ওদের কি পরিনিতি হবে
লিখেছেন লিখেছেন এলিট ৩১ জুলাই, ২০১৫, ১১:২৬:০১ রাত
রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী, মানবতা বিরোধী অপরাধী এসব যে নামই দিক না কেন। এমন অপরাধী সারা দেশে মাত্র ডজন খানিক খুজে পাওয়া গেছে। তাও আবার প্রায় সবই জামায়াতে। এত বড় যুদ্ধ হল, এত লক্ষ লোক শহিদ হল আর যুদ্ধাপরাধী মাত্র এক ডজন। মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচারে যে কতটা মানবিক হচ্ছে সেটা অন্ধ-বধির আওয়ামী লীগ ভক্তও জানে। আওয়মী লীগের নেতা, কর্মী, সমর্থক সবাই আওয়ামী লীগের তালে ঢোল বাজালেও তারা সবাই জানে আওয়ামী লীগের কাজগুলো কতটা সঠিক হচ্ছে। যে কোন আওয়ামী সমর্থক আমার সাথে দ্বীমত প্রকাশ করতে পারেন, আমার সঙ্গে তর্ক করতে পারেন, আমাকে তর্কে হারিয়েও দিতে পারেন। কিন্তু নিরপেক্ষভাবে নিজেকে প্রশ্ন করলে, নিজের বিবেকের কাছে নিজেই হেরে যাবেন। যাই হোক এটা আমার আজকের লেখার বিষয় নয়।
সবাই জানে, শত বছর পরে হলেও, এই মানবতা বিরোধী বিচারের খেসারত সুদে-আসলে আওয়ামী লীগকে দিতে হবে । ঠিক বা বেঠিক যাই হোক না কেন। এটা জেনেই আওয়ামী লীগ এই এই পথে চলছে। তাদের পরিনতি সুস্পস্ট। কিন্তু যারা সব সময় সাথে থাকে, সেসব পরগাছাদের পরিনতি কি হবে? যারা বঙ্গবন্ধুর লাশ সিড়ির কোনায় রেখে মন্ত্রী হয়েছিল, যারা বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুতে ট্যাঙ্কের উপরে নেচেছিল, যারা বঙ্গবন্ধু কে প্রকাশ্য গালিগালাজ করত, যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্থানীদের মুরগী সরবরাহ করত, যারা পাকিস্থান সরকারের বড় বড় পদবীতে ১৬ই ডিসেম্বরের আগ পর্যন্ত চাকরী করেছে , যারা বংশীয় রাজাকার ছিল, তাদের কি হবে? এদের সবাইকেই তো আওয়ামী লীগের আশে পাশে খুব ভালো ও সুবিধাজনক অবস্থানে দেখা যায়। এসব পরগাছাদের কি পরিনতি হবে? আসলে, এদের পরিনতি দেখতে বেশী দেরী করতে হবে না। রাজনীতির খেলা যেভাবে চলছে, সেটা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এই নাটকের এক পর্ব পরেই তারা আসছে।
ছোট একটা গল্প বললে বিষয়টা স্পস্ট হবে। একজন অবস্থাপন্ন চাষী, একদিন বিকেলে তার আখের ক্ষেতে পরিদর্শনে গেছে। হটাত কেমন যেন আওয়াজ শুনল। কাছে গিয়ে দেখে তিনজন বালক আখ ভেঙ্গে খাচ্ছে। আখ খাচ্ছে, সেটা সমস্যা নয়, সমস্যাটা হল মাটিতে আখের ছড়াছড়ি। কতগুলো গাছ কেটেছে তা কে যানে। ওরা যা খেতে পারবে তার ১০ গুন নস্ট করছে। এই দৃশ্য দেখে চাষীর মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। কিন্তু মাথা ঠান্ডা রেখে তাদের কাছে গেল। ওরা পালাতে যাচ্ছিল। ওদের অভয় দিল , অসুবিধা নেই। ওরা তিনজন বালক দাড়িয়ে গেল। এবার চাষি জিজ্ঞেস করল - তোমরা কারা? উত্তরে জানা গেল একজন এই গ্রামেরই ছেলে, আরেকজন পাশের গ্রামের ও আরেকজন দুরের গ্রামের।
চাষি তখন বলল। ও আমার গ্রামেরই ছেলে, আরেকজন পাশের গ্রামের ছেলে। ওদের অধিকার আছে। কিন্তু তুমি বাপু দূরে গ্রাম থেকে কোন সাহসে এখানে এমন আখ ভাংতে এসেছ। তোমার সাহস তো মন্দ নয়। দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা। এই বলে ওই দুরের গ্রামের বালকটিকে আখের লাঠি দিয়ে বেশ কয়েক ঘা দিয়ে তাড়িয়ে দিল। বাকী দুজন বালক চেয়ে চেয়ে দেখল। এর পরে চাষী, বাকী দুজনকে বল। আচ্ছা তোমাদের একজন তো আমার গ্রামের ছেলে। তুমি তো আমার ভাই। এস আমার পাশে দাঁড়াও। আরেকটি ছেলেকে উদ্দেশ্য করে বলছে - ও তো আমার ভাই। কিন্তু তুমি তো বাপু পাশের গ্রাম থেকে এসেছে। আমার ভাই আমার ক্ষেতে আখ খেতেই পারে, কিন্তু তুমি এলে কোন সাহসে? এই কথা বলে তাকেও বেশ কয়েক ঘা দিয়ে তাড়িয়ে দিল। সদ্য ভাই ছেলেটিও চেয়ে চেয়ে দেখল। এর পরে ওখানে দাঁড়িয়ে আছে, চাষী ও তার পাশে ওই ছেলেটি একলা। এবার চাষির আর কোন কথা নেই - তোর কত বড় সাহস তুই আমার ক্ষেতে লোকজন নিয়ে আখ ভাঙ্গিস - এই বলে ছেলেটিকে একলা পেয়ে সবচেয়ে বেশী মারল।
এই গল্পটিতে দুটি লক্ষ্যনিয় বিষয় আছে। এক, তিনজনের বিচার একসাথে করতে গেলে, চাষী একা ওই তিনজনের সাথে পেরে উঠত না। এজন্যই ওদের কাউকে দলে টেনে নিয়ে ওদের একতা নস্ট করে দিয়েছে। দুই, ওদের বন্ধুকে পিটিয়েছে, কোন প্রতিবাদ করেনি, ফলে সবশেষে সবচেয়ে বেশী শাস্তি তার কপালেই জুটেছে। একটু সহজভাবে চিন্তা করলেই আওয়ামী লীগের বিচার ও তার পেছনের রাজনীতি এই গল্পটির সাথে মেলাতে পারবেন। প্রথমে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার দিয়ে শুরু করেছে, এতে বিএনপির ও পরগাছাদের সমর্থন ছিল, জামায়াত চুপ ছিল। এর পরে জামায়াতের নেতাদের বিচার, এতে পরগাছাদের সমর্থন ছিল, বিএনপি চুপ ছিল। এর পরে আসবে বিএনপির বাঘা নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের বিচার, এতে পরগাছাদের সমর্থন থাকবে, জামায়াত চুপ থাকবে । সব শেষে ওই পরগাছাদের সবচেয়ে করুন পরিনতি হবে - সবাই চুপ থাকবে।
রাজনীতির সবচেয়ে বড় সুত্র হল - সম্পুর্ন ঝুকীমুক্ত থাকা। ক্ষমতায় টিকে থাকার পথে যে সব ঝুকী আছে, আওয়ামী লীগ সেগুলো একে একে সব শেষ করবে। বঙ্গবন্ধুর খুনীরা যেমন বিদেশী পালিয়ে থেকেও রেহাই পায়নি। ঠিক তেমনি পরগাছারা হয়ত আচলের নীচে লুকিয়ে আজকে আপন লোক হয়ে গেছে। সময় এলে সবচেয়ে বড় খড়গটা ওদের ঘাড়েই পড়বে। কেউই রেহাই পাবে না।
আমার ফেসবুক ---------- এখানে
বিষয়: রাজনীতি
১৪৬৩ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
চমৎকার সুখপাঠ্য পোষ্ট।
রাষ্ট্রীয় পরিসরে রাজনৈতিক ভবিষ্যত নিয়ে যে আলাপ-আলোচনা, তাতে আপনার এ গল্প ও এর মোরাল নিশ্চয়ই সরকারের বিপক্ষে যারা আছে তাদের জন্য আশার সঞ্চার করবে, শক্তি যোগাবে। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় যারা নিজের মন, মগজ বিক্রিকরে অন্যায় ও অবিচারের মধ্যে ডুবে আছে তাদের সচেতন করবে এবং এক্সিট নিয়ে ভাবনা আনবে।
কিন্তু আমার ব্যাক্তিগত আন্ডারস্ট্যান্ডিং হতে আমি মনে করি - আজকের বাংলাদেশ ও এর তথাকথিত পলিটিক্স (মিডিয়ায় ইদানিং অনেক কসরৎ করে সে পলিটিক্স ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়) এর কোন কিছুই আসলে বাংলাদেশের ভিতরে নেই - যা কিছু আমরা দেখছি - ত মূলতঃ ফানুস।
সো আমি মনে করি না আগামীতে কৃষক সেজে দেশের ভিতরের কেউ বালকদের শাস্তি নিশ্চিত করবে। বরং আমি দেখি দেশটিকে একটি সিন্ডিকেটেড ইভিল শক্তি - হাসিনা ও আওয়ামীলীগকে ব্যবহার করে সিস্টেমেটিক্যালী রাসুলুল্লাহ সঃ এর সেই হাদীসের ক্ষেত্র হিসাবে প্রস্তুত করছে - যে হাদীসে এ দেশের মানুষকে শুধু মাত্র বাঁচার জন্য হিন্দ এর বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরতে বাধ্য করবে অচিরেই।
আর তার আগে যদি কাউকে কৃষক সাজতেই হয় তবে সে কৃষক অন্যায় ভাবে বর্ডারের ঐ পাড় হতেই আসবে এবং নিজগ্রামের বালক হিসাবে আওয়ামীলীগকেই সবার চেয়ে বেশী মার খেতে হবে।
আল্লাহ ভাল জানেন।
বিরোধীরা ক্ষমতায় এলে তো তাদের আরও পোয়াবারো।
মন্তব্য করতে লগইন করুন