ছেড়া নোট
লিখেছেন লিখেছেন এলিট ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৮:৪৩:৪২ রাত
এক গ্রামে একজন খুব খারাপ লোক ছিল। তাকে সবাই শাক্ষাত শয়তান বলে ডাকতো। এমন কোন খারাপ কাজ নেই যা সে করেনি। গ্রামের এমন কোন মানুষ নেই যার ক্ষতি করেনি সে। সেই খারাপ লোকটি হটাত করেই একদিন ভাল হয়ে গেল। তার মতন ভাল লোক আর নেই। সে একেবারে শন্যাসী হয়ে পুরাতন বট গাছের নীচে গভীর রাত পর্যন্ত ধ্যান করে।
এমন খারাপ লোকের হটাত করে এমন ভালো হয়ে যাওয়া দেখে গ্রামের সবাই খুশি হল। কিন্তু আসল শয়তান (ইবলিশ) হল নারাজ। তার এমন একজন শিশ্য ভালো হয়ে গেছে, এটা তো তার জন্য দুঃসংবাদ। কি করা যায়। ওই লোক্টিকে পথভ্রস্ট করতে শয়তান এটি সুন্দরী রমনীর ছদ্যবেশ ধারন করল। ক্রমেই বিভিন্ন কথায় কথায় ওই লোকটিকে বিপথে ডাকতে লাগল। একদিন লোকটি সাড়াও দিল। গভীর রাতে বাশ বাগানে তারা অপকর্মে লিপ্ত হল।
অবশেষে শয়তান তার স্বরূপ ধারন করে লোকটিকে হাসতে হাসতে বলতে লাগল, কি রে ? মনে করেছিস এত সহজে ভালো হয়ে যাবি? দেখলি তো তোকে আবার কিভাবে খারাপ পথে নিয়ে এলাম। এই কথা শুনে লোকটি আরো বেশী হেসে জবাব দিল, ওরে, আমি কোনদিন ভালো হইনি। ভাল হওয়ার অভিনয় করেছিলাম মাত্র। মানুষের সঙ্গেতো অনেক অপকর্ম করেছি। আমার খুব ইচ্ছে ছিল শয়তানের সঙ্গে অপকর্ম করার। ভালো হবার অভিনয়টা আমাকে সেই সুযোগ করে দিল।
হ্যা, এমন কিছু মানুষ আছে যে তাদের শয়তানির কাছে খোদ ইবলিশ শয়তানও হার মানবে। তবে সামান্য শয়তানি বুদ্ধি সবার মাথাতেই আছে।
বাংলাদেশে, ব্যাস্ত কোন টিকেট কাউন্টারে যারা কাজ করেন তাদের এক প্রকারের অভিজ্ঞতা হয়ে যায়, কিভাবে ছেড়া টাকা চালিয়ে দিতে হয়। এর একটা সহজ কায়দা আছে। যে কয়টি নোট ফেরত দিতে হবে তার ভেতরে দুটি ছেড়া নোট রাখতে হবে। বেশী ছেড়া নোটটি ভেতরে লুকিয়ে রাখতে হবে আর অল্প ছেড়া নোটটি রাখতে হবে সবার উপরে। এবার টাকাগুলো কাস্টমারের হাতে দিতে হবে। কাস্টমারে চোখে প্রথমেই অল্প ছেড়া নোটটি পড়বে। সে সেটা বদলাতে চাইবে। প্রথমে একটু না, না, বলে ওই নোটটি বদলে দিতে হবে। আর ব্যাস্ত কাস্টমার ওর চেয়ে বেশী ছেড়া নোটটি নিয়ে দৌড় দিবে।
এমন ধরনের শতানি বুদ্ধির মানুষ সবখানেই আছে। তবে যাদের কাছে ইবলিশ হার মানবে তাদেরকে বেশীরভাগ ক্ষেত্রে রাজনীতিতেই পাওয়া যায়। সাধারন মানুষকে ধোকা দিয়েই তারা নেতা হয়। ভোটের আগে তাদের হটাত করে ভালো হয়ে যাওয়া আর ভোটের পরে আবার স্বরূপে ফিরে আসাটা তো এখন জনজনের সয়ে গেছে। ক্ষমতায় থেকেও নেতারা বিভিন্ন ধরনের বুদ্ধি ব্যাবহার করে। এসব বুদ্ধিকে আসলে কুবুদ্ধি বলা উচিত। কিভাবে বিরোধী দলকে দমান করা যায়, কিভাবে প্রশাশনকে দলিয় স্বার্থে ব্যাবহার করা যায়, কিভাবে সরকারের কোষাগার খালি করা যায় ইত্যাদি কাজে নেতারা একেবারে সিদ্ধহস্ত।
এর সাথে সম্প্রতি আরেকটি জিনিস যোগ হয়েছে। সেটা হল জনগনের পকেট থেকে কায়দা করে কিভাবে টাকা কেড়ে নেওয়া যায়। এর প্রয়োজনটাও তারা সৃস্টি করেছে। বিভিন্ন কায়দায় সরকারের কোষাগার খালি করতে করতে এক সময় কোষাগার সত্যই খালি হয়ে যায়। তখন এই খালি কোষাগার থেকে আর নেওয়ার মতন কিছুই থাকে না। তাহলে নেতারা চলবে কিভাবে? এমতবস্থায় একটাই উপায় আছে, খালি কোষাগার ভর্তি কর। কিভাবে ভর্তি করবে? জনগনের কাছ থেকে টাকা নিবে। এই টাকাটা নেওয়া হবে বিভিন্ন সরকারী ফি ও বিভিন্ন ট্যাক্সের নামে। জনগন এই বোঝা সইতে পারুক আর না পারুক, নেতাদের তাতে কি?
গত কয়েক বছরে এভাবেই বেড়েছে সরকারি ফি আর ট্যাক্স। আন্তঃজাতিক বাজারের চেয়ে তিনগুন বেশী মুল্যে জ্বালানী তেল কিনতে হয় বাংলাদেশে। গ্যাশ ও বিদ্যুতের রয়েছে উচ্চমুল্য। বিভিন্ন নতুন ট্যাক্স বসানো হচ্ছে। সরকারি ফি বাড়ানো হয়েছে, যেমন পাসপোর্ট। তবে সবকিছুতে মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে যেই খাতে সেটা হল -ট্রেড লাইসেন্স- । এই ক্ষেত্রে সরকারী ফি ৫০০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১১,০০০ টাকা। মুল্যবৃদ্ধি ২২ গুন !!
তৃতীয় বিশ্বের দেশ হিসাবে বাংলাদেশের ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বা ট্রেড লাইসেন্স বেশ সুবিধাজনক ছিল। বছর দশেক আগেও মাত্র ৫০০ টাকা দিয়ে নতুন ব্যাবসার লাইসেন্স পাওয়া গেছে। কয়েক বছর আগেও খরচ ছিল মাত্র ১৫০০ টাকা। সেই খরচ এখন ১৫ হাজার টাকায় ঠেকেছে। এই খরচটা কিন্তু প্রতি বছরই লাগে। একটা ছোট ব্যাবসায়ীর পক্ষে শুধু লাইসেন্স এর জন্য এই টাকা দেওয়া কস্টকর। এর সাথে তেল গ্যাস বিদ্যুৎ সহ প্রত্যেক জিনিসের মুল্যবৃদ্ধি তো আছেই। মানুষে বেচে থাকতে কেমন কস্ট হচ্ছে সেটা একমাত্র ভুক্তোভোগীই জানে।
লক্ষ লক্ষ টাকা টিউশন ফী দেওয়া ছাত্ররা কয়েক হাজার টাকা ভ্যাট না দেবার জন্য যে আন্দোলন করেছিল সেটা ছিল দেখার মতন। সেই স্নদোলনের মুখে সরকার ভ্যাট বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে। এসব দেখে আমার মতন দেশের বেশীরভাগ মানুষই মনে হয়েছে যে, এই বুঝি জনগনের জয় হয়েছে। কিন্তু ঘটনার পেছনের ঘটনাটা তো আর কেউ ঘাটিয়ে দেখছে না।
রাজনীতিবিদেরা, মাত্র ৭.৫% ভ্যাট রেখেছে সবার উপরে, আর ভেতরে রেখেছে উচ্চমুল্যের বিদ্যুৎ, গ্যাস, পেট্রল, ও অবিশ্বাস্য বর্ধিত ফি। ছাত্র ও জনতা ওই ভ্যাট নিয়ে দিন রাত ভ্যাট-ভ্যাট করেছে। ভ্যাট বাতিল করে বিজয়ীর বেশে দৌড়ে বাড়ি ফিরেছে। সাথে করে নিয়ে গেছে আরো বেশী উচ্চমুল্যের জিনিস। ঠিক যেমনটি উপরের বলা ঘটনাতে কাস্টমারেরা ছোট ছেড়া নোটটি বদলে নেয় ঠিকই কিন্তু সাথে করে আরো বেশী ছেড়া নোটটি নিয়ে বাড়ি ফিরে যায়।
আমার ফেসবুক ---------- এখানে
বিষয়: রাজনীতি
১৩৫৩ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জনগণের হাড়-মাংস পিষে কিমা না বানানো পর্যন্ত এরা থামবেনা। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন