বিরোধীতা কেউই করতে পারেনি, করার কোন সুযোগও নেই। কোথা থেকে খুটে খুটে পুরাতন ফাইল পত্র যোগাড় করেছে, অন্য দেশ থেকে আসামীদের ধরে এনেছে। এর পরে ঠিকই তাদের ফাসি দিয়ে ছেড়েছে। জাতি একেবারে কলঙ্কমুক্ত হয়ে গেছে। তখনই আওয়ামী লীগ বুঝতে পেরেছে, চল্লিশ বছর আগের অপরাধের বিচার এদেশে সম্ভব, যেই হোক না কেন, তাকে ফাসীতে ঝোলানো সম্ভব। আর সবচেয়ে বড় কথা হল, আমাদে জাতি কলঙ্ক মুক্ত হতে খুবই আগ্রহী।
সবার প্রথমে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারটা করাটা ছিল ইমদাদ খুনকারের ঐ প্রথমেই লাইটার চাওয়ার মতন। কারো কোন অমত নেই। লাইটার পাবার পরে, শুরু হয়েছে দিগারেট জ্বালানো। যুদ্ধাপরাধী নামে বিরোধী দলের নেতাদের ফাঁসি। নিজের দলে সবচেয়ে বেশী সংখক রাজাকার রেখে, অন্য দলের রাজাকারের বিচার করে ফাসিতে ঝুলিয়েছে। কেউই তেমন কিছু বলতে পারেনি। এর কারন হল, আগেই লাইটার দিয়ে দিয়েছে, সিগারেট তো জ্বলবেই।
প্রশ্ন থাকতে পারে, এখানে তাহলে কি করা যেতো? উত্তর খুব সহজ। আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচারের পরিকল্পনা করতেই......... বিরোধী দলগুলির নেতারা গিয়ে সেখানে একাত্বতা প্রকাশ করতো। বলত, আমরা সকল দল মিলে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার চাই। প্রয়োজনে এর স্বপক্ষে সমাবেশ, সম্মেলন, টক-শো ইত্যাদি করতো। সেই সাথে একটি বিষয় যোগ করে দিতো। সেটা হল, বঙ্গন্ধুর হত্যার এই পুরাতন বিচার সময়সাপেক্ষ এবং এটা ধীরে ধীরে হতে থাকুক। এই ফাকে, আসুন আমরা সাম্প্রতিক হত্যাগুলির, অন্তত আলোচিত হত্যাগুলির দ্রুত বিচার করি। ওই অবস্থায়, এই প্রস্তাবের বিরোধীতা আওয়ামী লীগের করতে পারতো না। সম্প্রতিক বিচারগুলি করতে গেলে, লোক দেখানোর জন্য হলেও অন্তত কয়েকটা বিচার সঠিকভাবে করলে, আমাদের আদালত অনেক শক্তিশালী হতো। পরবর্তীতে আদালতের উপরে দলীয় বা সরকারি প্রভাব খাটানো কঠিন হয়ে পড়তো। এর পরে বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার হতো। কিন্তু, যে সুবিধাটি হতো সেটা হল, পরের ধাপে নিজের দলে রাজাকার রেখে বিরোধী দলের নেতাদের ফাসীতে ঝোলানো এত সহজ হতো না। কারন তখন দেশের আদালত ও বিরোধী দল, উভয়ই শক্তিশালী থাকতো।
দেলোয়ার হোসেন সায়ীদির মতন আর কয়জন বক্তা বাংলাদেশ জন্মেছে? শুধু ধর্মীয় কারনে নয়, তার বক্তব্য অনেক অমুসলিমও আগ্রহ ভরে শুনতো। আকশচুম্বী জনপ্রিয় এই লোকটিকে কিন্তু রাজাকার বা যুদ্ধাপরাধী বলে জেলে ঢোকানো যেতো না। তাই তাকে অন্য এক হুজুরের ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত করার অজুহাতে জেলে ঢুকিয়েছে। এর পরে তার নামে যুদ্ধাপরাধীর মামলা দিয়েছে। দেশের ইতিহাসের সেরা কয়েকজন সবচেয়ে ক্ষমতাবান মানুষের মধ্যে একজন ছিলেন সাকা চৌধুরী। তাকেও যুদ্ধাপরাধী বলে জেলে ঢোকানো দুষ্কর ছিল। তাই সামান্য চুরির মামলায় তাকে জেলে ঢুকিয়ে পরে যুদ্ধাপরাধীর মামলা দেওয়া হয়েছে। এগুলোও কিন্তু ওই আগে লাইটার , পরে সিগারেট থিওরী।
সেই একই থিওরী এখন চলছে খালেদা জিয়ার উপরে। প্রথমে চুরির মামলায় জেলে। এর পরে আসছে বড় বড় মামলা। অমুক দুর্নীতি, তমুক মিছিলে মারামারি, খুনাখুনি, ইত্যাদি বিভিন্ন বড় মামলা আসছে। খালেদা জিয়াকে যাতে বাকী জীবনটা জেলেই কাটাতে হয়, সেই ব্যাবস্থা করে ছাড়বে। রাজনীতিতে কাচা বিএনপি ও তার সমর্থকেরা এখনো ভুল করে চলছে। তারা মেতে আছে, খালেদা জিয়া নির্দোষ, তাকে জেলখানায় কেন বিশেষ সুবিধা দেওয়া হবে না, কেন তিনি জেলের পোষাক পড়বেন, ইত্যাদি নিয়ে। অথচ তাদের সামনে রাজনীতির যে পথ খোলা আছে সেদিকে তারা পা বাড়ায় না। তাদের পথটি হল, বেছে বেছে আওয়ামী লীগের যে সব ছোট নেতা (বড় নয়) আছে, যাদের দুই চার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ আছে, তাদেরকে ধরা। তাদেরকে জনতার রোষানল ও বিচারের সম্মুখিন করা। দুর্নীতি ছাড়া রাজনীতিবিদ আমাদের দেশে নেই। পরের ধাপে আসবে বড় নেতারা।
আওয়ামী লীগের সঙ্গে রাজনীতিটা গ্রামার মিলিয়েই করতে হবে। খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠিয়ে আওয়ামী লীগ প্রচার করছে - আইন সবার জন্য সমান। এখন বিএনপিকে বিষয়টাকে এভাবে উপস্থাপন করতে হবে.........দুর্নীতিবাজ যেই হোক, তাকে আমরা ছাড়ি না। হোক সে আমাদের শীর্ষ নেতা অথবা তোমাদের পাতিনেতা। সবাইকে সাজা পেতে হবে। সারা দেশ ঝাপিয়ে পড়, বেছে বেছে চোর ধর। এভাবে সারা দেশে একটা শোরগোল ফেলে দেবার সময়ই এখন। এ ছাড়া, বিএনপির সামনে টিকে থাকার আর কোন পথ খোলা নেই।
আমার ফেসবুক ---------- এখানে
বিষয়: বিবিধ
১৪২৬ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন