নিদর্শন
লিখেছেন লিখেছেন এলিট ০৯ মে, ২০১৬, ০৫:৪৫:৩৭ সকাল
যারা ধর্ম পরিবর্তন করে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেছেন তারা জন্মগত মুসলিম এর চেয়ে অনেক উন্নত মানের মুসলিম। কারন জন্মগত মুসলিমেরা তাদের পরিবেশ ও পরিস্থিতির কারনে ইসলাম পালনে অভ্যাস্ত হয়ে যায়। এটা অনেক সহজ। পক্ষান্তরে একজন অমুসলিমকে তার পরিবেশ ও পরিস্থিতি ত্যাগ করে, আপন মানুষের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে নিজের সাথে যুদ্ধ করে ইসলাম গ্রহন করতে হয়। তারা ইসলামের আলো আমাদের চেয়ে অনেক ভালো দেখতে পায়। তারা ইসলামে আদর্শে অনুপ্রানিত হয়। এছাড়া ইসলাম গ্রহন করলে তাদের পুর্বের সব গুনাহ মাফ হয়ে যায় আর একারনে তারা জান্নাতে পৌছানোর প্রতিযোগিতায় জন্মগত মুসলিমের চেয়ে অনেক এগিয়ে থাকে।
ইসলাম ধর্ম গ্রহন করার বিভিন্ন রকমের গল্প শোনা যায়। অনেকে ইসলাম ধর্মের দোষ খুজে বের করতে গিয়ে ইসলাম নিয়ে লেখা পড়া করেছে। আর এর পরেই ইসলামের আদর্শে অনুপ্রানিত হয়ে মুসলমান হয়ে গেছে। এমন অনেক গল্প আমরা জানি। তবে সম্প্রতি আমি এমন একটি গল্প শুনেছি যা আমাকে সত্যই মুগ্ধ করেছে। সেই গল্পটিই আজকে বলব।
লোকটি অস্ট্রেলিয়ার অধিবাসী, বয়স ৩০ এর আশে পাশে। ছোট বেলা থেকেই সেই দেশের অনেকের মতন নাস্তিকতা শিখে বড় হয়েছে সে। ইশ্বর , স্বর্গ নরক ইত্যাদি কিছুই নেই, ধর্ম হল আবর্জনা, ইত্যাদিই ছিল তার মুল মন্ত্র। বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে যে নাস্তিকেরা ধর্ম সম্পর্কে অনেক কিছু জানে। কারন ধর্ম বিরোধী বিতর্ক করতে এসব জ্ঞান কাজে লাগে। এই লোকটিও তেমন বিভিন্ন ধর্ম নিয়ে লেখা পড়ে করতো আর বিভিন্ন ধর্ম বিরোধী যুক্তি দিয়ে মানুষকে কুপোকাত করতো। এমনই এক বিতর্কে একজন তাকে জিজ্ঞেস করল “আছা আপনি কি ধর্ম গ্রন্থ পড়েছেন?। সে সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিলে, পড়িনি মানে, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, হিন্দু, ইহুদী সব ধর্মের গ্রন্থই পড়েছি। আচ্ছা, ইসলাম ধর্মের গ্রন্থ কোরআন পড়োনি? এই কথা শুনে হেসে ফেলল লোকটি। বলল, এমন জঙ্গীবাদি ধর্ম পড়ে লাভ কি? অপর ব্যাক্তি বলল – আহা, পড়েই দেখ না কি শেখানো হয়েছে ওতে। এই কথাটি লোকটির মনে ধরল। সে ভাবল কোরআন পড়লে আরেকটি ধর্মের ব্যাপারে কিছু জানা যাবে কাজেই তার বিরুদ্ধে কিছু কথা বলার সুযোগও পাওয়া যাবে। তাহলে দেখেই ফেলি ইসলাম ধর্মটা কেমন।
প্রথমে সে হাজির হল কোন এক মসজিদে। তার পরনে ছিল অতি আধুনিক, উগ্র ধরনের পোষাক। সেখানে একজন লম্বা দাঁড়ী ও জোব্বাওয়ালা লোক তার কাছে এগিয়ে এলো। মনে হল এখনই তাকে ধমক দিয়ে বলবে, কি ব্যাপার তুমি কোন সাহসে মসজিদে এসেছ? হয়ত কোন ধরনের অস্ত্র বের করে ভয় দেখাতেও পারে। কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে লোকটি কাছে এসে অস্ট্রেলিয়ান ইংরেজীতে তার কুশলাদি জিজ্ঞেস করল। কিছুক্ষন কথা বলার পরে বলল – আচ্ছা তুমি ইসলাম সম্পর্কে জানতে এসেছ, এসো ভেতরে এসো। ভেতরে গিয়ে আমাদের গল্পের নায়ক বিভিন্ন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করল। এটা এমন কেন, এটা তেমন কেন ইত্যাদি। সেই দাড়িওয়ালা লোকটি ও আশে পাশের আরো কয়েকজন মুসলমান কোরআন খুলে তাকে প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিচ্ছে। আরো কঠিন প্রশ্ন করল, সেটারও উত্তর কোরআনে আছে। তখন লোকটি জিজ্ঞেস করল – আচ্ছা তুমি কোরআন থেকে প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছ কেন? তোমার কি নিজের কোন মতামত নেই? দাড়ীওয়ালা লোকটি উত্তর দিল, যেখানে আল্লাহর বানী আছে সেখানে আমার নিজের মতামতের কি মুল্য আছে? এই কথাটি তার পছন্দ হল। সেই মসজিদ থেকে কোরআনেরএকটি ইংরেজী অনুবাদ নিয়ে গল্পের নায়ক বাড়ি ফিরে গেল।
রাত্রে বাসায় বসে কোরআন পড়ছে। পড়তে পড়তে মুগ্ধ হয়ে গেল। এমন বই সে আগে কখনো পড়েনি। বইটা কোন গল্প বা কাহিনী নয় বরং এর প্রতি লাইনে মনে হচ্ছে তাকে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। মনে হচ্ছে বইটা (কোরআন) তাকে নির্দেশ দেওয়ার জন্যই লেখা হয়েছে। এক সময় সে পড়া থামালো। মনে মনে বলল – হে আল্লাহ, আমি একেবারে কিনারায় এসে দাড়িয়েছি। তৈরি হয়েছি ইসলামে ঝাপিয়ে পড়ার জন্য। কিন্তু আমাকে একটি নিদর্শন দেখাও। যেই নিদর্শন দেখে আমি ইসলামে ঝাপ দিতে পারি। যে কোন একটি নিদর্শন। নাটক সিনেমার মতন আকাশে বিদ্যুতের চমক দেখাও, আমার সামনের মোমবাতিটি জ্বালিয়ে দেখাও, ঘরের কোনায় ছোট একটা ফাটল বানিয়ে দেখাও, ছোট বড় যাই হোক আমাকে একটি নিদর্শন দেখাও। এই বলে সে আশে পাশে তাকিয়ে দেখছে কোন নিদর্শন দেখা যায় কিনা। নাহ, কোথাও কোন নিদর্শন নেই। আবার খুজতে লাগল। না, কিছুই নেই। আবার আল্লাহকে বলল – আমি জানি তুমি হয়ত ব্যাস্ত আছ, হয়ত বিশ্বের অন্য কোন প্রান্তে, অন্য কারো সমস্যা সমাধান করছ। আমি আবার তোমার কাছে চাইছি। তুমি বিশ্ব সৃস্টি করেছ, একটা নিদর্শন দেখানো তোমার জন্য কিছুই না। এই বলে আবারো আশে পাশে থাকিয়ে নিদর্শন খুজতে লাগল। নাহ, ঘরের সব কিছুই একই যায়গায় আছে। কোন নিদর্শন নেই।
লোকটি খুব আশাহত হল। এই আশাহত হৃদয়ে আবারো কোরআন পড়তে শুরু করল। প্রথম যে বাক্যটি সে পড়ল তার ভাবার্থ হল – “যারা নিদর্শন খোঁজে তাদের কি যথেস্ট নিদর্শন দেওয়া হয়নি”। তার বুকের মধ্যে ধুক ধুক করে উঠল। হ্যা, এ কি? এটা তো মনে হচ্ছে তার প্রশ্নেরই উত্তর। এই বইটির প্রতিটি লাইনেই তার প্রশ্নের উত্তর আর তার প্রতি নির্দেশনা কিভাবে দেওয়া আছে? তাছাড়া আল্লাহর নিদর্শন খোজা তো ভুল। কারন আশে পাশের প্রতিটি সৃস্টির ভেতরেই আছে তার নিদর্শন। লোকটি পরেরদিন গিয়ে ইসলাম কবুল করে।
তার নাস্তিক বাবা মা প্রথমে বিষয়টিকে ভালো চোখে দেখানি। মনে করেছে ছেলেটি হয়েত কোন নিষিদ্ধ দলে যোগ দিয়েছে, হয়ত কিছদিন পরে তার হাতে অস্ত্র পাওয়া যাবে। কিন্তু ধীরে ধীরে তারা লক্ষ করল, ইসলাম গ্রহন করার পরে তাদের ছেলে আরো ভালো মানুষ হয়ে গেছে। সে তার বাবা মায়ের প্রতি আরো বেশী যত্নশীল, আরো বেশী সত্যবাদী হয়েছে। তার বাবা তাকে এই কথা বলেছেও যে – তোমার উপরে এখন আগের চেয়ে অনেক বেশী ভরসা করা যায়।
দ্রস্টব্যঃ আমার নিজের অভিজ্ঞতায় দেখেছি যে অস্ট্রেলীয়ার যুব সমাজের কাছে ইসলাম হচ্ছে সন্ত্রাসবাদের অপর এক নাম। আমাদেরকে দু-একজন এই কথাও বলেছে “তোমাদের সাথে পরিচয়ের আগে মুসলিম সম্পর্কে আমাদের ধারনা ছিলে যে তাদের মাথায় পাগড়ী, মুখে দাড়ি আর হাতে রাইফেল থাকে”। তারা এটা স্বীকারও করেছে যে মিডিয়ার বাড়াবাড়িতেই মানুষের মনে ইসলাম সম্পর্কে এমন ভুল ধারনা জন্ম নিচ্ছে।
আরেকটি কথা হল, কোরআন এর বাচনভঙ্গি একেবারেই আলাদা ধরনের। কোরআন পড়লে সত্যই মনে হয় যে আমাকে কেউ নির্দেশ দিচ্ছে। মনে হয় যেন ওই কথাটা আমার জন্যই বলা হয়েছে। কোরআনের ভুমিকা ও বাচনভঙ্গী বিষয়ক আমার একটি লেখা আছে – এখানে দেখুন
আমার ফেসবুক ---------- এখানে
বিষয়: বিবিধ
১৪৩২ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভালো লাগলো, যাযাকাল্লাহ খায়রান।
রমজান উপলক্ষ্যে ব্লগ আয়োজনের সর্বশেষ পর্বে পোস্ট করার জন্য আপনার লেখাটি প্রস্তুত করে নিন।
প্রবাসে রোজা পালন- দ্যি স্লেভ, রাইয়ান, প্যারিস থেকে আমি, তবুওআশাবাদী, সন্ধাতারা
রোজার অনুশীলন কিভাবে সারাবছর জাগ্রত রাখা যায়- ডক্টর সালেহ মতিন
রামাদান সম্পর্কিত হাদীস সমূহ- শাহাদাৎ হোসাইন নবী নগর
শবে কদর- এলিট
সদকায়ে ফিতর- প্রবাসী আব্দুল্লা শাহিন
মন্তব্য করতে লগইন করুন