লাইলাতুল কদর - ইবাদতের বোনাস

লিখেছেন লিখেছেন এলিট ২৮ জুন, ২০১৬, ১২:৩১:১১ দুপুর



ব্লগার গাজী সালাউদ্দিন এর মাথায় হাত দেওয়া ছবিটি দেখে একইসাথে হাসিও পেয়েছে আবার দুঃখও পেয়েছি। এমন সুন্দর একটা আয়োজনের শেষের দিকে তিনি একেবারে একা হয়ে গেলেন। আশে পাশে কেউই নেই। আসলে রমজানে কাজকর্ম করে এর পরে আবার লেখাটা একটু কস্ট হয়ে যায়। বিষয় নির্বাচন করা থাকলে কস্টটা একটু বেশী। কারন আমরা তো তেমন পেশাদার লেখক নই। আমরা যা খুশি তাই লিখি। বিষয় নির্বাচন করা থাকলে চিন্তা করে লিখতে হয়, আর তাই সময় বেশী লাগে। যাই হোক, সকল কস্ট স্বীকার তিনি নিজে যেভাবে একাই অতন্দ্র প্রহরীর মতন আগলে রেখেছেন, সেজন্য তাকে সাধুবাদ। সবাই আপনার সাথে আছে, হয়ত বিভিন্ন কারনে লেখা হয়ে উঠছে না। আল্লাহ আপনাকে ও এই ব্লগের অন্য সবাইকে উত্তম প্রতিদান দান করুন।

আমার নির্বাচিত বিষয় ছিল - লাইলাতুল কদর। এই বিষয়ে অনেক লেখা পোস্ট হয়েছে। সেগুলোতে বলা চলে কিছুই বাদ পড়েনি। কাজেই , নতুন কিছুই খুজে পাওয়া গেল না। এই কারনে আমি এই রাতে কি করে বেশী বোনাস নেকী পাওয়া যায়, সে ব্যাপারে পরামর্শ দিচ্ছি মাত্র। লেখাটি লেখার কথা ছিল আরো পরে, কিন্ত ততদিনে তো বোনাস শেষ হয়ে যাবে। তাই আগেই লিখেছি।

আমাদের দেশের অন্য অনেক দিবসের মাঝে প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে এই লাইলাতুল কদর। আরবী এই কথাটির অর্থ হল মহিমান্বিত রাত। এই রাতে কোরআন নাজিল হয়েছিল । এই বিশেষ রাতের মহিমা বর্ননা করতে কদর নামক একটি সুরা আছে কোরআনে। সেই সুরাতেই বলা আছে, এই রাতটি হাজার রাতের চেয়ে শ্রেস্ট। এত বড় সুযোগ বলেই এটাকে অন্য কোন দিনের মতন প্রকাশ্ না করে গোপনে রাখা হয়েছে।

রমজানে মাসের শেষ দশ দিনের বেজর রাতের মধ্যে লুকানো আছে এই লাইলাতুল কদর। অর্থাৎ ২১,২৩,২৫,২৭ ও ২৯ তম রাতের যে কোন একটি রাতে লুকানো থাকে লাইলাতুল কদর। এই পাচটি রাতের যে কোন একটি রাত হতে পরে। তাছাড়া আরবী তারীখ গননার পদ্ধতিটিও আলাদা। ক্যালেন্ডারের তারিখ শুরু হয় সুর্যাস্তের পরে। প্রথমে রাত আসে, এর পরে দিন। অর্থাৎ ২০ তম রোজার ইফতারীর পরে যে রাতটি আসে সেট আসলে ২১ তম রাত। যাই হোক, লাইলাতুল কদর পেতে হলে ওই পাচটি রাতেই খুজতে হবে। আমাদের দেশের ভ্রান্ত কায়দায় শুধুমাত্র ২৭ তম রাতে সারা রাত নামাজ পড়ে ক্লান্ত হয়ে যায়। আর বাকী চারটি রাতে কোন খবর থাকে না। এটা একটা বোকামী ছাড়া আর কিছুই নয়। তাছাড়া ইবাদত সম্পর্কে আমাদের ধারনাও কম আছে।

ইসলামের গোন্ডির ভেতরে থেকে যে কাজ করা হবে সেটাই ইবাদত। কোরআন ও হাদিসের শিক্ষা অনুসারে জীবন জাপন করাটা ইবাদত। শুধুমাত্র নামজ রোজা ইবাদত নয়। মুমিন মুসলমানের প্রতিটা কাজই ইবাদত হতে পারে। ইবাদত আল্লাহর কাছে গ্রহনযোগ্য করার জন্য দুটি শর্ত। এক, সকল ইবাদত আল্লাহর সন্তস্টির জন্য হতে হবে। দুই, সেই ইবাদত কোরআন ও হাদিসের শিক্ষা ব দেখানো পদ্ধতি অনুযায়ী হতে হবে। ২৭ তম রমজানের রাতে, সারা রাত ধরে নামাজ পরার শিক্ষা হাদিসে নেই। কাজেই এত কস্ট করে করা ইবাদত গ্রহনযোগ্যতা পায় না।

তাহলে আমরা কি করতে পারি? পাচটি রাতেই সারা রাত ইবাদত করব? এটা তো অনেক কস্টসাধ্য। আসলে বছরে একদিন সারা রাত নামাজ পড়া আর অন্যদিন কোন খোজ নেই, এমন ইবাদতের পদ্ধতি ইসলামে নেই। তাছাড়া হাদিসের বর্ননামতে, আল্লাহর কাছে পছন্দের ইবাদত হল সেটা, যেটা অল্প হলেও নিয়মিত করা হয়। লাইলাতুল কদরে হাজার গুন বেশী বোনাস দেওয়া এজন্যি, যাতে অল্প নামাজ পড়ে সারা রাত নামাজ পড়ার নেকী পাওয়া যায়। সারা রাত ধরে যদি নামাজ পড়তে হবে, তাহলে এই বোনাসের দরকার কি?

তাহলে কি করবেন? ওই পাচটি রাতের প্রতিটি রাতে মাত্র দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ুন। সেই দুই রাকাতই দুই হাজার রাকাতের চেয়ে বেশি হবে। প্রতিদিন মাত্র ১০টাকা দান করুন। সেটাই হবে ১০ হাজার টাকার চেয়ে বেশী। প্রতিবেশীর খবর নিন, আত্মীয়র সাথে সুসম্পর্ক রাখুন, বাবা মায়ের সেবা করুন, যা করবেন তাতেই হাজার গুন বেশী নেকী। পাপ থেকেও বেচে থাকতে হবে। কারন, পাপেরও বোনাস হয়। লাইলাতুল কদর বিষয়ক বিভিন্ন ইসলামিক কথাবার্তা, নিয়ম কানুন, পদ্ধতি, ফতোয়া ইত্যাদি শুনে বিভ্রান্ত না হই। কিছু বইপত্র ও লেখাতে এত জটিল আলোচনা করা আছে যা দেখলেই মানুষ সেতাকে অনেক কঠিন মনে করে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। ইসলামে কঠিন, অতিরিক্ত বা বারাবাড়ি কিছু নেই। শুধু এটুকু মনে রাখি, সেই এই পাচটি রাতের যে কোন এক রাত, লাইলাতুল কদর। তাই প্রতিটি রাতে অল্প করে ইবাদত করলে লাইলাতুল বরাত পাওয়া যাবে আর আমাদের ভাগ্যে জুটবে হাজার গুন বেশি সাওয়াব।

আমার ফেসবুক ---------- এখানে



বিষয়: বিবিধ

১৯৮৬ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

373384
২৮ জুন ২০১৬ দুপুর ০২:৩৩
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ধন্যবাদ চমৎকার পোষ্টটির জন্য।
373388
২৮ জুন ২০১৬ দুপুর ০২:৩৮
কুয়েত থেকে লিখেছেন : রমজানে মাসের শেষ দশ দিনের বেজর রাতের মধ্যে লুকানো আছে এই লাইলাতুল কদর। অনেক ভালো লাগলো লেখাটি ধন্যবাদ আপনাকে
373422
২৮ জুন ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:৫৫
আওণ রাহ'বার লিখেছেন : ধন্যবাদ নিবেন সুন্দর পোস্টটির জন্য।
জাযাকাল্লাহ খাইর।
@সালাহউদ্দীন ভাইকে আল্লাহ কুটকুটে একটা বউ দান করুন। আমীন।
@ সালাহউদ্দীন ভাই ক্ষমা করবেন। আমাকে মেরে ফেললেও এখন লেখা বের হবে না। Happy
373431
২৮ জুন ২০১৬ রাত ০৮:১৭
হতভাগা লিখেছেন : গরমের দিনে ১৫ ঘন্টা রোজা রাখার জন্য পর্যাপ্ত ঘুম খুবই দরকারী । এখন যদি সারা রাত জেগে ইবাদত করে দিনের বেলায় এমন ক্লান্তি লাগলো যে রোজা ভাঙ্গার উপক্রম হয়ে গেল ?

অবশ্যই এসময়ে নিত্যদিনের নিয়মিত ইবাদতের পাশাপাশি নফল ইবাদত করা উচিত - তবে সেটা কোন সময়ে করলে ঘুমের উপর চাপ পড়বে না , আবার ইবাদতও পর্যাপ্তভাবে করা হবে । রাতের বেলার , বিশেষ করে রাতে শেষ তৃতীয়াংশের ইবাদত বেশী পছন্দনীয় আল্লাহর কাছে । এখন যদি সাহরীর ঘন্টা দেড়েক আগে উঠে ক্বুরআন তেলাওয়াৎ করা + ২-১০ রাকাত নফল নামাজ + তাহাজ্জুদের ৪-৮ রাকাত নামাজ পড়া হয় + গোটা কয়েক আল্লাহর গুণবাচক তাসবীহ পড়া হয় - হয়ে যাবে ?

চেষ্টা করবো - ইন শা আল্লাহ । আল্লাহ কবুল করনে ওয়ালা ।
373434
২৮ জুন ২০১৬ রাত ০৮:২৮
শেখের পোলা লিখেছেন : আমরা বড়ই চালাক, তাই আমরা আল্লাহ চোেও ধূলো দিয়ে বোনাস নিতে চাই। জুম্মার নামাজে কিছু বেশী লোক হলেও সারা দেশে অক্তিয়া নামাজে মসজিদে উপস্থিতির হার অনেক কম। কিন্তু বোনাসের রাতে প্রতিটা মসজিদে লোকে লোকারণ্য৷ আমরা বুঝিনা যার বেতনই নাই সে বোনাস পাবে কেমন করে? ফরজ এড়িয়ে নফলে মাথা ঠুকি। আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দিক। ধন্যবাদ।
373454
২৯ জুন ২০১৬ রাত ১২:৫৮
ক্রুসেড বিজেতা লিখেছেন : ভালো লাগলো,, ধন্যবাদ।
373469
২৯ জুন ২০১৬ রাত ০৪:৩১
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : বেজর রাত থেকে আমার রাত কোনটা, কিভাবে খুজেঁ নেবো?
এই রাতটিকে আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত করা হয়েছে, তাই ইবাদতও হয় আনুষ্ঠানিক।
এই রোজায় শবে কদরে আমল করা কঠিন হয়ে যাবে। এত লম্বা দিনে রোজার পর রাতে আর শরীর চলেনা।
আমি বুঝি, নিজেরও সময় করা কঠিন হয়ে যাচ্ছিল, তাই অনেক আগেই এলান দিয়ে রেখেছি। ভাবলাম লিখাটা রেডি করে রাখবে। কিন্ত ....
আর এই পর্বে আমিও বিশেষ কারণ বশত সবাইকে দাওয়াত দিতে পারিনাই। তাই ...
আপনার বিশ্লেষণ ক্ষমতা খুবই ভালো। আল্লাহ্ এই ক্ষমতাটুকু আরো বাড়িয়ে দিন। আমিন
গুরুত্বের বিবেচনায় লেখাটি আগেই পোস্ট দেওয়ার জন্য শুকরিয়া

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File