১৭ই ডিসেম্বর

লিখেছেন লিখেছেন এলিট ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৬, ০৭:৫৮:৫৩ সন্ধ্যা



পতাকা নিবেন, পতাকা, মাত্র ১০ ট্যাকা। পড়ন্ত বিকালে ঢাকার রাজপথে সিগনালে আটকে পড়া গাড়ীগুলির কাছে গিয়ে পতাকা বিক্রি করছে বল্টু। সে একজন পথশিশু, বয়স আনুমানিক ১০-১২ বছর। দু-একটা পতাকা বিক্রি করার পরেই সিগনাল ছেড়ে দিল। বল্টু আবার অপেক্ষা করছে পরের সিগনালের জন্য, যেন আরো পতাকা বিক্রি করতে পারে। তার পতাকাগুলো আর কিছুই নয়, বাশের তৈরি কাঠির সাথে কাগজের তৈরি লাল-সবুজ বাংলাদেশের পতাকা। যতগুলো পতাকা এনেছিল তার প্রায় সবই বিক্রি হয়ে গেছে।

ক্ষুদ্র এই বয়সে, পেটের দায়ে কত কিছুই না করেছে সে। এর আগে সে পত্রিকা, ফুল, মলম, বেলুন, খেলনা, পানীয়, অনেক কিছুই সিগনালে দাঁড়িয়ে বিক্রি করেছে। কিন্তু পতাকার মতন এমন চাহিদা দেখেনি কোন কিছুর। আজই সে এই পতাকা বিক্রির কাজটি পেয়েছে। গত রাতে সিগনালে এক মহাজন তাকে এই পতাকা বিক্রির অফারটা দেয়। সকালে লোকটির বাসায় গিয়ে শ’খানেক পতাকা নিয়ে আসে। গিয়ে দেখে ওখানেও তার মতন আরো প্রায় ডজন খানেক পথশিশু পতাকা আনতে গেছে। তারাও ঢাকা শহরের অন্য কোন সিগনালে পতাকা বিক্রি করবে।

সন্ধ্যে হয়ে গেছে, পতাকা বিক্রি শেষ। এখন ওই মহাজনের কাছে গিয়ে টাকা দিয়ে আসতে হবে। আর সে পাবে তার বেতন বা মুজরী। যায়গাটা বেশীদুরে নয়। হেটে যেতে যেতে ভাবছে, কাজটি আমাকে মাত্র একদিনের জন্য দিয়েছে। মহাজনকে বলে কয়ে কাজটি আরো কয়েকদিন বাড়িয়ে নিতে পারলে মন্দ হোত না। মহাজন যে কেন এই অন্ধকার গলিতে থাকে, কখন কোন বিপদে পড়ি।

বলতে বলতে বিপদ এসে হাজির। এই পোলা, খাড়া। পথ আটকে দাড়ালো দুজন নেশাখোর ছিনতাইকারী। বল্টু আপ্রান চেস্টা করেও ওদের সাথে পেরে উঠল না। বল্টুকে আঘাত করে, ওরা পতাকা বিক্রির সব টাকাটা নিয়ে গেল। একেবারে শুন্য করে দিয়ে গেল বল্টুকে। ওই অবস্থায় বল্টু কাদতে কাদতে মহাজনের কাছে হাজির। মহাজন তো রেগে আগুন। চড় থাপ্পড় দিয়ে বল্টুকে বলল - আমার সাথে চালাকী? টাকা কই রাখছস? যা, তাড়াতাড়ি টাকা নিয়ে আয়, নইলে তোকে পুলিশে দিব।

এই রাতে পথ শিশু বল্টু পথে পথে ঘুরতে থাকল। নেই কোন আশ্রয়, নেই কোন টাকা। রাস্তার পাশের রেস্টুরেন্টে কত রকমের খানার বানাচ্ছে, কত সুন্দর সুবাস আসছে, কিন্তু বল্টুর কাছে পয়সা নেই। ক্ষুদার্থ ছেলেটি ফুটপাথে শুয়ে অসহায় হয়ে তাকিয়ে রয়েছে খাবারের দোকানগুলির দিকে, আর ভাবছে আজকের পরিনতির কথা। এভাবে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে বুঝতে পারেনি। ভোরের কোলাহলে তার ঘুম ভাঙল। চোখ খুলতেই আবার সেই খাবার বানানোর দৃশ্য আর সেই সাথে পয়সা না থাকার বেদনা। প্রচন্ড ক্ষুদায় বল্টু একেবারে দিশেহারা

এরই মধ্যে চোখে পড়ল ডাস্টবিনের পাশে অনেকগুলো পতাকা পড়ে আছে। সেই পতাকা, যা সে কালকে বিক্রি করেছে। দৌড়ে গিয়ে পতাকাগুলো ফুটপাতে নিয়ে এলো। বেছে বেছে প্রায় দুই ডজন অক্ষত পতাকা বের করল। সেগুলো হতে নিয়ে দাড়ালো সিগনালে। সেই একই সিগনাল, একই বল্টু, একই পতাকা। একই হাক – পতাকা নিবেন, পতাকা, মাত্র ১০ টাকা। একটা সিগনাল ছেড়ে দিল। কেউই বল্টুর দিকে ফিরে তাকালো না। পরের সিগনাল, তার পরের সিগনাল...... এভাবে চেস্টা করতে থাকলো বল্টু। নাহ, কেউই পতাকা কিনছে না। বল্টু ভাবল, পতাকা পুরাতন হয়ে গেছে, তাই হয়ত ওই দামে কিনছে না। এবার সে ২ টি পতাকা দশ টাকা, ৩ টি দশ টাকা এভাবে হাক দিতে লাগল। নাহ, কিছুতেই কাজ হচ্ছে না।

অসহায় বল্টু হাত উচু করে বলল – সব কয়টি পতাকা ১০ টাকা। তবুও কেউ কিনছে না। রাস্তার পাশের পান ওয়ালা বেশ কিছুক্ষন ধরে বল্টুর কার্জকলাপ দেখছিল। সে বল্টুকে ডেকে বলল - ওই ব্যাক্কল পোলা, আইজকা ক্যাডায় পতাকা কিনব ? কাইলকা ১৬ তারিখ গ্যাছে গা। আইজক্যা তো ১৭ই ডিসেম্বর।

বিষয়: বিবিধ

১৫৯১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File