সংক্রামিত অপরাধ
লিখেছেন লিখেছেন এলিট ০৭ আগস্ট, ২০১৫, ০৪:০০:৪৭ রাত
আমাদের দেশে একে সময় একেক ধরনের হুজুগ ওঠে। কবে যেন শুরু হয়েছিল পাখী ড্রেস। ব্যাস, সেই পোষাক না পেয়ে কারো সংসার ভেঙ্গে গেল, কারো জীবন চলে গেল। এর আবার কিছদিন পরে পত্রিকা খুললেই চলন্ত গাড়িতে ধর্ষনের খবর পাওয়া যেত। যারা নিয়মিত পত্রিকাতে চোখ বুলান তারা হয়ত লক্ষ্য করবেন যে কোন নতুন এক ধরনের অপরাধের খবরে যখন দেশজুড়ে তোলপাড় হতে থাকে ঠিক সেই সময়ই দেশের আনাচে কানাচে থেকে একই ধরনের খবর পাওয়া যায়। মানুষের মধ্যে ওই অপরাধের প্রবনতাটা কিভাবে যেন বেড়ে যায়। পত্রিকাতে খবর আসলে অমুক জেলাতে চলন্ত গাড়িতে ধর্ষন হয়েছে। ব্যাস, এই নিয়ে পত্রিকাতে, বলগে, ফেসবুকে লেখালেখি চলে। এই চলতে চলতেই খবর পাওয়া যায় শুধু ওই জেলাতেই নয়, অন্য অমুক তমুক জেলাতেও চলন্ত গাড়িতে ধর্ষনের ঘটনা ঘটেছে।
সিলেটে একটি বালককে পিটিয়ে মারা হল। দেশব্যাপী চলেছে বিক্ষোভ। ঠিক তার কয়েক দিনের ভেতরেই অন্য কয়েকটি জেলা থেকে একই ধরনের হত্যার খবর পাওয়া গেছে। সম্প্রতি আলোচনা চলছে খুলনায় নিহত ছেলেটিকে নিয়ে। আমার পয়েন্টটি বোঝাতে পারছি কিনা জানি না। অপরাধ যে কোন সময়ই হতে পারে। অপরাধীরা সময় দেখে নয়, বরং সুযোগ দেখে অপরাধ করে। কিন্তু যখন একটা অপরাধের কারনে দেশজুড়ে তোলপাড় চলে তখন তো মানুষ সংযত হবার কথা। সিলেটে পেটাতে গিয়ে একটি ছেলেকে মেরেই ফেলা হল। এটা দেখে তো, যারা পিটিয়ে অভ্যস্ত তাদের সতর্ক হয়ে যাবার কথা। কে জানে কখন কে মরে যায়। তার চেয়ে না পেটানোই ভালো। এমন ভেবেই মানূষের সংযত হবার কথা।
কিন্তু সেতা হয়ে হচ্ছে উল্টো। সিলেটে অমুক ছেলেকে পিটিয়ে মেরেছে। দেখাদেখিতে নারায়নগঞ্জেও একইভাবে পিটিয়ে মারলো। এটা দেখে আরো উতসাহ পেয়ে অল্প কয়েকদিনের ব্যাবধাবনে, অন্য কয়েকটি জেলাতেও পিটিয়ে বালক হত্যা করেছে। সবশেষে এই তালিকাতে যোগ হল খুলনার ছেলেটি। এক গ্যারেজের কাজ ছেড়ে অন্য গ্যারেজে কাজ নেওয়ার অপরাধে আগের গ্যারেজের মালিক, ওই ছেলেটির মলদ্বার দিয়ে পাম্পের বাতাস ঢুকিয়ে, তাকে মেরেছে। এমন আইডিয়া তারা মাথার কোন অংশে রাখে সেটা নিয়ে গবেষনা হতে পারে।
এই ধরনের ঘটনাগুলি বিশ্লেষন করলে কয়েকটি মিল পাওয়া যায়। এক, মেরে ফেলার উদ্দেশ্য নিয়ে কেউই আঘাত করেনি। মারতে মারতে একপর্যায়ে মরে গেছে, বা পরে চিকিতসাধীন অবস্থায় মরে গেছে। দুই, এই জিনিসটা কেউই একা করেনি, কয়েকজন বন্ধু বা সহকর্মী নিয়ে মজা করে এসব ছেলেদেরকে অমানষিক যন্ত্রনা দিয়েছে। তিন, এমন ঘটনা প্রকাশ্য দিবালোকেই হয়েছে, আশে পাশের লোকেরা তামাশা দেখেছে। চার, এসব অপরাধীরা ধরা পড়লেও আসলে তাদের কি বিচার হবে, এবং কবে হবে , সে বিষয়ে তেমন নিশ্চয়তা নেই। এই চারটি বিষয় যখন মানুষ চোখের সামনে দেখে, তখন আর অপরাধ সংযত করার প্রয়োজনীয়তাই অনুভব করে না।
কয়েকজন মিলে অসহায় একটি বালককে পিটিয়ে বা শারিরিক যন্ত্রনা দিয়ে মজা পায়, তাও আবার প্রকাশ্য দিবালোকে, জনসম্মুখে। এমন বিকৃত মানষিকতার লোকের যায়গা হয় জেল নতুবা পাগলা গারদ। তাছাড়া রাস্তায় জটলা পাকিয়ে এমন পেটানো দেখে যেসব জনগন মজা নেয়, তাদের স্থান পাগলা গারদ। আসলে কয়েকজন মিলে একটি বালককে মারছে, আর কয়েকশ লোক সেটা দাঁড়িয়ে দেখে মজা নিচ্ছে, এমন দৃশ্য পাগলা গারদেও হয় না। এর আগেই গার্ড , সিকিউরিটি ইত্যাদি এসে পরিস্থিতি সামলে নেয়। আমরা এতটাই নস্ট হয়ে গেছি যে, আমাদের সমাজের অবস্থা পাগলা গারদের চেয়েও খারাপ। আর এই পরিস্থিতির জন্য সবচেয়ে বড় দোষ হল দেশের আইন শৃঙ্খলা ব্যাবস্থার। অপরাধী দৃস্টান্তমুলক সাজা পায় না। যার ফলে অন্য অপরাধীদের মনে সাজার ভয় নেই। তারা ইচ্ছে মতন অপরাধ করে। যে মৌসুমে যেটার প্রচলন, সেটা বেশি করে করে।
আইন শৃঙ্খলার শক্ত ব্যাবস্থা আমাদের দেশে কোনদিনই ছিল না। আমাদের রয়েছে স্বজন প্রিতির এক বিরাট রোগ। নিজের লোকের সাত খুন মাফ। এমন প্রিয় অপরাধীদেরকে ক্ষমা করতে করতে আমরা আজকে এই যায়গায় এসে ঠেকেছি। বিশ্বের মহত শাশকেরা ইতিহাসে, তাদের আইন শৃঙ্খলার দৃস্টান্ত রেখে গেছেন। আইন সবার জন্য সমান। শাশক তার নিজের ছেলেকেই মাফ করেননি। এভাবেই শক্ত হাতে আইনকে ধরে রাখতে হয়। ঘুষ, দুর্নীতি আর স্বজন প্রীতি দিয়ে আইন শৃঙ্খলা ধরে রাখা যায় না। আর সেই চেস্টা করলে এমন পাগলা গারদ টাইপের পরিস্থিতি হয়ে যায়।
দু-এক বছর আগে আমেরিকাতে একটি বাংলাদেশী ২২ বছরের ছেলের, ৩০ বছরে কারাদণ্ড হয়েছে। ছেলেটি কি করেছেল? আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থার একজন লোক ইসলামিক জঙ্গীর ছদ্যবেশে তার সাথে যোগাযোগ করে। এই আলাপচারিতাতে ছেলেটি তার জঙ্গি সমর্থন ও পাশ্চাত্য বিরোধীতা প্রকাশ পায়। এর পরে জঙ্গী ছদ্যবেশী গোয়েন্দা লোকটি, ছেলেটিকে এক ট্রাক নকল বোমা এনে দেয়। ছেলেটি ব্যাস্ত রাস্তায় ঠাকটি পার্ক করে অদুরে একটি হোটেল রুম থেকে রিমোট কন্ট্রলে সেই বোমা বিস্ফোরন করতে চেস্টা করে। সেখানেই পুলিশ তাকে ধরে। ঘটনাটি পুরোটাই ছিল ছেলেটির জন্য ফাদ। এই ফাদে পড়েই সে নকল বোমা হামলার চেস্টা করে। ওটা যদি আসল বোমা হোত, এবং সেটা বিস্ফোরন করা যেতো তাহলে অনায়াসে কয়েক হাজার লোক মারা যেতো । কিন্তু সবকিছুর পরেও , ছেলেটি কিন্তু কিছুই করেনি। সে শুধু পরিকল্পনা করেছে ও একটি ব্যার্থ চেস্টা করেছে। এ কারনেই তার ৩০ বছরের জেল হল। বিচারক বলেছেও যে রায় দিয়েছে আমেরিকার নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে। নিরাপত্তাটা হল - ওই ছেলেটি নকল বোমা ফাটাতে চেয়েছে তাতেই ৩০ বছরের কারাদণ্ড। এই ভয়েই কেউ আসল বোমার কথা মনেও আনবে না। এভাবেই আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করে।
আমাদের দেশে যারা পিটিয়ে বালক হত্যা করে, তাদেরকে তেমন দৃস্টান্তমুলক শাস্তি দেওয়া উচিত। জনসম্মুখে তাদেরকে অভিনব কায়দায় শাস্তি দেওয়া উচিত। মানুষ এখন অপরাধের খবরই পড়ে । সেই অপরাধে কার কখন শাস্তি হছে সেটা আমাদের জানা হয় না। তাছাড়া, নীরব দর্শক যারা, এমন শিশু পেটানো দেখে চুপ থাকে তাদেরও মুখ খুলে যাবে। তারা তখন শাস্তির উদাহরন দেখিয়ে সাবধান করে দিবে। পেটাতে নিষেধ করবে। আশা করি আমাদের আইন-শৃঙ্খলার একদিন উন্নতি হবে এবং এসব অপরাধ বিলুপ্ত হবে।
আমার ফেসবুক ---------- এখানে
বিষয়: বিবিধ
১৩২৯ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আর যাদেরকে মারা হয়েছে তাদের অভিভাবকদের এত টাকা নেই যে প্রশাসনকে ম্যানেজ করতে পারবে , মামলা চালাতে পারবে ।
৪ বছর আগে নোয়াখালীতে পুলিশের উসকানীতে এক ছেলেকে গনপিটুনীতে মারা হয়েছিল । মামলা করা হলে পুলিশে সেই মামলার তারিখ ৫০ বারেরও বেশী পিছিয়ে নিয়েছিল । পরে বাধ্য হয়ে বাদীর লোকেরা কিছু টাকা নিয়ে মামলা তুলে নেয় ।
অপরাধীদের অঢেল টাকা আছে পুলিশকে ম্যানেজ করার এবং যুগের পর যুগ মামলা চালাবার । রাজনদের বাবাদেরকে সেটা আছে ?
আর পুলিশ প্রশাসন যদি অপরাধীদের কাছ থেকে ভাল টাকা পায় তাহলে তারা কেন কষ্ট করে মামলা চালাবে বাদীর হয়ে ? বড় বড় উকিল যারা আইনের মারপ্যাঁচ ভাল জানে তাদেরকে কি ফিস দিতে পারবে রাজনের বাবা ?
রাজনদেরকে মারার সময় আশে পাশের লোকেরা মজা চাখছিল । ঠিক এরকম মজা চেখেছিল যখন বিশ্বজিতকে কোপানো হচ্ছিল , সেখানে থাকা ফটো সাংবাদিকেরা । এদের পথিকৃত হলেন নিচের ছবির ফটোগ্রাফার
''পাবলিক খাবে টাইপ '' এই ছবি তোলায় মশগুল ছিলেন । বাচ্চাটির কি হতে যাচ্ছে এটা তার চ্যাপ্টারে ছিল না । এই ছবি তুলে উনি পুলিতজার বাগিয়ে ছিলেন ।
আমাদের সমাজের মানুষগুলো দিন দিন যেন অমানুষ হয়ে যাচ্ছে।
রাষ্ট্র প্রধান থেকে চকিদার পর্যন্ত নিজ স্বার্থর মধ্যে ডুবে আছে। মনুষত্ব হারিয়ে যাচ্ছে।
যেখানে আপন মাতা পিতা সন্তানদের হত্যা করে চলছে, সেখানে আবার নিজ সন্তানেরাও আপন মাতা পিতাকে হত্যায় ব্যস্ত হয়ে যাচ্ছে।
রাষ্ট্রপ্রধান থেকে কুলি দিন মজুর পর্যন্ত সবাই আজ হত্যার মহোৎসবে ব্যস্ত, নিজের প্রতিকূলে কোন মতামত বা কর্ম হলেই হল, হত্যাশ আদেশ দিতে সামান্যতম চিন্তাও করছে না। যেন মাছি মশা হত্যা করছে।
এক কথায় মাবন থেকে আজ মানবতা হারিয়ে যাচ্ছে।
সুন্দর পোষ্টটির জন্য শুকরিয়া।
মন্তব্য করতে লগইন করুন