বাংলাদেশে প্রয়োজন - ইলিশ মাছ আমদানী

লিখেছেন লিখেছেন এলিট ১৪ এপ্রিল, ২০১৬, ০১:১৬:৩৯ রাত



পশ্চিমা দেশগুলোতে এবং সেই সাথে এশিয়াতেও স্যামন (Salmon) নামক মাছটি বেশ জনপ্রিয়। বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে সেরা মাছ নাকি এটি। এটা আসলেই সুস্বাদু। এমনকি জপানী খাবার স্টাইলে (sushi) এই মাছটি কাচাই খাওয়া হয়। ওদিকে বাঙ্গালীর সেরা মাছ হচ্ছে - ইলিশ। স্বাদেও এটি সেরা। না, স্যামনের সঙ্গে এর স্বাদ তুলনা চলে না। কারন দুটি দুই ধরনের স্বাদ। তবে এই দুটি মাছের জীবনচক্রে ও জনপ্রিয়তায় বেশ সাদৃশ্য আছে। ইদানিং আবার দামেও সাদৃশ্য শুরু হয়ে গেছে। সাদৃশ্য নয়, আসলে মুল্যের দিক থেকে, স্যামনকে ছাড়িয়ে গেছে ইলিশ।

স্যামন মাছ নদীতে জন্মে। এর পরে বড় হয়ে হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে সাগরে যায় প্রজনেনের জন্য। তার পরে ডিম পাড়ার জন্য পথ চিনে, অনেক চড়াই উতরাই পাড়ি দিয়ে, নিজের জন্মস্থান নদীতে ফিরে আসে। ডিম পাড়ার পরে এই মাছ আর বেশীদিন বাচে না। স্যামন মাছের চমকপ্রদ জীবনচক্র নিয়ে অনেক গবেষনা হয়েছে, হচ্ছে। এর অনেক খুটিনাটি বিজ্ঞানিরা এখন জানেন। ইলিশ এর জীবনচক্র নিয়ে তেমন বড় কোন গবেষনা হয়নি এবং এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানাও যায়নি। তবে এটা জানা যায় যে ইলিশ মাছ, ডিম পাড়ার জন্য সমুদ্র থেকে নদীতে আসে। প্রায় একই ধরনের জীবনযাত্রা এই দুটি মাছের। আবার জনপ্রিয়তাতেও এই দুটি মাছ নিজ নিজ স্থানে সেরা।

এত মিল থাকলেও এই দুটি মাছের মুল্যের বিস্তর ব্যাবধান ছিল। এখন ধীরে ধীরে সেই ব্যাবধান কমে আসছে। ইলিশের দাম যেভাবে বাড়ছে তাতে, বিশ্বের সবচেয়ে দামী মাছের খাতায় নাম লেখাতে পারে ইলিশ। সত্যই বলতে কি, এর প্রয়োজনও আছে আমাদের মতন জাতির জন্য। একই মোবাইল অপারেটর, ভারতে ইন্টারনেট প্যাকেজ বিক্রি করে ২৫০ টাকায় আর বাংলাদেশে সেটা বিক্রি করে ১৫০০ টাকায়। আন্তঃজাতিক ফুড চেইন নান্দোস (Nando’s) এর বাংলাদেশে দুটি আস্ত মুরগীর প্যাকেজ বিক্রি করেছে ১০,০০০ টাকাতে। যেটা ইউরোপ আমেরিকায় ৫০ ডলার (৪ হাজার) এ বিক্রি হয়। অর্থাৎ আমেরিকার থেকে আড়াই গুন বেশী দামে। এই নিয়ে বিভিন্ন লেখালেখি হয়েছে। এ ব্যাপারে নান্দোস (ঢাকা) এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যে তারা এমন উচ্চমুল্য রেখেছে যাতে বিশেষ কিছু কাস্টমার ওটা কিনতে পারে। অর্থাৎ, যারা কোন কারন ছাড়াই বেশী টাকা দিয়ে কেনে, তাদের জন্য ওটি। এমন খোড়া যুক্তি বেশীক্ষন টেকেনি, এবং এর পরে দাম কমিয়ে সেটি ১০০০ টাকা করেছে। সে খাবার এক হাজার টাকায় বিক্রি করলেও লাভ থাকে সেটা দশ হাজার টাকায় অর্থাত দশগুন বেশী দামে বিক্রি করেছে, মানুষ সেটা কিনেছে।

দশগুন বেশী দাম দিয়ে আমরা কিনে খুশি হই। তার কারন মাত্র দুটি। এক, “আমি কত ধনীরে”, এই জিনিসটা বোঝানো যায়। দুই, টাকা হালাল পথে পকেটে ঢোকে না। কাজেই কয়গুন গেল তাতে সমস্যা হয় না। উন্নত বিশ্বে শ্রমিকের কাজ করেই লাখ টাকা বেতন পাওয়া যায়, সব কিছু কিনে এক প্রকারের বিলাসবহুলভাবে বেচে থাকা যায়। কিন্তু কেউই, অযথা কয়েকগুন বেশী দাম দিয়ে কোন জিনিস কিনবে না। এমনটা যে করবে, তাকে সবাই বোকা মনে করে। কারন একটাই – ওরা হালাল পথে, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে রোজগার করে, ফাকি দিয়ে নয়। আমাদের দেশে যারা এমন হালাল আয় করে, তারা ওমন দশগুন দামের খাবার তো দুরের কথা, ওখানে যাওয়ার মতন রিকশা ভাড়াই থাকে না।

বলছিলাম ইলিশের কথা। বাংলাদেশে ইলিশ মোটেও দুস্প্রাপ্য নয়। কিন্তু দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের কৃত্তিম সংকট তৈরি করয়ার জন্য এবং সর্বপরি আমাদের দেশের ক্রেতাদের স্বভাবের জন্য ইলিশের দাম বেশী। শুধু ইলিশ নয়, দেশের বাজারে যেকোন জিনিসের, ক্রেতার ভীড় দেখে মনে হয়, সেগুলো বোধ হয় ফ্রী দিচ্ছে। আপনি উচ্চ মুল্যে কিনবেন না, এই কথা বলে শেষ করার আগেই আপনার চোখের সামনে আরেকজন উচ্চ মুল্যে জিনিসটি কিনে নিবে। কাজেই ইলিশের দাম বেশী এই নিয়ে হায় হায় করে লাভ নেই। আমাদের মতন এমন অসত পয়সায় ফুটানি করার জাতীর জন্য দশ-পনের হাজার টাকা দামের ইলিশের দরকার আছে।

ইলিশের দাম কমানোর জন্য, ক্রেতার ইচ্ছেই যথেস্ট। কিনতে পারলেও দশ-পনের হাজার টাকা নিয়ে মাছ কেউ কিনবে না। দেশের সব ক্রেতারা এই পন করলেই পনের হাজার টাকার ইলিশ পনের শত টাকায় নেমে আসবে। কিন্তু সেটা তো সম্ভব নয়। উচ্চমুল্য হলেও, আমাদের ক্রেতারা কখনই কেনা বন্ধ করবে না। তাহলে আরেকদিক থেকে এই সমস্যা সমাধান করা যায়। ইলিশ মাছ রপ্তানী বন্ধ করে। দেশের বাইরে কোন ইলিশ যেতে দেওয়া হবে না। এটাও সম্ভব নয়। প্রবাসী বাঙ্গালীদের তো ইলিশ লাগবে। তাছাড়া কলকাতার দাদাদের তো ইলিশ ছাড়া চলেই না। দাদাদেরকে অখুশী করলে উপায় আছে ? কাজেই রপ্তানী বন্ধ করাটাও সম্ভব নয়। অসাধী ব্যাবসায়ীরা যারা কৃত্তিম সংকট তৈরি করে সেটাও বন্ধ করা সম্ভব নয়। কারন আমাদের শিরায় শিরা দুর্নীতি ঢূকে গেছে। দুর্নীতিটাই এখন নীতি।

সব পথ বন্ধ হলেও, একটি পথ কিন্তু এখনও খোলা আছে। সেটা হল, ইলিশ মাছ আমদানী (import)। কথাটা শুনে হাসবেন না। ইউরোপে, মানুষের খাবারের জন্য সমুদ্রের মাছ ধরা হয়। এর অনেক মাছে, ছাল চামড়া ছাড়িয়ে, কেটে, মসলা মাখিয়ে, প্রক্রিয়াজাত করে কৌটায় ভরে বিক্রি করা হয়। এই প্রক্রিয়াটা ইউরোপে অনেক ব্যায়বহুল, কারন ওখানে শ্রমিকের মজুরী বেশী। এই কারনে ওরা মালবাহী জাহাজে এমন লক্ষ টন মাছ চীনে পাঠায়। চীন থেকে প্রক্রিয়াজাত করার পরে মাছ ভর্তি লক্ষ লক্ষ কৌটা আবার একইভাবে মালবাহী জাহাজে ইউরোপে ফেরত যায়। মজার ব্যাপার – এভাবে তাদের খরচ কম হয়।

এই আইডিয়াটা বাংলাদেশের ব্যাবসায়ীরা কাজে লাগাতে পারে। তারা ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যেপ্রাচ্য এমনকি ভারত থেকে ইলিশ মাছ বাংলাদেশে আমদানি করতে পারেন। জী, বাংলাদেশ থেকে যে মাছ ওখানে গেছে, সেগুলোই আবার বাংলাদেশে আমদানী করবে। মজার কথা হল – এভাবে আমদানী করলেও দেশের চেয়ে কম মুল্যে ইলিশে বিক্রি করতে পারবে। দেশে ইলিশের যে দাম, বিদেশ থেকে আমদানী করলে অবশ্যই এর চেয়ে কম দামে ইলিশ পাওয়া যাবে। এতে করে সব দিক থেকেই সুবিধা। দেশ ইলিশ রপ্তানী করে বৈদেশীক মুদ্রা পাবে, সেই ইলিশ আবার এ দেশেই ফিরে এসে স্বদেশী ইলিশের চেয়ে কম দামে বিক্রি হবে। অসাধু ব্যাবসায়ী ও উচ্চমুল্যে কেনা অসাধু ক্রেতাদের সাথে আমরা পেরে উঠব না। কিন্তু এমনভাবে ইলিশ আমদানী হলে, ওরা এমনিতেই চুপসে যাবে। সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে এভাবে ইলিশ আমদানী করার উদ্যোগ নেওয়া উচিত। আমাদের মতন আজব জাতীর জন্য এমন আজব পদ্ধতির খুবই প্রয়োজন।

আমার ফেসবুক---------- এখানে



বিষয়: বিবিধ

১৪৬৯ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

365701
১৪ এপ্রিল ২০১৬ রাত ০৩:২৬
শেখের পোলা লিখেছেন : তারচেয়ে বরং পান্তা ইলিশের মত করে আর কয়েকটি ইলিশ পার্বণ চালু হোক ওটা আঙ্গুর আপেলের মত ডাক্তারী পরামর্শে চলে যাক৷ ধন্যবাদ৷
365712
১৪ এপ্রিল ২০১৬ দুপুর ১২:৫০
ঘুম ভাঙাতে চাই লিখেছেন : ভালই আইডিয়া মন্দ না। তবে যেমনিভাবে ভূমিকম্প শুরু হয়েছে আল্লাহই ভাল জানেন এই ইলিশ খাওয়ার সৌভাগ্য কপালে জুটবে কিনা?
365733
১৪ এপ্রিল ২০১৬ বিকাল ০৪:০৪
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : পুকুরে নাকি ইলিশ চাষ এর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে!!!
365771
১৪ এপ্রিল ২০১৬ রাত ১০:৫৮
আফরা লিখেছেন : ভাল আইডিয়া ----ধন্যবাদ ভাইয়া ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File