চেতনা বিলাস
লিখেছেন লিখেছেন এলিট ০৩ জুলাই, ২০১৫, ১১:৪৪:৪৪ রাত
পড়, মুখস্ত কর, পরীক্ষার খাতায় লিখে এসো। এভাবেই ছাত্র জীবন কেটে যায় প্রত্যেকটি বাংলাদেশীর। এই প্যাচে পড়ে বোঝাটা আর হয়ে ওঠে না। আর যারা বোঝে বা বুঝতে চায় তারা পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে পারেনা। অন্য সবার মতন, মুখস্ত ও বোঝার টানা হেঁচড়াতে ছাত্রজীবন কেটেছে আমারও। সেই হাই স্কুল থেকে অনেক প্রশ্ন তাড়া করে ফেরে, এখনও। এরই একটা ছিল - এমন দেশটি কোথাও খুজে পাবে নাকো তুমি। সেই ছোটবেলা থেকে শুনে এসেছি বাংলাদেশের প্রকৃতিক সৌন্দর্য নাকি বিশ্বের সেরা। সকল দেশের রানী নাকি আমার জন্মভুমী। এই কথা যে কবি লিখেছে, যেসব শিক্ষিত লোকেরা এই কবিতা পড়েছে, যেসব শিক্ষকেরা আমাদেরকে এসব শিখিয়েছে তাদের মধ্যে একজনেরও কি বাংলাদেশের বাইরে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি? আচ্ছা স্বচক্ষে না দেখলেও সিনেমা, নাটক কিংবা অন্তত ছবিতে তো অন্য কোন দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখেছে। এসব দেখে কি তারা বোঝেনি, যে সব দেশেরই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রয়েছে। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিশ্বের সেরা নয়। কেন তারা আমাদেরকে ভুল বুঝিয়েছে, ভুল শিখিয়েছে ?
ঠিক এমনই আরেকটি জিনিস আমরা ভুল শিখেছে। সেটা হল রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা। প্রায় সব দেশই রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু আমাদের মনে এমন একটা ধারনা বদ্ধমুল হয়ে গেছে যে মনে হয়, শুধু আমরাই রক্ত দিয়েছি। মজার ব্যাপার, এই স্বাধীনচেতা জাতির স্বাধীনতা ইতিহাসটাই নেই। প্রায় অর্ধ শাতাব্দি পরে এসেও স্বাধীনতার জনক, ঘোষক ইত্যাদি নিয়ে দ্বন্দ হয়। কে ছিল প্রথম প্রেসিডেন্ট সেটা নিয়ে দ্বন্দ হয়। স্বাধীনতার ইতিহাস বলে কিছু থকলে এমন হোত না।
লক্ষ্য করে দেখুন, ইসলামের ইতিহাস রয়েছে। কোন যুদ্ধে কতজন অংশগ্রহন করেছে, কতজন নিহত হয়েছে এমন বিস্তারিত ঘটনা আছে ইতিহাসে। কিছু বর্ননা তো এমন যে, পড়ে মনে হয় এই তো সেদিনের ঘটনা এটি। অথচ সেই ঘটনাগুলো ঘটেছে দেড় হাজার বছর আগে। ইংরেজ বাহীনি পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজুদ্দৌলাকে পরাজিত করে। তখন নবাব কি বলেছিলে, কে তার সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করেছিল, কতজন যুদ্ধ করেছিলে, যুদ্ধের মধ্যে কি হয়েছিল ইত্যাদি সবই বিস্তারিত আছে ইতিহাসে। এই ঘটনাগুলো ঘটেছিল ২৬২ বছর আগে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে কি হয়েছিল, কে কি করেছে ইত্যাদি সবই ইতিহাসে আছে। এই ঘটনা ঘটেছে ৬৫ বছর আগে। এই ইতিহাসগুলো সবই সুস্পস্ট। এ নিয়ে কোন বিতর্ক নেই।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস দেখুন। "পাকিস্তান আমাদের উপরে অত্যাচার করত। বঙ্গবন্ধু আমাদের নেতা ছিলেন। তার আহবানে বাংলার মানুষ মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে। পাকিস্তান বাহীনি ২৫ মার্চ রাতে হামলা চালায়। বঙ্গবন্ধুকে বন্দী করে। পাকিস্তান বাহীনি গনহত্যা, ও ধর্ষন চালায়। দলে দলে মানুষ ভারতে পালায়। ভারত আমাদেরকে অস্ত্র ও প্রশিক্ষন দিয়ে সহযোগীতা করে। এর পরে ১৬ই ডিসেম্বর আমরা বিজয় ছিনিয়ে আনি।"
উপরের প্যারাতে যা লিখেছি এটাই হল আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। এর বেশী আপনি আর কিছুই জানেন না। জানলেও, আপনার জানাটা সবার কাছে গ্রহনযোগ্য নয়। "মুক্তিযুদ্ধ কেন হয়েছিল?" এই প্রশ্নের উত্তর কি আপনি জানেন? দেশের হাইকোর্টের রায় দিয়েছে "স্বাধীনতার ঘোষনা করেছেন বঙ্গবন্ধু"। তিনি কোন তারিখে, কোথায় বসে স্বাধীনতার ঘোষনা দিয়েছেন সেটা কি আপনি জানেন? আরো লক্ষ্য করুন, কোন দেশ যেদিন স্বাধীন হয়্ সেই দিনটি হল স্বাধীনতা দিবস। আমরা স্বাধীন হয়েছি ১৬ই ডিসেম্বর। তাহলে ২৬ এ মার্চ কিভাবে স্বাধীনতা দিবস হয়? পাকিস্তান আমাদের কাছে আত্মসমর্পন করার সময় একটি দলিলে সই করেছিল। সেই দলিলটি এখন কোথায় আছে? এসব প্রশ্নের কোন উত্তর পাওয়া যায় না। কারন আমাদের কোন ইতিহাস নেই। এগুলো তো সাধারন প্রশ্ন। এমন অনেক প্রশ্ন আছে যেগুলো জিজ্ঞেস করলেই মার খেতে হবে। আর এই কারনেই আমাদের কোন ইতিহাস নেই। মাইরের ভয় সবারই আছে।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস হারিয়ে যায়নি, জোর করে, কায়দা করে গোপন করা হয়েছে। ইতিহাসের বদলে আমাদেরকে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। এই চেতনা জিনিসটা কি? উদাহরনঃ মনে করুন আপনি ক্রিকেট খেলায় বাংলাদেশ দলের ভক্ত। রঙ মেখে খেলার মাঠে লাফালাফি করেন। কিন্তু ক্রিকেট খেলাটাই বোঝেন না। বল, রান ওভার ইত্যাদি কিছুই চেনেন না। যারা খেলাটা বোঝে তারা আপনাকে যা বলে সেটাই আপনাকে মেনে নিতে হয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জিনিসটা হল কিছুটা এই রকম। মুক্তিযুদ্ধ কেন হল, কিভাবে হল এবং সর্বপরি ফলাফল কি হল, সেটা আমরা বুঝি না। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের প্রতি আবেগ ঠিকই আছে। আমাদেরকে নেতারা যা বোঝায়, সেটাই বুঝি ও মেনে নেই। আমাদের মতন এমন অসচেতন কিন্তু চেতনাবিলাসী জাতি আর কোথাও নেই। হ্যা, কবি যথার্তই বলেছেন - এমন দেশটি কোথাও খুজে পাবে নাকো তুমি।
আমার ফেসবুক ---------- এখানে
বিষয়: বিবিধ
১২৮৯ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
শ্রদ্ধেয়
এই পোষ্টটি অনেক ভালো লেগেছে । অনেক ধন্যবাদ । আশা করি এই রকম পোস্ট আপনার কাছ থেকে আরো পাবো । জনপ্রিয় নিউজ সাইট http://www.onn24.com এ আমি চিফ রিপোর্টার হিসেবে দায়িত্বরত । আমাকে আপনার লিখাগুলো পাঠাবেন । আমি তা প্রকাশনার ব্যাবস্থা করবো। আমার ইমেইল
মন্তব্য করতে লগইন করুন