শাহবাগ নাটক আবার আসছে "নাগরিক সমাজ" নামে
লিখেছেন লিখেছেন এলিট ২০ মার্চ, ২০১৩, ০১:৩৭:২২ রাত
কাহিনীটা সবারই জানা। চোখের সামনেই ঘটেছে। কিন্তু একই জিনিস দেখে একেক জন একেক রকম বোঝে বলেই কাহিনীটা বলার এই ক্ষীন চেস্টা। বিষয়টা প্রথমে অনেকেই হয়ত বোঝেনি। কিন্তু এখন এটি খুবই পরিস্কার। যারা বুঝছেন না, তারা বুঝতে চাচ্ছেন না। তাদের বেশীর ভাগই আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী অথবা অন্ধ-বধীর ভক্ত।
বিষয়টা কিঃ
যে দেশে মুক্তিযুদ্ধে লক্ষ লক্ষ শহিদ হয়েছে, লক্ষ লোকে যুদ্ধ করেছে সেই দেশে রাজাকার বা যুদ্ধাপরাধী অন্তত কয়েক হাজার থাকার কথা। কিন্ত যখন যুদ্ধাপরাধীর বিচারের সময় দেখা যায় কাঠগড়ায় জামাতের ৭-৮ জন আর বিএনপি এর ২ জন তখন একটা গাধাও বুঝবে যে এই বিচার ঠিক যুদ্ধাপরাধীর বিচার নয়। এটা বিরোধী দল দমনের বিচার। যাই হোক এই বিরোধীদল দমনের বিচার বিভিন্ন কায়দায় প্রতিস্টা পেয়েছে। বাচ্চু রাজাকার, যে কিনা পলাতক, তার সাজা হয়েছে মৃত্যুদন্ড। আবার হাজত থাকা কাদের মোল্লা যে নাকি ৩৫০ জন হত্যার আসামী, তার হয়েছে যাবতজীবন কারাদন্ড। আবার দেলোয়ার হসেন সাঈদী যার নামে মাত্র ২ টি হত্যা মামলা ছিল, তার ফাসীর রায় হয়েছে। সাঈদী বাংলাদেশের জীবিত সেরা বক্তা। তাকে জীবিত রেখে তো জামাত ধংশ করা যাবে না। পুলিশের নির্বিচারে গুলির ব্যাপারে লিখে এই লেখা আর বড় করব না। আর এর মধ্যেই চলেছে নাটক।
শাহবাগের শুরুঃ
কাগজে কলমে আওয়ামী লীগের নেতা ইমরান সরকার নিজেকে ব্লগার পরিচয় দিলেন। তিনি হলেন অদৃশ্য ব্লগার, কারন তার লেখা কোন ব্লগ দেখা যায় না। যাই হোক, তার নেতৃত্বে ব্লগার এন্ড অনলাইন এক্টিভিস্ট এর ছদ্যবশে শুরু হয় আওয়ামী লীগ এর শাহবাগ আন্দোলন। এটি সাধারন মানষকে ধোকা দেওয়ার এক সুন্দর পরিকল্পনা। আওয়ামী লীগের ব্যানারে সারাদিন "ফাসী চাই" বলে চিৎকার করলেও সাধারন জনগন এই আন্দো্লনে সাড়া দিত না, কারন আওয়ামী লীগ কি চায় এবং কেন চায় তা জনগন জানে। ব্লগার বা নতুন প্রজন্মের নামে এই আন্দোলন হওয়াতে প্রচুর লোক সমাগম হয়। এতে দেওয়া হয় নিরাপত্তা, খাবার, পানি, টয়লেট। আর সাথে তো মিডিয়া আছেই। বাংলাদেশের ৯০% মিডিয়ার মালিক আওয়ামী লীগেপন্থী। তারা শাহবাগ এর ঢোল না ফাটা পর্যন্ত বাজিয়েই গেছে। শাহবাগ এর জনসভা আন্দোলন এর চেয়ে পিকনিক এর সাথে মিল বেশি।
শাহবাগ দুর্বল হয়ঃ
খেলা ঠিক মত চলছিল। দাবার চালে ভূল হয়ে গেল ব্লগার রাজীব এর হত্যার পরে। রাজীব হত্যার পরে বিভিন্ন আওয়ামী লীগের নেতারা রাজীবকে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের শহিদ বলেন। প্রধান মন্ত্রী নিজে রাজীবের বাসায় গিয়ে শুধুমাত্র সন্দেহের ভিত্তিতে জামাতকে দোষী করেন ও জামাত নিষিদ্ধের কথা বলেন। (অথচ এর আগে ছাত্রলীগের হাতে নিহত বিশ্বজিতের ব্যাপারে তিনি সান্তনাও দেননি, ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের কথা বলেননি।) আওয়ামী লীগ চেয়েছিল নাস্তিক রাজীব হত্যার দায় জামাতের উপরে চাপিয়ে তাদেরকে জঙ্গী প্রমান করতে। তাহলে জামাতের বিরূদ্ধে জনমত পাওয়া যাবে। তাই তারা রাজীবকে হিরো বানিয়েছে। কিন্তু এতে হীতে বিপরীত হয়েছে। রাজীব নাস্তিক ছিল এটা কোন সমস্যা নয়। কিন্তু সে ইসলাম এর নামে এত বাজে কথা লিখেছে যা লিখতে তসলিমা নাসরিন তো দুরের কথা, পশ্চিমা ইসলামের শত্রুরাও সাহস করেনি। জামাতের ও আমার দেশ পত্রিকার কল্যানে এই বিষয়টি সারা দেশের মানুষ জেনে গেছে। এছাড়াও আরো অনেক ইসলামের নামে বাজে কথা বলা নাস্তিক শাহবাগ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছে। ৯০% মুসলিম জনবসতির এই দেশে এটি তখন একটি ধর্মীয় ইস্যু হয়ে দাঁড়ায়। তখন কে রাজাকার আর কে ফাসি চায় এগুলো বাদ দিয়ে শুরু হয়, নাস্তিকের বিচার চাই। এতে শাহবাগ এর আন্দোলন দুর্বল হয়ে পড়ে।
(রাজীবের হত্যাকারী হিসাবে গ্রেফতার হওয়া ৫ জন ছাত্র স্বীকার করেছে যে তারা এক বড় ভাইয়ের নির্দেশে এই খুন করেছে। সেই বড় ভাই আগে শিবির করতেন। আবারও বলছি, "আগে" শিবির করতেন। এই বড় ভাই যে কে, তা প্রশাশন বা মিডিয়া কেউ বলতে পারে না। জামাতের প্রধান নেতারা যেখানে জেলে বসে ফাসীর চিন্তায় অস্থির সেখানে এক তুচ্ছ বড় ভাইকে প্রশাশন ধরতে বা নাম প্রকাশ করতে পারে না কেন ? নাকি এই অতীত শিবিরের বড় ভাই এখন এমন দল করেন যে তাকে ধরা যাবে না। নাকি, এমন বড় ভাই বলে কেউ নেই। এটি রাজীব হত্যা মামলায় জামাতকে জড়াতে না পেরে দুর্নাম করার এক দুর্বল চেস্টা?)
শাহবাগের মৃত্যুঃ
অনেকে মিডিয়াতে বলাবলি করছিলেন যে শাহবাগের আন্দোলন এখন মর মর অবস্থা। ঠিক সেই সময় আওয়ামী লীগ শাহবাগকে চাঙ্গা করতে এটিকে সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে চাইল। কিন্তু এখানেও বিধিবাম। ইসলামিক নেতাদের প্রচন্ড চাপের মুখে শাহবাগের নেতারা চট্টগ্রামে প্রবেশ করতে পারেনি। মান রাখতে কিছু ছোট নেতারা স্বল্প পরিসরে সমাবেশ করেছে এবং তাদের এই সমাবেশে প্রত্যেকটি বক্তব্যে "রাজাকার", "ফাসি চাই" এগুলোর চেয়ে বেশি ছিল "আমরা নাস্তিক না", "আমরা ইসলাম বিরোধী না"। এখন শাহবাগের মঞ্চ ভেঙ্গে ছোট করা হয়েছে। প্রথম আলো পত্রিকা, যারা সব সময় শাহবাগের পক্ষে ছিল, তারা শাহবাগের রাস্তা খোলার জন্য লিখছে। এখন এখানে জনগন, মিডিয়া কিছুই নেই।
নতুন নাটকের শুরুঃ
শাহবাগ ফ্লপ হয়েছে, তাই বলে কি বসে থাকবেন আওয়ামী লীগের ঝানু রাজনীতিবিদেরা? তারা নতুন আরেক নাটক শুরু করতে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগ ও বামপন্থী লেখক, বুদ্ধিজীবীদের এবং এনজিও ব্যক্তিত্বদের সমন্বয়ে সদ্য গঠিত ‘নাগরিক সমাজের’ ব্যানারে নতুন করে শুরু হচ্ছে। আওয়ামীপন্থী শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানকে ‘অন্যতম আহ্বায়ক’ হিসেবে ‘নাগরিক সমাজ’-এর ব্যানারে আন্দোলন গড়ে তোলার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সারাদেশে নতুন মোড়কে শাহবাগ আন্দোলন পরিচালনার জন্য এক হাজার এক সদস্যের কমিটিও গঠন করা হচ্ছে। শাহবাগিদের আন্দোলনকে নতুন করে শুরু করা এবং ওই আন্দোলনকে ধরে রাখার লক্ষ্যেই ‘নাগরিক সমাজ’-এর আন্দোলন শুরু হচ্ছে বলে সংগঠনটির নেতারা স্বীকার করেছেন। আওয়ামীপন্থী মানবাধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন, সাংবাদিক আবেদ খান এবং অভিনেত্রী শমী কায়সারের দ্বিতীয়
স্বামী মোহাম্মদ আরাফাত আছেন নতুন আন্দোলনের মূল নেতৃত্বে। আওয়ামী লীগ ও বাম সমর্থক বুদ্ধিজীবীরা নতুন এ ফ্রন্টে শাহবাগ আন্দোলন শুরু করার জোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সরকার সমর্থক পেশাজীবী, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলোও নাগরিক সমাজের আন্দোলনে যুক্ত হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা পর্যায়ে এ আন্দোলন চালালে জনসমর্থন পাওয়া যাবে কিনা, তাও সম্প্রতি যাচাই করা হয়েছে আওয়ামী লীগ সমর্থক সংগঠন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির (ঘাদানিক) নেতাদের দিয়ে।
শাহবাগ কি দিয়েছেঃ
- সাঈদীর ফাসীর আদেশ।
- দমন করতে গিয়ে জামাতকে আরো শক্তিশালী করা হয়েছে।
- ইসলামের শত্রুরা যে আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় থাকে তা প্রকাশ হয়েছে।
- মিডিয়ার খবর যে কতখানি সত্য তা বোঝা গেছে।
- আওয়ামী লীগ জামাতকে নির্মূল করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ তা প্রকাশ হয়েছে।
- প্রতিদিন লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে যা এসেছে নেতাদের কাছ থেকে ও চাদাবাজির মাধ্যমে।
- পুলিশের বর্বরতা ও পক্ষপাতিত্ব প্রকাশ হয়েছে।
- জানজট ও জন দুর্ভোগ হয়েছে।
লক্ষ করন - এত বড় শাহবাগ আন্দোলন থেকে আওয়ামী লীগ কিছুই পায়নি। সারা মাস খেটে, গলা ব্যাথা করে, টাকা খরচ করে শেষ পর্যন্ত জামাত-শিবিরকে আরো শক্তিশালী করেছে। জামাত বাংলাদেশের ছোট একটি দল, তারা এখন সরাসরি আওয়ামী লীগের সঙ্গে লড়াই করছে। বিএনপি তত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে এমন লড়াই করতে পারছে না, একথা বিএনপির অনেক কেন্দ্রীয় নেতা স্বীকার করেছেন।
"নাগরিক সমাজ" নামের পরবর্তী নাটকের একমাত্র উদ্দেশ্য ক্ষমতায় টিকে থাকা। যেভাবে শাহবাগে জামাত ধংশ করতে গিয়ে শক্তিশালী করেছে। ঠিক সেভাবে "নাগরিক সমাজ" ক্ষমতায় টিকে থাকতে গিয়ে ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে। এবার যদি ক্ষমতা হারায় তাহলে সাধারন মানুষের কাছে আবার গ্রহনযোগ্য হতে কয়েক যুগ লেগে যাবে।
বিষয়: বিবিধ
২০২৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন