আবার আমরা মানুষ হই
লিখেছেন লিখেছেন এলিট ০৪ জানুয়ারি, ২০১৬, ০৮:১৯:১১ রাত
তথ্য প্রযুক্তির এই স্বর্ন যুগে বাংলাদেশকে এখন সারা বিশ্ব চিনে। গার্মেন্টস শিল্প ও ক্রিকেট এর কারনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বজুড়ে আরো বেশী পরিচিত। ২০ বছর আগেও পশ্চিমা দেশগুলোতে বাংলাদেশকে ভারতের পাশে ছোট একটি দেশ বলে পরিচয় করাতে হোত। এখন আর তার প্রয়োজন হয় না। আর ভারত তো অনেক আগে থেকেই বিশ্বে পরিচিত। এত কিছুর পরেও পশ্চিমীদের নাক সিটিকানি কমে না। বাংলাদেশ, ভারত ইত্যাদি নাম শুনলেই একটা কেমন জানি একটা ভাব করে। আইনের কারনে কোন প্রকারের অসন্মান করতে পারেনা ঠিকই, কিন্তু ভারত ও তার আশে পাশের লোকদেরকে কেমন যেন একটা নীম্ন জাঁত মনে করে। আসলে এই জিনিসটা আমরাই তাদেরকে দেখিয়েছি, শিখিয়েছি।
১৯৪৭ সালের আগে বাংলাদেশ ভারত, পাকিস্থান ও বাংলাদেশ একই রাস্ট্র ছিল যা কিনা ভারতবর্ষ নামে পরিচিত ছিল। এখনও এই দেশগুলোকে ভারত উপমহাদেশ বলা হয়। এই ভারতবর্ষ ছিল বিশ্বের সবচেয়ে সমৃদ্ধশালী দেশ। যদিও শিক্ষা ও জ্ঞান চর্চায় ইউরোপের চেয়ে তারা পিছিয়ে ছিল। আর আমেরিকা তো তখন ছিল একটা জঙ্গল। এমনই এক সময়ে, প্রায় সাড়ে পাচ শত বছর আগে কলম্বাস, ইউরোপ থেকে ভারতে যাবার জলপথ আবিস্কার করতে গিয়ে ভুল পথে আমেরিকাতে গিয়ে পৌছে। পরে ভাস্কো দা গামা নামক আরেকজন নাবিক সফলভাবে ভারতে যেতে সক্ষম হয়। এর পরে ব্যাবসা করার ছুতোয় ভারতে ঢুকে ইংরেজরা কিভাবে প্রায় দুই শত বছর দেশটা দখল করে রেখেছিল, সেটা তো সবাই জানে। হ্যা, ইংরেজরা আমাদেরকে অনেক কিছু শিখিয়ে গেছে, সেই সাথে আমাদের কাছ থেকে অনেক সম্পদ নিয়েও গেছে।
ভারতবর্ষ সবচেয়ে সমৃদ্ধ ছিল মোগল আমলে ১৫০০ থেকে ১৭০০ সাল পর্যন্ত। মোগলেরা ছিল বংশ পরম্পরায়, পুরো ভারত বর্ষের রাজা। এছাড়া ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের স্থানীয়, ছোট রাজা ছিল। এমনই একজন স্থানীয় রাজা ছিলেন কুচবিহারের রাজা জিতেন্দ্র নারায়ন। এই রাজার মেয়ে রাজকুমারী গায়ত্রি দেবী পরবর্তীতে জয়পুরের রাজা মান শিং কে বিয়ে করে জয়পুরের রানী হয়ে যান। ছবিতে মৃত বাঘ সামনে নিয়ে যারা দাড়িয়ে আছেন তাদের মধ্যে মাত্র দুজন নারী। ডান পাশে দাঁড়ানো, ফুল হাতা জামা পরা মহিলাটি হলেন সেই গায়ত্রী দেবী। তার পাশে, দুই হাত দিয়ে ব্যাগ ধরে দাঁড়ানো মহিলাটি বৃটেনের রানী এলিজাবেথ। তিনি তখন থেকে এখন পর্যন্ত, আমেরিকা বাদে প্রায় সব ইংরেজ দেশের রানী। এমন বড় একজন রানীর পাশে স্থানীয় রাজকুমারী বা স্থানীয় রানীর দাঁড়ানোর বা ছবি তোলার ভঙ্গী দেখে মোটেও মনে হচ্ছে না যে তাদেরকে ভারতীয় বলে কোনভাবে হেয় করা হোত। তাহলে মানুষকে নাকি চাবুক মেরে নীল চাষ করানো হোত, ইংরেজরা এসে নাকি সব খাজনা নিয়ে যেতো, সাইনবোর্ডে নাকি এমনও লেখা থাকতো - কুকুর ও ভারতীয় প্রবেশ নিষেধ। এমন কেন হোত? কাউকে পাশে বসিয়ে উতসব করছে, কাউকে চাবুক মেরে রক্তাক্ত করছে কেন?
উত্তরটা খুব সহজ, এগুলো সবই শ্রেনী বৈষম্য। আদীকাল থেকেই ছোট বড় সব ক্ষমতাবানেরা নিজেদেরকে একই শ্রেনীর মনে করে। এজন্য তারা একই টেবিলে বৈঠক করে, একই সাথে প্রজাদের উপরে জুলুম করে । এই জুলুমের শুরুটা করেছে স্থানীয় রাজারা, ওদেরকে দেখেই ইংরেজরা সাহস পেয়েছে, ভারতে থেকেই, ভারতীয়কে শেয়াল কুকুরের মর্যাদা দেবার। যে দেশে শাশকেরা প্রজাদেরকে মানুষ মনে করে, সেই দেশে প্রজাদের উপরে জুলুম থাকে না।
আমাদের শাশকেরা (নেতারা) আমাদেরকে কখনোই মানুষ মনে করেনি, এখনও করেনে। বড় নেতারা, যারা কলকাঠি নাড়ে, তাদের জুলুম ঠাকানোর সাধ্য জনগনের কখনোই হয় না। কিন্তু স্থানীয় পাতি নেতার জলুম আমারা ইচ্ছে করলেই ঠেকাতে পারি। এজন্য আমাদের লাগবে সামান্য একটু - ঐক্য। আর এভাবে যদি দেশ জুড়ে, স্থানীয়ভাবে, আমরা পাতি নেতাদের জুলুম ঠেকাতে পারি, তাহলে বড় নেতারা এমনিতেই অকেজো হয়ে যাবে। তারা আমাদেরকে ঠিকই মানুষ বলে মনে করবে। আসুন , আবার আমরা মানুষ হই।
বিষয়: বিবিধ
১৪০০ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন