সমলিঙ্গ বিয়ের বৈধতা
লিখেছেন লিখেছেন এলিট ০১ জুলাই, ২০১৫, ১২:০৪:২৩ দুপুর
সমকামীতার ইতিহাস অনেক পুরাতন। বলা চলে এটা প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে চলে আসছে। দরিদ্র ও মধ্যবিত্তদের একটু রাখ ঢাক থাকলেও ক্ষমতাবান আর ধনীদের জন্য এটা ছিল উন্মুক্ত। তাছাড়া যখন এর ভেতরে ব্যাবসা ঢুকে পড়ল, তখন কেমন জানি সবাই একে একে সমকামীতা মেনে নিল। বেশী দূরে যেতে হবে না। ৭০-৮০ বছর আগে বাংলাদেশের গ্রামেই "ঘেটু দল" ছিল। যেটা ছিল যাত্রা দলের মতন নাচ গানের দল, যাতে একটি বালক থাকত যে মেয়েদের পোষাক পড়ে নাচ গান করত। এই দলটি অস্থায়ীভাবে জমিদারের বাসায় থেকে জমিদারের মনোরঞ্জন করত আর ওই বালকটি হোত জমিদারের ভোগের উপকরন। এ নিয়ে হুমায়ুন আহমেদের একটি সিনেমা আছে - "ঘেটুপুত্র কমলা"। সেই আমলে এমন প্রকাশ্য সমকামীতা এতটাই স্বাভাবিক ছিল যে, আমাদের জাতীয় কবি কাজি নজরুল ইসলাম এক সময় এমন একটি দলের সাথে গান বাজনা করতেন (তথ্য - হুমায়ুন আহমেদ)। এখন যুগ পরিবর্তন হয়েছে। এখন সমকামীতা ক্ষমতাশীল ও ধনী দেশগুলোর জন্যই উন্মুক্ত। এসব দেশের সমকামীতায় বৈধতার পেছনে ব্যাবসা একটা বড় কারন।
যাই হোক, সমকামীতা অনেক পুরাতন হলেও সমকামীদের বিয়ে দিয়ে সামাজিকভাবে তাদের সম্পর্ককে প্রতিস্টা করার আইডিয়াটা খুবই নতুন। সমলিঙ্গ বিয়ে জিনিসটা বিশ্বে সর্বপ্রথম বৈধতা দেওয়া হয় সবচেয়ে সেরা সমকামী রাস্ট্র, নেদারল্যান্ডে, ২০০১ সালে। এভাবে ২০০৩ এ বেলজিয়াম ও এরপরে একে এক স্পেন, কানাডা, সাউথ আফ্রিকা এভাবে তালিকাটা দীর্ঘ হতে থাকে। সর্বশেষে ২০১৫ সালে ২৬ জুন এই তালিকায় যোগ হয় যুক্তরাষ্ট্র। সমলিঙ্গ বিয়ে বৈধতা দেওয়া দেশের সংখ্যা এখন প্রায় ২৫টি । এই দেশগুলি প্রায় সবই উত্তর ও দক্ষিন আমেরিকা এবং ইউরোপে । এর বাইরে ওই তালিকায় আছে সাউথ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ড।
এই বিয়ের বৈধতা বিষয়ে অনেকেরই সঠিক ধারনা নেই। সমকামীতা ও সমলিঙ্গ বিয়ে এক জিনিস নয়। বিশ্বের অনেক দেশ আছে যেখানে সমকামীতায় কোন বাধা নেই কিন্তু সেই সব দেশের আইনে সমলিঙ্গ বিয়ে বলে কিছু নেই। তেমনই একটা দেশ অস্ট্রেলিয়া। অস্ট্রেলিয়াতে সমকামীতা জিনিসটা একেবারে উন্মুক্ত। তারা মেলামেশা করতে পারবে, একসাথে থাকতে পারবে। কিন্তু বিয়ে করতে পারবে না। না, বিয়েতে কোন নিষেধ নেই। কিন্তু বিয়ের রেজিস্ট্রেশন অফিসে বা প্রচলিত আইনে সমলিঙ্গের বিয়ে করার কোন পদ্ধতিই নেই। এমন পদ্ধতি রয়েছে সেই সব দেশে, যেখানে সমলিঙ্গের বিয়ে বৈধ।
এমনই সমলিঙ্গের বিয়ের পদ্ধতি চালু হল যুক্তরাষ্ট্রে। এই দেশটাকে আপতদৃস্টিতে যৌনতায় ভরা মনে হলেও দেশটির ভেতরে কিন্তু অনেক বাছ বিচার করে। সারা বিশ্বের পর্নো ভিডিওর বেশিরভাগই তারা বানালেও নিজেদের দেশের টিভিতে কিন্তু নগ্নতা দেখানো বেআইনী। সারা বিশ্বের যৌনতা ও নগ্নতা ভরা দেশের একটা তালিকা করলে যুক্তরাষ্ট্রের নাম শেষের দিকেই থাকবে। এই দেশটির কিছু কিছু রাজ্যে সমলিঙ্গ বিয়ে চালু ছিল। কিন্তু পুরো দেশটিতে এভাবে সমলিঙ্গের বিয়ে চালু হওয়াটা সত্যই অবাক বিষয়। এটাকে বিশ্বের জন্য একটা দুঃসংবাদ বলা চলে। কারন এর দেখাদেখিতে এখন অনেক দেশ এই সমলিং বিয়ে বৈধ করবে। এছাড়া যুক্তরাস্ট্রের ক্ষমতাবলে অনেক দেশ এমনিতেই এই পথ বেছে নিবে। এভাবে সমলিঙ্গ বিয়ে ব্যাপারটা একসময় বিশ্ব ব্যাপী ছড়িয়ে যাবে।
ধর্মীয় ও সামাজিক মুল্যবোধের কারনে আমি সমকামীতা ও সমলিঙ্গের বিয়ের ঘোর বিরোধী । কিন্তু পরক্ষনেই মনে হয়, জনগন তো আমার বানানো সমাজে থাকে না, বরং আমি থাকি জনগনের বানানো সমাজে। তাই জনগনের যা ইচ্ছে সেটাই করতে পারে। সমকামীতার ব্যাপারে, একটি দেশের সরকারের দৃস্টিভঙ্গিও যদি এমন হয় তাহলে সেটা ঠিক আছে। জনগন সমকামী হতে চাইলে সরকার বাধা দিতে পারে না। কিন্তু সমকামীদের বিয়ে দেওয়ার ব্যাবস্থা করে এই জিনিসটি একেবারে প্রতিস্টা করে দেওয়াটা মোটেই ঠিক নয়।
হ্যা, অনেকে উন্নত দেশে থেকে উন্নত সমাজ দেখে হয়ত এ ব্যাপারে দোষের কিছু খুজে পান না। বরং, এর বিরোধীতাকেই দোষের মনে করেন। কিন্তু অনেকেই এটা খতিয়ে দেখেন না যে, ওসব দেশে আইনের কারনে সরাসরি সমকামীতার বিপক্ষে কেউ কথা বলেনা ঠিকই, কিন্তু সমকামীতাকে কেউই ভালো চোখে দেখে না। এমনকি মানষিক ডাক্তারের কাছে এর চিকিতসাও আছে। ওসব দেশে কেউ কারো স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেনা। কাজেই সমকামীতায় কেউ বাধা দেয়না। কিন্তু জিনিসটাকে কেউই ভাল মনে করে না।
বিয়ে জিনিসটা কি? বিয়ে হল এটা পুরুষ ও একটা নারী, একসাথে থাকার জন্য সমাজের কাছে অনুমতি নেওয়া। এই অনুমতি তারই দরকার হয় যে ধর্মীয়, সামাজিক সম্পর্ক নীতির আওতায় থাকে। সমকামীরা তো এই সম্পর্ক নীতির ভেতরে নেই। বরং তারা নিজেদের একটা আলাদা সম্পর্ক নীতি চালু করেছে। তাই তাদের প্রচলিত সামাজিকতায়, তাদের ওই আলাদা সম্পর্ক নীতিকে বৈধতা দেওয়াটা হাস্যকর। তাছাড়া, বিয়েটা সমকামীদের মোটেই প্রয়োজন নেই। তাদের যেটা প্রয়োজন সেটা হল নির্বিধ্নে তাদের সম্পর্ক চালিয়ে যাওয়া। এমন সম্পর্ক চালাতে গেলে বিয়ের কি দরকার? এমনিতেই তো ভালো চলে।
আমাদের মতন উন্নয়নশীল দেশ এ ব্যাপারে একটুও পিছিয়ে নেই। দেশে "রুপবান" নামক একটি সমকামী সংগঠন রয়েছে। এই সংগঠনের নিজস্ব প্রকাশনা রয়েছে। তাদের বর্নাঢ্য র্যালী বের হয়। ধীরে ধীরে আমাদের সমাজেও সমকামীতা উন্মুক্ত হয়ে যাবে, এক সময় হয়ত পার্লামেন্টে সমলিঙ্গের বিয়ের প্রস্তাব আসবে, সেই বিল পাশও হয়ে যাবে। হয়ত আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবিরা সেটা কে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত বলবেন, নেতারা সেটাকে ডিজিটাল উন্নতি বলবেন, মানুষের সমান অধীকার দেওয়া হয়েছে এমন বলবে মানবাধিকার সংস্থাগুলো। আর নতুন প্রজন্মের তো গর্বের শেষ থাকবে না। তাদের মুখস্ত থাকবে কোন কোন মনীষী সমকামী ছিলেন। তাদের কাছে সমকামীতার পক্ষে অকাট্য যুক্তিও থাকবে। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, আপনি চান আর না চান, এমন দিন আসবেই।
আমার ফেসবুক ---------- এখানে
বিষয়: আন্তর্জাতিক
১৩২৭ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আল্লাহ আমাদের সন্তান সন্ততিদের, ভবিষ্যৎ বংশধরদের এর থেকে হেফাজতে রাখুন এই প্রার্থনা
আল্লাহ আমাদের সন্তান সন্ততিদের, ভবিষ্যৎ বংশধরদের এর থেকে হেফাজতে রাখুন এই প্রার্থনা
ধীরে ধীরে আমাদের সমাজেও সমকামীতা উন্মুক্ত হয়ে যাবে, এক সময় হয়ত পার্লামেন্টে সমলিঙ্গের বিয়ের প্রস্তাব আসবে, সেই বিল পাশও হয়ে যাবে। হয়ত আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবিরা সেটা কে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত বলবেন, নেতারা সেটাকে ডিজিটাল উন্নতি বলবেন, মানুষের সমান অধীকার দেওয়া হয়েছে এমন বলবে মানবাধিকার সংস্থাগুলো। আর নতুন প্রজন্মের তো গর্বের শেষ থাকবে না। তাদের মুখস্ত থাকবে কোন কোন মনীষী সমকামী ছিলেন। তাদের কাছে সমকামীতার পক্ষে অকাট্য যুক্তিও থাকবে।
অত্যন্ত চমৎকার ভাবে বর্ণনা দিলেন। সত্যিই ডিজিটালের যে বন্যা বইছে, এমন হতে বেশি দেরি লাগবে না।
মহান প্রভু আমাদের দেশে ও আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে হেফাজত করুক।
নজরুল ছিলেন লেটো দলে। উত্তর পশ্চিমবঙ্গ তথা মুর্শিদাবাদ,বর্ধমান অঞ্চলে ঘেটু দলের সমতুল্য দল এর নাম আলকাপ। লেটো ছিল কবিগানের দল। এই সম্পর্কে বিস্তারিত মরহুম সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ এর বিভিন্ন গ্রন্থ ও "মায়ামৃদঙ্গ" উপন্যাস এ আছে।
ঐ হিজড়াটারে দেখতে তেমনই মনে হয়
আল্লাহ আমাকে মাফ করুক
মন্তব্য করতে লগইন করুন